পূর্বকথাঃ প্রকৃত নামটি নাই বলি। ধরে নিচ্ছি লোকটার নাম বদরুল। শুনেছি মাদক ব্যাবসার সাথে জড়িত।
তিনি পরিবহন শ্রমিকলীগের একজন নেতা। কোন পদে অধিষ্ঠিত আছেন সঠিক বলতে পারব না।। আমাদের মফস্বল থেকে জেলা সদরে যেতে যে প্রধান সড়ক। সেই সড়কের ধারে চালা ঘর বানিয়ে চ্যালা ব্যালা নিয়ে বসে থাকেন। শুধু শুধু বসে থাকেন না। অবৈধ ইজিবাইক (ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা) গুলোকে থামিয়ে দিয়ে দেশে বৈধতা প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালন করেন। আবার নিরীহ গরীব ইজিবাইক ড্রাইভাররা, ট্রিপ প্রতি ২০টাকা প্রদান করলে, তাদের ছেড়ে দেওয়ার মহানুভবতাও দেখান। তার এই মহানুভবতার আমি প্রতক্ষ সাক্ষী। কারণ ওই পথে আমি বহুবার ইজিবাইকে চড়ে গিয়েছি এসেছি। আমার ইজিবাইকও তিনি আটকেছেন।। টাকার বিনিময়ে ছেড়েও দিয়েছেন।
নিরীহ খেটে খাওয়া মানুষগুলোর থেকে জোর পূর্বক চাঁদা আদায়, মারধর করতে দেখে বদরুলের প্রতি তীব্র ঘৃণার বিষ মন থেকে উগরে আসত। শুধু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আকাশপানে দৃষ্টি রেখে বলতাম “ হে ঈশ্বর!! “……
আজকের কথাঃ সকাল থেকেই আমি এবং আমার বোন ভোট দিতে যাব, এই নিয়ে খুব এক্সাইটেড। মা, কাকিমা এবং আমরা দুবোন ১২ টার দিকে গেলাম ভোটকেন্দ্রে। প্রথমে ঢুকলেন আমার কাকিমা। ভোটার নাম্বার বললে, তাকে জানানো হল তার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। কাকিমা রেগেমেগে নানা কথা বলে, বললেন আমি আমার ভোট না দিয়ে এখান থেকে যাব না। অফিসাররা বললেন এখানে এজেন্ট আছে, তিনিতো কিছু বলেননি। আপনার ভোট হয়ে গেছে। ভোট কক্ষে নৌকা সমার্থক একজনমাত্র এজেন্ট ছিলেন। মাথা নিচু করে বসে ছিলেন। তিনি কোন প্রকার সদুত্তর দিতে পারলেন না।
ভোটকক্ষে। হ্যাঁ ভোট দেওয়ার কক্ষে, কিছু লোকের উপস্থিতি চোখে পড়ল। যারা কিনা এলাকায় মাঝে মাঝে তাদের পেশিশক্তির প্রাচুর্যতা প্রদর্শন করেন।
তবে, আমি আমার ব্যালটটি ঠিক মত পেয়েছি। সিলটিও পছন্দের মার্কাতে দিতে পেরেছি। কিন্তু ব্যালট বাক্সে, পেপার দিতে গিয়ে দেখলাম , বাক্স ধরে সগৌরবে বসে আছেন বদরুল।
দেখলাম বদরুলের হাতে ব্যালট বাক্স!! দেখলাম বাংলাদেশের জরায়ু ছিড়ে ভূমিষ্ঠ হল ভোট চুরির কলঙ্ক ! কষ্টে,ক্ষোভে, বিষ্ময়ে, প্রতিবাদ না করতে পারার অসহায়ত্বে আমি পাথর হয়ে গেলাম। এই চরম দুঃখজনক দৃশ্য আমায় দেখতে হবে জানলে ভোট দিতে যেতাম না। আমার ব্যালটটি বদরুলের হাতের বাক্সেই ফেলে এসেছি।
বিষন্নতায় মন ছেয়ে গেল। অসম্ভব কষ্টবোধ বয়ে বাড়ি এলাম। । আমার ভোট, আমার মৌলিক অধিকার তবে বদরুলের হাতে বন্দী!!
এই অনৈতিকতা, এই অরাজকতা, এই দুর্নীতির চক্র কিভাবে পেরুবো? আমার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষেও যদি একটি ভুয়া ভোট পড়ে তা হবে আমার বিবেকের পায়ে বিষাক্ত দংশন। আমার মত প্রকাশের চরম অবমাননা। নৈতিকতার মুখে আগুন দিয়ে এই দেশ, এই সমাজ ধ্বংসের চিতায় আর কতদিন পুড়বে?
আজও দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আকাশপানে দৃষ্টি রেখে বলছি “ হে ঈশ্বর!! “……
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০৪