এভারেস্টে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ালেন মুহিত
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
এবার আরেক বাংলাদেশি এভারেস্টে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ালেন। দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন এম এ মুহিত। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি এভারেস্ট শৃঙ্গে পৌঁছান।
ঢাকাস্থ নেপাল দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অণুবিভাগের মহাপরিচালক মাশফি বিনতে শামসকে এম এ মুহিতের এভারেস্ট বিজয়ের তথ্য জানায়।
হিমালয়কে হারিয়ে দেয়া এ পর্যন্ত প্রায় ১২শ' দুঃসাহসী পর্বতারোহীর একজন মুহিত। এভারেস্ট জয় করায় তার নাম পরিণত হলো ইতিহাসে। বাংলাদেশ আরেক দফা জেগে উঠল নতুন আশায়। কারণ এটা সাধারণ ঘটনা নয়। আশা আর দৃঢ় সংকল্প থাকলে বাংলাদেশিদের পক্ষে অনেক কিছুই যে করা সম্ভব। আকাশ ছুঁয়ে দেখার অদম্য ইচ্ছেটি দীর্ঘদিন ধরে মনের মধ্যে লালন করছিলেন মুহিত। তার উপমাবিহীন সংযম আর সাধনার কাছে সব ধরনের জাগতিকতা হার মেনেছে। শুধু আকাশ নয়, আকাশের কপাল তিনি ছুঁয়ে দিলেন। নেপালিরা এভারেস্টকে বলে 'সাগরমাথা'। এর অর্থ আকাশের কপাল। তিব্বতিরা বলে 'চুমুলংমা'। অর্থাৎ দেবী, বিশ্বমাতা।
মুসার পর এবার মুহিত প্রমাণ করলেন, সুস্থির লক্ষ্যের যাত্রী হতে পারলে কোনো প্রতিকূলতা বাংলাদেশিদের দমিয়ে রাখতে পারে না।
এর আগে ২০১০ সালের ২৪ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মুসা ইব্রাহীম পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেন। এম এ মুহিত সে সময় মুসা ইব্রাহীমের সঙ্গী থাকলেও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এভারেস্টে উঠতে পারেননি। এম এ মুহিত বাংলাদেশ মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের সদস্য।
ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতি প্রেমী মুহিত পাঠ্যপুস্তকে এডমুন্ড হিলারি ও তেনজিং নরগের এভারেস্ট জয়ের কাহিনী পড়ে প্রথম রোমাঞ্চ অনুভব করেন। ৯৭ সালের অক্টোবরে ১০ বন্ধুর সাথে সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে বন্ধুদের মধ্যে প্রথম ১৮শ ফুট উচ্চতায় উঠে পর্বতারোহণ নেশায় মগ্ন হন তিনি। ২০০৩ সালে সুমেরু অভিযাত্রী ইনাম আল হকের কাছ থেকে ট্রেকিং ও ফটোগ্রাফিতে হাতে খড়ি নেন মুহিত। ইনাম আল হক তাকে স্বপ্ন দেখান হিমালয় জয়ের। ২০০৩ সালে ইনাম আল হকের নেতৃত্বে গঠিত হয় বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং এন্ড ট্রেকিং ক্লাব। সদস্য হন মুহিত। ২০০৪ সালে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প ও কালাপাথার ট্রেকিং এ অংশ নেন এবং দার্জিলিং এর হিমালায়ন মাউন্টেয়ারিং ইনস্টিটিউট এইচএমআই থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৫ সালে উচ্চতর পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। এরপর জয় করতে থাকেন বিভিন্ন পর্বতশৃঙ্গ। ২০০৭ সালের মে মাসে নেপালের অন্নপূর্ণা হিমালয় অঞ্চলের চুলু ওয়েস্ট শৃঙ্গের ২১ হাজার ৫৯ এবং সেপ্টেম্বর মাসে মেরা পর্বতশৃঙ্গের ২১ হাজার ৮শ ৩০ ফুট, ২০০৮ সালের মে মাসে বিশ্বের অষ্টম উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মানাসলুর ২৬ হাজার ৭শ ৮০ ফুট এবং ২০০৯ সালে দলনেতা হিসেবে নেপাল-তিব্বত সীমান্তে অবস্থিত বিশ্বের ষষ্ঠ উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ চো ইয়ো জয় করেন। এর মধ্য দিয়ে প্রথম কোনো বাংলাদেশি ২৬ হাজার ৯০৬ ফুট বা ৮ হাজার ২শ ১ মিটার পর্বতারোহীদের সম্মানজনক এলিট ক্লাবে প্রবেশ করেন।
মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে মুহিত অন্য সফরসঙ্গীর সঙ্গে হিমালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মার্চের ২৫ তারিখে তারা ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে এভারেস্ট জয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা জানান। এভারেস্ট অভিযানে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে মুহিত শীর্ষ নিউজ ডটকমের সাথে আলাপচারিতায় বলেছিলেন, একটা পাহাড়ে ওঠার পর যে বোমাঞ্চ হয় তার সাথে আমি অন্য কিছুর তুলনা করতে পারি না। তিনি বলেন, আমি যখন কোনো পর্বতে উঠি আর ভাবি আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি তখন আমার মানসিক শক্তি বেড়ে যায়। পর্বতে উঠতে হলে শারীরিক শক্তির চেয়ে মানসিক শক্তিটাই বেশি দরকার।
মুহিত আরো বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু চূড়ায় আমি বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে যাচ্ছি এটাই আমাকে বাড়তি প্রেরণা যোগাচ্ছে। পতাকার শক্তি যে অনেক বড় শক্তি এটা আমি সব সময় অনুভব করেছি।
এম. এ মুহিত ১৯৭০ সালের ৪ জানুয়ারি ভোলা জেলার দৌলতখান থানার গঙ্গারাম গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ৮৫ সনে পুরান ঢাকার প্রগ্রেজ স্কুল থেকে এসএসসি, ৮৭ সনে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে ৮৯ সনে বি কম পাস করেন। বাবা মো. আনোয়ার হোসেন এবং মা আনোয়ারা বেগম। ৪ ভাই এবং ৩ বোনের মধ্যে ভাইদের মধ্যে তিনি বড়। বর্তমানে মুহিত প্যারাগণ গ্রুপের প্যারাগণ প্লাস্ট ফাইবার লি. এর মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।
শীর্ষ নিউজ
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা
সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১
নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়
সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।
হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন
আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই
সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন