somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা যারা বন্ধু হলাম, দিনবদলের প্রত্তয়ে (প্রসঙ্গঃ ব্লগারদের অংশগ্রহণে ডিনার পার্টি)

১৪ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



Friendship knows no limits, friendship knows no bounds.
Whether five or fifty, fulfillment surrounds.
Cherish every word, every moment, every sound.
Enjoy it every chance you get, happiness compounds.


দৃশ্য ১:
ব্লগার আমিনুর রহমানের সাথে হাটতে হাটতে কিছু কথা হচ্ছিল। টপিক ছিল "ফেসবুক"। ফেসবুকের বদৌলতে আমরা দু'জনেই বাল্যকালের কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের আজ বহুদিন পরে খুঁজে পেয়েছি; যারা সময়ের সাথে, জীবনের প্রয়োজনে আমাদের জীবন থেকে বহুটা কালের জন্য হারিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যানে আমরা তাদেরকে আবারও আমাদের মাঝে ফিরে পেয়েছি। বাল্যকালের ছোট্ট ছোট্ট হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের দোসরদের বহুকাল পরে ফিরে পাওয়ার আনন্দ সত্যিই অতুলনীয়।

দৃশ্য ২:

ব্লগার আবু সালেহকে আমরা সবাই এপ্রিসিয়েট করলাম তার ধারাবাহিকতা, সৃজনশীলতা এবং রুচিবোধের জন্য। কেননা একটি ভাল মানুয়েরও রুচিহীনদের সাথে সময় কাটাতে কাটাতে একটা সময় পরে রুচিহীন হয়ে পরার আশঙ্কা থেকেই যায়। কিন্তু তিনি আজ লম্বা সময় ধরেই ব্লগিং করছেন রুচি, সৃজনশীলতা এবং ধারাবাহিকতাকে পুঁজি করে। এতে কোন সংষয়ের অবকাশ নেই। তার মতে সে তার উৎকৃষ্টতম বন্ধুর মাঝেও রুচিহীনতা এবং সৃজনহীনতা দেখলে তার সমালোচনা করতে দ্বিধা করেন না এবং ঠিক উল্টোভাবে প্রশংসা করতেও কখনো পিছপা হন না যখন বন্ধুর মাঝে ভালো কিছুর সন্ধান পান। আর এটাই হওয়া উচিত একজন প্রকৃত বন্ধুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

দৃশ্য ৩:

একজন টগবগে তরুণ ব্লগারও ছিল আমাদের মাঝে, যার চোখে মুখে ভাল কিছু করার প্রত্তয় উকিঝুকি দিচ্ছিল। বহু দূরের পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের মাঝে সে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু তার মাঝে কিছুটা হতাশাও ছিল একটা ব্যাপার নিয়ে। যা আমাদের সমাজ এবং দেশকে ঘিরে। ব্লগিংয়ে প্রতিদিনই শত শত পঁচা, নোংরা, মূল্যহীন পোস্টের ভিড়ে অনেক আশাব্যঞ্জক বিষয়সমূহ যে আমরা এড়িয়ে যাই তা খুব সহজেই অনুমেয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে বুদ্ধিজীবীদের মত কথা বলি, অন্যের সমালোচনা করি বিজ্ঞের মতন করে। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে আর এসব বুদ্ধিজীবীদের খুঁজে পাওযা যায়না। যখন কোন দিনবদলে ডাক আসে, তখন আর আমরা সাড়া দেইনা। ঘাপটি মেরে ঘরের কোণে আশ্রয় নেই দিন কয়েকের জন্য। কিন্তু যারা নিজের আত্মার সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে, তাদের ডাকে বুদ্ধিজীবীরা এলো কি এলোনা তাতে মাথা ঘামানোর সময় নেই। নিজের দায়িত্বটুকু ঠিকই পালন করে যান সমাজ এবং দেশের কল্যান সাধনের জন্য। ঠিক এরকম একজন তরূণের কথাই আমি বলছি। গত বছর কিছু অসহায়দের জন্য সাহায়্যের হাত বাড়িয়ে দেবার জন্য ব্লগের সহস্রাধিক ব্লগারদের উদ্দেশ্যে একটি আহবান জানিয়ে পোস্টে দিয়েও হিট পেয়েছিল মাত্র ৫ কি ৭ টি। খুবই হতাশাজনক /:)/:)/:) । কিন্তু তার মিশনে তিনি ব্যর্থ হননি। ঠিকই নিজ উদ্যেগে ছুটে গিয়েছিলেন অসহায়দের পাশে। হাতের হাত শক্ত করে ধরেছিলেন। শুনিয়েছিলেন সান্তনার বাণী। "আমরা কি তাহলে শুধু মাত্র বেশধারী বুদ্ধিজীবি ???" তার দুঃখটা এইখানেই। /:)

