মাহবুবুল আলম //
দেশব্যাপী অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা বিভিন্ন জঙ্গিগ্রুপ হিন্দু পুরোহিত ও সেবায়েতদের টার্গেট করে নির্মন হত্যাকান্ড চালানোর পর দেশের বিভিন্ন সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ যখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিল ঠিক সেই সময়েই বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটানো হলো ভয়াভহ সশস্র জঙ্গি হামলা। গুলশান হলি আর্টিজান হোটেলে দেশি-বিদেশি পঞ্চাশজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দেশে বিদেশে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল তার রক্তাক্ত অবসান হয়েছিল পুলিশ, র্যা ব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর যৌথ কিমান্ডো অভিযান ‘থান্ডারবোল্ট’ এর মাধ্যমে। এ অভিযানে ২০ বিদেশিসহ পাঁচ জঙ্গি মিলিয়ে ২৮জন মানুষ নিহত হয়েছিল।
এমন ন্যক্কার জনক ঘটনা ও জঙ্গি হামলার পর দেশের মানুষ যখন শোকাহত ও স্তম্ভিত ঠিক এর ছয়দিন পরেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ঈদ উৎসব ‘ঈদ উল ফিতর’ এসে যাওয়াতে ঈদের জামাতে জঙ্গি হামলা হতে পারে এ আশঙ্কা থেকে দেশব্যাপী নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। বিশেষ করে ঈদের জামাতে যাতে কোন অনাকাংখিত ও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য আইন-শৃংখলা বাহিনী গ্রহণ করে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তারপরও দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামায়াত কিশোর গঞ্জের শোলকিয়ায় ঈদের জামাতের অদূরে ঘটে গেছে জঙ্গিহামলার ঘটনা তখন শত মাইল দূরে শ্রীমঙ্গলে ঈদের জামায়াতেই দেখা মিলল সম্প্রীতির বিরল দৃষ্টান্ত। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে শ্রীমঙ্গল শাহী ঈদগাহে ঈদের জামাতে নিরাপত্তার জন্য পুলিশের পাশাপাশি প্রায় ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক ভোর চারটা থেকে কাজ করেন। এদের মধ্যে অন্তত ২০ জন ছিলেন হিন্দু ধর্মের অনুসারী! শ্রীমঙ্গলে ঈদের জামাতে হিন্দু তরুণদের স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালনের কিছু ছবি দেশের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশংসা করছে দেশ বিদেশের নানা সম্প্রদায়ের মানুষ। দেশের অবস্থা ক্রমেই অসহিষ্ণু অস্থিতিশীল হয়ে ওঠা এই সময়ে সম্প্রীতির এই চিত্র দেশের সাধারণ মানুষও উদ্দিপ্ত হয়ে ওঠে।
অনলাইন পত্রিকা ‘সিলেট টুডে ২৪.কম’ এর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় এ বিরল দৃষ্টান্তের উদ্যোক্তা ও স্থানীয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত নোমান আহমেদ বলেন"শ্রীমঙ্গল সবসময়ই সম্প্রীতির জনপদ। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এখানে সবাই ঐক্যবদ্ধ। ঈদের জামাতের নিরাপত্তার কাজে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ৬০ জন নিয়োজিত ছিলেন তারমধ্যে ২০জনই ছিলেন হিন্দু ধর্মালম্বি। মুসলিমরা যখন নামাজ পড়ছিলেন হিন্দু ভাইয়েরা তখন পাহারা দিয়েছেন।" আর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অমিত দাস সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ভাই দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা এগিয়ে এসেছি। মুসলিমরা যখন নামাজ পড়ছিল আমাদের দায়িত্ব ছিল চারপাশ পাহারা দেয়া"।
এর আগে শ্রীমঙ্গল শাহী ঈদগাহ কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মোঃ আব্দুস শহীদ এমপির নেতৃত্বে ১০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির একজন সমন্বয়ক ছিলেন ৩নং শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়। পরে সেই কমিটি থেকেই আলাদা সেচ্ছাসবক দল করার উদ্যোগ নেয়া হয়। পুলিশ প্রসাশনকে সহায়তা করতে তারা এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে জানান তারা।
জঙ্গি সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ এখন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, যদিও জঙ্গি সমস্যা এখন শুধু বাংলাদেশের একার কোনো সমস্যা নয় এটি এখন বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে; তবু দেশের মানুষের মধ্যে এক নতুন উৎকন্ঠার সৃষ্টি করেছে। জঙ্গি সমস্যা মোকাবেলার জন্য সারাদেশের মানুষের মধ্যে এখন নতুন চেতনা ও ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে। যার উজ্জল দৃষ্টান্ত শ্রীমংগলে ঈদের নামাজে হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বেচ্ছাসেবকদের এ মহৎ উদ্যোগ।
পরিশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধ নয়, এখানে যুগ যুগ ধরে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যন্য ধর্মবলম্বিদের মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চলে আসছে তা দুএকটি হত্যাকান্ড ও বোমাহামলা চালিয়ে নষ্ট করা যাবে না। আসুন আমরা শ্রীমংগলের এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্তকে অনুসরণ করে সব সম্প্রদায়, সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এক্যবদ্ধ হয়ে যে কোনো অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে এগিয়ে আসি এবং সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশকে সব দিক দিয়েই এগিয়ে নিয়ে অন্য এক উচ্চতায়।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:৫৫