অফিসে ঢুকতেই দারুণ উত্তেজিত ভঙ্গিতে এক সহকর্মী কাম ছোটভাই জিজ্ঞেস করলো, ভাই আপেনে কি ব্লগার??? আমি একটু চিন্তা কইরা কইলাম, নাতো! কেন? সে হতাশ ভঙ্গিতে কইলো, নাহ তাইলে হইলো না। এরপর আমাকে আজকের পত্রিকা দেখিয়ে বললো, এই যে দেহেন কি লেখছে...আমি দেখলাম শিরোনামটা, ‘বাংলাদেশি ব্লগারদের আশ্রয় দেয়ার চিন্তা করছে যুক্তরাষ্ট্র’...ইস্ কী দারুণ একটা সুযোগ মিস হয়ে গেলো...
কিছুদিন আগেও অনেক সেমি ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে দেখেছি, খ্রিষ্টান সেজে আমেরিকার ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করতে...বাইবেলও মুখস্থ করতেও দেখেছি...আর নিজের বোনকে বউ বানিয়ে আমেরিকায় নেয়া এ্যাতো পানিভাত কাহিনী...
সে তুলনায় ব্লাগার হওয়া অনেক সহজ...এখন নিশ্চয়ই অনেকে, ‘এই মুসলিম বোনটির জন্য কয়টি লাইক ছবি ছেড়ে, এর ওর লেখা কপি পেস্ট করে ব্লগার সাজার চেষ্টা করবেন’...আর যেসব ভাইয়েরা এখনও হুঁশে আসেন নাই তাদের জন্য আমার একটা পুরান লেখা...ভাই সুযোগ কিন্তু যায়...:-)
“ বুঝলেনতো ভাবী আমি তো খুব ভয়ে থাকি...আমার ওতো ফেসবুকে দারুণ অ্যাক্টিভ...সেদিনও দেখলাম কী জানি একটা শেয়ার দিলাে...আমিতো কালকে ওকে মাথার দিব্যি দিছি, প্লিজ তুমি ওসব লেখো না...
নিজের স্বামী বা প্রেমিককে ব্লগার প্রমান করা হাল ফ্যাশন...নিজের স্বজন বা নিজেকে নিয়ে মুখে শঙ্কাভাব ফুটিয়ে বেশ গর্বভরে এ টাইপের কথা বলে অনেকেই এখন বেশ আনন্দ পান...তবে আদতে খোঁজখবর করলে দেখা যাবে, ভদ্রলোক এর ওর প্রতিবাদী স্ট্যাটাসে দুই এক পিস লাইক বা শেয়ার ছাড়া আর কোন কর্মকাণ্ডেই নেই...
বাজারে গুজব রয়েছে নিজেকে ব্লগার প্রমান করতে পারলে নাকি পশ্চিমের ভিসা পানিভাত...এখনকার ব্লগাররা নাকি সবাই ইউরোপ-আম্রিকার ভিসা নিয়ে বসে রয়েছেন (গুজবটি সত্যি হলে আর কিছু না হােক নিরীহ মানুষগুলোর এই করুণ পরিনতি হতো না। আর সত্যিকারের মুক্তমনা লেখকদেরও এরকম ভয়ে ভয়ে চলাফেরা করা লাগতো না)।
তবে যতো যাই হোক এটা সত্যি তথ্যপ্রযুক্তির ৫৭ ধারা আর কোপাকুপির হাওয়া ঢুকে গেছে বাসাবাড়িতেও...সারাদিন ফেবুতে বান্ধবীদের সঙ্গে চ্যাট নিয়ে ব্যস্ত পুংটা পোলার মায়েও এখন পোলারে ডাইকা কোমল স্বরে কয়, 'তুই আমার মাথা খাস বাবা। কসম কাইটা ক ফেসবুকে কিছু লিখবি না'...আর পােলায় মনে মনে কয়, ক্যামনে কি!!!“