somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুর্ণিবায়ু ও ধূসরকাবিন : রোমান্টিক আবহে মানবমনের গভীর পাঠ।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বাংলা কথাসাহিত্যেক মোজাম্মেল হক নিয়োগী এক আলোচিত নাম। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, শিশুতোষ, অনুবাদ, গবেষণা, গান, নাটক ও উপন্যাসসহ সাহিত্যের প্রায় সকল শাখাতেই রয়েছে তাঁর স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণ। তিনি মূলধারার একজন প্রতিভাবান লেখক। একটি-দুটি করে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা সেঞ্চুরি পার। লিখেছেন বেশি কিন্তু সেই তুলনায় আলোচনায় এসেছেন কম। তিনি একটু আলো-আঁধারি সময়ই অতিক্রম করছেন। তবে খুবই শীঘ্রই তিনি জাতীয়ভাবে আলোচিত হবার দাবি রাখেন। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখাতে তাঁর অবাধবিচরণ থাকলেও কথাসাহিত্যে তাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি অগ্রগণ্য। কথার বুননে তিনি সিদ্ধ কারিগর। তাঁর যেসব উপন্যাস বাস্তবতার পটভূমি নিয়ে লেখা তন্মধ্যে তাঁর ঘূর্ণিবায়ু ও ধূসরকাবিন অন্যতম। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় পুরো উপন্যাসটিকে দিয়েছেন ভিন্নধর্মী আবহ। মানবমনের গভীর থেকে গভীরে প্রবেশ করে তিনি সুচারুরূপে ফুটিয়ে তুলেছেন নারী-পুরুষ চরিত্রের জ্ঞাত ও অজ্ঞাত নানা দিক। বাস্তবতার সুঘ্রাণমাখা ঘটনাগুলোকে তিনি সহজসরল ভাষা ও শিল্পরসে পাঠকহৃদয়ের কাছাকাছি নিয়ে এসেছেন।

ঘূর্ণিবায়ু ও ধূসরকাবিন উপন্যাসটি মোট ২৫টি পর্বে বা অনুচ্ছেদে বিভক্ত। ২০১৬ সালে বইটি প্রকাশ করেছে অনুপ্রাণন প্রকাশন।বইটির খুচরা মূল্য ধরা হয়েছে ২৬০ টাকা। উপন্যাসটি শুরু হয়েছে ব্রহ্মপুত্রের বৈকালিক সৌন্দর্য বর্ণনার মধ্য দিয়ে।এর কেন্দ্রীয় চরিত্র নাদিরা। নাদিরার মতোই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নির্মল। মূলত নাদিরা ও নির্মলের প্রেমকাহিনিই এ উপন্যাসের মূল উপজীব্য বিষয়। দুজন দুই ধর্মের অনুসারী। তারা দুজনেই একটি এনজিওতে কাজ করে; তাও আবার একই অফিসে।

ঘূর্ণিবায়ু ও ধূসরকাবিন উপন্যাসের পটভূমি কয়েক জেলা ও উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত। বিশেষ করে কুমিল্লা, যশোর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রৌমারী, ইটনা, প্রভৃতি স্থানগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসের শুরুটাই অত্যন্ত চমৎকার ও কাব্যময়তা দিয়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাসে ইউরোপের পাঠকরা কেবল ফিলোসফি বা দর্শন খোঁজে; তারা তাঁকে যতটা না ঔপন্যাসিক মনে করে তাঁর চেয়েও বেশি ফিলোসফার মনে করে। মোজাম্মেল হক নিয়োগী এ থেকে একটু ব্যতিক্রম। তাঁর উপন্যাসে শুধু দর্শনই নয় পাশাপাশি কাব্যময়তায়ও ভরপুর। তাঁর উপন্যাস পাঠনপাঠনে একজন প্রকৃতপাঠক আস্বাদন করবে নানা রস। কাব্যময়তায় কখনো কখনো মনে হবে যেন বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালীর সুঘ্রাণ। পাশাপাশি চরিত্র চিত্রণে তিনি এক দক্ষ কারিগর।

