somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী-নাট্য মীর মশাররফ কায়কোবাদ এবং’: অনুসন্ধিৎসু পাঠকের প্রেরণার সুতিকাগার

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

#গ্রন্থালোচনা #বই_আলোচনা

‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী-নাট্য মীর মশাররফ কায়কোবাদ এবং' এটি একটি গবেষণাগ্রন্থ। এ গবেষণাগ্রন্থটি লিখেছেন ড. মো. আশ্রাফুল করিম। ১৩টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ এ ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী-নাট্য মীর মশাররফ কায়কোবাদ এবং’ গ্রন্থটিকে সমৃদ্ধ করেছে। প্রত্যেকটি প্রবন্ধই ভিন্ন ভিন্ন বিষয় ও তথ্য-উপাত্তে সমৃদ্ধ। ড. মো. আশ্রাফুল করিম বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা উভয়ই তাঁর কর্মযজ্ঞে প্রমাণ মিলে। তিনি একাধারে শিক্ষক, লেখক, গবেষক, সমাজসেবক, সংস্কৃতিবান ও সফল নাট্যকর্মী। তাঁর লেখার বিষয় এবং উপস্থপনা কৌশলে রয়েছে নিজস্বতা। ভাষার সরলীকরণ তাঁর রচনার প্রধান গুণ। আর এ গুণের কারণেই পাঠক সহজেই তাঁর গ্রন্থের রস আস্বাদন করতে সমর্থ হয়।

পৃথিবীতে রয়েছে বহু বিচিত্র প্রাণী। এসব বিচিত্র প্রাণীগুলোর ভাবনাও বিচিত্র। বিশেষ করে মানবভাবনাগুলো যেমন বিচিত্র তেমনই তাদের কর্মযজ্ঞ। ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী-নাট্য মীর মশাররফ কায়কোবাদ এবং’ গ্রন্থে সংকলিত প্রবন্ধগুলো বিচিত্র বিষয়কে ভিত্তি করে লেখা। উল্লেখ্য যে, এ গ্রন্থে ঠাঁয় পাওয়া প্রবন্ধগুলো ইতোমধ্যে দেশ বিদেশের বিভিন্ন গবেষণা জার্নালে (বাংলা একাডেমি পত্রিকা, শিল্পকলা, শিল্পকলা ষান্মাষিক বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা, সাস্ট স্টাডিজ, এবং মহুয়া জার্নাল গল্পসমীক্ষা, ত্রিপুরা, ভারত, প্রভৃতি প্রকাশিত হয়েছে।) এ গ্রন্থে সন্নিবেশিত প্রবন্ধগুলো হলো—‘বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা নিরূপণ’, ‘আদিবাসী নৃত্য বৈচিত্র ও পরিবেশন রীতি’, ‘সেলিম আল দীনের ‘কেরামতমঙ্গল’ নাটক : ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জীবন প্রসঙ্গ’,‘সংবাদপত্রে চলচ্চিত্র সমালোচনা : ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ প্রসঙ্গ’, ‘হাছন রাজার গানের বিষয়বৈচিত্র্য’, ‘মীরমশাররফ হোসেনের ‘বিষাদ-সিন্ধু’, ‘কায়কোবাদের ‘অশ্রুমালা’ : প্রসঙ্গ বিষয়বৈচিত্র্য’, ‘মৈমনসিংহ-গীতিকায় পত্র : গুরুত্ব অনুসন্ধান’, ‘শাহেদ আলীর গল্পে নারী : একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা’, ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র একটি তুলসী গাছের কাহিনী’ : দেশভাগপীড়িত মানুষের জীবনভাষ্য’, ‘বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে ব্রাত্যজীবন : প্রসঙ্গ হাসান আজিজুল হকের ছোটোগল্প’, 'Culture and Rituals of Raly Ethnic Community.' প্রভৃতি।

ড. মো. আশ্রাফুল করিম এর এটি একটি নিটোল গবেষণাগ্রন্থ। গবেষণায় যারা নিবেদিতপ্রাণ কিংবা গবেষণায় নতুন, কিংবা গবেষণাকর্মে উৎসাহবোধ করেন তাদের জন্য এই গ্রন্থটি খুবই সুফল বয়ে আনবে বলে আমার বিশ্বাস। গ্রন্থটিতে যেসব প্রবন্ধ সন্নিবেশিত হয়েছে তাতে পাঠকমাত্রেই উপকৃত হবে, আহ্লাদিত হবে, বিস্মিত হবে। কেননা, প্রবন্ধগুলোতে লেখক নিরীক্ষাধর্মী তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে ঢেলে সাজিয়েছেন। আর এসব তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে গবেষককে মাঠপর্যায়ে কাজ করতে হয়েছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। প্রবন্ধগুলোর উপস্থাপনকৌশল, যুক্তিবোধ, ভাষার সরলীকরণ, নতুন নতুন চমকপ্রদ তথ্য-উপাত্তের মেলবন্ধনে পুরো গবেষণাগ্রন্থটিই হয়ে উঠেছে সুপাঠ্য, অনুসন্ধিৎসু পাঠকের প্রেরণার সুতিকাগার।

