somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভাষা দিবস, নাকি শুধুই উদ্দাম উদযাপন

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যে দেশের নাম ভাষার নামের সাথে যুক্ত। বাংলা ভাষাই সর্বপ্রথম আমাদের আন্দোলন করে নিজেদের অধিকার আদায় করতে শেখায়। যার পথপরিক্রমায়, একাত্তরে স্বাধীন দেশের সূচনা হয়।

সেই অমর একুশের ৬০ বছর পূর্ণ হল আজ। যে ভাষার দাবিতে রফিক,শফিক,জব্বার,বরকত,সালাম রা শহীদ হয়েছিল আমরা তার পরের প্রজন্ম কি সেই ভাষার মান রক্ষা করতে পেরেছি ? পারলেও কতটুকু ? এ পর্যায়ে এসে অনেকেই অনেক সফলতা তুলে ধরবেন। সফলতা আছে বৈকি, কিন্তু আপামর জনসাধারণের আচরণে যদি সেটা প্রকাশ না পায়, সেটার মূল্য কতটুকু বজায় থাকে সেটাও দেখার বিষয়।

সকাল ১০:০০টা
স্থানঃ শাহবাগ এবং জাতীয় শহীদ মিনার

শাহবাগের প্রজন্ম চত্তরে কিছু সময় কাটিয়ে শহীদ মিনারে গেলাম।
টিএসসি তে এসে আমার মনে হল, আজ মনে হয় ১৪ই ফেব্রুয়ারি ! সব জোড়ায় জোড়ায়। হাসি খুশি, প্রাণোচ্ছল সব ছেলেমেয়ে। এদের দেখে মনেই হচ্ছিল না, আজ দিনটি ঠিক আনন্দের নয়। তাদের এই আনন্দটুকু অর্জন করতে আমাদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে, অনেক প্রাণ দিতে হয়েছে। আরেকটি ব্যপারও বোঝা গেল না। শত হাজার প্রেমিকযুগল সারা বছরই প্রেম করে। একটি নির্দিষ্ট দিনে তাঁদের এত ভিড় থাকে কেন। সেই ভিড়ে আমাদের ভাষার জন্যে ভালবাসা কি একটু হলেও থাকে ? কয়জন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে একটি ভাল বই উপহার দেয়। কয়জন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে বলে, 'এই জান আজকের দিনে কী হয়েছিল ?' প্রেমিকা হয়ত বলে,' ধুর ছাই, কি সব বল আবোলতাবোল!' তখন কি প্রেমিক বলে,ঠিক আজকের এই দিনে প্রেমিকার চেয়ে অনেক বেশি ভালবাসা ভাষার জন্যে ধারণ করে ১৪৪ ধারা ভংগ করেছিল একদল পাগলাটে দেশপ্রেমিক। না, প্রেমিকরা বলে না। তাদের কাছে শহীদ মিনার ডেটিং প্লেস, ২১ ফেব্রুয়ারি আরেকটা ১৪ ফেব্রুয়ারি!

শহীদ মিনারের কথাই ধরা যাক। গতকাল রাত পর্যন্ত এখানে জুতা পায়ে চলাচল হয়েছে(সারা বছরই হয়)। আপত্তিকর অবস্থায় প্রেমিকযুগল কে ধরা হয়েছে। রাস্তায় ময়লা আবর্জনা,পুঁতি গন্ধযুক্ত পরিবেশ। এই এলাকা বছরের শুধুমাত্র
একদিন পরিষ্কার করা হয়। আমরা আমাদের শহীদদের এভাবেই সম্মান করি !

প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে যতখানি সামনে যাওয়া যায় গেলাম, শ্রদ্ধার সাথে ফুলগুলো নিচে নামিয়ে রাখলাম। অনেককেই দেখলাম দূর থেকে ফুল ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারছে, যেন ময়লা ফেলছে বেদীতে! এতখানি কষ্ট করে এত কাছে এসে ফুল ছুঁড়ে কেন ফেলতে হবে? এতটুকু শ্রদ্ধা কি আমাদের ভাষা শহীদ রা পাবে না ?

