somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন মেডিকেলের ভেতরের কথা জানি

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোনো রোগী নিয়ে গেলেন সরকারী মেডিকেলে। বহু হয়রানী শেষে ভর্তি করালেন। অবশ্যই চাইছেন- ১০ জন ডাক্তার দৌড়ে আসবে। বড় বড় ডাক্তারদের তত্বাবধানে সেরে উঠবে আপনার রোগী। কিন্তু বাস্তবে কখনোই হয়না বলে তাদের গুষ্টি উদ্ধারে লেগে যান।

সমস্যাটা সরকারী প্রোটোকলের। এই প্রটোকলগুলো উন্নত বিশ্বে কঠোরভাবে মানা হয়, আমারা বাঙ্গালীয় কায়দায় মেনে চলি।

মেডিকেলের স্বাস্হ্যসেবা নেবার আগে জানুন আমাদের সেবার স্তর ৩টিঃ

১. প্রাইমারী হেলথ কেয়ার (উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পেক্স)
২. সেকেন্ডারী হেলথ কেয়ার (সদর হাসপাতাল)
৩. টারশিয়ারী হেলথ কেয়ার (মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়)

ধরুন আপনার জ্বর, সর্দি।
প্রটোকল আনুসারে আপনার যাবার কথা প্রাথমিক সেন্টারে (যেটা বিদেশে হয়ে থাকে)। সেখানের MBBS ডাক্তার এটার ট্রিটমেন্ট দেবে। তবে সিরিয়াস কিছু দেখলে তাহলে পাঠিয়ে দেবে সেকেন্ডারী বা টারশিয়ারী লেভেলে।

কিন্তু দেশের মানুষভাবে MBBS ডাক্তাররে ডাক্তারই ভাবে না! পাবলিক চায় তার সর্দিও সারাবে FCPS পাশ দেয়া বড় ডাক্তার! :| তাদের এই সাইকোলজিক্যাল সমস্যাই সৃষ্টি করে প্রটোকল ব্রেকের।

তাছাড়া, আমাদের দেশে স্বাস্থ্য সুবিধা অনেক সস্তা। মাত্র ৩০০ বা ৫০০ টাকার বিনিময়ে খুব সহজে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নাগাল পেতে পারি। যেটা উন্নত বিশ্বে অনেক খরচের ব্যাপার। সেজন্য প্রাইমারী কয়োরগুলো শুধু গরিবেরই আস্তানা। সর্দি জ্বরেও আমরা ধরণা দেই বিশেষজ্ঞের কাছে আর ভারী করতে থাকি তাদের পকেট।

মেডিকেলে ভর্তিরপর আমাদের কথাঃ ইন্টারনী বা ছোট ডাক্তার (রেজিস্টার) নয় , আমরা চাই হাসপাতালের সবচেয়ে বড় ডাক্তার ২৪ ঘন্টা আমাগো পাশে খারায়া থাকবো। ইন্জেকশনটাও তিনিই দিবো। :|

মেডিকেলের প্রটোকল অনুসারেই আপনার চিকিৎসা শুরু হয়েছে। একটা রোগী ভর্তি হলে রেজিস্টার তার ট্রিটমেন্ট করবেন, রেজিস্টারের আন্ডারে থাকবে ইন্টারনীরা। বিভাগীয় প্রধানসহ অন্যন্য বড় ডাক্তারদের কাজ হচ্ছে তাদেরকে শিক্ষা দেয়া ও চেকআপ করা তারা কোনো ভুল করছে কিনা সাথে সঠিক নির্দেশনা দেয়া। তেনারা কাজটা প্রতিদিন রাউন্ডের মাধ্যমে করে থাকেন।
এই স্পেসিয়ালাইজড ডাক্তাররা কখনোই সরাসরি কোনো রোগীর তত্বাবধানে থাকেননা এই জিনিষটা আমাদের জানা নেই। শুধুমাত্র রেজিস্টাররা ফেইল করলে তারা আসেন, সরাসরি ট্রিটমেন্ট দেন, অথবা মেডিকেল বোর্ড বসান। তাই আমাদের বক্তব্য হয়ঃ বড় কোনো ডাক্তার তো আমারে দেখলো না! :(

মেডিকেলে প্রত্যেকের দায়িত্ব বন্টন করে দেয়া থাকে। সেখানে ভুল হবার সম্ভাবনা প্রায় নেই। একজন ডাক্তারের দেয়া চিকিৎসা কমপক্ষে ১০ জন ডাক্তার চেকআপ করেন, স্পেশালিস্টগন রাউন্ডের সময় সেটা বিশ্লেষণ করেন। কেউ ভুল করলে তাকে চরম অপমান করা হয়। কিন্তু, তারপরও আমাদের ধারণা মেডিকেলে নয় প্রাইভেট চেম্বারেই ডাক্তাররা ভালো করে দেখেন। B-)

