somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের সমাজে প্রচলিত শিরক (পর্ব - ১)

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

শাব্দিক অর্থে শিরক মানে অংশীদারিত্ব, কোন কিছুতে অংশীদার সাব্যস্ত করা। ইসলামের পরিভাষায় এর অর্থ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সাথে কোন বিষয়ে কোন অংশীদার স্থির করা। তিন প্রকারের তাওহীদ (তাওহীদ আর রুবুবিয়্যাহ, তাওহীদ আল আসমা ওয়া সিফাত এবং তাওহীদ আল ইবাদাহ), শিরকও এই তিনটি বিষয়ের ক্ষেত্রে হতে পারে। শিরক হতে পারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে, তাঁর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে কিংবা তাঁর ইবাদাতের ক্ষেত্রে।


শিরকের ভয়াবহ পরিণতি:

“আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করার অপরাধ অবশ্যই ক্ষমা করবেন না, কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা এর চেয়ে কম (অপরাধ) ক্ষমা করে দেন।” (সূরা আন নিসা, ৪ : ৪৮)

শিরকপূর্ণ ধ্যান-ধারণা ও রীতি:

১) কোন মানুষকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার রহমত বন্টনের অধিকারী বলে মনে করা। কোন মানুষকে (পীর, ফকির, দরবেশ) কোন বিপদকে প্রতিহত করতে সক্ষম, কিংবা কোন কল্যাণ এনে দিতে সক্ষম বলে মনে করা। উল্লেখ্য যে আমাদের দেশে বাবে রহমত নামক একটি স্থান রয়েছে যেখানে মানুষ আল্লাহর রহমত লাভের আশায় গিয়ে থাকে। সেখানে আল্লাহর রহমত তো পাওয়া যাবেই না, বরং অন্য একজন ব্যক্তি আল্লাহর রহমত বন্টন করছে বলে মনে করার ফলে শিরকের মত ভয়াবহ অপরাধে অপরাধী হতে হবে।

২) কবরে শায়িত কোন ধার্মিক ব্যক্তির নিকট কোন দু’আ পেশ করা, মাজারে গিয়ে কবরবাসীর কাছে কিছু চাওয়া, কবরবাসীর উদ্দেশ্যে সাজদাহকরা, কিংবা কবরবাসী কবরে শুয়ে মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিক, এবং ইহজগতের বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন বলে মনে করা।

৩) স্রষ্টাকে সর্বত্র বিরাজমান মনে করা। সকল সৃষ্টি এবং স্রষ্টা মিলেই একই সত্তা মনে করা। প্রকৃতিকে ক্ষমতাধর মনে করা। উল্লেখ্য যে আমাদের দেশে সাহিত্যে বেশ কিছু বাক্য প্রচলিত আছে যেগুলো শিরকপূর্ণ। এগুলো মানুষের অবচেতন মনে স্থান করে নেয়, এবং মানুষ মোটেও উপলব্ধি করতে পারে না যে তার চিন্তাধারায় ধীরে ধীরে শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটছে। যেমন: “প্রকৃতির খেয়ালীপনা” এই বাক্যাংশটি শিরকপূর্ণ একটি বাক্যাংশ। প্রথমতঃ এর দ্বারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নিয়ন্ত্রণের বাইরে স্বাধীনভাবে কোন কিছু করার বৈশিষ্ট্য প্রকৃতির ওপর আরোপ করা হয়েছে। অথচ প্রকৃতির কোন সাহসই নেই যে সে খেয়ালীপনা করবে, কেননা তাকে সেই স্বাধীনতাই দেয়া হয় নি, বরং প্রকৃতি এবং এর উপাদানসমূহ সর্বদাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রশংসা করে এবং তাঁরই আদেশের অনুগত।

“সপ্ত আকাশ এবং পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে সমস্ত কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না।…” (সূরা আল ইসরা, ১৭ : ৪৪)

এছাড়া এ ধরণের বাক্য ব্যবহার করার ফলে মানুষের মনে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সিদ্ধান্তের প্রতি অসহিষ্ণুতা প্রকাশের প্রবণতা তৈরী হয়, যেমন আমরা প্রায়ই বলে থাকি, “আজ অসহ্য গরম পড়েছে”, “কি বিশ্রী একটা দিন” ইত্যাদি। তাই মনে হয় এধরনের বাক্য পরিহার করাই বাঞ্ছনীয়।

