সুহৃদ পাঠকদের নিকট সবিনয় অনুরোধ একটু ভেবে দেখবেন কি যে আপনার অনুসৃত চিন্তা, ধর্ম বা মতবাদ যদি ভূল হয় তাহলে সে ভূলের খেসারত সব্রাগ্রে কাকে দিতে হবে?যেহেতু সবার কাছে নিজের অবলম্বিত চিন্তা,ধর্ম বা মতবাদকে ১০০% নির্ভূল বলে মনে হয়, আপনিও তো সবার মধ্যে একজন, নয় কি? আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে সবার মত আপনিও কোন কিছু ভূল বুঝতে পারেন।
প্রশ্ন: আমার জ্ঞান, বুঝ ও বিশ্বাস এ বিশ্বজাহানের স্রষ্টার প্রদত্ত কিতাব থেকে নেয়া। সুতরাং আমার বুঝ ও বিশ্বাস ১০০% সঠিক। আপনার দেয়া ফর্মূলা অনুসারে সবাই নিজের বিশ্বাসকে ১০০% সঠিক মনে করে অথচ প্রায় সবার বুঝ ও বিশ্বাসে ভূল থাকতে পারে, তাই আমার বুঝ ও বিশ্বাসেও ভূল থাকতে পারে- এ নীতি গ্রহণযোগ্য নয়।
জবাব: বিশ্ব জাহানের স্রষ্টার কিতাব থেকে নেয়া জ্ঞান অবশ্যই ১০০% সঠিক হবে। কিন্তু আপনি যেটাকে স্রষ্টা প্রদত্ত কিতাব হিসাবে গ্রহণ করছেন যে বুঝ ও প্রমাণের ভিত্তিতে আপনি সেখানে তো ভূল করতে পারেন। যদিও আপনি ১০০% নিশ্চিত যে আপনি যে প্রমাণের ভিত্তিতে যে পুস্তককে স্রষ্টা প্রদত্ত পুস্তক হিসাবে গ্রহণ করেছেন সে প্রমাণগুলো এতই শক্তিশালী যে তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনার বিরোধী বিশ্বাসের লোকেদের গৃহীত বিশ্বাসের ব্যপারে একই রকম শক্তিশালী বিশ্বাস। আপনাকে মানতেই হবে যে আপনার যতবড় শক্তিশালী বিশ্বাসই হোক না কেন তাতে ভূল থাকতেও পারে। আমি বলছি না ভূল থাকবেই। আমি বলছি সম্ভাবনার কথা।আপনি যদি এ সম্ভাবনাই বিশ্বাসী হন তাহলেই আপনার জ্ঞান বিকশিত হবে।
আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনার নিজ চোখে দেখা জ্ঞানও ভূল হতে পারে।মানুষ তো নিজ চোখে দেখে যে সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হয়ে পশ্চিমে অস্তমিত যায়।মানুষের নিজ চোখে দেখা এ জ্ঞান আজ ভূল প্রমাণিত হচ্ছে।বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ মানুষ জানতে পেরেছে যে সূর্য উদিতও হয় না অস্তমিতও যায় না, বরং আমাদের এ পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে।
আচ্ছা, বলুনতো আপনার চিন্তা বা বুঝের ক্ষেত্রে কে সবচেয়ে বেশি ভূল ধরে দিতে পারবে?
ক)যে আপনার মত একই রমক চিন্তা,বুঝ ও বিশ্বাস রাখে
খ)যে আপনার চিন্তা,বুঝ ও বিশ্বাসের বিপরীত মত পোষণ করে।
নিশ্চয়ই আপনার চিন্তা ও বিশ্বাসের পক্ষের লোকেরা আপনার চিন্তা ও বিশ্বাসে ভূল থাকলে তা ধরিয়ে দিতে পারবে না। আপনি যেরুপ চিন্তা করেন তারাও তো অনুরুপ চিন্তা করে, আপনি ভূল চিন্তা করলে তারাও তো ভূল চিন্তা করে থাকে, তাহলে তারা কিভাবে আপনার চিন্তা ও বিশ্বাসের ভূল ধরে দিবে?
অতএব আপনার নিজ স্বার্থেই অর্থাৎ আপনার নিজ চিন্তা ও বিশ্বাসে কোন ভূল আছে কিনা তা খুজে বের করার স্বার্থে আপনাকে আপনার চিন্তা ও বিশ্বাসের বিরোধীদের কথা আন্তরিকতার সহিত শুনতে ও বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। শুধু তাই নয়, আপনার বিপরীত চিন্তার লোকেরা কথা বললে সেটাকে আপনার নিজ জ্ঞান সমৃদ্ধ ও শুদ্ধ করার বিশাল সুযোগ হিসাবে নিবেন।
যদি তা না করে বিপরীত চিন্তার লোকদের কে শুধু শত্রু হিসাবে মনে করেন, সবসময় নিজের মতের লোকদের কথা শুনতে আনন্দ পান ও শুনতে চান, তাহলে যদি কোন কারো ক্ষতি করে থাকেন তাহলে মনে রাখবেন প্রথম ক্ষতিটি আপনি আপনার নিজের করলেন। আমি নিজে এ বিশ্বাস রাখি । আমি সকলের ছাত্র হতে ভালবাসি। আমি আমার চিন্তার বিরোধীদের থেকে সবচেয়ে বেশি শিখে থাকি।আসুন সবাই আলোকিত জীবন গড়ার দিকে এগিয়ে আসি।