ভিক্ষুক বাংলাদেশের কমন একটা ব্যাপার হলেও এদের ভিক্ষা করার পদ্ধতি খুবই মজাদার এবং অভিনব । যেমন আমার পরিচিত এক ভিক্ষুক আছে যে ভিক্ষা করে সিগারেট কিনে খায় । একদিন আমাদের ক্লাসে আসাতে স্যার ওকে বেশ কিছু টাকা তুলে দেয় । এরপর থেকে প্রায়ই একই সময় আসতে থাকে । একদিন স্যার বললেন, টাকাতো দেবো না ।
-কেন?
-টাকা দিয়ে সিগারেট কিনে খাও তুমি । তাই ।
-কি খাই না খাই এইডা আমার পারসুনাল বেষয় ।
বলেই লোকটা চলে গেল । আর কখনো আসে নি ।
*
অনেকদিন আগের একটা ঘটনা বলি, এক ভিক্ষুক, হিন্দু । ৪৭ এর আগের ঘটনা । ভিক্ষা করতে যেত যে গ্রামে, সেখানে যে কোন বাড়ি হিন্দু কোনটা মুসলমান, বোঝা যেত না । নিরুপায় হয়ে সে একটা অভিনব পদ্ধতি তৈরি করল । জয় মা দূর্গা লাইনটাকে এমনভাবে উচ্চারন করত যাতে বোঝাই যেত না যে সে কি বলছে, জয় মা দূর্গা নাকি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ।
*
তারপর এক মহিলার কথা । সে বাসায় এসে মাঝে মাঝেই টাকা নিয়ে যায় । তখনো বছর হয় নি নানু মারা গেছে । তাই মা সব বৃদ্ধার মাঝেই নানুকে খুঁজে পেত । তাই কখনো সেই ভিক্ষুকটাকে না করত না । প্রথমে দুইটাকা চাইতো । কয়েক সপ্তাহ পর মায়ের কাছে দুইটাকা না থাকা দরুন উনাকে ৫ টাকা দিলো । এরপর থেকে সে পাচটাকার কমে নিবেই না । এরপর মা একদিন খুশি মনে ওনাকে ১০ টাকা দেয় । তারপর থেকে সে এসে বলে,”মা ১০ টা টাকা দাও!”
*
একদিন আমি আর আমার ফুফাতো ভাই রমনা পার্কে বসে আছি । প্রসঙ্গত, আমি ঢাকায় থাকি না । একটা পারিবারিক কাজেই ওইদিন যাওয়া । তো যথারীতি ভিক্ষুক হাজির । আমার কাছে দুইটাকা ছিলো । দিলাম । ভাইয়ের কাছে চাইতেই ভাই সরাসরি না করে দিলো । তখন ভিক্ষুকটা বলে উঠল,”দেননা স্যার । ওই স্যার তো প্রতিদিনই আমাকে টাকা দেয় । তাই না স্যার?” আমি তখন পুরোপুরি বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি । প্রায় বছর দুয়েক পর আমি সেদিন ঢাকায় গিয়েছিলাম ।
*
এই ঘটনাটা খুবই রিসেন্ট । এক ভিক্ষুক এসে বলতে লাগল,” হিন্দু থেকে মুসলমান হইছি টাকা নাই!” পাশের বন্ধু বলে উঠল,”কি কইলি? হারামজাদা । আমি ব্রাহ্মণ “ এই কথা শুনেই লোকটা পরিমরি করে ছুটল ।
*
এবার ভিক্ষুক জাতির সবচে ভয়ংকর ভিক্ষুকদের গল্প ।পিচ্চি ভিক্ষুক । এরা যে কতটা ভয়ংকর, যারা দেখেছে বা ভুগেছে তারাই জানে । তো একদিন, মেলার ভিতর আমার পিছে একটা জুটেছে । সামনেই আরেকটা পিচ্চি । বাবার কোলে, হাতে আইসক্রীম । তো ভিক্ষুক পিচ্চিটাকে আমি ভারী গলায় বললাম,” ভিক্ষা কইরা কি হবে চল তরে স্কুলে নিয়া যাই । পড়বি চল ।“ কথাগুলো আমি কোলের পিচ্চিটার দিকে তাকিয়ে বলছিলাম । কারন তিন বছরের পিচ্চির আইসক্রিম খাওয়া দেখতে ভালই লাগে । পিছন ফিরে দেখি ভিক্ষুকটা তুমুল গতিতে দৌড়াচ্ছে । আমার দিকে একবার তাকিয়ে দৌড়ের গতি দ্বিগুন করে দিলো । এদিকে আবার ওই আইসক্রীমওয়ালা কান্না শুরু করে দিলো । ওর দিকে তাকাতেই কান্না দ্বিগুন তিনগুন বেড়ে গেল । কাঁদছে আর বলছে, আমি স্কুলে যাবো না । পরে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বাবাটা যায়গা ত্যাগ করল ।
*
পিচ্চি প্রসঙ্গ যখন উঠলই তখন এক পিচ্চির কাহিনী দিয়েই শেষ করি । বড়ই খেতে আমি খুব ভালবাসি । খেতে খেতে রাস্তায় হাটছি । এক পাচ বছরের বাচ্চা ভয়ানক কান্না করছে । বাসায় যাবে না । মাকে খামচি দিচ্ছে, হাতপা ছুঁড়ছে । আমার কি হল ওকে বললাম,”কান্দিস না । বড়ই খা ।“ দুটো বড়ই দিলাম বড় দেখে । ওমা কিসের কান্না কিসের কি । একটা বড়ই মায়ের দিকে দিয়ে বলল মা খাও । আর আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো । হাসির মায়া এখনো ছাড়তে পারি নি ।
.
সায়ানাইড সাকিব ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১২