স্মরণ রাখতে হবে সৃষ্টি এবং স্রষ্টা ভিন্ন এবং বিচ্ছিন্ন সত্তা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর জ্ঞান এবং ক্ষমতার দ্বারা মানুষের নিকটবর্তী, তবে তার মানে এই নয় যে তিনি সর্বত্র বিরাজমান। বরং তিনি সৃষ্টির উর্দ্ধে।

৪) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কোন আকার-আকৃতি বা রূপ কল্পনা করা কিংবা তাকে মানুষের আকৃতিতে কল্পনা করা শিরক। বরং তাঁর মহান সত্তা সম্পর্কে আমরা যে চিত্রই কল্পনা করতে সক্ষম হব, বুঝতে হবে অবশ্যই তিনি সেটা নন, অর্থাৎ আমরা একটা রূপ কল্পনায় আনতে পারলাম অর্থই হচ্ছে তিনি সেরকম হতে পারেন না।

৫) শিক্ষিত মুসলিমদের একটা ব্যাপার স্মরণ রাখা উচিৎ: তা হচ্ছে “পদার্থ এবং শক্তি” এ উভয়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার “সৃষ্টি”। “শক্তির সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই”, এ মতবাদ ভুল। বরং আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়া তা’আলা অস্তিতহীনতা থেকে “শক্তি” সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তা “ধ্বংস” করার পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন এবং তিনি তা ধ্বংস করে দেবেন:

“(ইহ জগতের) সবকিছুই ধ্বংস হবে।” (সূরা আর রাহমান, ৫৫ : ২৬)

তবে মানুষ যেহেতু তা করতে পারেনা, সে জন্যই উপরোক্ত মতবাদের উৎপত্তি হয়েছে।

৬) ব্যক্তি বিশেষের মূর্তির প্রতি, অগ্নির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন শিরকের সমতুল্য। তেমনি কোন ব্যক্তির তৈরী মতবাদকে, বা কোন ব্যক্তির চিন্তাধারণাকে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান ও ধ্যান-ধারণার চেয়ে উত্তম মনে করে জীবনে ধারণ করা শিরক। যেমন কেউ যদি কার্ল মার্কসের আদর্শকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার দেয়া বিধানের চেয়ে উত্তম মনে করে সেই আদর্শ বাস্তবায়ন করে, তবে তা শিরক।

৭) ভালবাসা এবং ভয়ের/শ্রদ্ধার ক্ষেত্রে মানুষ শিরকে লিপ্ত হয়। বর্তমানে এই শ্রেণীর শিরক অত্যন্ত ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। যদি কোন কিছুর/কারও প্রতি ভালবাসা কিংবা ভয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এবং ব্যক্তির মাঝে স্থান করে নেয়, তবে সে ঐ বস্তু/ব্যক্তির উপাসনা করল। উদাহরণস্বরূপ, অর্থ উপার্জনের কারণে কেউ যদি আল্লাহর ইবাদাত করা থেকে বিরত হয়, তবে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার চেয়ে অর্থকে অধিক ভালবাসে বলে বুঝতে হবে, অতএব সে ভালবাসার ক্ষেত্রে শিরক করে। আল্লাহর রাসূল (সা) বলেন:

“দিরহামের পূজারী সবর্দাই দুর্দশাগ্রস্ত।” (সহীহ্‌ আল বুখারী)

তাওহীদের দাবী এই যে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসব। আর তাঁকে ভালবাসার অর্থ হচ্ছে তাঁর ইচ্ছার কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:

“বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন।” (সূরা আলে ইমরান, ৩ : ৩১)

আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেন:

“তোমাদের কেউই প্রকৃত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার সন্তান, তার পিতা এবং সমগ্র মানবজাতি থেকে তার নিকট অধিক প্রিয় হই।” (সহীহ্‌ আল বুখারী এবং সহীহ্‌ আল মুসলিম)

রাসূল (সা) কে পূর্ণরূপে ভালবাসার অর্থ হচ্ছে সম্পূর্ণরূপে তাঁর আনুগত্য করা:

“যে কেউই রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল।” (সূরা আন নিসা, ৪ : ৮০)

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে আমাদের দেশে মানুষ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্যের উপর নিম্নোক্ত বিষয়সমূহের/ব্যক্তিবর্গের আনুগত্যকে স্থান দিয়ে থাকে:

