তেঁতুল গাছটার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি। মস্ত বড় তেঁতুল গাছ, কিন্তু তার চিড়ল-চিড়ল পাতাগুলো দেখাই যায় না। পুরো গাছটা ছেয়ে আছে শত শত বক। সাদা বক।
সেই মস্ত বড় তেঁতুল গাছটার বকে ছাওয়া সাদা মাথা এতটাই মনোমুগ্ধকর.... যে লোকটা পাখি দেখলেই রান্না করে খেয়ে ফেলার ইচ্ছা পোষণ করে সে পর্যন্ত গাছটার দিকে তাকালে অজান্তেই বলে ওঠে বাহ!
সেও মন খুলে বলে, পাখিগুলো যেন চিরকাল বেঁচে থাকে।
পেস্তার মা সেই তেঁতুল গাছটাকে সন্তানের মত আগলে রাখতো। আর বকগুলো ছিল তার কলিজার টুকরা। পাখি মেরে ভূরিভোজ করা বাতাস-বন্দুক ওয়ালারা তাকে যমের মত ভয় পেত। কেউ ভুল করেও যদি বন্দুক উঁচু করতো, হা-রে-রে-রে করে কালীমূর্তির মত সামনে এসে খাড়া হত পেস্তার মা। বন্দুকওয়ালা জান নিয়ে পালাতো। বুকের সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে এভাবেই সাদা বকে ছাওয়া তেঁতুল গাছটাকে আগলে রাখতো পেস্তার মা।
আর নানা বাড়ির শত জিনিসের মধ্যে সেই সাদা বকে ছাওয়া তেঁতুল গাছটা একটা বড় জায়গা জুড়ে থাকতো।
এরপর আমরা ধীরে ধীরে সভ্য হতে শুরু করলাম, আর প্রকৃতিও আমাদের সাথে তাল মিলিয়ে সভ্য হতে থাকলো। ছাত্তার মামার উঠোনের সামনে উঁচু ঢিবিটা, যেটার উপরের জামগাছগুলোর গোড়ায় হেলান দিয়ে জোয়ানদের ক্লান্ত দুপুরবেলা কাটতো, সেই ঢিবিটা গুঁড়িয়ে গেল উঠোন বড় করতে। পশ্চিম পাশের জঙ্গল কেটে সাফ করা হল বাড়ি করার জন্য। শিমুল, আমড়া, কলা, বড়ই, জলপাই সবগাছই চলে গেল।
আর সেই সাথে পেস্তার বোনকেও বিয়ে দেয়ার দরকার হয়ে পড়ল একজন সভ্য মানুষের সাথে। সভ্য মানুষ পালঙ্কে শোয়, সেই পালঙ্ক শ্বশুর বাড়ি থেকে নিতে হয়। পেস্তার মা চোখের জলে বুক ভাসিয়ে তেঁতুল গাছটা কেটে মেয়ের পালঙ্ক বানিয়ে দিলো।
বকগুলো উড়ে গেলে কাঁদতে কাঁদতে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৪৭