somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভিখারীনামা ও দুই পিচ্চির গল্প

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভিক্ষুক বাংলাদেশের কমন একটা ব্যাপার হলেও এদের ভিক্ষা করার পদ্ধতি খুবই মজাদার এবং অভিনব । যেমন আমার পরিচিত এক ভিক্ষুক আছে যে ভিক্ষা করে সিগারেট কিনে খায় । একদিন আমাদের ক্লাসে আসাতে স্যার ওকে বেশ কিছু টাকা তুলে দেয় । এরপর থেকে প্রায়ই একই সময় আসতে থাকে । একদিন স্যার বললেন, টাকাতো দেবো না ।
-কেন?
-টাকা দিয়ে সিগারেট কিনে খাও তুমি । তাই ।
-কি খাই না খাই এইডা আমার পারসুনাল বেষয় ।
বলেই লোকটা চলে গেল । আর কখনো আসে নি ।
*
অনেকদিন আগের একটা ঘটনা বলি, এক ভিক্ষুক, হিন্দু । ৪৭ এর আগের ঘটনা । ভিক্ষা করতে যেত যে গ্রামে, সেখানে যে কোন বাড়ি হিন্দু কোনটা মুসলমান, বোঝা যেত না । নিরুপায় হয়ে সে একটা অভিনব পদ্ধতি তৈরি করল । জয় মা দূর্গা লাইনটাকে এমনভাবে উচ্চারন করত যাতে বোঝাই যেত না যে সে কি বলছে, জয় মা দূর্গা নাকি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ।
*
তারপর এক মহিলার কথা । সে বাসায় এসে মাঝে মাঝেই টাকা নিয়ে যায় । তখনো বছর হয় নি নানু মারা গেছে । তাই মা সব বৃদ্ধার মাঝেই নানুকে খুঁজে পেত । তাই কখনো সেই ভিক্ষুকটাকে না করত না । প্রথমে দুইটাকা চাইতো । কয়েক সপ্তাহ পর মায়ের কাছে দুইটাকা না থাকা দরুন উনাকে ৫ টাকা দিলো । এরপর থেকে সে পাচটাকার কমে নিবেই না । এরপর মা একদিন খুশি মনে ওনাকে ১০ টাকা দেয় । তারপর থেকে সে এসে বলে,”মা ১০ টা টাকা দাও!”
*
একদিন আমি আর আমার ফুফাতো ভাই রমনা পার্কে বসে আছি । প্রসঙ্গত, আমি ঢাকায় থাকি না । একটা পারিবারিক কাজেই ওইদিন যাওয়া । তো যথারীতি ভিক্ষুক হাজির । আমার কাছে দুইটাকা ছিলো । দিলাম । ভাইয়ের কাছে চাইতেই ভাই সরাসরি না করে দিলো । তখন ভিক্ষুকটা বলে উঠল,”দেননা স্যার । ওই স্যার তো প্রতিদিনই আমাকে টাকা দেয় । তাই না স্যার?” আমি তখন পুরোপুরি বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি । প্রায় বছর দুয়েক পর আমি সেদিন ঢাকায় গিয়েছিলাম ।
*
এই ঘটনাটা খুবই রিসেন্ট । এক ভিক্ষুক এসে বলতে লাগল,” হিন্দু থেকে মুসলমান হইছি টাকা নাই!” পাশের বন্ধু বলে উঠল,”কি কইলি? হারামজাদা । আমি ব্রাহ্মণ “ এই কথা শুনেই লোকটা পরিমরি করে ছুটল ।
*
এবার ভিক্ষুক জাতির সবচে ভয়ংকর ভিক্ষুকদের গল্প ।পিচ্চি ভিক্ষুক । এরা যে কতটা ভয়ংকর, যারা দেখেছে বা ভুগেছে তারাই জানে । তো একদিন, মেলার ভিতর আমার পিছে একটা জুটেছে । সামনেই আরেকটা পিচ্চি । বাবার কোলে, হাতে আইসক্রীম । তো ভিক্ষুক পিচ্চিটাকে আমি ভারী গলায় বললাম,” ভিক্ষা কইরা কি হবে চল তরে স্কুলে নিয়া যাই । পড়বি চল ।“ কথাগুলো আমি কোলের পিচ্চিটার দিকে তাকিয়ে বলছিলাম । কারন তিন বছরের পিচ্চির আইসক্রিম খাওয়া দেখতে ভালই লাগে । পিছন ফিরে দেখি ভিক্ষুকটা তুমুল গতিতে দৌড়াচ্ছে । আমার দিকে একবার তাকিয়ে দৌড়ের গতি দ্বিগুন করে দিলো । এদিকে আবার ওই আইসক্রীমওয়ালা কান্না শুরু করে দিলো । ওর দিকে তাকাতেই কান্না দ্বিগুন তিনগুন বেড়ে গেল । কাঁদছে আর বলছে, আমি স্কুলে যাবো না । পরে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বাবাটা যায়গা ত্যাগ করল ।
*
পিচ্চি প্রসঙ্গ যখন উঠলই তখন এক পিচ্চির কাহিনী দিয়েই শেষ করি । বড়ই খেতে আমি খুব ভালবাসি । খেতে খেতে রাস্তায় হাটছি । এক পাচ বছরের বাচ্চা ভয়ানক কান্না করছে । বাসায় যাবে না । মাকে খামচি দিচ্ছে, হাতপা ছুঁড়ছে । আমার কি হল ওকে বললাম,”কান্দিস না । বড়ই খা ।“ দুটো বড়ই দিলাম বড় দেখে । ওমা কিসের কান্না কিসের কি । একটা বড়ই মায়ের দিকে দিয়ে বলল মা খাও । আর আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো । হাসির মায়া এখনো ছাড়তে পারি নি ।
.
সায়ানাইড সাকিব ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×