somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মন্দির-মসজিদ ভাংচুর, সাম্প্রদায়িক দাঙা বাধানোর চেষ্টা, এ নিয়ে ভার্চুয়াল সার্কাস এবং আমাদের বিবেক

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই বেশ কয়েকটা কথা পরিষ্কার করে নেই।

১. এই পোষ্টটা আমি চরম বিরক্ত হয়ে লিখতে বসেছি এবং বিশেষ কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে লেখা নয়।

২. আমি নিজে আস্তিক এবং মনে প্রাণে নিজেকে বাঙালী ভাবি।

৩. যতটুকু ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছি সেটার ম্যাক্সিমাম আমি নেট ঘেটে পেয়েছি, পেপারে পেয়েছি। আপনি প্রত্যক্ষদর্শী না হলে আপনার আমার এ বিষয়ে জানার পরিধি প্রায় সমান।

পোষ্টের মূল বিষয়ে যাবার আগে ভূমিকার পার্ট শেষ করে নেই।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা বেশ উত্তাপ ছড়াচ্ছে দেশের সব জায়গায়। ভার্চুয়াল জগতে এর উত্তাপটা আরো ভালো ভাবে বোঝা যাচ্ছে। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামতই দিচ্ছি এই পোষ্টে।

হাটহাজারীর ঘটনাটা পুরোপুরি আমি জানিনা। মানে কোন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা পাইনি। যতটুকু শুনলাম সংক্ষেপে, “নামাজের সময় মন্দিরে ঢাক বাজানো হচ্ছিলো। তাতে মুসল্লীরা আপত্তি প্রকাশ করেন এবং সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান। এর মধ্যে কেউ একজন মুসল্লীদের ঢিল মারে। পরে ঘটনা অনেকদুর গড়ায়। মন্দির ভাঙা হয়। মসজিদ ও বাদ যায় না।

আমার মতে এই ঘটনার সমাধানটা এভাবে হতে পারতো। প্রথম ঢিলটা মারার আগেই অথবা সাথে সাথেই নিক্ষেপকারীকে সনাক্ত করা। এটা যখন হলো না, তখন দুই ধর্মেরই মুরুব্বী শ্রেণীর লোকজনদের একসাথে বসেই সমস্যার সমাধানে আসা। ঠান্ডা মাথায় যুক্তি দিয়ে কথা বললে যে কোন সমস্যারই সমাধান হয়।

কিন্তু সমস্যাটা গাঢ় করে দেয় কিছু অতিউৎসাহী মস্তিষ্কবিহীন লোকজন। আমি ড্যামশিউর, যে লোকটা প্রথম মন্দিরে আঘাত করে সে একটা বুদ্ধিহীন এবং সর্বদা নিজেকে প্রমাণ করতে চায় এই টাইপের লোক। মসজিদে যে লোকটা প্রথম বাড়িটা দেয় সেও একই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। মাঝেমাঝে কোন মিটিং মিছিলে দেখা যায় যে, কোন সমস্যা যখন সমাধানের পথে ঠিক তখন একটা লোক ধুম করে বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কহীন একটা কাজ করে ঝামেলা লাগিয়ে ফেলে। এই ঝামেলা দুই পক্ষের কেউই চায় না। চট্টগ্রামের ঘটনাটাও একই। কোন শান্তিপ্রিয় বুদ্ধিমান সাধারণ হিন্দুও চায়নি মসজিদের গায়ে আচড় পড়ুক, কোন মুসলমানও চায়নি মন্দির ভাঙা হোক। আমি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে দেখেছি দেশের বেশীরভাগ ধার্মিক মানুষই শান্তিপ্রিয় স্বভাবের। কিন্তু এই অতিউৎসাহী লোকজনের গাধার মত কাজকর্মে ক্ষতি বেশী হয় এদেরই। এরা বাধ্য হয় সংঘাতের স্রোতে মিশে যেতে।

এইটুকু পড়ার পর যারা ভাবছেন আমি সুশীল সুবিধাবাদীর ভাব নিচ্ছি তাদের বলি আমি সুশীল নই। সত্যিকে সত্যি হিসাবে স্বীকার করি সবসময়।

এবার আসি ধর্ম ব্যবসায়ীর প্রেক্ষাপটে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই উগ্র ধর্ম ব্যবসায়ীরা প্রায় সব ধর্মেই আছে। আগে মাঝেমাঝে হিন্দী সিনেমা দেখতাম (কেউ এজন্য আমাকে ভাদা বললে বলতে পারেন।)। একটা সিনেমা দেখেছিলাম “দিল্লী সিক্স”। আপনারাও দেখতে পারেন। এই সিনেমাতে প্রকৃত ধর্ম ব্যবসায়ী কিছু মানুষ দেখতে পাবেন। তারা কিভাবে দাঙা বাধায় সেটাও দেখতে পাবেন।

নাস্তিক ব্যতীত প্রতিটা ধার্মিক লোকই তার ধর্মকে সম্মান করে। (কোন নাস্তিকের সাথে এই মুহুর্তে আমি এ ব্যাপারটা নিয়ে তর্কে যেতে চাই না।) প্রতিটা ধর্মই বলে শান্তির কথা এবং প্রতিটা ধর্মই শেখায় অন্য ধর্মকে শ্রদ্ধা করতে। আমি করি। আমি নিজে হিন্দু। কিন্তু আযানের শব্দ আমার কাছে ভাল লাগে। মধুর সুরের জন্য ছাড়াও ভাল লাগে কারণ এটা সব মুসলমানদের ডাকছে নামাজের জন্য। সৃষ্টিকর্তার কাছে মাথা নত করার জন্য। আমি নিজে যখন আযানের শব্দ শুনি কম্পিউটারে গান বাজলে অফ করে দেই, হাতে গিটার থাকলে বাজানো বন্ধ রাখি। অন্য ধর্মকে সম্মান দেখানোটা এত কঠিন কিছু মনে হয়না আমার কাছে। আমার মুসলমান বন্ধুদেরও দেখি আমার ধর্মের প্রতি সম্মান দেখাতে। এতে তো নিজের কোন ক্ষতি হচ্ছেনা বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধটা বাড়ছে। এটা পজিটিভ দিক।

