আপনি কি জানেন যে আপনি অন্ধ?আপনি কি জানেন পৃথিবীর প্রায় ৯০% লোক অন্ধ(অন্তঃচক্ষু)।বাহ্যিক চোখ অন্ধ হলে অন্ধ ব্যক্তি জানে যে তার চোখ অন্ধ,কিন্তু অন্তঃচক্ষু অন্ধ হলে যার চোখ অন্ধ সে বুঝতে পারে না যে তার চোখ অন্ধ।যাদের অন্তঃচক্ষু অন্ধ তারা তাদের নিজেদের কি সর্বনাশ করছে তার উপর আলোকপাত করার পূর্বে আপনি অন্ধ কিনা তার আত্ম-যাচাইয়ের পদ্ধতি দেখানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি না-ই জানেন যে আপনি অন্ধ, অন্ধত্বের যত ভয়ানক পরিণতির বিষয়ে যতই জানেন না কেন, আপনি তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের অজান্তেই নিজ অন্ধত্বের কারনে নিজের সর্বনাশ করে চলবেন।আপনি নিজে অন্ধ কিনা তা আত্ম-যাচাইয়ের পদ্ধতি প্রত্যেকেরই জানা আবশ্যক।
যে যে কারনে আপনি অন্ধ হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা:
১. আপনি যে ধর্মীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন সে ধর্মকে শিশুকাল থেকে অনেক পবিত্র বলে জেনে এসেছেন এবং শ্রদ্ধা করতে শিখেছেন।ধর্ম বিরোধী কথা চিন্তা করাও মহাপাপ।
এ চিন্তা আপনাকে অন্ধ বানাতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে।চাক্ষুষ্মানরা কোন কিছুই যাচাই-বাছাই না করে বিশ্বাস করে না। আপনার ধর্ম সঠিক/বেঠিক কিনা তা যাচাই তো দূরের কথা, তাতে বেঠিক কিছু থাকতে পারে তা চিন্তা করাও পাপ হিসাবে আপনাকে শেখানো হয়েছে।ধর্ম-তা পবিত্র জিনিস।উহাকে তো শুধু সম্মান করতে হবে; ভূল কিছু থাকতে পারে তাতো আপনি কষ্মিনকালেও ভাবেন না-ভাবার সুযোগও নেই। যেহেতু বেঠিক কিছু থাকতে পারে তাহা ভাবা নিষেধ এ সুযোগে ধর্মের নামে আপনাকে যে কোন কিছু হযম করানো সহজ, এবার আপনাকে চরম হাদারাম বানানোও যাবে এ ধর্মের নামে। যত হাদারামজনক কাজও হোক না কেন যদি বল হয় উহা আপনার ধর্মে আছে তখন আপনি কোন প্রশ্ন উত্থাপন করবেন না,যদিও বা ব্যখ্যা চান তখন এক গোজামেলির উত্তর দিলেই আপনি সন্তুষ্ট।কারন ধর্ম নিয়ে বেশি প্রশ্ন করে পাপের ভাগিদার কে হতে চাই।
এদিক দিয়ে মুসলমানেরা অন্যেদের চেয়ে বেশি এগিয়ে।মুসলিম শিশুদের শিখানো হয় যে অমুক অমুক বিষয়ে তাদেরকে অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে, অন্যথায় ঈমান চলে যাবে।ঠিক/বেঠিক চিন্তার সুযোগ কোথায়?বেঠিক ভাবলে তো ঈমান চলে যাবে।কে্উ যদি ইসলামের কোন বিষয় বেঠিক বলে যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করে তখন তাদেরকে ইসলামের শত্রু/নাস্তিক ইত্যাদি বলে তাদের থেকে দূরে থাকতে বলা হয় এবং শেখানো হয় যারা ঐসকল যুক্তিকে অগ্রাহ্য করে তাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় রাখতে পারে তারাই মজবুত ঈমানের অধিকারী।