কিছুদূর এগোতেই দেখা গেল এক মেয়ে তার বাবার সাথে ফুল দিতে যাচ্ছে। তার পরণে কালো সালোয়ার। ডিজাইনে শহীদ মিনারের ছবি। চমৎকার লাগছিল সোনামণিটাকে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি এখানে কেন এসেছ? সে বলল, ফুল দিতে। ঠিক তার কাছে কয়েকজন উঠতি বয়সের তরূণ দেখা গেল। তারা আমার কথা শুনে হাসছিল। আমি কি মনে করে তাদের জিজ্ঞেস করলাম,' আচ্ছা , আজকের এই দিনে কি হয়েছিল বলতে পারবে?' একজন ফিক করে হেসে বলল,' অমা, আপনি জানেন না কি হয়েছিল ?' আমি বললাম, 'না, জানি না, কি হয়েছিল বলতো' সে বলল, 'এই দিনে অনেক মানুষ মারা গেসিল, ভাষার জন্যে।' আমি বলি, ' কারা মারা গিয়েছিল?' সে বলে,'এই ত গেসিল, নাম মনে নাই এখন, ভুইলা গেসি'। আমি বললাম,'আচ্ছা ঠিক আছে,কিন্তু ভাষার জন্যে কেন মারা গেল,ওরা আসলে কি করেছিল?' সে বলে,' পুলিশ গুল্লি করসিল, এইজন্যেই তো মরসে, আর কেমনে মরব বলেন'। আমি বললাম, তুমি কিসে পড়, সে বলল, ইন্টার ফাস্ট ইয়ার।
আমি আর কিছু বলি না, চলে আসি সেখান থেকে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আজ অব্দি উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া একটি ছেলের আমাদের ভাষা আন্দোলনের কথা জানাতে পারেনি। ভাষা শহীদদের নাম জানাতে পারেনি। এ লজ্জা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার নয়, এ লজ্জা আমাদের সবার।

বিকেল ৪:৪৫
ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর

শাহবাগ থেকে ধানমণ্ডি আসলাম। উদ্দেশ্য রবীন্দ্র সরোবর। হেঁটে হেঁটে আসলাম পুরো রাস্তা। এখানেও উৎসবের আমেজ। কড়া মেক আপ, বুটিক হাউস থেকে কেনা অ আ লেখা শাড়ি বা পাঞ্জাবি। আবারো প্রেমিক যুগলের ছড়াছড়ি দেখা গেল। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে চমৎকার অনুষ্ঠান হয়ে গেল। ফেরার পথে, রাস্তার ওপাশে একটা রেস্টুরেন্টে জোরে হিন্দি গান বাজাতে শুনলাম। ম্যানেজার কে বলতে যাব, তখন দেখি ম্যানেজারের জায়গায় এক মুশকো লোক, চোখে সানগ্লাস, হাতে সিগারেট নিয়ে ভুস ভুস করে ধোঁয়া ছাড়ছে। তাকে বললাম, ভাই, হিন্দি গান বন্ধ করেন। সে খেকিয়ে বলল, কেলা, বন করমু কেলা? তার কথা শুনে বুঝলাম, আসলেই তো সে কেন বন্ধ করবে ? বাংলা তো তার ভাষাই না!

সন্ধ্যা ৭ টা
ফার্মগেট

আই বি এ হোস্টেলের সামনে দিয়ে আসার সময় দেখতে পেলাম একটা জায়গায় টেবিল পেতে কয়েকটা ছেলে বসে আছে। তাদের মাথার উপরে অ আ লেখা চারকোনা বাক্স,মাথায় জাতীয় পতাকা, কারও কারও রাজাকারের ফাঁসি চাই লেখা কাপড়, টেবিলের উপরেও তাই। ভাল লাগল দেখে, কিন্তু কাছে এগোনো মাত্র শুনতে পেলাম " হুক্কা বার" হিন্দী গান চলছে! হায় আমার বাংলা, তুমি কোথায় থাক, কি করে থাক!

রাত ৮টা
বাসার কাছে

সারাদিন বাইরে ঘোরাঘুরি আর অসংলগ্ন সব দৃশ্য দেখে ক্লান্ত হয়ে ফিরছিলাম। ঠিক তখন দেখলাম, ফোম আর ভাতুরা দিয়ে বানানো চমৎকার একটা শহীদ মিনার, নিচে ফুলও দেয়া আছে। পাশে বড় একটা স্পিকারে বাংলা জাগরণের গান বাজছে। অবাক হয়ে দেখছি আর ভাবছি কারা করল এটা। পাড়ার এক ছেলে বলল, 'ভাই, সুন্দর বানাইসি না?' আমি বললাম, ' সুন্দর বানাওনি, অনেক সুন্দর বানিয়েছ। তবে গানের শব্দে কারো যেন অসুবিধা না হয় সে খেয়াল রাখবে।" সে হেসে বলল, 'অবশ্যই রাখব ভাই', বলেই সাউণ্ড একটুখানি কমিয়ে দিল। এতসব খারাপ লাগার দিনে শেষটা ভালই হল, কি বলেন ?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৫
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×