তিনি তাঁর এ গ্রন্থে ‘বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা নিরূপণ’ প্রবন্ধে তুলে এনেছেন বিস্ময়কর তথ্য। প্রায় ছয় হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে, এ দীর্ঘ সময়ে বাংলার ভূমিতে বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের আগমন ঘটেছে। সরকারি ও বেসরকারি হিসেবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জনসংখ্যা প্রায় ১২০৫৮৪৫ এবং ১৩৫০০০৪ জন (Ahmmed, ২০০৭:৪৫-৪৭)। তবে আদিবাসী ফোরামের মতে, তাদের লোকসংখ্যা প্রায় ২০ লক্ষাধিক।

‘আদিবাসী নৃত্য বৈচিত্র ও পরিবেশন রীতি’ প্রবন্ধে গবেষক তুলে এনেছেন বাস্তবতার নির্যাস। সত্য ও সুন্দরের ক্যানভাস। নৃত্য আদিম সমাজের অন্যতম শিল্পমাধ্যম হিসেবে স্বীকার্য। জীবন জীবিকার ওপর ভিত্তি করেই আদিবাসী নৃত্যের উন্মেষ ঘটেছে। এককথায় আদিবাসী নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান অঙ্গ হলো নৃত্য।আদিবাসীদের সযত্নে লালিত উন্নত ও সমৃদ্ধ বৈচিত্র্যধর্মী বিভিন্ন নৃত্যের সংরক্ষণ ও উন্নয়নে তিনি বেশ কয়েকটি সুপারিশ প্রদান করেছেন।

‘সেলিম আল দীনের ‘কেরামতমঙ্গল’ নাটক : ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জীবন প্রসঙ্গ’ প্রবন্ধে উঠে এসেছে এদেশে বহুকাল ধরে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী লোকেদের জীবনসংগ্রামের ইতিকথা। এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকেরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদান রাখার পাশাপাশি নানাভাবে দেশের অর্র্থনৈতিক উন্নয়নে অতুলনীয় অবদান রাখলেও তাদের বার্ষিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে, ভূমির মালিকানা প্রদান, সর্বোপরি সংস্কৃতি চর্চার যথোপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারের আরও একটু সৃদৃষ্টি পড়লে এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সংস্কৃতি জিইয়ে রাখা সম্ভব।

‘সংবাদপত্রে চলচ্চিত্র সমালোচনা : ‘আমার বন্ধু রাশেদ প্রসঙ্গ এ প্রবন্ধে লেখক দেখাতে চেয়েছেন-সংবাদপত্র ও চলচ্চিত্র বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী দুটি গণমাধ্যম। কিন্তু বর্তমানে এসব গণমাধ্যমে সমালোচনা বলতে কেবল প্রশংসা এবং পরিচিতি বৃদ্ধিকেই বুঝানো হয়ে থাকে। আমার বন্ধু রাশেদ প্রসঙ্গে জাতীয় দৈনিক ও গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা আরও বেশি জোরালো হলে, প্রকৃত অর্থে সমালোচনা হলে চলচ্চিত্রটি আরও বেশি জনগণের দোরগোরায় যেতে পারত। চলচ্চিত্র সমাজ পরিবর্তনের একটি ঐতিহ্যবাহী ও প্রভাবশালী শিল্পমাধ্যম হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। একজন সমালোচক তাঁর জ্ঞান, মেধা, শিক্ষা, অভিজ্ঞতা এবং যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কোন চলচ্চিত্রের নান্দনিক বিশ্লেষণাত্মক সমালোচনার দ্বারা মানসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন।

এককথায়, ড. মো. আশ্রাফুল করিম এর ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী-নাট্য মীর মশাররফ কায়কোবাদ এবং’ শীর্ষক গবেষণাগ্রন্থের প্রত্যেকটি প্রবন্ধই অনুসন্ধিৎসু পাঠকের জন্য কিংবা গবেষণায় আগ্রহীদের জন্য প্রেরণার সুতিকাগার। সমৃদ্ধ এ গবেষণাগ্রন্থটি নিঃসন্দেহে নবীন-প্রবীণ পাঠকের জন্য সুফল বয়ে নিয়ে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।











































#গ্রন্থালোচনা #বই_আলোচনা
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৪৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×