২. আপনি যা বিশ্বাস করেন, বিশেষত: যে ধর্মে বিশ্বাস করেন তার সমালোচনা শুনলে আপনার মনে অনেক কষ্ট লাগে।যারা চোখ কান খোলা রেখে চলতে চায়, সমালোচনা তাদের অনেক উপকার করে। আপনার মুখে দাগ থাকলে আয়না তো সমালোচনা করবে।প্রতিবাদে আপনি আয়না ভাঙ্গার উদ্যেগ নিলে তা তো ভাল কাজ করবেন না।সমালোচক গঠনমূলক পদ্ধতি অবলম্বন না করে খারাপ ভাষা ব্যবহার করলে তা সমালোচকের অজ্ঞতার পরিচায়ক হতে পারে,তাই বলে তার কথা থেকে যে আপনার সংশোধনীর সুযোগ নেই তা তো নয়।সমালোচক নিজে অজ্ঞ হতে পারে কিন্তু তার কথা অন্য জ্ঞানী থেকে শেখা বুলি হতে পারে যা আপনার ভূল ভাঙ্গাতে সাহায্য করবে।
৩. নিজ বিশ্বাস, চিন্তা,চেতনা ইত্যাদি ১০০% সঠিক বলে সকলের কাছে প্রতিয়মান হয়।অন্ধরা নিজ বিশ্বাসকে শক্তভাবে আকড়ে ধরে, যাদের চোখ খোলা তারা তাদের কাছে যা কিছু উপাস্থাপন করা হয় তা যৌক্তিক হলে নিজ বিশ্বাস পরিবর্তন করতে সময় নেয় না। কারন তাদের কাছে সত্যে অনেক বেশি প্রিয়।
৪. আপনাকে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে মানুষ কোন কিছুকে অনেক বেশি ভালবেসে ফেললে এবং কোন কিছুর প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাখলে সে তার শুধু ভালই দেখতে পায় এবং সে এমন কিছু দেখতে পায় যাতে মনে হয় তারই বিশ্বাসই ঠিক, সে দেখতে পায় এমন অনেক কিছু ঘটতে যা তার বিশ্বাসের সাথে মিলে যায়।যেমন ধরুন যারা মাযারে বিশ্বাস করে তারা মাযারে অনেক কিছু উৎসর্গে তাদের রোগ মুক্তি, বিপাদাপদ থেকে মুক্তি পেতে, মূর্তি পুজারিরা বিশ্বাস করে দেব দেবীর নামে অনেক কিছু উৎসর্গ করলে তাদের কল্যান হবে,বিপদাপদ থেকে মুক্তি পাবে, যারা পীরে বিশ্বাস করে তারা বিশ্বাস করে তাদের পীরদের অনেক অলৌকিক ক্ষমতা আছে, তাদের ঝাড়-ফুকে অনেক উপকার হয় এভাবে পৃথিবীর বহু চিন্তা বিশ্বাসের লোকেরা তাদের নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী বহু ত্যাগ উৎসর্গ করে থাকে। আপনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন তারা তাদের উৎসর্গানুসারে কোন ফল পায় কিনা, প্রত্যেকেই অত্যান্ত দৃঢ়তার সহিত বলবে তারা অবশ্যই ফল পায়।আসলে কি সবার বিশ্বাসই কি সত্যে?বস্তুত: এটাও একটি প্রকৃতি যে আপনি কোন কিছু বিশ্বাস করলে কোন কিছু ঘটার পিছনে আপনার বিশ্বাসের আলোকে কল্পনা করলে উক্ত বিষয়টি মনে হবে আপনার বিশ্বানুরুপ ঘটেছে। আমি যদি কোন দূর্যোগমূলক কোন কথা (যেমন-আগামিকাল ঢাকায় যেতে পথে যদি তুমি কোন দূর্ঘটনায় পড় বা কেউ তোমাকে হত্যা করে ইত্যাদি জাতীয় কথা) বলি আমার স্ত্রী আমার মুখ চেপে বলে এমন কথা বলতে নেই, এমন কথা বললে এমন কিছু ঘটে থাকে- এটা তার বিশ্বাস।যতই তাকে আমি বুঝায় না কেন সে মানতে নারাজ। আপনি যদি এভাবে কোন বিশ্বাসের দ্বারা আপনার চিন্তাকে আবদ্ধ করে রাখেন তাহলে আপনার সত্যে দেখার সম্ভাবনা নেই।আপনি চিরদিন দেখবেন যে আপনার বিশ্বাস বা ধর্মই সঠিক আর বাকি সবাই ভূল। আপনার বিশ্বাসের পক্ষে আপনি অনেক প্রমান দেখেন,কারন আপনি এর পক্ষেই সবসময় চিন্তা করেন। পক্ষপাতমূলক মস্তিস্কে কখনও সত্যে ছোয়া দেয় না। সত্যে দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই সকল পক্ষপাতমূলক চিন্তা থেকে আপনার মস্তিস্ককে মুক্ত করতে হবে।
এবার আসি আসল কথায়।এখন আলোচনা করবো আপনার বিশ্বাস আপনার কি কি ভয়ানক ক্ষতি করতে পারে।(চলবে)