ক) পিতা-মাতা (যদিও পিতা-মাতার আনুগত্য করা ফরয, তবে তাঁরা যদি আল্লাহর আদেশের বিপরীতে কোন আদেশ করেন, তবে তাওহীদের দাবী হচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধাচরণ করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার আদেশের ওপর অটল থাকা। তাঁদের প্রতি ভালবাসা বা ভয়ের কারণে কেউ যদি আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করতে থাকে, তবে তা ভালবাসা ও ভয়ের ক্ষেত্রে শিরকের পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।)

খ) সামাজিক প্রথা এবং প্রচলিত নিয়ম কানুন, যেমন আমাদের সমাজে প্রচলিত অসংখ্য প্রথা রয়েছে, যেগুলো সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার বিধানের পরিপন্থী , কিন্তু মানুষ শ্রদ্ধা কিংবা ভয়ের কারণে সে সকল প্রথা মেনে চলে।

গ) আদর্শ, মতবাদ, মতবাদের প্রবক্তা কিংবা নেতা। যদি কেউ আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসুলের সুন্নাহ থেকে প্রতিষ্ঠিত কোন বিষয়ের উপর এর সাথে সাংঘর্ষিক কোন আদর্শ, নীতি বা ধ্যান-ধারনা বা কারো মতামতকে প্রাধ্যান্য বা অগ্রাধিকার দেয় তাহলে সে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের ব্যাপারে শিরকে লিপ্ত হল। অথচ আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা বলেছেনঃ

“যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আল আহযাব, ৩৩ : ২১)

“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।” (সূরা আল আহযাব, ৩৩ : ৩৬)

কুরআনের এ আয়াতগুলোর অর্থ খুব স্পষ্ট, যে কোন একজন সুস্থ মস্তিস্কের মানুষের পক্ষে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার এসব কথার অর্থ বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বিশ্বের অনেক স্থানের মতো আমাদের দেশেও শিক্ষিত মুসলিম জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ সাহিত্য-সংস্কৃতিতে ও সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এমন কিছু ধ্যান-ধারনা ও বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত হচ্ছেন যা স্পষ্টত আল্লাহ যা নাযিল করেছেন মৌলিকভাবে তার বিপরীত। এসব বিভ্রান্ত ধ্যান-ধারনা ও বিশ্বাসের প্রচার প্রসারকারী যারা তাদের কথা ও লেখা থেকে বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে এরা আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) হিদায়ত ও শেষ বিচারের দিন আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে চুড়ান্তভাবে সন্দেহগ্রস্থ। আর যে কোন বিষয়ে উচিত-অনুচিত, সত্য-মিথ্যা বা ভাল-মন্দ বিচার করতে এরা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তাকে অবশ্য-অনুসরনীয় মানদন্ড হিসাবে ও পছন্দ করে না বরং নিজের খেয়াল-খুশি ও লালসার অনুসরন করে। এদের একদল এতটাই ধৃষ্ট যে তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ ও তাঁর আদেশঘঠিত বিষয়াবলী নিয়ে ঠাট্রা করে – যা কোন সন্দেহ ব্যতিরেকেই কুফর; আল্লাহ বলেছেন,(ভাবার্থঃ)

হে রাসুল(সাঃ) বলুন! তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর প্রদত্ত বিধানসমূহ এবং তাঁর রাসুল (সাঃ) এর ঠাট্রা করছো? তোমরা কোনরকম ওজর পেশ করো না। কারন তোমরা ঈমান আনার পরে কুফরী আচরন করেছ (সুরা তাওবাঃ ৬৫-৬৬) ।

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এদের কার্যকলাপকে শয়তান তাদের নিজেদের সামনে উত্তম ও সৌন্দর্যমন্ডিত রুপে উপস্থাপন করে, ফলে তারা দুনিয়ায় এই জীবনের মৌলিক প্রশ্নগুলোর ব্যাপারে বিভ্রান্ত থেকে নিঃসীম অন্ধকারে ঘুরতে থাকে এবং নিজেদের মনগড়া ধ্যান-ধারনা ও খেয়াল-খুশি অনুসরন করে আর তাদের ভক্ত, অনুসারীদেরকেও বিভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতার চক্রে বিপর্যস্থ রাখে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এই পর্যায়ের যে চিত্র অংকন করেছেন তা এদের ক্ষেত্রে সঠিক বলে প্রতীয়মান হয় (ভাবার্থঃ)

