somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাগরের বুকে বসবাসকারী ১০টি বিপজ্জনক প্রাণঘাতী প্রাণী

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ৮:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের ন্যায় সাগর আর মহাসাগরের বিশাল জলরাশির বুকে বাস করছে চেনা অচেনা হাজারো প্রজাতির প্রাণী। এ সকল প্রানীদের অনেকেই স্থলে বসবাস করা প্রানীদের মত শান্ত প্রকৃতির আবার কতকগুলো হিংস্র। হিংস্রের স্বভাব হচ্ছে বর্বরতা ও বিভীষিকাময় ত্রাসের রাজ্য কায়েম করা। আর শান্ত প্রকৃতির প্রাণীটি ঠিক তার উল্টো। অথচ এই সাগর - মহাসাগরে এমনও কিছু প্রাণী আছে যাদেরকে শান্ত ও কোমল প্রকৃতির প্রাণী বলে মনে হলেও অবস্থার প্রতিকূলে এরাও হয়ে উঠে ভয়ংকর এবং আত্মরক্ষা করতে সৃষ্টিকরে প্রাণঘাতী প্রতিরোধ। কখনো কখনো এদের ভয়ানক আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ড ডাঙ্গার বিপজ্জনক প্রাণীর চরিত্রকেও হার মানায়। আজ তাহলে চলুন সাগরের বুকে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী এমনি ১০টি বিপজ্জনক প্রাণী নিয়ে আলোচনা করি।


১. মোরেইঃ সাপ আকৃতির শক্তিশালী দেহের অধিকারী এই প্রাণীটি লম্বায় ২ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর চোখ ছোট এবং চোয়াল বেশ চওড়া। সব ধরনের মাছ ও সমুদ্রের প্রাণী এর প্রধান খাদ্য । শিকার ধরার জন্য সে দিনরাত সমুদ্র পৃষ্ঠে অবস্থিত পাহাড়ের ফাটল ও গর্তের ভেতর ঘাপটি মেরে বসে থাকে এবং তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করা সব শিকারকে নিমিষেই গলধকরণ করে। এই মাছের চোয়াল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং দাঁতগুলো তীক্ষ্ণ ধারালো। তাছাড়া এদের দাঁত ব্যাক্টেরিয়ায় পরিপূর্ণ। এই কারণে শিকার কোনভাবে এর হাত থেকে রক্ষা পেলেও তীক্ষ্ণদাঁতের কামড়ে ক্ষতস্থানে পঁচনের সৃষ্টি হয় এবং ফলশ্রুতিতে তার মৃত্যু ঘটে। প্রকৃতপক্ষে এই মাছটি মানুষকে আক্রমন করে না কিন্তু যদি তাকে ভয় দেখানো হয় বা সে যদি আক্রান্ত বোধ করে তাহলে মানুষের উপর চড়াও হতে পিছুপা হয় না।


২. সি লায়নঃ আপাতদৃষ্টিতে এদেরকে সামাজিক ও বন্ধুত্বসুলভ মনে হলেও এরা ভয়ংকর হয়ে উঠে যখন এদের রাজ্য আক্রান্ত হয়। যদিও এই প্রানীকে পোষ মানানো যায় তবুও আক্রমণাত্মক চরিত্রের কারণে এদেরকে শতভাগ নিরাপদ মনে করা যায় না। মানুষকে কামড়াতে অভ্যস্ত এই প্রাণী কোনো কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে মানুষকে আক্রমন করে বসলে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। সাধারনত এরা যখনই হুমকির সম্মুক্ষিন হয় বা এদেরকে কোনঠাসা করার চেষ্টা করা হয় তখনি এরা ভয়ংকর হয়ে উঠে।


৩. স্টিংরেঃ ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বখ্যাত কুমির শিকারী স্টিভ ইরউইনকে হত্যা করার মধ্যদিয়ে সাগরের ভয়ঙ্কর প্রাণী হিসেবে এই প্রাণীটি আত্মপ্রকাশ করে। আবার অনেকেই এই প্রাণীটির ভয়ানক রূপ দেখে সমুদ্রের ত্রাস হাঙ্গরের খালাত ভাই বলেও একে আক্ষা দিয়ে থাকেন। এই প্রাণীর লেজের প্রথম এক তৃতীয়াংশে শক্তিশালী ধারালো করাতের ন্যায় খাঁজকাটা বিষাক্ত হুল রয়েছে। যখনই এই প্রাণীটি হুমকির সম্মুক্ষিন হয় বা আক্রান্ত হয় তখনই এই হুলটি কঠিন হয়ে ধারালো ছুরির আকার ধারণ করে। এই বিষাক্ত ছুরির আঘাতের ফলে প্রচন্ড যন্ত্রণাসহ রোগীর স্বাসযন্ত্র ও হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই রোগী মারা যায়।


৪. সী ক্রোকোডাইলঃ সমুদ্রপৃষ্ঠে যে সকল নিষ্ঠুর ও হিংস্র প্রাণী রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম নিষ্ঠুর লুন্ঠনকারী ও হিংস্রপ্রাণী হচ্ছে এই কুমির। লম্বায় ৬ মিটার এবং ১টন ওজনের এই প্রাণীর শিকার সদূরপ্রসারী। বানর, ক্যাঙ্গারু ,বুফালো এমনকি হাঙ্গর পর্যন্ত এদের শিকারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এদের যে তীক্ষ্ণ ধারালো দাঁত রয়েছে সেগুলো খাদ্য কাটা বা চিবানোর জন্য ব্যবহার করে না, মূলত শিকার ধরার জন্য এরা দাঁতগুলো ব্যবহার করে। শিকার বড় হলে তার দেহ নরম করার জন্য গভীর পানির নিচে নিয়ে যায়, আবার কোনো সময় চিবানো বাদে আস্ত শিকারকে গিলে ফেলে।


