আপনাকে এ দু’পক্ষের এক পক্ষকে অবশ্যই বেছে নিতে হবে। আপনি স্বজ্ঞানে বেছে নিন আর নাই নিন আপনি এ দু’পক্ষের এক পক্ষে পড়ে যাবেনই। আপনি এ দু’পক্ষের বাইরে যেতে পারবেন না। সমগ্র পৃথিবীর মানুষ প্রধান এ দু’ভাগে বিভক্ত।
এক পক্ষ: মানুষ স্বভাবত: নিজ বংশ, জাত,ধর্ম,সংস্কৃতি,অভ্যাস ঐতিহ্য ইত্যাদির প্রতি চরম দূর্বলে। এ কারনে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ নিজ বংশ, জাত বা ধর্মের জন্য নিজেদের জীবনটা পর্যন্ত দিয়ে দেয়।এ সকল লোকেদের কাছে সত্য, ন্যয়-নীতি, মানবতা ইত্যাদি বড় জিনিস নয়, তাদের কাছে তাদের নিজ নিজ ধর্ম,সংস্কৃতি বা ঐতিহ্য সবচেয়ে বড়। এর অর্থ এ নয় যে তারা ন্যয়-নীতি, মানবতা ইত্যাদি পূর্ণরুপে বর্জন করে।তাদের জগতের সকল কিছু তাদের নিজ নিজ ধর্ম, সংস্কৃতি ইত্যাদির মাপকাঠিতে যাচাই করে থাকে।কোন কিছুকে সত্য, শ্রেষ্ঠ বা মিথ্য, নিকৃষ্ট বলবে তাদের নিজ নিজ ধর্ম, সংস্কৃত ইত্যাদির আলোকে।প্রত্যেক গোষ্ঠি নিজ নিজ ধর্ম বা সংস্কৃতির ভাল দিকগুলো বাছাই করে দিনরাত আলোচন ও গুনকির্তনে সদা ব্যস্ত এবং অপরের চেয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানে হেন চেষ্টা করে থাকে।
একদিন এক লোককে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি ন্যয়ের পক্ষে নাকি নবীর পক্ষে?লোকটি বললো তিনি নবীর পক্ষে। তিনি অন্তত এভাবে বলতে পারতেন- প্রথমত আমি ন্যয়ের পক্ষে, নবী যেহেতু ন্যয়ের পক্ষে তাই আমি নবীরও পক্ষে।
অপর পক্ষ: এ পক্ষ নিজ বংশ, জাত, ধর্ম ও সংস্কৃতির সহজাত প্রেমের উর্ধ্বে উঠে খোলা মনে চিন্তা করতে পছন্দ করে।ভালকে ভাল, খারাপকে খারাপ বলতে আপোসহীণ।সত্য, ন্যয়,মানবতা কল্যানই সবচেয়ে প্রিয়-যদিও তা নিজ বংশীয় দর্শন, ধর্ম ইত্যাদির বিপক্ষে যায়। এদের কাছে সত্যের স্থান সবার উপরে।নিজ ধর্ম বিশ্বাসের কোন একটি দিকও যদি সত্যের সাথে সাংঘর্ষিক হয় এ পক্ষের লোকেরা সে ধর্ম বিশ্বাসকে ডাস্টবিনে ফেলতে দ্বিধা বোধ করে না।এ পক্ষের লোকেরা সংখ্যালঘিস্ট।আমি নিজে এ পক্ষের লোকদের অন্তর্ভূক্ত।
আমি মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বা শিয়া, সুন্নি, আহলে হাদিস,আহলে সুন্নাহ বা বাংলাদেশী, পাকিস্তানী, ভারতীয়, আমেরিকান কিনা বড় পরিচয় নয়। আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি মানুষ।আমার স্বাভাবিক বিবেক-বুদ্ধি আছি। আমি জগতের সবকিছুর উপরে সত্যে, ন্যয়-ণীতিকে স্থান দিতে চাই। আমি সত্যের পুজারি। আমি বংশ, জাত বা ধর্মীয় সংকীর্ণতার মধ্যে থেকে চিন্তা করতে চাই না।
মানবতা যখন এ সকল সংকীর্ণতার মধ্যে থেকে বের হয়ে আসবে, বিশ্ব মানবতা বড়ই উপকৃত হবে।