নাটকীয়তা নয়, বরং কাব্যিক ক্যানভাসে উপন্যাসটি শুরু হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে প্রথম দেখা হয় কেন্দ্রীয় চরিত্র নাদিরার সঙ্গে নির্মলের। তারা ৩০ দিনের একটি বিশেষ প্রশিক্ষণে এসেছে। সহকর্মীও ৩০ জন। তাদের প্রশিক্ষক মাহমুদা নামের একজন মহিলা। যার কথাবার্তা ও উপস্থাপনা খুবই গোছালো। এ প্রশিক্ষণের একজন স্পষ্টভাষী কর্মী রফিক। সে যেমন রসিক, সৎসাহসী, তেমনই উদ্যমী। নাদিরার সঙ্গে সে খোলামেলা আলাপ করত। নাদিরাও তার স্পষ্টবাদিতা আর উদ্যমতাকে পছন্দ করত, উৎসাহ দিত। নাদিরার মূল বাড়ি কুমিল্লায়। গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পরপরই পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে বেসরকারি সংস্থায় তাকে চাকরি নিতে হয়।

পিতা সাবের আহমেদ একটু রাগী প্রকৃতির মানুষ। লেখকের ভাষায়─“কড়া চালভাজার মতো মেজাজের একজন বাবা”। মা আফিয়া বেগম খুবই শান্ত প্রকৃতির। তিনি প্রায় ২৫ বছর ধরে সাবের সাহেবের সঙ্গে সংসার করছেন। একমাত্র ছোটোভাই সজীব; যাকে পরিবারের অর্ধেক সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যবসার জন্য দেওয়া হয়েছিল।

নাদিরার সহকর্মী আজিম নির্মলের বন্ধু। তার আরেক সহকর্মী অঞ্জলী। মূলত তাদের কাজ হলো মাঠপর্যায়ের। নির্মল শ্যামবর্ণের টগবগে হিন্দু যুবক। ভালো গানও গায়। তিনবোন, বাবা প্যারালাইসিস রোগী, মা গৃহিণী, বড়ভাই মুসলমান মেয়েকে বিয়ে করে আলাদা বসবাস করছে। উপন্যাসে দেখতে পাই রফিকের মেধা, আত্মবিশ্বাস এবং পরিশ্রমের কারণেই তার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে।

চাকরির সুবাদে প্রায় প্রত্যহই নাদিরা ও নির্মলের একে অপরের সঙ্গে দেখা হয়।একসময় নাদিরা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। দীর্ঘ দশদিন জ্বরের সঙ্গে লড়ে সুস্থ হয় নাদিরা। আর এ দশদিনই নির্মল তাকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা, সেবা-শুশ্রুষা করেছে। এতে ধীরে ধীরে গলে যায় নাদিরার কঠিন হৃদয়। নির্মলের নিয়ন্ত্রণহীন আবেগের কাছে দীর্ঘ সময় পার করে হলেও এক সময় হার মানে নাদিরা। তখন উভয়ের চোখে উড়তে থাকে হাজার হাজার পায়রা। অর্থাৎ তারা দুজনেই জড়িয়ে পড়ে গভীর প্রেমে। দুজনেই জানে তাদের প্রেমের পথে শত কাঁটা, শত বাঁধা।

উপন্যাসের কোনো কোনো ঘটনাকে তিনি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন। উপন্যাসিক ব্যক্তিজীবনেও এনজিওকর্মীদের নানা ঘটনা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবলোকন করেছেন। উপন্যাসের গুরুত্ব বাড়াতে কোথাও কোথাও ইতিহাসের চরিত্রের ছায়াপাত ঘটানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালোলাগার বিষয় হলো কোনোকিছু বুঝাতে তাঁর নিখুঁত উপমার ব্যবহার। চরিত্র অনুযায়ী যুতসই সংলাপ পুরো উপন্যাসটিকে দিয়েছে ভিন্নধর্মী ব্যঞ্জনা।

