somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাতারাতি আগাছার মত গজিয়ে উঠা কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও কতিপয় হুজুগে বাঙ্গালী

২৫ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই অনলাইন নিউজপোর্টাল নিয়ে আমার নিজের দেখা একটা সত্যি কাহিনী শুনাই,
চিটাগাং পলিটেকনিকেল এ পড়াশুনা করতো একটা ছেলে, আমার ফ্রেন্ড লিস্ট এ ছিল দীর্ঘদিন। কম্পিউটার এর খুঁটিনাটি সম্বন্ধে টুকটাক জেনে একসময় ছেলেটা একটা ব্লগসাইট তৈরী করে। সেখানে নানান রকম টিপস টিউটরিয়ায়ল নিয়ে লিখতে থাকে। আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকার কারণে আমি প্রায়ই দেখতাম সে তার ব্লগের লেখার লিঙ্ক শেয়ার দিতো। একদিন একটা লেখা দেখে আমারও কাজে আসবে ভেবে আমি বুকমার্ক করে রেখেছিলাম। এইভাবে চলছিলো বেশ কয়েকদিন। একদিন হুট করে দেখতে পাই তার সেই লেখাটা আর নাই। বুকমার্ক করে রাখা লিঙ্কে যেতে চাইলে রিডাইরেক্ট করে অন্য একটা সাইটে নিয়ে যাচ্ছে। যেই সাইটে নিয়ে যাচ্ছে সেইটা একটা অনলাইন নিউজপোর্টাল। সামান্য ঘাটাঘাটি করে জানতে পারলাম ছেলেটার একটা ফ্রেন্ড আছে আমার ভার্সিটিতেই পড়ে, ওরা দুই ফ্রেন্ড মিলে এই পোর্টালটা মেন্টেইন করে। নিউজের নমুনা দেখে অবাক হলাম। দুই একটা স্যাম্পল দেই,

"ফাঁস হয়ে গেলো নায়িকা পরিমনির গোসলের দৃশ্য। দেখুন ভিডিওসহ।" ,
"মেকআপ রুমে একি করলেন অভিনেত্রী মম ( ভিডিওসহ )"
ইত্যাদি ইত্যাদি।

বুঝেন ঠেলা! যেখানে বাংলাদেশের একজন অর্ধশিক্ষিত যুবক হালকা পাতলা ইন্টারনেট ইউজ করা শিখার পর প্রথমেই যা করে তা হল, গুগলে গিয়ে সার্চ দিবে "অ্যাডাল্ট ভিডিও", "পর্ণ ভিডিও", "ন্যুড পিকচার" ইত্যাদি ইত্যাদি সেখানে একটা অনলাইন নিউজ পোর্টাল এর নিউজ এর নমুনা যদি এই হয় তাহলে এইসব যুবকগুলো কি করবে! দেখা মাত্রই নিউজ লিংকে ক্লিক। ফলাফল কি দাঁড়ালো নিউজপোর্টাল পুরাই হিট। দিনে কয়েক হাজার ভিসিটর। আর কি লাগে! এছাড়া ফেইসবুকে কিছু টাকা খরচ করে পেইজ প্রমোট করিয়ে নিয়ে সেই পেইজ থেকে মিনিটে মিনিটে নিউজ এর লিঙ্ক শেয়ার দিলে তো হুহু করে সাইটের ভিজিটর বাড়তে থাকে। ভিসিটর সংখ্যা বাড়লে সাইট থেকে ইনকাম এর পরিমাণও বাড়তে থাকে। ব্যস হয়ে গেলও অনলাইনে টাকা ইনাকাম।

প্রায় ম্যাক্সিমাম অনলাইন নিউজপোর্টাল এর জন্মটা এভাবেই হয়। কিছু স্বল্পশিক্ষিত পোলাপাইন টুকটাক ওয়ারডপ্রেস এর কাজটাজ শিখে, এইসটিএমএল, সিএসএস শিখে রাতারাতি ওয়েবডেভেলপার বনে যায়। তারপর অনালাইনে টাকা ইনকাম এর রাস্তা হিসেবে এই সস্তা নিউজ পোর্টাল বানায়। সততা আর এথিকস বিকিয়ে দিয়ে তারা সো কলড "সাংবাদিক" ও হয়ে যায়। ঘরে বসে বসেই এরা সংবাদ বানায়া ফেলে। ওয়াও! দারুণ না!! অথচ একসময় জানতাম সাংবাদিকতা হচ্ছে একটা মহৎ পেশা - যাদের কাজ হলো সাধারণ মানুষের সামনে সত্যকে তুলে ধরা। ইজন'ট ইট ?

