somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিনব প্রতারণা ।। সংস্কৃতি কর্মীর পরিচয়ে দুবাই গিয়ে তারা হয়ে ওঠে ড্যান্সার কাম কলগার্ল

২৩ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সাংস্কৃতিক দলের নাম দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ১৪ থেকে ১৮ বছরের দরিদ্র অথচ সুশ্রী তরুণীদের চট্টগ্রাম হয়ে পাচার করা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে। নাচের কোন মুদ্রা না জানলেও এবং সঠিক তাল সুর লয়ে গান গাইতে না পারলেও শিল্পী পরিচয়ে এরা সাংস্কৃতিক টীমের ব্যানারে পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে। সেখানে তাদের প্রধান কাজ হয় বিভিন্ন বার এবং নাইট ক্লাবে ড্যান্সার হিসেবে দর্শকদের মনোরঞ্জন করা। কখনো অনিচ্ছা সত্ত্বেও কলগার্ল হতে বাধ্য করা হয় তাদের। সম্প্রতি নগরীতে ফিরে আসা মধ্যপ্রাচ্যে এ পেশায় জড়িত কয়েকজন আলাপকালে আজাদীকে এ তথ্য জানান। তারা আরো জানান মূলত: মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই, আবুধাবী এবং আলাইন শহরে বাংলাদেশী দ্বারা পরিচালিত ৪৮ টি নাইট ক্লাবে এ ব্যবসা চলছে রমরমাভাবে।

মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন বার, নাইট ক্লাব ও হোটেলে প্রতিদিন রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। রাত বাড়ার সাথে সাথে আগতদের অনেকেই আরো কিছু চায়। তাদের এই চাওয়া পূরণের জন্য মঞ্চে উঠে আসে আলোচ্য কিশোরীরা। এরা দেশ থেকে যায় সাংস্কৃতিক কর্মী পরিচয়ে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাদের পরিচয় পাণ্টে যায়। তারা হয়ে উঠে ড্যান্সার কাম কলগার্ল।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে জানা গেছে, খোদ চট্টগ্রামেই এ ধরনের অন্তত ১০ টি গ্রুপ আছে। এসব গ্রুপ নিয়ন্ত্রণকারীরা তিন মাস কখনো আবার ছয় মাসের চুক্তিতে তাদের নিয়ে যায়। তার আগে দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলা থেকে সংগ্রহ করা হয় সুশ্রী চেহারার দরিদ্র কিশোরীদের। এদের অনেকের পরিবারকে জানানো হয় সেলস গার্ল হিসেবে তারা কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি পাবে। দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হতে থাকা পরিবার লোভনীয় এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। বিদেশ যাওয়ার পর এসব কিশোরী দালালের কথা ও কাজে মিল পায় না। মিল না পেলেও তাদের কিছুই করার থাকে না। এক সময় বাধ্য হয় তারা শরীর বিকিয়ে দিতে।