দৃশ্য ৪:



জ্ঞান পিপাসা যে কি জিনিস তা কিছুটা হলেও অনুমান করতে পারলাম একজন জ্ঞান পিপাসুক ও মুক্তমনা মানুষের কাছ থেকে। জীবনের প্রায় শেষ বেলায় দাঁড়িয়েও থেমে নেই তার জ্ঞানের অন্বেষন। খুঁজে ফিরেন জ্ঞানের প্রতিটি উৎস, পান করেন শেষ বিন্দু পর্যন্ত। যেন তাতেও সে তৃপ্ত নন। প্রতিটি ভাল উদ্যেগে তিনি অগ্রগামী। বন্ধুত্বের প্রকৃত প্রস্তাবে তিনি আপশহীন। তার মতে বন্ধুত্বের কোন বয়ষ নেই। তার জন্য উৎসর্গ করলাম উপরের কবিতার চারটি লাইন।

দৃশ্য ৫:



অন্নহীন লোকদের জন্য কিছু করার যে আকাঙ্খা দেখলাম ব্লগার জনির মধ্যে তা সত্যই প্রশংসার দাবিদার। পথশিশুদের ঈদের খুশিকে বাড়িয়ে দিতে যে ব্যতিক্রমধর্মী প্রস্তাব তিনি দিয়েছেন তা কষ্টকর হলেও আশাব্যঞ্জক। হয়তো একদিনেই আমাদের সমাজ তথা দেশ বদলে যাবেনা। কিন্তু সমাজের একটি অংশ হয়তো বদলে যাবে ব্লগার জনিদের কল্যানে। দেশের প্রতিটি প্রান্তে হয়তো একজন করে ব্লগার জনির জন্ম হবে একদিন। দেশের প্রতিটি প্রান্ত বদলে যাবে, সুন্দর হবে আমাদের পুরো সমাজ, পুরো দেশ। এমন আশা করাতো পাপ নয়। হয়তো আজ নয়, কাল। কাল নয়, পরশু। দেশ বদলাবেই। এখন শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের সংশোধনের পালা।

বিশ্লেষণ ১:

ব্লগেতো অনেক টপিক নিয়েই আলোচনা হয়। কোন কোন টপিক নিয়ে আলোচনার ঝড় বয়ে যায়। বিষয়বস্তুতে ভিন্ন মতামতের কারণে তৈরি হয় দল, গোষ্ঠি, সিন্ডিকেট। একদল ঝাপিয়ে পড়ি আরেক দলের উপর। যেন কোন যুদ্ধের ময়দান। শত্রুর শরীরে আঘাত করা, তার শিরচ্ছেদ না করা পর্যন্ত আর ক্ষান্ত নেই। শত্রুর পরাজয়ে শেষমেষে বিজয়ীর হাসি হাসা। কিন্তু আমরা কি এমন একটি দল বা সিন্ডিকেট তৈরি করতে পারিনা যারা সমাজ তথা দেশের কল্যানে একসাথে ঝাপিয়ে পড়বো? খুবই সম্ভব। শুধুমাত্র সবাইকেই মানুষ ভাবলেই হবে। যেদিন আমাদের সবাই একই নামে পরিচিত হবো। "সবাই মানুষ"। ঠিক সেদিনই সম্ভব। ধর্ম, ভাষা, জাতি, সাম্প্রদায়িকতা শব্দসমূহ কেবলই আমাদের মাঝে বিবেধের দেয়াল গড়ে দেয়। আর কিছুই নয়। এসব নিয়ে আমরা যতই মাতামাতি করবো, আমাদের মাঝে নির্মিত দেয়ালের উচ্চতা ততই বাড়তে থাকবে।

