somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাজভঞ্জন

১৫ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৭:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ডিসক্লেইমার: অতি অনুভূতিপ্রবন পাঠকগনকে বলছি, অনুগ্রহপূর্বক এড়িয়ে যান। মেজাজ খারাপ করে লেখার কোন আগামাথা থাকেনা।]
 
শ্রীরাধিকার মানভঞ্জন উপাখ্যান এ যুগের বহু পুরুষদের উৎসাহিত করেছে তাদের প্রেয়সীর রাগ ভাঙানোর ইনোভেটিভ পদ্ধতি বের করার জন্য। উৎসাহিত করেছে এ যুগের প্রেমিকাদেরও, একের পর এক মানভঞ্জককারী আবেদনকে কীভাবে অবলীলায় উপেক্ষা করতে হয়। একগোছা রজনীগন্ধা হাতে নিয়ে বললাম, আর চললাম...হয়ে গেল, রাগ কমে গেল, বিষয়টা আর এত সহজ নেই। সেই বড়ুচন্ডীদাসও নেই আর সেই রাধিকাও নেই। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে ফুলের দোকানে না গিয়ে আপনাকে জুয়েলারী বা শপিংমলে যেতে হতে পারে!! নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন এতক্ষনে, লাজভঞ্জন শিরোনাম দিয়ে মানভঞ্জন নিয়ে বকবক করে যাচ্ছি। প্রসঙ্গে আসি, একজন ভিক্ষুককে বলেছিলাম তার প্রথমদিন ভিক্ষা করার অভিজ্ঞতা বলার জন্য। তিনি বলেছিলেন, প্রথমবার ভিক্ষার থালাটা সামনে এগিয়ে ধরতে একটু লজ্জা-লজ্জা করেছিল তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর আস্তে আস্তে খুঁড়িয়ে হাটা বা হাঁপানী রোগীদের মাত শ্বাস নেয়াটা কখন যে আয়ত্ব হয়ে গেছে টেরই পাইনি!!! আসলেই, এই লাজভঞ্জনটা কোনমতে হয়ে গেলেই আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়না। আমার জানতে ইচ্ছে করে, অফিসের টিফিনের বাজেট থেকে প্রথম টাকা আত্মসাত করে কারও লজ্জা লাগার কথা, একই ব্যক্তির লাজভঞ্জনের পর সোনালী ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতকে খুবই স্বাভাবিক মনে করার কথা। আমার ইচ্ছে আছে কাউকে জিজ্ঞেস করব প্রথমদিন ঘুষ নেবার অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল, অথবা একজন খুনীকে বলব তার প্রথম ক্রাইমের অভিজ্ঞতা বলার জন্য। শুনেছি কচুগাছ কাটতে কাটতে নাকি কসাই(মতান্তরে ডাকাত) হয়। সুপারভাইজারের কাছে প্রথমদিন মেডিকেল এক্সিউজ দেখানোটা একটু কেমন যেন মনে হয়, লজ্জা লজ্জা লাগে। কিন্তু লাজভঞ্জন হয়ে গেলে ডেন্টিস্ট থেকে শুরু করে কার্ডিওলজিস্ট কোন কিছুই ব্যাপার না। ভৈরবী(ছদ্মনাম) নামে আমাদের এক বান্ধবী ছিল ফার্স্ট ইয়ারেই যার বিয়ে হয়ে যায়, ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম বিবাহিত জীবনের লাজভঞ্জন এর কথা বলার জন্য। আমাদের অতিউৎসাহ অতি-অতিউৎসাহে পরিনত হল যখন ভৈরবী বাসর রাতের লাজভঞ্জন দিয়ে ওর গল্প শুরু করল। কিন্তু, লাজুক এবং অবিবাহিত বান্ধবীদের প্রবল আপত্তির মুখে  সেই গল্প অসমাপ্তই থেকে যায়। ভৈরবী, আমরা আজও অপেক্ষা করছি সেই গল্পটা শোনার জন্য!!! কোন দুষ্টুমী নয়, এবার রাজনৈতিক লাজভঞ্জনের কথা বলি। প্রথমবার দল বা গ্রুপ চেঞ্জ করতে একটু কেমন কেমন লাগবে। কিন্তু, একবার করে ফেললে দেখবেন এসব কোন বিষয়ই না। আজ আওয়ামীলীগ কাল বিএনপি পরশু জাতীয় পার্টি তরশু জামাত...এভাবে ইনফিনিটি। বিশ্বাস না হলে বিশেষজ্ঞদের জিজ্ঞেস করুন। একবার লাজভঞ্জন হলে অবলীলায় অনেককে ‘তুমি তো আমার জাষ্ট ফ্রেন্ড’ বলতে পারবেন, সিগারেটে লাজভঞ্জনটা হয়ে গেলে আস্তে আস্তে...। স্লিভলেস এ লাজভঞ্জন তো শর্ট স্কার্ট বিষয় না, এভাবে...। ‘কাজল কালো চোখ‘, ‘পাপড়ীর মত ঠোঁট‘ দিয়ে কবি সাহিত্যিকদের লাজভঞ্জন হলেও অনেকে আস্তে আস্তে শরীরের কোন অংশই আর বাকী রাখেন না। এখানেই শেষ নয়, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পর এরা এদের কার্যাবলী নিয়েও কবিতা-গল্প লিখে পোস্টমডার্নিজম দেখায়!! হায় লাজভঞ্জন!!! পৃথিবীর সব জায়গায়, সব সময়, সব প্রফেশনেই এই ‘ল অব লাজভঞ্জন’ একইভাবে প্রযোজ্য। যেমন ধরুন, আপনি একটি বড় পদে আছেন, আচ্ছা ধরা যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। আপনার বিরুদ্ধে খুব সামান্য একটি অভিযোগই আপনার পার্সোনালিটিতে আঘাত করল এবং আপনি সাথে সাথেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু লাজভঞ্জন হয়ে গেলে বিস্তর অভিযোগেও আপনি অটল থাকতে পারেন। আবার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে রাস্তাঘাটে ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে বসে পড়তে প্রথমবার একটু লজ্জা লাগতে পারে। ‘ল অব লাজভঞ্জন’ অনুসারে, একবার লাজভঞ্জন হয়ে গেলে রাস্তাঘাট, ভিসিভবন, বা প্রশাসনিক ভবনের সামনে হাড়ি-পাতিল নিয়ে বসতেও সমস্যা হবার কথা না। ছাত্র-ছাত্রী হয়েও পড়াশুনা না করা, অথবা চাঁদাবাজী বা দলীয় লেজুরবৃত্তি করতে প্রথম প্রথম একটু লাজলাজ করতে পারে কিন্তু একবার লাজভঞ্জন হয়ে গেলে...। কবিই তো বলে গেছেন, ‘করিতে পারিনা কাজ, সদা ভয় সদা লাজ, সংকল্প সদা টলে, পাছে লোকে কিছু বলে!!’ অথবা, ‘লজ্জা, ঘিন্না ভয়, এই তিন থাকিতে নয়!!’  মানুষজনের কথা শুনে লাভ নেই। চোখ বন্ধ করে প্রথম খারাপ কাজটি একবার করে ফেলতে পারলে পরের খারাপ কাজগুলো করতে আর লজ্জা লাগেনা। ছোটখাট পরিবেশে মিথ্যা বলা শুরু করুন, হ্যাঁ প্রথমে হয়ত একটু লজ্জা লাগবে। লাজভঞ্জন হয়ে গেলে আপনি টেলিভিশান টকশোতে বা সমাবেশে নির্ধিদ্বায় অনবরত মিথ্যা বলতে পারবেন। শীতকালে পুকুরে বা নদীতে স্নান করতে প্রথম ডুবটা দিতে একটু শীত শীত করত, পরে একঘন্টা-দুঘন্টা কোন বিষয়ই ছিলনা। প্রেরণার জন্য অখিল বন্ধু ঘোষ শুনে নিন, ‘যেন কিছু মনে করনা কেউ যদি কিছু বলে, কত কি যে সয়ে যেতে হয় ভালোবাসা হলে’। অথবা ‘অরিজিনাল সিন’ বিষয়ক মুভি বা বই পড়ুন। বাচ্চাদের কে ছোট বললে ওরা প্রতিবাদ করে। এক বাচ্চা তার মাকে একটি নিষ্পাপ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিল, তার বয়স মাত্র চারবছর কেন, আরও বেশী নয় কেন? তার মা উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তোমার বাবা খুব লাজুক ছিলেন তো তাই!!’ ভাগ্যিস, এই গল্পে পিচ্চি আর কথা বাড়ায়নি। এটা ব্যতিক্রম। সাধারনত পিচ্চিরা ক্রমাগত প্রশ্ন করতেই থাকে। যাই হোক, বিষয়টা এমন নয় যে আপনি লাজুক ছিলেন বলে আজীবন আপনাকে লাজুক থাকতেই হবে, একবার শাহবাগ সমর্থন করেছেন তো আপনাকে কোটা পদ্ধতির পক্ষে বলতেই হবে; হেফাজত করেছেন তো তেতুল থিওরী সমর্থন করতেই হবে; রাজাকার ছিলেন তো জামাত করতেই  হবে। ‘বদলে যাও, বদলে দাও’ আছেনা? অবশ্য ‘সবকিছু বদলাতে নেই, যেমন সত্য ও সুন্দর’ এটাও তো আবার আছে!!!
 