ক্ষতিটা তখনই হয় যখন উগ্র ধার্মিকতা দেখাতে গিয়ে অন্য ধর্মকে অসম্মান করার প্রবৃত্তি জাগে। নিজের ক্ষতি, সমাজের ক্ষতি, দেশের ক্ষতি।

এ কদিনে ব্লগে বেশ সার্কাস দেখলাম এই ইস্যু নিয়ে। ব্লগীয় দাঙা বলা যায়। একদল আছেন যারা এই দাঙায় ফুয়েল দিচ্ছেন। তাদের কিছু বলার নেই। তারা ঝানু পাবলিক। দাবার কোন চাল কখন খেললে এর আরো দশ চাল পর কি হবে এটা উনার খুব ভালই বোঝেন। চট্টগ্রামের ঘটনাকে দাঙায় রুপ দেবার জন্য তাদের তৎপরতা বাহবা দেয়ার মত।

অনেকের কমেন্ট দেখলাম, “সংখ্যালঘু হয়েও হিন্দুরা অনেক ভাল আছে এই দেশে। ভারতের তুলনায় অনেক ভালো। ভারতের মুসলমানদের সাথে বাংলাদেশের হিন্দুদের তুলনা করলে তো বাংলাদেশের হিন্দুরা স্বর্গে বাস করে। ব্লা ব্লা ব্লা।”
এটা কোন সুস্থ মানুষের কথা হতে পারেনা। আমার অন্তত মানতে কষ্ট হয়। ভারতের সাথে কিসের তুলনা? এদেশ আমাদের জন্মভূমি। জন্মভূমিতে সবাই ভাল থাকার অধিকার রাখে। ভারত কুত্তার দেশ হলে কি আমাদেরও কুত্তা হতে হবে?


আমি কখনো কোন শান্তিপ্রিয় ধার্মিক মুসলমানকে দেখিনাই আমাদের পূজার মন্ডপে হামলা করতে। দেখেছি কিছু ধর্ম ব্যবসায়ীদেরকে। কাদের কথা বলেছি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। নামটা উল্লেখ নাই বা করলাম।

আমাদের বাংগালীদের একটা সমস্যা আছে। আমরা নিজের বিবেক, চোখের চেয়ে অন্যের চোখকে অন্যের বিবেককে বেশী বিশ্বাস করি। মাথার চেয়ে মুখ চালাই বেশী। এজন্যই এইসব ব্যবসায়ীরা সুযোগ পায়।

আজকে ফেসবুকের একটা পেজে একটা ছবি দেখলাম সাহারা খাতুনের। প্রথম আলোতে নাকি উক্তি এসেছে উনার, “দেশের আইন-শৃঙখলা আগের চেয়ে অনেক ভালো। মেঘের বাবা মা মারা গেলেও মেঘ তো বেচে আছে।”

এই ছবি দেখে ৯৫% মানুষ জিনিসটা বিশ্বাস করবেন এবং সাহারা খাতুনকে ধুয়ে ফেলবেন। কিন্তু চিন্তা করে দেখবেনা বা প্রথম আলোর সাইটে গিয়ে বা পেপার খুলে যাচাই করে দেখবেনা। মিথ্যাকে সত্য বানানোর এ সুযোগটাই ব্যবসায়ীরা চায়। আমি সাইট খুজে পাইনি এমন কোন লেখা। কেউ পেলে জানাবেন।

এখন একটা মজার ব্যাপার হল যারা পোষ্টটা পড়ছেন তাদের অল্প কয়েকজন উপরের লেখাটা পড়ে আমাকে ছাত্রলীগের কুত্তা বলে ফেলবেন। তাদের জন্য বাণী হলো “ইউজ ইউর ব্রেইন”। বুঝে যাবেন আমি কি। এবং এই টাইপের লোকজনই বিভ্রান্তিটা বেশী ছড়ায়।

প্রতিটা ব্লগারের কাছেই অনুরোধ রইলো হুটহাট কোন নিউজে বিশ্বাস করার আগে একটু যাচাই করে নিন। সামহোয়ারইন ব্লগ এবং ফেসবুকে বিভিন্ন ধর্মের প্রচুর ছাগুর আমদানী হয়েছে যাদের কাজই হলো বিভ্রান্তি ছড়ানো। আপনার আমার মত সাধারণ মানুষ এই বিভ্রান্তিগুলোর স্বীকার হয়।

সবশেষে একজন হিন্দু হিসেবে আমি বলতে চাই, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা বা গীর্জা সবই আমার কাছে পবিত্র। কারণ হোক না অন্য ধর্মে বিশ্বাসী, একজন মানুষ এই জায়গাগুলোতে শান্তি খুজে পায়। আমি একজন মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষের শান্তি চাই।

ধর্ম বিশ্বাস হোক উগ্রতা, সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত।

চট্টগ্রামে যারা মন্দির এবং মসজিদ ভেঙেছে তাদের কঠোর শাস্তি হোক।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ২:৪৪
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×