তো কাহিনী টা বুঝলাম এতে আমার সমস্যা কি? সমস্যা তো অবশ্যই আছে। এই যে আজকে দুপুরের ঘটনা, চট্টগ্রামের আলোচিত পুলিশ সুপার বাবুল আখতার নাকি নিজেই তার স্ত্রীর হত্যার প্লান করেছিলেন তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর স্বীকার করেন তিনি এরকম একটা নিউজ রে মহামারির মত ভাইরাল করে ফেলছে। তাকে নাকি এরেস্ট ও করা হয়েছে। অথচ সন্ধ্যায় জানা গেলো এরকম কিছু ঘটেই নাই। ওয়েল, এটা তো তেমন কিছুই না, সারাদেশের মানুষ কিছুক্ষণ বিভ্রান্তিতে ছিল এই যা। কিন্তু প্রশ্ন উঠে এইগুলা কোন ধরনের সাংবাদিকতা? মাছরাঙ্গা টিভি চ্যানেলের জিপিএ ফাইভ এর সেই ড্রামার কথা মনে আছে নিশ্চয়ই ? এরা এরকম ড্রামা করার সুযোগ কিভাবে পায়? ব্যাপার টা সিম্পল। দেশে সাংবাদিকতার নামে যাচ্ছেতাই কাজ করে যাচ্ছে এতোগুলো লোক, কই এই গুলা মনিটর/রিভিও করার মত তো কেউ নাই। মিথ্যে সংবাদ উপস্থাপনের জন্য তো কেউ কোন শাস্তিও পাচ্ছে না । তাহলে আমরা ও এরকম একটা পন্থা অবলম্বন করতেই পারি। রাতারাতি হিট হয়ে যাবে চ্যানেল। টিআরপি বেড়ে যাবে। মাছরাঙ্গার মালিক/সাংবাদিক রা এমন টা ভাবতেই পারেন।

আরো কিছুদিন আগের ঘটনা, ছাত্রলীগের এক নেতা নাকি হিন্দুদের কোন এক মন্দিরে গিয়ে মূর্তি কে লাথি দিয়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। এইটাও ভাইরাল করে ফেলেছিল আমাদের দেশের কিছু হুজুগে বাঙ্গালী। অনেক হিন্দু ধর্মালম্বীদের কে দেখেছিলাম ফুলেফুসে উঠতেছে এই নিউজ দেখে। অথচ ওইটা বাংলাদেশেরই কোন ঘটনা ছিলনা। ওইটা আসামের একটা ঘটনা, তাও আবার ২০১০ সালের ঘটনা। এথিকস কোথায়? সততা কোথায়? কে এ উত্তর?

