খালেক মাষ্টারকে গায়ে জামা পড়তে কখনো দেখি নি। সারা বছর একটাই পলিষ্টার লুঙ্গী, খালি খা, খালি পা, চকচকে বেল মাথা, হাটবেলা শেষ হলে হ্যারিকেন হাতে হাটের মধ্যে পয়সা কুড়াতো। তখন কেরোসিনের দাম ছিলো ষোল টাকা লিটার। তেল পুড়িয়ে যদি দুটা,তিনটা আধলিও খুঁজে পাওয়া গেলে লসের কিছু ছিলো না।
আর হাটের পরের দিন সকালে তাকে দেখা যেত ডাবের ঠুলি আর আনারসের কাটা মাথা জড়ো করছে। সেগুলোও সে কুড়িয়ে বাসায় নিয়ে যেত।
কি মনে করছেন, খালেক মাষ্টার খুব গরীব মানুষ???
মোটেও না। অঢেল সম্পত্তি ছিল খালেক মাষ্টারের। বউ-বাচ্চাও কিছু ছিল না। তার সম্পদ খাওয়ার মত মানুষ ছিল না। কিন্তু সে বউ-বাচ্চার মত আগলে রাখতো তার সম্পদগুলোকে। এবং সেগুলো বাড়ানোর জন্য সে কী আপ্রান চেষ্টা! পয়সা পর্যন্ত কুড়াতো তার জন্য।
কিন্তু তাকে দেখলে মনে হতো এই মাত্র ভিক্ষা করে উঠে এল।
একটা লোককথা ছিলো। খালেক মাষ্টারের অনেক সম্পত্তিতেই নাকি মামলা চলছিলো। খালেক মাষ্টার এক পলিষ্টার শার্ট,লুঙ্গী পড়ে খালি পায়ে উকিলের কাছে হাজির। উকিল বলল এই গরীব লোক কেস চালাতে পারবে???
খালেক মাষ্টার টাকা ভর্তি একটা ব্যাগ ছুঁড়ে দিয়েছিল উকিলের মুখে।
সেই খালেক মাষ্টারের আনারস চুরি করতে গিয়ে একদিন আমি আর এমদাদ হাতেনাতে ধরা পড়লাম। দুই হাতে দুই জনের কান ধরে বাজারে এনে অবশ্য ছেড়ে দিয়েছিলেন সেইদিন।
মাষ্টার এখনো বেঁচে আছে। অসুস্থ। প্রহর গুনছে যক্ষ হয়ে তার সামানগুলো পাহারা দেবার।