কাছের এক বন্ধু ফোন দিয়েছে, ওর বউয়ের চাকরিটা এ মাসেই শেষ...খবরটা শুনেই আমার দিশেহারা লাগে...কারণ কতো কম টাকা দিয়ে এ দুটি প্রাণী ঢাকায় টিকে আছে তা আমার চেয়ে কেউ ভাল জানে না...ওরা বিয়ে করেছে মাত্র ছমাস...বিয়ের আগে আমরা ৩ জন...মানে বন্ধু, তার হবু স্ত্রী আর আমি মিলে কমপক্ষে পঞ্চাশবার হিসেব কষেছি এতো কম টাকা দিয়ে টিকে থাকা সম্ভব কী না??? বলা বাহুল্য প্রতিবারই হিসেবের উত্তর এসেছে ’না’...কিন্তু আমি প্রতিবারই আরো সূক্ষ হিসেব করে সেই উত্তরকে হ্যাঁ করে দিয়েছি...আমি এসব চালিয়াতি খুব ভালো পারি কি না...কিন্তু এখন!!!
আমার চেনা জানা গন্ডি খুব ছোট...তবুও সাধ্যমতো ফোন দিলাম একে ওকে...এক ছোটভাই আশার বাণী শোনাল...বেচারা নিজেও সমস্যায় আছে তবে তার হাতে একটা সুযোগ আছে...প্রায় নিশ্চিত চাকরি...আমি ভীষণ খুশি এ যাত্রায় ওরা বাঁচলো বলে...এ ঘটনা সকালের, বিকেলে এসে ছোটভাই জানালো, লোক নেয়া হয়ে গেছে...
আমার ভীষণ রাগ হলো...ভীষণ রাগ...ইচ্ছেমতো চেঁচামেচি করলাম নিজের অফিস ঘরে বসে, শুধু শুধুই বললাম ফকিরের কপালে সিঁদুর লেগেছে এমন ঘটনা কেন দুনিয়াতে হয় না...মানুষ এতো গরীব হয়ে জন্মায় কেনো...ভাগ্যে এতোগুলো ফুটো নিয়ে কী দরকার মানুষের জন্মানোর...নিজের ওপরও রাগ হলো, কদিন আগেই যে সাহেববাবুদের মতো ঘুরে এলাম, তার কী প্রয়োজন ছিলো...এ টাকাটা দিয়েইতো ওরা অনায়াসে দুটো মাস...
ঠিক তখনি মনে পড়লো অনেকদিন আগের একটা ঘটনা...এর সঙ্গে সম্র্পক নেই তবুও...এক রেস্তোঁরায় বসে রয়েছি এক দারুণ সুন্দরী তরুণীর মুখোমুখি ( আমার সব তরুণীকেই দারুণ সুন্দরী ভ্রম হয়। রোগটা পুরনো)...অামাদের প্রেম প্রায় ঠিকঠাক...পৃথিবীর কোন বাঁধাই আর আলাদা করতে পারবে না এই ফেজে আছে...
তরুণী তার চশমাটা ঠেলতে ঠেলতে কথা প্রসঙ্গে বললো, শোন তুমি যে এই মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্তের টনটনে অভাব নিয়ে মাথা ঘামাও ব্যাপারটায় কিছুটা ভুল রয়েছে তোমার...আমি খুব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাই...সে বলতে শুরু করে, নিজের ভাগ্য নিজেকে গড়তে হয়...ধর আমি ছোটবেলা থেকে খুব পড়াশোনা করেছি...তোমরা যখন মজা মেরে খেলেছ তখনও আমি পড়ার টেবিলে মুখ গুঁজে...ওই যে সে সময়ের আনন্দ বিসর্জণ দিয়েছি তাই আমি এখন খুব ভাল অবস্থানে...কিন্তু যারা দেয়নি তারাও যদি একই জায়গায় থাকতো তাহলে আমার পুরষ্কারটা রইতো কোথায়???
খুবই খাঁটি কথা অন্তত আমার চোয়াল ঝুলিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট...কিন্তু নির্জলা হুইস্কির স্বাদ যেমন জঘণ্য তেমনি নির্জলা সত্যি কথার স্বাদটাও জঘণ্য...দুটোই গলা পেট জ্বালিয়ে দেয়...তাই তখন প্রতিবাদ করলাম না...
কিন্তু রেস্তোঁরা থেকে বেরিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, নাহ এতো সুন্দর করে সত্যিকথা যে তরুণী বলতে পারে তার যোগ্য আমি নই অথবা তাকে দিয়ে আমার হবে না...কারন এরা মন দিয়ে চলে না যুক্তিই এদের শেষ কথা...আর আমি এর উল্টো...আমি প্রচুর মিথ্যে কথা বলি...যুক্তি দিয়ে মিথ্যেকে সত্যি বানাই...অক্ষমতার রাগকে পেলে পুষে বড় করি...তাই বিদায়...
যতো যাই বলি কর্মফল, চেষ্টা ব্যা ব্যা ব্যা এসবই মন ভুলানো কথা মনে হয় আমার কাছে...একই ঈশ্বর একই পৃথিবী শুধু গল্পগুলো ভিন্ন লিখতে বা শুনতে অামার মোটেও ভালো লাগে না...মোটেও না...
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:৪৫