উপন্যাসে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মিথস্ক্রিয়া ঘটানোর প্রয়াসে দুটি ধর্মের মেলবন্ধন তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশেষ করে বৈবাহিক বন্ধন যা সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়। সামাজিক সীমাবদ্ধতা প্রাচীনকালে বা মধ্যযুগে যেমন ছিল ঠিক তেমনই এ যুগেও এ নিয়মের তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। যদিও শিক্ষার হার বেড়েছে সে তুলনায় অনেকগুণ বেশি। তিনি দুই ধর্মের নাদিরা ও নির্মলকে বিশ্লেষণ করেছেন কিন্তু তিনি থেকেছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসে মানিকের সত্ত্বাকে যতটুকু স্পষ্ট বোঝা যায় এ উপন্যাসে তিনি ততটুকু প্রকাশিত হননি। সমকালীন দেশীয় প্রেক্ষাপটে এমনটি ঘটা খুবই স্বাভাবিক। কেননা, এ দেশে মুক্তচিন্তার সুযোগ নেই বললেই চলে। প্রকৃত সমালোচনারও সুযোগ নেই। না রাজনৈতিক, না সামাজিক, না সাহিত্যজগতে! তবে একজন প্রকৃতপাঠক অনায়াসেই বুঝে ফেলবে ঔপন্যাসিকের অসাম্প্রদায়িক চেতনার দর্শন।

প্রেম সত্যি মানুষকে বোকা বানায়। প্রেমিকের কাছে তখন প্রেমিকার সবকিছুই ভালো লাগে। যেভাবে লাইলী-মজনু উপাখ্যানের মজনুর ভালো লাগত লাইলীর বাড়ির কুকুরটাকেও। প্রেমাসক্ত হওয়ার পরে নির্মলও কেমন বদলে যায়। বদলে যায় তার চিন্তাধারা। তার ভেতরে নতুন নির্মলের জন্ম হয়। নাদিরার প্রেম তাকে প্রেমান্ধ করে তোলে। আর একারণেই আমরা দেখতে পাই-নির্মলের মুখেই নাদিরার ধর্মাচারের কথা! সে তাকে নামাজের পাশাপাশি বোরকা পরার কথাও বলে।

নাদিরা ট্রান্সফার হলেও তার বাসা ঠিক করে দেয় নির্মল। রেলকর্মচারী হাফিজের স্ত্রীর নাম আলো। তার বাসার সঙ্গেই বাসাভাড়া করে দেয় নির্মল। আর এ সুবাদে প্রায়ই সে তার বাসায় যাতায়াত করতে শুরু করে। প্রথমটাতে যেন বিছানা থেকে উঠতেই চাইত না নির্মল। ঔপন্যাসিকের ভাষায়-“জামার বোতামের মতো লেগে আছে বিছানার সঙ্গে!”

তাঁর উপন্যাসে কিছু নতুন ও অপরিচিত শব্দ যুক্ত হয়েছে। শব্দগুলোকে তিনি আবার যুতসই ব্যবহার করেছেন। যেমন ব্রীড়ানত, পয়মন্ত, পলেস্তরা প্রভৃতি। অবশ্য এর চেয়ে আরও সহজ শব্দ তিনি ব্যবহার করেত পারতেন। মূলত এ উপন্যাসে এনজিওকর্মীদের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার পটভূমিই শৈল্পিকভাবে চিত্রিত হয়েছে।

ধর্মান্তকরণের চেষ্টা, মৃত্যুক্ষুধাতে দেখতে পাই কখনো কৌশলে কখনোবা জোর করেধর্মান্তকরণের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এ উপন্যাসে তেমনটি না থাকলেও রোমান্টিক প্রেমের ঘনঘটা আছে। দুর্বার আবেগে দলিতমথিত হয় নির্মল। আর এ কারণে তার কাছে ধর্মও তুচ্ছ হয়।

দশম পর্বে নাদিরা ও নির্মলের মধ্যে প্রথম রোমান্টিক ভাব ও স্পর্শের মেরুকরণ ঘটে। কিন্তু বাস্তবতা সর্বদাই তাদের অদৃশ্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সুন্দরী নাদিরার জন্য অনেকেই পাগল। রাস্তার যুবক-পথিকরা পর্যন্তও তার দিকে আড়চোখে তাকায়। বিশেষ করে মনোয়ার নামক এক ব্যবসায়ী তো রীতিমতো তার জন্য পাগল। শেষপর্যন্ত তাকে কিডন্যাপ করার ষড়যন্ত্রকরে ব্যর্থ হয়।