তবুও, পৃথিবী প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল।সর্বোপরি, ভালো হবার উপরে সরকার এখনও কোন ট্যাক্স বসায়নি।কেন, এ্যরিষ্টটলই তো এই ল অফ লাজভঞ্জনের জনক। ধরা যাক, একজন মানুষ সত্যবাদিতার উপরে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন এবং দশটি বই লিখলেন। তিনি নিজে কিন্তু আবশ্যিকভাবে সত্যবাদী নাও হতে পারেন।‘সত্যবাদিতা’ নামক গুনটি অর্জন করতে হলে তাকে প্রতিনিয়ত সত্য কথা বলতে হবে। এভাবেই মানুষ ক্রমাগত অভ্যাসের মাধ্যমে একসময় ন্যায়পরায়নতা, উদারতা নামক সদগুনগুলো অর্জন করে থাকে। অনেক অশিক্ষিত সত্যবাদী দেখেছি, আবার অনেক মিথ্যাবাদী ড: ও দেখেছি!! সমস্যা হল, শিক্ষিতরা একদম সত্যের মত করে মিথ্যা বলে।
 
লাজভঞ্জন চিরায়ত কোন খারাপ বিষয় না। তবে, লাজভঞ্জন এক্সট্রিম লেভেলে হলে মানুষ নেংটুপুটু হয়ে যায়। ঐটা দেখতে একটু খারাপ লাগে, এই আর কি।
 
 
 
 
 
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×