এ গল্পে কোন বেলুন নেই। তবে চাকু, ছোরা, বল্লম আছে। ছোটবেলায় এইসব জিনিসের প্রতি খুব টান ছিল। প্রাচীন অস্ত্র-শস্ত্র খুব ভালো লাগতো। এমন কোন বিকেল নেই যেদিন আমাকে কেউ হাতে চাকু/ছোরা/বল্লম কিছু না কিছু ছাড়া দেখতে পেত।
তখন আবার টিভিতে রবিন হুড চলে। এবার মাথায় শখ চাপলো রবিন হুডের মত বিশ মাখানো তীর-ধনুক বানাবো। ফুফাতো বড় ভাই আমাদের বাড়িতেই থাকে তখন। ওকে নাবিস্কো বিস্কুট খাইয়ে সুন্দর করে একটা ধনুক আর তীর বানিয়ে নিলাম।
এবার আমি বসলাম তীরের ফলা বানাতে, যাতে আবার বিষ মাখাবো। লম্বা কয়েকটা এ্যালুমিনিয়ামের পাত ছিলো বাড়িতে। চুলায় দেখলাম কাঠের আগুন জ্বলছে গনগনে করে। নাচতে নাচতে এ্যালুমিনিয়ামের পাতগুলো থেকে একটাকে নিয়ে এলাম। ঢুকিয়ে দিলাম চুলার আগুনে।
ইয়াকুভ হলে যা হয় আর কি! টিভিতে দেখি লোহা গরম করে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তলোয়ার/তীরের ফলা এসব বানায়। আমি পাতটা চুলায় ঢুকিয়ে দিয়ে হাতুড়ি নিতে গেলাম। এ্যালুমিনিয়ামের পাতটা গরমে লাল হয়ে উঠবে, আর আমি সেটাকে পিটিয়ে সুন্দর একটা তীরের ফলা বানাবো। হাতুড়ি আনতে গিয়ে আবার এনড্রিনের বোতলও নিয়ে এলাম। পিটিয়ে তীরের ফলা বানিয়ে সেটাকে ডুবিয়ে দেব এনড্রিনে। হয়ে যাবে আমার বিষাক্ত তীরের ফলা।
হাতুড়ি, দা আর এনড্রিনের বোতল যথাস্থানে রাখলাম। হাতে কাপড় পেঁচিয়ে এ্যালুমিনিয়ামের পাতটা ধরে তুলে আনলাম।
কিন্তু একী! হায় হায়!!
পাতটার বাকী অর্ধেক গেল কোথায়। চুলার ভেতরে উঁকি দিলাম। কিছু নাই।
কিয়ৎক্ষণ পরেই বুঝিলাম আসল কাহিনী। তখন মাথা চাপড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় নাই। আসলে হয়েছে কি এ্যালুমিনিয়াম তো আর লোহা না। এর গলনাঙ্ক তো অনেক কম। চুলার গনগনে আগুনের তাপে পাতের যতটুকুন চুলার ভেতরে ছিলো পুরোটাই গলে পড়ে গেছে।
এবার সারভাইভাল পিরিয়ড। তাড়াতাড়ি করিয়া হাতুড়ি, বোতল সব যথাস্থানে রাখিয়া আসিলাম। আর পাতের বাকী অংশটা আগের জায়গায় রাখার মত বোকামী মোটেও করলাম না। ধরা খাবার সম্ভাব্যিলিটি আরো বেশি হবে। সেটাকে পুকুরে ফেলে দিয়ে এলাম। বিষ মাখানো রবিন হুডের তীর ধনুকের সলিল সমাধী হইলো!