সব বাধাকে তারা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই গোপনে দুজনে বিয়ে করে কোনো এক মাজারে গিয়ে।কিন্তু এই গোপন বিয়ে কোনো সময়ই আলোর মুখ দেখেনি। লুকিয়ে লুকিয়েই তাদেরবাসর, দাম্পত্যমিলন ও সংসার করতে হয়েছে। অন্ধকার আর আলোছায়ার হেয়ালি খেলা তাদের জীবনের সঙ্গে মিশে যায় আষ্টেপৃষ্ঠে।সামাজিক, পারিবারিক, ধর্মীয়, প্রাতিষ্ঠানিক, দারিদ্র্য ইত্যাদিও বাধা তাদের বিয়ের সম্পর্ক দুজন ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো মানুষকে জানাতে সাহস পায়নি। একসময় নাদিরার প্রমোশন হয় এবং নারিরাই নির্মলের বস হয়।

উপন্যাসের আবেগীয় ঘনঘটা, বর্ণনার চমৎকারিত্ব যেকোনো পাঠককে ধরে রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। আবার কোনো কোনো কাব্যিক বা দার্শনিক লাইনও পাঠককে অনায়াসে ভাবিয়ে তুলতে পারে। তিনি দেখাতে চেয়েছেন এ সমাজে মানুষের জীবনের চেয়ে ধর্মই বড়ো। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র সেই বিখ্যাত উক্তির সঙ্গে যেন কিছুটা সাদৃশ্য মিলে─“এখানে শস্যের চেয়ে টুপি বেশি।”

নাদিরা ও নির্মল দুজনই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ঔপন্যাসিক অত্যন্ত সুচারুরূপেই মধ্যবিত্ত পরিবারের চালচিত্র নিখুঁত ব্যঞ্জনায় ফুটিয়ে তুলেছেন। নাদিরার চাকরির চার বছর হলে তাকে ফরিদপুরে পোস্টিং দেওয়া হয়। ভাগ্যক্রমে সেখানে নির্মলেরও চাকরি হয়। আর সেখানেই নির্মলের সঙ্গে নাদিরার বিয়ে হয় নতুন নামে। নির্মলের নাম মেহেদী এবং তার পিতার নাম হয় আবুল কালাম আজাদ! বাসর হয় বন্ধবী মীনাক্ষীদের বাসায়। এই বাসরও হয় ছলনা আর অভিনয়ের ন্যাকামিতে দুজনের নাম পরিবর্তন করে। নাদিরার হয়─নীলাঞ্জনা প্রামাণিক।

চৈতালী, ফজু চাচা, আমিনুল, চাচি, জিয়া চরিত্রগুলো ছোটো হলেও উপন্যাসের ব্যঞ্জনা সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এরই মধ্যে নাদিরা গর্ভবতী হয়। কিন্তু যেহেতু গোপন বিয়ে এবং সামাজিকভাবে কাউকে জানালে তাদের বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে তাই নির্মল বাধ্য করে নাদিরাকে গর্ভের বাচ্চাকে নষ্ট করতে। উপন্যাসের ক্লাইমেক্স কি তাহলে এখান থেকেই শুরু? নাকি আরও এগিয়ে যেতে হবে গোপন প্রেম ও বিয়ের পরিণতিতে কী ঘটতে যাচ্ছে তার ইতিবৃত্ত জানার। পারিবারিক সঙ্কট ঘনীভূত হয় তখনই, বাবার স্ট্রোক, সজীবের ব্যবসার মন্দা আর নাদিরার প্রমোশনের জন্য স্খলিত চরিত্রের দ্বিচারিণীর অভিশম্পাতসহ চারপাশে তৈরি হয় গভীর সঙ্কট ও দুর্বোধ্য মর্ম-পীড়নের প্রাচীর। আর তখনই নির্মল ধীরে ধীরে বদলে যায়, গভীর প্রেমে দেখা দেয় চরম তিক্ত হতাশা এবং সেখান থেকে অঙ্কুরিত হয় বিচ্ছেদের ভ্রুণ।