রোগীদের এই সাইকোলজিতে হাসা ছাড়া আমাদের কোনো কাজ নেই।
মেডিকেলে, ডাক্তার যখন প্রেসক্রিপশন লেখেন, সেটা অনেকভাবে বিশ্লেষণের সুযোগ অনেক। অন্যন্য ডাক্তারেরা এটা পড়েন, শিক্ষার্থীরা সেটা দেখে শিখে। তাই এখানে ডাক্তাররা চরমভাবে সতর্ক থাকে যাতে কোনো ভুল না হয়। কিন্তু প্রাইভেট চেম্বারে তারা কারোকাছে দায়বদ্ধ নয়, কোনো বিশ্লেষণও হয়না। তবুও আমরা চেম্বারেই বেশি ভরসা পাই, কারণ ফ্রি জিনিষে আমাদের ভরসা নাই! ;)
যার দাম যত বেশি, সেটি ততভালো। :|

মেডিকেল দেশের একটি টারশিয়ারী বা সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা ক্ষেত্র। ছোটখাট সমস্যা নিয়ে অনেকেই চলে আসে যেগুলো সমাধান করার কথা প্রাইমারী বা সেকেন্ডারী লেভেলে। ফলে এখানকার চাপ বেশি, চাপ সামলাতেই ডাক্তারেরা হিমশিম খান, প্রকৃত রোগীরা পড়েন বিপাকে।


এরকম হাজারো সমস্যায় জর্জরিত হলেও কিছু মানুষ সত্যিকার অর্থে সেবা দিয়ে যান।
(সেবার কথা এজন্যই বলছি, প্রাইভেটে ২৫ হাজার টাকার চাকরী না নিয়ে মাত্র ১০ হাজার টাকায় বা বিনা টাকায় অনারারী হিসাবে ২৪ ঘন্টা সেবা দিয়ে যান অনেকেই) । সারাদিন মাত্র ৮ ঘন্টা অফিস করে বাড়ি ফিরে আপনার যদি ক্লান্ত ও বিরক্ত লাগে তাহলে ভেবে দেখবেন, কিছু মানুষ সারাদিন অন্যকে সেবা দিয়ে হয়তো খেতে বসে, তখন কোনো রোগী এলে না খেয়েই চলে যায়, মাঝরাতেও ঘুম থেকে উঠে বিরক্ত প্রকাশ না করেই সেবা দেয়। এরমাঝেই পড়াশোনার চাপ নেন, নেয় পরিবারের চাপ।

মানুষ শুধু চেম্বারে বসা বড় বড় ডাক্তারদের সুখের কাহিনী দেখে, কখনো দেখেনা, রেজিস্টার ও ইন্টার্ণ ডাক্তারদের পরিশ্রম ও বিসর্জনকে। এই পোস্টের মাধ্যমে আমি তাদের শ্রদ্ধা জানাই কারণ তারাই প্রকৃত সেবক।


ফেসবুকে কর্ণেল সামুরাই
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৩:১৪
৬৫টি মন্তব্য ৬২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওরা আমাদের ঐতিহ্যের পোশাককে নোংরা পোশাক হিসেবে পরিচিত করতে চায়। ওরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে গ্রাস করতে চায়।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০


"লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি'মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।"

এক মৌলভী পোস্ট দিয়েছেন
"শাড়িকে একটি নোংরা পোশাক বানিয়ে দিয়েন না।
শরীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমূদ্র-সৈকতে - ১৬

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯



ছবি তোলার স্থান : মেরিনড্রাইভ, কক্সবাজার, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : পহেলা অক্টোবর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ।

বেড়াবার সবচেয়ে আকর্ষণীয় যায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমূদ্র সৈকত। কখনো কখনো আমারও সুযোগ হয় বেড়াতে যাবার।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাঁআআআচ্চুউউউ! :) :D ;)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ৯:৩৩



হাঁচতে নাকি জানে না কেউ,
কে বলেছে বোন
এই দেখোনা কত্ত হাঁচির
ওজন শত টন।

কিম হাঁচে বাড়া ভাতে,
বাইডেন হাঁচে তার সাথে সাথে,
লালচে চীনের জোরসে হাঁচি,
কাঁদে সবুজ ঘাস।
মাদার রুশের হাঁচি দেখে
হয় যে বনবাস!!

বনবিবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেইন্ট মার্টিন ও কোক ইস্যু

লিখেছেন নিবারণ, ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪

বিগত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে চর্চিত বিষয়, কোকের বয়কট ও গত দুই দিন ধরে সেইন্ট মার্টিন মায়ানমার দখল করে নেয়ার খবর।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্রিভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, মায়ানমার সেইন্ট মার্টিন দখল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গান গাইলাম (সাময়িক)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৪:০৮

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমি আদর করে 'আই' ডাকি। আইকে দিয়ে অনেক কাজই করাতে হয়। এবারে, আমাদের ৫ ভাইদের নিয়ে একটি গান বুনেছি। আমরা ৫ ভাই অনেক দিন একসাথে হই না। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×