দুবাই, আলাইন , আবুধাবী শহরে বাঙালি মেয়েদের দারুণ চাহিদা রয়েছে। কারণ হিসেবে জানা যায় বাংলাদেশী মেয়েরা উজ্জ্বল ফর্সাও নয়, আবার কুচকুচে কালোও নয়। তাদের গায়ের রঙ তামাটে। এ কারণে বিদেশীদের কাছেও এ দেশীয় মেয়েদের চাহিদা আকাশচুম্বী। ফলে এসব শহরের হিল্টন , প্যারিস, বেনটা, দুবাই পাম, ক্যালিফোর্নিয়া, হাভানা প্যালেস, রাফী, প্রণেসিয়া, মিডলইস্ট, ইন্টার সিটি, গালফ, ডেজার্ট, মাউন্টরেলসহ বিভিন্ন হোটেল ও বারে শিল্পী পরিচয়ে শুধুমাত্র ভোগ্যপণ্য করে পাঠানো হচ্ছে শত শত মেয়েকে। দুবাই নাইফ রোডের একটি হোটেল সেন্ট্রাল প্যারিস। মালিক চট্টগ্রামের পটিয়ার দুই ভাই জসিম ও ওয়াসিম। গত ৩০ এপ্রিল উল্লেখিতভাবে নিয়ে যাওয়া হয় মৌসুমিসহ আরো কয়েকজনকে। গত ২০ জুন সে ফিরে এসেছে চট্টগ্রামে। তার কাছ থেকে জানা যায়, হোটেলগুলোতে নির্যাতনের লোমহর্ষক চিত্র। তিনি জানান, প্রতিদিন রাত নয়টা থেকে তিনটা পর্যন্ত জমে উঠে হোটেলগুলো। পুরো প্রত্রিয়াটা সম্পর্কে সে বর্ণণা করে আজাদীকে। মৌসুমি জানায়, নিজের খরচে পাসপোর্ট বানানো হয়। দেশে বিশ্বাস অর্জনের জন্য তাদের অগ্রীম দেয়া হয় ত্রিশ হাজার টাকা। বাকি দুই মাসের টাকা সেখানেই দেবে বলে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। এয়ারপোর্টে ধরাধরি হলে সিঙ্গাপুর অথবা ব্যাংকক হয়ে মেয়েদের নিয়ে যাওয়া হয় দুবাই। সেখানে নেয়ার পর প্রথমেই তাদের পাসপোর্ট নিয়ে নেয় মালিক। দুইতিনদিন তাদের নাচ এবং কীভাবে খদ্দের জোগাড় করতে হবে তা নিয়েই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বারে যারা যায়, নিয়ম হলো কোন একজনের পছন্দের গানে তার পছন্দের মেয়েটা নাচতে হলে বা তাকে ভালো লাগলে সে মালা অথবা মাথার তাজ কিনবে নগদে। মালা বিক্রি হয় ১০০ দিরহামে এবং তাজ ৫০০ দিরহামে। নির্দিষ্ট মেয়ের গলায় মালা অথবা তাজটি পরিয়ে দিয়ে পছন্দের গানটি জানিয়ে দেয়। সেই গানটি তখন বাজতে থাকে আর মেয়েটি মঞ্চ থেকে নেমে নির্দিষ্ট কাস্টমারের সামনে নাচতে থাকে। সুপারভাইজার তরুণ ও সমির এসে তার ফোন নম্বরটা নিয়ে নেয়। এভাবেই চলতে থাকে কিছুদিন। যদি কোন মেয়ে মালা যোগাড় করতে না পারে, তবে তার সেদিনের খাবার বন্ধ থাকে মালিকের নির্দেশে। মালিকের নির্দেশেই মেয়েটি অত:পর নির্দিষ্ট কাস্টমারের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে, যাতে প্রতিদিনই সে বারে আসে। এরপরই চাপাচাপি চলতে থাকে ঐ গ্রাহকের শয্যাসঙ্গি হওয়ার। কারণ হিসেবে মৌসুমি জানায়, সেটা হলে প্রথমেই কাস্টমারটি ক্যাশে ৫০০০ দিরহাম জমা দেয়। এরপর ওয়েটার, সুপারভাইজার, ম্যানেজার ও মালিককে ১০০ থেকে ২০০ দিরহাম করে দিতে হয়। তারপর ভোর চারটা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত জোরপূর্বক শয্যাসঙ্গি করে পাঠানো হয় মেয়েটিকে। ৫০০০ দিরহাম থেকে মেয়েটি পায় মাত্র ৫০ দিরহাম। মৌসুমি শেষপর্যন্তও এ কাজ করতে রাজি না হওয়ায়, তার খাওয়া বন্ধ ছিল কয়েকদিন। শেষ পর্যন্তও তাকে বাগে আনতে না পেরে বাকি টাকা না দিয়ে তাকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয় দেশে।

