পর্ব - এক
জেরুজালেম ,
২০শে জুলাই ,১৯৫১ শুক্রবার । এই দিনটি জর্দানের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ন দিন ।
জুমার সময়। নামায হবে মসজিদে আল আকসায়, মুসলমানদের দ্বিতীয় পবিত্র মসজিদে । নামায পড়তে আসছেন , টান্স-জর্দানিয়ান সাম্রাজ্যের রাজা কিং আবদুল্লাহ ।
কিন্তু কিং আবদুল্লাহকে মসজিদের গেটেই গুলি করে হত্যা করা হয়,আর সেই গুলিটি করে একজন প্যালেস্টাইনি তরুণ । তিনি তার জীবনের সবচেয়ে বড় মূল্য দেন তার নিজের জীবন দিয়ে । কারন প্যালেস্টাইনিরা মনে করতেন তিনি নতুন সৃষ্টি হওয়া দেশ ইসরাইলের সাথে অনেক বেশি ঘনিস্ট ছিলেন ।আর সেই কারনেই তাকে মৃত্যু বরন করতে হয় ।
কিং আবদুল্লাহ কে হত্যা করা হয় তার ১৫ বছর বয়স্ক নাতি প্রিন্স হুসেন বিন তালাল এর সামনে । সে তখন সেইখানেই তার সাথে উপস্থিত । বন্দুকের গুলির সামনে নিজের দাদাকে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখলেন তিনি , দাদার সাথে তার একটি অতন্ত গভীর ভালো সম্পর্ক ছিলো । সেই কিশোর বয়সেই এমন একটি বিষাদময় ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলেন তিনি ।
সেই সময় ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং সমগ্র জেরুজালেম টান্স জর্দানিয়ান সাম্রাজের নিয়ন্ত্রণে ছিলো । আর প্যালেস্টাইনদের ভালো মন্দ দেখবার ভার নিয়েছিলো জর্দান । কিং আবদুল্লাহ হত্যার পর জর্দানের জর্দানের সিংহাসনে কে বসবে টা নিয়ে শুরু হয় এক অচলঅবস্থা । চারিদিকে এক অনিশ্চয়তার মেঘ সাথে এই অতীব গুরুত্বপূর্ন্য ভৌগোলিক অঞ্চলের রাজনীতিও নির্ভর করছিলো নতুন শাসকের হাতে ।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় , প্যালেস্টাইনের ( ইসরাইল রাষ্ট্র হবার আগে সমগ্র অঞ্চলকে প্যালেস্টাইনই বলা হত ) জর্দান অংশে কাছাকাছি বসবাস কৃত প্যালেস্টাইনিরা বিশ্বাস করতো কিং আব্দুদুল্লাহ সাথে জায়নিস্টদের খুব ভালো সম্পর্ক আছে এবং তারা গোপনে নিয়মিত দেখা সাক্ষাত করতো এদের মধ্যে গোল্ড মায়ারও রয়েছেন ( যিনি পরবর্তীতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হোন ) । আর এই কারনে তারা তার উপর ক্ষ্যাপা ছিলো , যার অন্তিম ফলাফল এই হত্যাকান্ড । যা এই অঞ্চলের ইতিহাস চিরতরে বদলে দেয় । অনেক কিছুরই শান্তি পূর্ন সমাধানের পথ বন্ধ হয়ে যায় । এখানে বলে রাখা উত্তম তখনও কিন্তু জেরুজালেম মুসলমানদের হাতে ছিলো এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রন ছিলো মুসলমানদের হাতে ।
এই হত্যাকাণ্ড জর্দানের রাজপরিবারে এক অনিশ্চয়তার দুয়ার খুলে দিলো। পরবর্তী রাজা কে হবেন এটা নিয়ে কেউই নিশ্চিত ছিলেন না । জর্দানের সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তি রাজা হবেন ক্রাউন প্রিন্স কিন্তু ক্রাউন প্রিন্স তালাল তখন দেশে ছিলেন না তিনি ছিলেন সুইজারল্যন্ডে । সেই সময় রয়াল সার্কেলে এবং মিডিয়ার একটাই বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো কে হবেন রাজা কারন সে সময় একটা খবর বাতাসে ভাসছিলো , প্রিন্স তালাল মানুসিক ভাবে সুস্থ না , তিনি সুইজারল্যান্ডে মানুসিক রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন ।
আর একটি কথাও ভাসছিলো বাতাসে , ১৯৪৮ শে কিং আবদুল্লাহ বৃটেনের সাথে অ্যাংলো-জর্দানিয়ান ট্রিটি নামে একটি চুক্তি করেন , যার ফলে প্রিন্স তালাল বৃটেনের হাতে বন্দি ছিলেন ,আর এর ফলে বাবা –আর সন্তানের মধ্যে এক বড় ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছিলো ।
চারিদিকে তখন একধরনের অবিশ্বাস আর অনিশ্চয়তার শংকা ।
এই যখন অবস্থা ছিলো , তখন একদল প্রিন্স নায়েফকেও ক্ষমতায় বসাতে চাচ্ছিলো । প্রিন্স নায়েফ প্রিন্স তালালের ছোটো ভাই ছিলো । জর্দানের রাজ পরিবার হাশেমাইট বংশের একটি অংশ ।তারা দাবি করে তারা সরাসরি মহানবী (সাঃ) বংশধর এবং কুরাইশদের একটি গ্রোত্র থেকে এসেছে । এই হাশেমাইট বংশের আর একটি অংশ ছিলো ইরাকে । তারা সেখানে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বিশাল ইরাকী সাম্রাজের অধিকারি তারা । তার মানে হচ্ছে একি সময়ে একটি রাজ বংশের দুইটি ধারা তখন দুইটি গুরুত্বপূর্ন্য দেশের ক্ষমতার অধিষ্ঠিত ছিলো । ইরাক সেহেতু বড় দেশ তো তাদের কথার একটি প্রভাব ছিলো জর্দানের উপর । তারা চাচ্ছিলো যেন প্রিন্স নায়েফকে যেন সিংহাসনে বসানো হয়।
এখনের আর কথা গুরুত্বপূর্ন্য সেটি হলো । কিং আবদুল্লাহ নিজে চাইতেন যাতে একদিন জর্দান এবং ইরাক এক হয়ে যায় এবং যৌথ হাশেমাইট সাম্রাজ্যের সূচনা হয় এবং হাশেমাইট বংশের মধ্যে যে যোগ্য সেই এই মিলিত সাম্রাজ্যকে চালাক এবং তিনি এই বিষয়ে উইলও করতে চেয়েছিলেন । তাই হাশেমাইট বংশের ইরাকী অংশ নিজেদের পছন্দ মত একজন শাসক বসিয়ে এই কাজটাকেই বাস্তবতায় রুপ দান করার লক্ষে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নিজেদের পছন্দের একজন শাসক বসাতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু বৃটেন এবং জর্দানের প্রধানমন্ত্রী তাওফিক আবু হুদা এটা কখনোই হোক চাচ্ছিলেন না । তাই চিকিৎসকদের একটি টিম পাঠানো হলো সুইজারল্যন্ডে , তারা সেখানে গিয়ে প্রিন্স তালালকে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে দেশে এসে জানালেন ক্রাউন প্রিন্স তালাল সম্পূর্ণ সুস্থ ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেবার জন্যে এবং জর্দানের পরবর্তি রাজা হবার জন্য ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৩:১১