আদিকাল থেকে মানুষ আকাশ বলতে বোঝে আমরা উপর দিকে তাকালে যে সুবিসত্মৃত নীলিমা দেখতে পাই সেটিকে৷ মহাবিশ্ব বলতে মানুষ এ সুবিশাল পৃথিবী (পৃথিবী সুবিশাল !!!) আমাদের উপর সুবিসত্মৃত বিশাল নীলিমা এতদুভয়ের সমন্বয়ে এ মহাবিশ্ব৷ আর এ আকাশ সম্পর্কে বহু কল্প কাহিনী রচিত হয়েছে৷ মানুষ ধারণা করতে আমাদের উপর অনেক উঁচুতে এ আকাশের অবস্থান যা কনক্রিট জাতীয় কোন কিছু দ্বারা নির্মিত যা আমাদের উপর ছাদের মত হয়ে আছে৷ মানুষ কল্পনা করত স্রষ্টার কি ৰমতা যে এ সুবিশাল আকাশ কোন প্রকার খুটি ছাড়া কিভাবে অটুট রেখেছেন৷ মানুষ ধারনা করতো এ আকাশের উপর স্রষ্টার বিশেষ সৃষ্টি বসবাস করে৷ আরো ধারণা করতো এ আকাশের উপর হয়ত এরম্নপ আরো অনেক আকাশ রয়েছে৷ এ যমিন সম্পর্কেও বহু কল্প কাহিনী রচিত হয়েছে৷ মানুষ মনে করতো মাটির অতল গহবরে আরো অনেক জগত রয়েছে৷ এমনকি এখনও যারা মহাবিশ্ব সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান রাখে না তাদের অনেকে এরম্নপ ধারণা পোষণ করে থাকে৷
বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ এ মুর্খতাসূলভ ধারণা থেকে অকেটা বেরিয়ে আসতে পেরেছে৷ মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানের সুপ্রতিষ্ঠিত জ্ঞান থেকে এ পর্যনত্ম যে ধারণা পাওয়া যায় তা হল- আমরা যে সুবিশাল নীলিমাকে আকাশ বলি সেটা অবশ্য সূর্যের রঙের খেলা ছাড়া কিছু নয়৷ আর এ পৃথিবী মহাবিশ্বের তুলনায় মোটেও সুবিশাল নয়৷ সুবিশালতো নয়ই বরং এ পৃথিবীকে ৰুদ্র একটি সৃষ্টি বললেও ভূল হবে৷ আমাদের এ পৃথিবী যে গ্যালাঙ্েিত রয়েছে সে গ্যালাঙ্রি মানচিত্র আঁকলে আমাদের সূর্যকে দেখা যায় একটি ৰুদ্র বিন্দু যা আমাদের এ পৃথিবীর চেয়ে লৰ গুণ বড়৷ আর আমাদের এ সুবিশাল পৃথিবী!! সে মানচিত্রে পৃথিবীকে খালি চোখে দেখাও যায় না৷ এ গ্যালাঙ্ িসুবিশাল!!! আমাদের এ গ্যালাঙ্েিক যখন ক্লাস্টার অব গ্যালাঙ্রি সাথে তুলনা করা হয় তখন আমাদের এ গ্যালাঙ্ িবেচারাকে দেখা যায় এক অতি ৰুদ্র বিন্দুর আকৃতিতে৷ আমাদের অবস্থান কোথায়! পৃথিবী ও তথাকথিত আকাশ যদি এতদুভয়ের সমন্বয়কে মহাবিশ্ব বুঝাতো তাহলে মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব বলাতে অযৌক্তিক মনে হয় না৷ কারণ এ পৃথিবের বুকে প্রাণী জগতের মধ্যে সব দিক দিয়েই মানুষ শ্রেষ্ঠ৷ কিন্তু মহাবিশ্বের সাথে আমাদের পৃথিবীর তুলনা করলে আমরা কত ৰুদ্র ও নগণ্য তা বলার অপেৰা রাখে না৷ এ মহাবিশ্বের মাঝে আমাদের পৃথিবীর মত এরম্নপ হাজার হাজার গ্রহ (যেখানে মানুষের চেয়ে বুদ্ধি-বৃত্তি সহ অন্যান্য সকল দিক থেকে শ্রেষ্ঠতর প্রাণী থাকতে পারে) যে নেই তারই কি গ্যারান্টি আছে?
আল-ক্বুরআনে আকাশ ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে যে প্রতিচ্ছবী একেছে তা আদিকাল থেকে মানুষ এ সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করতো তার চেয়ে বেশি কিছু নয়৷ নিম্নে আকাশ ও পৃথিবী সম্পর্কে আল ক্বুরআনের কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হল
আকাশকে ছাদ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে:
আকাশ নাকি চূর্ণ-বিচূর্ণ হবে (আকাশ কি কনক্রিট জাতীয় কিছু)
تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنشَقُّ الْأَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ هَدًّا [١٩:٩٠]
(সেদিন আকাশসমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হবে, জমিন ফেটে যাবে এবং পাহাড় ভেঙ্গে পড়বে)
আকাশ খুটি ছাড়া টিকে রয়েছে (যেন এটা কনক্রিট জাতীয়):সুরা লোকমান:১০
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ۖ وَأَلْقَىٰ فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَن تَمِيدَ بِكُمْ وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَابَّةٍ
(তোমরা দেখছ যে তিনি আকাশ সমূহ সৃষ্টি করেছেন কোন খুটি ছাড়া।আর তিনি যমিনে সুদৃঢ়ভাবে পাহাড়সমূহ স্থাপন করেছেন যাতে করে ইহা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে না পড়ে এবং এতে তিনি সকল প্রকার প্রাণীর বিচরণ ঘটিয়েছেন)
তারকারাজি দ্বারা দুনিয়ার আকাশ সাজানো হয়েছে!কোন কোন তারকা নাকি শয়তান তাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হয়(যারা মহাবিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান রাখে তারা না হেসে পারবে না):
إِنَّا زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِزِينَةٍ الْكَوَاكِبِ [٣٧:٦
(নিশ্চয়ই আমরা দুনিয়ার আকাশকে তারকারাজি দ্বারা সুসজ্জিত করেছি)
وَحِفْظًا مِّن كُلِّ شَيْطَانٍ مَّارِدٍ [٣٧:٧]
আর এজন্য যে ( আরও এজন্য তারকারাজি সৃষ্টি করা হয়েছে) উহা প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান থেকে রক্ষার হাতিয়ার
সাতটি আকাশ ও সাতটি আকাশের অনুরুপ জমিন:
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ يَتَنَزَّلُ الْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا [٦٥:١٢]
(তিনি আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন সাতটি আকাশ এবং অনুরুপ জমিন যেখানে তাদের আদেশসমূহ অবতীর্ণ হয় এজন্য যে তোমরা জানতে পার যে আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং তার জ্ঞান সবকিছু পরিব্যপ্ত করে আছে)
আকাশ অনেক উচূতে (বিজ্ঞান বলে আমরাও মহাশূণ্য লক্ষ্ লক্ষ গ্রহ-নক্ষত্রের মাঝে ভেসে বেড়ায়, এখানে উচু নিচুর প্রশ্ন অপ্রাসাঙ্গিক):
وَإِلَى السَّمَاءِ كَيْفَ رُفِعَتْ [٨٨:١٨
(আর তোমরা কি আকাশের প্রতি লক্ষ কর না যে তিনি উহাকে কিভাবে উচুতে স্থাপন করেছেন)