বিশ্লেষণ ২:


ব্লগ নামের বস্তুটাই আমাদের কয়েকজনের মাঝে আজ গড়ে দিলো বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন। আমাদের মাঝে ছিল নানা ধর্মের, নানা মতের, নানা পেশার মানুষ। কিন্তু সকল ব্যবধান ভুলে দেশ এবং দেশের মানুষকে কেন্দ্র করে আমরা একই কেন্দ্রিভুত হতে পেরেছিলাম। ব্লগকে আমরা যেমন মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টিতে, হানাহাতিতে উস্কে দিতে প্রধাণ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারি, ঠিক তার বিপরীতভাবে ব্লগই হতে পারে মানুষে মানুষে আত্মার বন্ধর নির্মাণের মূল উপাদান। কে কিভাবে ব্যবহার করবে এটা তার মানষিকতা এবং রুচিবোধের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি একজন প্রকৃত শিক্ষিত লোক কখনই, কোন কারণেই তার আদর্শ হতে সরে যেতে পারেন না। কেননা কুশিক্ষাই মানুষকে তার আপন কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করে।

বিশ্লেষণ ৩:

স্কুল/কলেজ লাইফে প্রায়ই আমাদের একটা রচনা লেখতে হতো। "বিজ্ঞানের আশির্বাদ এবং অভিসাপ"। রচনার প্রায় ৮০ভাগ জুড়েই আমরা বিজ্ঞানের আশির্বাদ নিয়ে আলোচনা করতাম। কেবল মাত্র ২০ভাগই থাকতো অভিশাপ নিয়ে। প্রকৃতপক্ষেই বিজ্ঞান আমাদের জন্য আশির্বাদ স্বরুপ। ২০ভাগ ক্ষেত্রে তা অভিশাপের কারণ হয়ে দাড়ায় কিছু কুশিক্ষায় শিক্ষিত লোকের কারণে। আর যার খেসারত দিতে হয় পুরো মানবসমাজকে। তাই আমাদের উচিত এসব কুচক্রি লোকদের এড়িয়ে চলা, তাদের কথায় কর্ণপাত না করা, তাদের উস্কানিমূলক কথায় সায় না দেয়া। তাহলেই তারা একটা সময় পরে সমর্থন হারিয়ে নিস্ক্রিয় হয়ে যাবে। আমি বিশ্বাস করি ব্লগও বিজ্ঞানের একটা আশির্বাদ স্বরুপ। তাই আসুন সবাই মিলে এর ১০০ভাগ আশির্বাদ নিষ্চিত করি। যারা এটাকে অভিশাপের কারণ করতে য়ড়যন্ত্র করছে, তাদের বর্জন করি। তাদের ছুড়ে ফেলি নোংরা নর্দমায়। কেননা সেটাই তাদের উপযুক্ত স্থান। X((X((X((

পুনশ্চঃ ডিনারে অংশ নেওয়া সকল ব্লগারকে আমার হুদয়ের অন্তন্থল থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনাদের সকলের সহযোগিতা এবং আন্তরিকতার ফলেই একটি সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল অনুষ্ঠান আয়োজন করতে সক্ষম হলাম। আমি আশাকরি এটাই সামুর ব্লগারদের নিয়ে আয়োজিত সবচাইতে সফল এবং সুশৃঙ্খল অনুষ্ঠান। সকলের দীর্ঘায়ু কামনায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:১৭
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×