এই রোগ আমার খুব ছোটবেলা থেকেই...গলার কাছে কান্নার দলা পাকানো রোগ...শুধু আমার না অনেকেরই হয়তো এই রোগ আছে...কিন্তু ইদানীং খুব ঘনঘন আমার এ রোগের উপসর্গ দেখা দেয়....
ভীষণ গরম পড়েছে গত পরশু...বলা চলে কুত্তা মরা জ্যাম আর বিলাই মরা গরম...আর কে না জানে এরা একে অপরের ভায়রা ভাই...এর মধ্যে আমি বেশ আরাম করে গদি অাঁটা ঠান্ডা বাতাসের গাড়িতে হেলান দিয়ে বসে আছি...
চান্সে বলে রাখি আমি ইদানীং রোদ চশমা ব্যবহার শুরু করেছি...ছোটবেলা থেকেই আমার চেহারা বিশ্রী রকমের গোল বলে রোদ চশমা পড়লে মনে হতো একটা আলু চোখে চশমা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে...তাই সানগ্লাস নামক জিনিসটি আমি এড়িয়ে চলতাম...
কিন্তু অতি সম্প্রতি ভীষণ কড়া রোদের হাত থেকে বাঁচতে এক সহৃদয়বানের উপহার দেয়া একখান রোদ চশমা পরতেই দুটি বিষয় পরিস্কার হয়ে গেলো এবং আমি রোদ চশমার প্রেমে পড়ে গেলাম...প্রথমত আমাকে যেমনই দেখাক রোদের মাঝে এ চশমা শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়...দ্বিতীয়ত রোদ চশমা পরে যত খুশি সুন্দরীদের আড়চোখে, সোজাচোখে সবভাবেই আয়েশ করে দেখা যায়...কিন্তু কেউ বিষয়টি টের পায় না...
তো সেদিনও আমি রোদ চশমা চোখে দিয়ে গাড়ির আশপাশে চোখ বোলাচ্ছিলুম যদি কেউ মেলে...হঠাৎই চোখে পড়লো...ভদ্রলোকের বয়েস কমপক্ষে ৬৫...এ বয়েসে মানুষ অবসরে যায়...বাসায় বসে আয়েশ করে চায়ে চুমুক দিতে দিতে যৌবনের গল্প শোনায়...অনেকে নাতি নাতনীদের সঙ্গে খেলা করে...তবে মানুষটির কপালে বােধহয় এসবের কিছুই নেই...তা না হলে তাকে এই বয়েসে রাস্তায় নামতে হতো না...
তিনি একটি প্রাইভেট গাড়ির ড্রাইভার...গাড়িটাতে এ.সি নেই...জানলার বাইরে তিনি একটা হাত বের করে রেখেছেন...একটু বাতাসের আশায়...মানুষটার মুখে কী যে ক্লান্তির ছাপ...ঝিমিয়ে পড়া কুকুরের মতো মাথা নীচু করে তিনি স্টিয়ারিং চেপে ধরেছেন...
পরনে আধময়লা সাদা পাঞ্জাবি আর মুখভর্তি সাদা দাড়ির ভীষণ বুড়ো ক্লান্ত মানুষটাকে দেখে আমার গলার কাছে কান্না দলা পাকাতে শুরু করে...যদিও জানি এর কোন মানে নেই...তবুও মানুষটার বাজে নিয়তির কথা ভেবে আমার বুকটা খুব পুড়তে থাকে...