হে রসুল (সাঃ) বলুন! আমি কি তোমাদেরকে কার্যকলাপের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থদের সংবাদ দেব? (তারা হল ঐসব লোক) যাদের দুনিয়ার জীবনের সমস্ত প্রচেষ্টা পন্ড হয়ে গেছে, অথচ তারা মনে করত কত সুন্দর কাজই না তারা করছে। তারাই সেসব লোক যারা তাদের রবের আয়াতসমুহ ও তাঁর সাক্ষাতের বিষয় অস্বীকার করেছে, ফলে তাদের সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে। সুতারাং কেয়ামতের দিন আমি তাদের জন্য ওজন স্থাপন করবো না।(সুরা কাহাফঃ১০৩-১০৫)

তাই আমাদের তরুনদের ভাবতে হবে তারা যেসব সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক ও সামাজিক-রাজনৈতিক আদর্শচিন্তা অনুসরন ও বাস্তবায়ন করার জন্য ঐ সকল আদর্শের প্রবক্তা ও প্রচার-প্রসারকারীদের প্রতি পরম ভালবাসা, শ্রদ্ধা এবং ভক্তি রেখে আদেশ মাথা পেতে নিচ্ছেন, তারা কোন পথের যাত্রী? তারা কি জাহান্নামের পথে চলছেন না? এভাবে নেতাদেরকে অনুসরণ করার পরিণতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা স্পষ্টতঃ বর্ণনা করেছেন কুরআনেঃ

“অনুসৃতরা যখন অনুসারীদের সাথে তাদের সম্পর্ক অস্বীকার করবে/অনুসারীদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং আযাব প্রত্যক্ষ করবে আর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে তাদের পারস্পরিক সমস্ত সম্পর্ক, এবং অনুসারীরা বলবে কতই না ভাল হত, যদি আমাদিগকে পৃথিবীতে ফিরে যাবার সুযোগ দেয়া হত, তাহলে আমরাও তেমনিভাবে তাদেরকে অস্বীকার/প্রত্যাখ্যান করতাম, যেমন তারা আমাদেরকে অস্বীকার/প্রত্যাখ্যান করেছে। এভাবেই আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে দেখাবেন তাদের কৃতকর্ম তাদেরকে অনুতপ্ত করার জন্য। অথচ, তারা কস্মিনকালেও আগুন থেকে বের হতে পারবে না।” (সূরা আল বাকারাহ্‌, ২ : ১৬৬-১৬৭)

তাই যেসব গোষ্ঠীর ধ্যান-ধারনা ও আদর্শ্চিন্তা আল্লাহর রাসূলের আদর্শের বিপরীত, সেসবের অনুসারীদের উচিৎ অবিলম্বে এই শ্রেণীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা। আর পথভ্রষ্টতায় নেতৃস্থানীয় ও প্রচার-প্রসারকারী যারা তাদের শাস্তি অনেকটা জ্যামিতিক হারে বর্ধনশীল, কেননা তাঁরা নিজেরা তো পথভ্রষ্ট, উপরন্তু যাদেরকে তারা পথভ্রষ্ট করেছেন, তাদের অপরাধের অংশীদারও তারা হবেন। তবে বড় বড় অপরাধীদেরও চুড়ান্তভাবে হতাশার কারণ নেই, যদি তাঁরা সত্যিই অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসেন, তবে আল্লাহর ক্ষমা তাঁদের অপরাধের চেয়ে অনেক বড়, আর নিষ্ঠাপূর্ণ তওবাকারীদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ক্ষমা করে দেন ও ভালবাসেন। আল্লাহ বলেনঃ

“… হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যেও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ্‌ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সুরা আয যুমার, ৩৯ : ৫৩)

৮) বর্তমান যুগে আল-লাত, মানাত, আল উযযার মত মূর্তি নয়, বরং মানুষ পূজা করে বহু ব্যক্তিকে। আজকের যুগে টম ক্রজ, ডেভিড বেকহাম কিংবা লিওনেল মেসিরা মানুষের উপাসনার বস্তু। বাংলাদেশে শিক্ষিত সমাজ় তো বটেই, এমনকি গ্রামে-গঞ্জেও আজ ছড়িয়ে পড়েছে বিনোদনের বহু মাধ্যম, টেলিভিশন, ভিডিও, স্যাটেলাইট চ্যানেল। শহরাঞ্চলে বহু যুবক-যুবতী ঘরে দেখা যাবে দেয়ালে দেয়ালে (এমনকি টয়লেটে পর্যন্ত) হিন্দী সিনেমার নায়ক-নায়িকা কিংবা ব্যান্ড সংগীতের শিল্পীর পোষ্টার, এ যেন মূর্তি পূজার নতুন রূপ। প্রিয় তারকাকে দেখলে মানুষের চেহারায় যে আনন্দ, বিস্ময়, উচ্ছ্বাস,আবেগ, ভালবাসা ও শ্রদ্ধায় পুর্ণ অভিব্যাক্তি দেখা যায়, সে ধরনের অনুভুতি এক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার স্মরণে ব্যতিত আর কারো উদ্দেশ্যে হওয়ার কথা নয়।