আচ্ছা বাদ দেন অন্য প্রসঙ্গে যাই।
দেশে অহরহ খুন হচ্ছে, ধর্ষণ হচ্ছে। কিন্তু যখনই একটা হিন্দু মেয়ে ধর্ষিত হয় তখনই কেন নিউজের শিরোনামে বড় করে লেখা থাকে "হিন্দু মেয়ে ধর্ষিত"। হিন্দু ব্যাবসায়ী খুন হয়, সেক্ষেত্রে ও বড় করে শিরোনাম হয় "হিন্দু ব্যাবসায়ী খুন"। কিছুদিন আগে ফেনীতে এক ব্যাবসায়ী তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে একটা ছেলেকে পিটাইয়া আহত করেছিলো। সেটারে নিউজ বানাইছে এরমকমভাবে "ফেনীতে ক্ষমতাধর হিন্দু ব্যাবসায়ী পেটালেন এক মুসলিম যুবককে"। কাহিনী কি খোজ নিয়ে জানতে পারলাম ছেলেটা চুরি করছে তাই গণধোলাই খাইছে। এইটা স্বাভাবিক ঘটনা; দেশে ছিচকা চোর, পকেটমার এইগুলারে ধরতে পারলে যেকেউই ধরে গণধোলাই দেয়। কিন্তু কেন নিউজ এর শিরোনাম হয় হিন্দু ব্যাবসায়ি মুসলিম ছেলেকে পিটিয়েছে? কিছু গেস করা যায়? এইটা ক্লিয়ার একটা ব্যাপার, যদি এইভাবে নিউজ করা যায় তাহলে ক্লিক পরবে ধিপধাপ। পাবলিকের সেন্টিমেন্ট গরম হবে। নিউজ পোর্টাল এর ভিজিটর লাফায়া লাফায়া বাড়বে। কিছু মানুষ এইসব নিউজ দেখা মাত্র ই ক্লিক করবে।
কিছু মুসলিম ভাইয়েরা রেগেমেগে নিউজকে ভাইরাল করবে আর বলবে হিন্দুর গুষ্টি জবাই করে ফেলবো সব , দেশছাড়া করবো ইত্যাদি ইত্যাদি। আর "হিন্দু ব্যাবসায়ী খুন" এইরকম নিউজে স্যাকুলার ব্লগার/রাইটাররা ফুলেফুসে উঠবে। অনলাইনে লেখালেখি হবে খুব। আল্লাহ-নবী এর নাম নিয়ে অনেকে গালি দিয়ে নিজেকে মহান স্যাকুলার ব্লগার বলেও দাবী করবে কেউকেউ। ফলাফল চাপাতিওয়ালারা আবার খেপে যাবে, আবার ২/১ টা ব্লগার জবাইকরন এর মত জঘন্য কাজ হবে। ব্লগার খুনের প্রতিবাদে আবার স্যাকুলার ব্লগাররা খেপে যাবে লেখালেখি চলবে, গালিগালাজও চলবে। গালিগালাজ শুনে চাপাতিওয়ালারাও আবার খেপে যাবে, জবাইকরন চলবে। এইভাবে এইটা একটা চলমান প্রক্রিয়াতে রূপান্তর হবে।
স্যাকুলার মানেই অনেকে মনে করেন হিন্দুরাই এসব স্যাকুলার ব্লগার। ফলে কি হবে? মন্দিরে পুরোহিত জবাইকরনও চলবে ননস্টপ। যেখানে সেখানে হিন্দুনিধনও চলবে। এভাবে একসময় বড়সড় একটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি যে হবেনা তার কি নিশ্চয়তা??

অথচ এইসব নিউজপোর্টাল এর মালিক/ডেভেলপার/সাংবাদিকেরা জানেই না তাদের কিছু অনলাইনে ইনকাম এর ধান্ধা দেশের জন্য কত বড় ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।

তাহলে সমাধান কি? মনে পড়ে একুশে টিভি একবার সরকার বন্ধ করে দিয়েছিলো, দিগন্ত টেলিভিশন বন্ধ এখনো, নয়া দিগন্ত পত্রিকা বন্ধ। তারমানে সরকার চাইলে এসব নিউজপোর্টাল গুলোকে হাতের এক তুড়িতেই বন্ধ করে দিতে পারে। আর এইরকম ২/১ টা ফ্রড সাংবাদিকরে ধরে একটু সাইজ করে দিলেই বাকী সব পোর্টাল এর সাংবাদিক সোজা হয়ে যাবে। এরকম কিছু একটা করা এখন সময়ের দাবী। নয়ত এসব নিউজ-পোর্টালগুলো অদূর ভবিষ্যতে এরকম বড়ধরনের কোন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতেই পারে।

তাহলে আমরা কি কিছু করতে পারি? আমাদের তেমন কিছুই করার নাই যদিও, তবুও আমরা এই সব নিউজ কে ইগ্নর করে যেতে পারি। যারা কোন কিছু না বুঝেই এসব নিউজগুলোকে ভাইরাল করতেছে তাদেরকে বুঝাতে পারি। এছাড়া আর তেমন কিছুই করার নাই আমাদের হাতে। আর ওসব এথিকসলেস সো-কলড সাংবাদিকদের কথা আর কি বলবো। উপরওয়ালা এদের কে জ্ঞানবুদ্ধি দিক।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১৬ রাত ২:৪৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×