৫.লায়নফিসঃ ১৩টি বিষাক্ত কাঁটা দিয়ে পরিবেষ্টিত এই মাছটির দেহ। এই কাঁটার আঘাতে ভিকটিমের দেহে প্রচন্ড বিষক্রিয়া ও জ্বালাযন্ত্রণা শুরু হতে পারে, তবে জ্বালাযন্ত্রণার তীব্রতা শরীরের ভেতর প্রবেশ করা বিষের পরিমানের উপর নির্ভর করবে। অবশ্য এই মাছকে হুমকি প্রদর্শন করা না হলে এরা কখনই মানুষকে আক্রমন করে না। সাধারনত এই মাছের কাটার আঘাতে শরীরে যে সকল প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তার মধ্যে শরীরে দাহ, রক্তক্ষরণ, বমিবমিভাব, মাথাব্যথা, অবশতা, স্বাসকষ্ট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।


৬.সী স্ন্যাকঃ এই সাপটি সাগরের বিষধর প্রানীদের মধ্যে অন্যতম একটি । এই সাপের কামড়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভিকটিমের সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসবে এবং কিছুক্ষণের ভেতর তার মৃত্যু ঘটবে। তবে সাধারনত এই সাপ মানুষকে আক্রমন করে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত সে আক্রান্ত হয় বা তাকে ভয় দেখানো হয় । এই সাপের কামড়ে রোগীর দেহে বিষক্রিয়ায় কালশিটে আকার ধারণ করা, বমি , তৃষ্ণা পাওয়া ও শক ইত্যাদি মরণঘাতি লক্ষণ দেখা দেয়।


৭.পাফারফিসঃ এই প্রাণীটি তার অনিষ্টকারীর উপস্থিতি বা বিপদ আঁচ করতে পারলে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে গ্লোব বা ফুটবল আকার ধারণ করে এবং টেট্রোডক্সিনা যা কিনা সায়ানাইডের চেয়ে শক্তিশালী এমন বিষাক্ত পদার্থ আক্রমনকারীর উপর নিক্ষেপ করে। আজকাল চিকিৎসাবিজ্ঞনে গ্লোব মাছের দেহের (যকৃত , ডিম্বাশয় এবং অন্ডকোষ) টেট্রোডক্সিনা পদার্থটি বেদনানুভূতিনাশক ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।


৮.স্টোনফিসঃ এই প্রানীকে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর প্রাণী হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। আবার সমুদ্রের তলদেশে থাকা নানা রকম পাথরের ভাঁজে নিজেকে নিপুন ভাবে আড়ালে করে রাখার ক্ষেত্রে পারদর্শিতা এবং পাথরের ছদ্মবেশ ধারণ করে সবার চোখকে ফাঁকি দেয়ার প্রবনতার কারণে এই প্রানীটিকে ছদ্মবেশীদের গুরু বলে অনেকেই আখ্যায়িত করে থাকেন। এই প্রাণীর শরীরে ছড়ানো ছিটানো রয়েছে বিষাক্ত কাঁটা এবং এই বিষাক্ত কাঁটা হাঙ্গর ও অন্যান্য লুন্ঠনকারী,অনিষ্টকারী প্রাণীর হাত থেকে তাকে রক্ষা করে। এই কাঁটার আঘাতে ভিকটিমের হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা লোপ পায় এবং শরীর দ্রুত নিস্তেজ হয়ে আসে। এই রোগীর চিকিৎসা বিলম্বিত হলে তাকে আর বাঁচানো যায় না।


৯.টাইগার সার্কঃ সমুদ্রের ত্রাস হাংগরের চরিত্র সমন্ধে আমরা সকলেই কম বেশি জানি। এই লুন্ঠনকারী হিংস্র প্রাণী তার শক্তিশালী চোয়ালের কৃপায় এমন কিছু নাই যে, সে না খায়। ছোট বড় মাছ, পাখী, অক্টোপাস, ডলফিন, ছোট হাঙ্গর এমনকি ধাতব বস্তু পর্যন্ত সে গলধকরণ করে। সাধারনত এরা গ্রীষ্মমণ্ডলের মতো আবহাওয়ায় এবং নাতিশীতোষ্ণ সাগর এলাকায় বসবাস করে।



১০. বক্স জেলি ফিসঃ এই প্রাণীটিও একটি ভয়ংকর এবং বিষাক্ত প্রাণী। এই জেলোটিন মাছের বিষের কারণে প্রতিবছর বেশ কিছু মানুষের মৃত্যু হয়। সরকারীভাবে এই মৃত্যুর সাপেক্ষে সঠিক পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও প্রতি বছর এই প্রাণীর বিষে কয়েক ডজন মানুষের মৃত্য ঘটেছে এমন প্রমান পাওয়া যায়। ফিলিপিনবাসীদের দেয়া তথ্যানুযায়ী সেখানে প্রতি বছরই এই বিষাক্ত প্রাণীটির সংস্পর্শে এসে ২০ থেকে ৪০ জন মানুষ মারা যায়। মানুষের সংস্পর্শে এলে বিষাক্ত প্রাণীটি ভিকটিমের শরীরে বিষ প্রবেশ করিয়ে দেয় ফলে তার দেহে প্রচন্ড জালা যন্ত্রণা শুরু হয়, এরপর শুরু হয় রোগীর স্বাসকষ্ট এবং পরবর্তিতে রোগী জ্ঞান হারিয়ে মৃত্যু বরণ করে।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ১০:০১
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×