৯) এছাড়া সমাজে প্রতিষ্ঠিত কিংবা বিখ্যাত হওয়ার বাসনা মানুষকে আল্লাহর আদেশ পালন থেকে বিরত রাখছে। বস্তুর পূজারী মানুষ আজ তার ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, একাডেমিক ডিগ্রি, নিজেদের সন্তান-সন্ততির পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আল্লাহর ইবাদত করার সময় তাদের হাতে নেই। হ্যাঁ এগুলির পাশাপাশি ধর্ম যতুটুকু করা যায় তা কেউ কেউ করতে রাজী ঠিকই, কিন্তু যখনই ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, কোন ক্ষতির ভয় থাকে, তখন কেউ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার আনুগত্য করতে প্রস্তুত নয়। এজন্য এস এস সি/এইচ এস সি পরীক্ষার্থীর বাবা-মা সন্তানকে উপদেশ দেন রোযা না রাখার। যাহোক এভাবে বস্তুবাদী মানুষ সৃষ্টির উপাসনা করছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলাকে ভুলে গিয়ে, কিন্তু ; এ কোন কিছুই কি তাকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে ফিরাতে পারবে? কতদিন পৃথিবীকে ভোগ করতে পারবে মানুষ? চিরকাল কি?

১০) মানুষ যখন নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তখন সে শিরকে লিপ্ত হয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:

“আপনি কি তাকে দেখেন না যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে?” (সূরা আল ফুরকান, ২৫ : ৪৩)

এখানে ইসলাম ও শরীয়তবিরোধী কোন প্রবৃত্তির অনুসারীকে প্রবৃত্তির পূজারী বলা হয়েছে। ইবন আব্বাস (রা) বলেছেন, শরীয়া বিরোধী প্রবৃত্তিও এক প্রকার মূর্তি যার পূজা করা হয়। তিনি এর প্রমাণ হিসেবে এই আয়াত তিলাওয়াত করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আজকের মুসলিম সমাজে অনেক মুসলিমই নিজের খেয়ালখুশির অনুসরণ করে থাকে, এবং নিজের মতামতকে অর্থাৎ নিজের কাছে কি মনে হল, তাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। অথচ একজন মু’মিনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে সে প্রতিটি বিষয়ের ক্ষেত্রে জানতে সচেষ্ট হয় যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ও তাঁর রাসূল (সা) কি বলেছেন, এবং সে তা জানামাত্র মাথা পেতে গ্রহণ করে নেয়, সেটা তার মন মত হোক বা না হোক, অথচ আমাদের সমাজের কিছু উদ্ধত লোক আছে, যাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা শোনানোর পরও তারা নিজেদের মতামতের পক্ষে সাফাই গাইতে থাকে এবং “আমার তা মনে হয় না।”, “আমার মনে হয় এটা ঠিক।” বা “এটা ঠিক না।” এরূপ মন্তব্য করার ধৃষ্টতা দেখায়।

এমন মানুষ তার যা মনে হয়, সেই অনুযায়ীই কাজ করে যায় এবং নিজের প্রবৃত্তি মত নিজের ধর্ম বানিয়ে নেয়। ধরা যাক একজন মানুষ খুব নামায পড়ে, কিন্তু যখনই তাকে যাকাতের কথা বলা হয়, সে নানা অজুহাত এবং নিজস্ব মতামত দিতে থাকে, কেননা যাকাতের বিধান তার মনমত হয় নি, অথবা সুদ খাওয়া থেকে তাকে নিষেধ করলে সে আঁতকে ওঠে এবং এই বিধান মানতেই চায় না, বরং নিজ খেয়ালখুশীর অনুসরণ করে। এমন মানুষ কিন্তু আমাদের সমাজে কম নেই, আমাদের আশেপাশেই অনেকে রয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদেরকে সকল প্রকার শিরক থেকে রক্ষা করুন।

চলবে……….

সুত্রঃ http://www.quraneralo.com/shirkinsociety
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×