ঐ হোটেলে নিত্য যাতায়াত করে এমন একজন চট্টগ্রামের যুবক আল হাদী আজাদীর কাছে তুলে ধরেন কী করে সর্বস্বান্ত হতে থাকে বাংলাদেশী শ্রমিকগুলো। তিনি জানান, দর্শনার্থীর মনোরঞ্জনই তাদের পেশা। আলো আঁধারির পরিবেশে সুরের মূর্চ্ছনায় তাদের চোখে চোখ রেখে চলতে থাকে সুরা পান। দেখতে দেখতে ঘোর লাগে চোখে, পুলকিত হয় মন। মোহনীয় অঙ্গভঙ্গিতে দেহ দোলে, শরীরে হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ খেলে যায়। কিন্তু রূপসী যে ধরা দেয় না। ঢুলু ঢুলু চোখে যতোই এগিয়ে যায়, রূপসী তার যৌবনের আরো খানিকটা উপচে দিয়ে লুকোচুরি খেলতে থাকে যুবকের সাথে। এভাবেই যুবকটিকে ফাঁদে ফেলে তার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়। এভাবে একদিকে সর্বশান্ত হচ্ছে প্রবাসী শ্রমিকরা, অন্যদিকে বাঙালি মেয়েগুলো বাধ্য হয়ে না পারে দেশে ফিরতে, না পারে এ অত্যাচার মেনে নিতে। এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) মো. ইলতুৎমিশ আজাদীকে বলেন, জসিম ও ওয়াসিম শুধু এই দুজনই নয়, চট্টগ্রামের আরো অন্তত ২০ জন প্রবাসী চট্টগ্রাম থেকে সংস্কৃতিকর্মী পরিচয় দিয়ে বিদেশে নিয়ে কিশোরীদের এই ধরণের কাজে যুক্ত করছে। এদের চট্টগ্রামের রুট বন্ধ করে দেওয়ার জন্য আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি।

সুত্রঃ ঋত্বিক নয়ন
দৈনিক আজাদী ২৩.০৬.২০১৩
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওরা আমাদের ঐতিহ্যের পোশাককে নোংরা পোশাক হিসেবে পরিচিত করতে চায়। ওরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে গ্রাস করতে চায়।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০


"লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি'মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।"

এক মৌলভী পোস্ট দিয়েছেন
"শাড়িকে একটি নোংরা পোশাক বানিয়ে দিয়েন না।
শরীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমূদ্র-সৈকতে - ১৬

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯



ছবি তোলার স্থান : মেরিনড্রাইভ, কক্সবাজার, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : পহেলা অক্টোবর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ।

বেড়াবার সবচেয়ে আকর্ষণীয় যায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমূদ্র সৈকত। কখনো কখনো আমারও সুযোগ হয় বেড়াতে যাবার।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাঁআআআচ্চুউউউ! :) :D ;)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ৯:৩৩



হাঁচতে নাকি জানে না কেউ,
কে বলেছে বোন
এই দেখোনা কত্ত হাঁচির
ওজন শত টন।

কিম হাঁচে বাড়া ভাতে,
বাইডেন হাঁচে তার সাথে সাথে,
লালচে চীনের জোরসে হাঁচি,
কাঁদে সবুজ ঘাস।
মাদার রুশের হাঁচি দেখে
হয় যে বনবাস!!

বনবিবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেইন্ট মার্টিন ও কোক ইস্যু

লিখেছেন নিবারণ, ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪

বিগত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে চর্চিত বিষয়, কোকের বয়কট ও গত দুই দিন ধরে সেইন্ট মার্টিন মায়ানমার দখল করে নেয়ার খবর।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্রিভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, মায়ানমার সেইন্ট মার্টিন দখল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গান গাইলাম (সাময়িক)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৪:০৮

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমি আদর করে 'আই' ডাকি। আইকে দিয়ে অনেক কাজই করাতে হয়। এবারে, আমাদের ৫ ভাইদের নিয়ে একটি গান বুনেছি। আমরা ৫ ভাই অনেক দিন একসাথে হই না। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×