বিচ্ছেদই বা কীভাবে বলা যায়, বরং বলা যায় নাদিরাকে পরিত্যাগ করার অপ্রকাশিত ও অনিবার্য অঙ্গীকার নিয়ে কৌশলে অন্যত্র চাকরি নিয়ে পালিয়ে যায়। আর তাকে খুঁজে পেতে নাদিরাকে বছরের বছর অপেক্ষা করতে হয়। যখন সন্ধান মেলে তখন শুরু হয় নির্মলকে আঁচলবন্দীর নাদিরার নতুন কৌশল। চরম হতাশ, বিচ্ছেদকাতর, মানসিকভাবে ভেঙে পড়া পাগলপ্রায় আধুনিকা নাদিরাও টাকা পয়সা ব্যয় করতে থাকে গ্রাম্য কবিরাজের কাছে। ভণ্ড কবিরাজের পাল্লায় পড়ে টাকা খোয়ার পাশাপাশি যৌন হয়রানীর পরিণতির হাত থেকে নিজেকে কোনোক্রমে বাঁচিয়ে স্বজনদের সহযোগিতা নিয়ে সে এগিয়ে যায় বল প্রয়োগের দিকে। এ উপন্যাসে কবিরাজের উপস্থিতি না থাকলেও বিশেষ ক্ষতি হতো বলে মনে হয় না। কবিরাজের স্বরূপ উন্মোচনই ঔপন্যাসিকের মূল লক্ষ্য কিনা অথবা পরাজিত, বেদনাকাতর, দিশেহারা মানুষ অলৌকিক শক্তির কাছে নিজেকে সমর্পণ করার অমোঘ মানসিকতা কিনা─এ প্রশ্নের মুখোমুখি পাঠককে হতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ লেখক একটি জায়গা অমীমাংসিতই রেখেছেন।

ঔপন্যাসিকের সবচেয়ে বড়ো দক্ষতা হলো চরিত্র অনুযায়ী সংলাপের সুনিপুণ ব্যবহার। অবস্থাভেদে সে সংলাপও বেশ গুরুত্ব বহন করে। একটি উপন্যাসের পটভূমি ক্ষুদ্র কোনো স্থানকে কেন্দ্র করে হলেও ঔপন্যাসিকের শিল্পছোঁয়ায় তা হয়ে ওঠে বৈশ্বিক। প্রয়োজনমাফিক চরিত্রচিত্রণ তাঁর একটি বড়ো গুণ। ভাব ও ঘটনার পরম্পরা রক্ষা করা সবচেয়ে বড়ো দুঃসাধ্য কাজ হলেও তিনি এর সার্থক রূপ দিতে সক্ষম হয়েছেন। এ উপন্যাসের আরও একটি বিশেষ দিক হলো, প্রেক্ষাপট, সময় ও পরিবেশের সঙ্গে সাজুয্য রেখে কাব্যিক উপস্থাপনায় ভাষার গ্রন্থন যা পাঠককে মুগ্ধ করবে।

চরিত্রগুলোর মধ্য দিয়ে বাস্তব ও রোমান্টিকজগতের জটিল থেকে জটিলতর দিকগুলোকেই তিনি অবলীলায় উন্মোচিত হয়েছে। লেখকের লেখার প্লট, ভাব, ভাষা, চরিত্রচিত্রণ, সংলাপ চয়ন, সন্নিবেশ, পরম্পরা, কাহিনির গভীরতা, সময়ের ঐক্য, ব্যাপ্তি, সমাপ্তি সবকিছু মিলিয়ে উপন্যাসটি হয়ে উঠেছে অনন্য। ভাষার সরলতা ও কাহিনির গতিশীলতা পাঠকে তীব্রভাবে আকৃষ্ট করবে বলেই আমার বিশ্বাস এবং পাঠক অবশ্যই উপন্যাসটিকে মূল্যায়ন করবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×