somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যাসেটের এ পার্ট, ক্যাসেটের বি পার্ট

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের যাদের জন্ম ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ এর মধ্যে তাদের ছোটবেলার সবচেয়ে প্রিয় খেলনা কি ছিলো?
ক্যাসেটের ফিতা । আমরা যখন সি এ টি ক্যাট লেখা ও বিড়ালের মাথা আকা প্যান্ট পড়ে সকাল সন্ধ্যা ঘুরে বেড়াতাম তাদের প্রিয় কাজই ছিলো এই গাছ থেকে ওই গাছে ফিতা টানানো । একুশ শতকের শুরুর দিকে, তখন সিডি প্লেয়ার আস্তে আস্তে রেডিওর যায়গা দখল করছে । তখন বিংশ শতাব্দীর শেষে জন্মানো এই বাচ্চাগুলোর কাছে এই ক্যাসেটগুলো খেলার জিনিস ছাড়া অন্য কিছু নয় ।
তখনকার কলেজ পড়ুয়া আমাদের তরুন মামা খালা ফুফুরা তাদের টিফিনের টাকা বাচিয়ে বা জমানো টাকা থেকে কেনা ফিলিংস, প্রমিথিউস, ওয়ারফেইজ, সোলস, এলআরবির টু সাইডেড ক্যাসেট গুলো ছিলো তাদের কাছে অমুল্য সম্পদ । আর আমাদের কাছে ছিলো মহামুল্যবান খেলনা । পিচ্চিগুলা সারাদিন তক্কে তক্কে থাকত কখন একটা ক্যাসেট পুরোনো হয়ে যাবে । কখন একটা ক্যাসেটের ফিতা ছিড়ে যাবে । আর আংকেল আন্টিরা ভয়ে ভয়ে থাকতো যদি ছিড়ে যায় । পছন্দের গানটা শোনার জন্য নটরাজ পেন্সিল বা ইকোনো ডিএক্স কলম দিয়ে কত হিসেব করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গান শুনত ।
এরপর ২০০৩ থেকে ২০০৮ সালের কথা । পিচ্চিগুলা তখন স্কুলে যায় । একটু আধটু বুঝতে শিখছে । মাটি খোড়া ছেড়ে হাতে ক্রিকেট ব্যাট নিয়েছে । তখন সময় সিডি প্লেয়ারের । ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ এ জন্মানো ভাইদের তখন সময় । তারা একই ভাবে সিডি কিনতেন, যেভাবে আংকেলরা কিনতেন ক্যাসেট । আর আমরা সেগুলো তে আলো ফেলে রংধণু দেখতাম । ফলাফল সিডিতে স্ক্র্যাচ পড়ে সিডি বাতিল । অর্থহীন, আর্টসেল, ব্ল্যাকের সময় তখন । গোল গোল সিডিগুলোতে বাংলা ব্যান্ডের কালজয়ী গানগুলো বের হচ্ছে তখন । আর আমরা তখনও সেই সিডিতে আলো ফেলে রংধনু দেখি ।
২০১০ সালের পর থেকে গান শোনা পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ হয়ে গেল । ব্রাউজারে যাও গানের নাম লিখে সার্চ দাও । আর গানটা তোমার । কিছুক্ষন পরপর ক্যাসেটের সাইড চেঞ্জ করতে হয় না, সিডি আগলে রাখতে হয়না । পকেটে হাজার হাজার গান নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি । বাহ কি মজা । ইংলিশ গানের প্রচলন সমাজের উচু স্তরে ছিলো অনেক আগে থেকেই । তখন মধ্যবিত্তের ফ্যাশন ছিলো হিন্দি গান । অর্থহীন সাহস করে অসমাপ্ত ২ (২০০৮) রিলিজ দিলো বটে, তবে মার্কেটটা কমে যেতে শুরু করেছে ততদিনে । কারন প্রতিযোগীতাটা করতে হচ্ছে হিন্দী পপ গানের সাথে যার লিরিক্সের বিষয়বস্তু প্রেম আর ইনডাইরেক্ট যৌনতা । আস্তে আস্তে হিন্দী গানটা সমাজের নিচু স্তরের লোকদের হাতে চলে গেল । তখন মধ্যবিত্ত হাত বাড়ালো ধনীদের ইংলিশে ।
ইংলিশ গানগুলো হিন্দী গানের মত জগাখিচুরী নয় । তারা জোনরা মেইনটেইন করেই গান গায় । তখন বাঙালী ভাবল আহা আমার ভাষায় কি রক হয় না?
হয় না মানে? হতো এবং হচ্ছে । ততদিনে ক্লাস মেইনটেইন করতে ধনীরা বাংলা গান শোনা শুরু করেছে । এবং হিপহপ তখন তাদের সম্বল । বেশীদিন আর এদের মধ্যে এই মেজর ডিফারেন্স টা রইলো না । এখন তারা জনরা বেইজড বিভক্ত হয়ে গেছে ।
এখন মানুষের পারসোনালিটির ওপর প্লেলিস্ট নির্ভর করে । নির্ভর করে মেন্টালিটির ওপর । কারন তারা এখন পুরো বিশ্বের মিউজিক পাচ্ছে একদম হাতের মুঠোয় । ইরানী ইন্না, কোরীয়ান সাই, সুইডিশ ইলুভেইট্টি, ইংল্যান্ডের ইউ ২ থেকে আমেরিকার শতশত মিউজিশিয়ানের গান । তবে কি হারিয়ে গেল বাংলা গান? নাহ। আরো শক্তপোক্ত ভাবে গেড়ে বসল । জ্যামিতিক হারে বেড়ে উঠল বাংলা ব্যান্ডের শ্রোতা । এখন প্রচুর ছেলেরা ৯০~০০৭ এর কালজয়ী গানে তাদের জীবন কে খুজে পাচ্ছে । জীবন খুজে পাচ্ছে শিরোনামহীন, অ্যাশেজ, আর্বোভাইরাস, নেমেসিস এ । সাথে বাজছে মেটালিকা, প্যান্টেরা প্রভূতি ।
এখন অনেকেই ভাবে কেন বাংলা ভাষায় কেউ গ্র্যামি পায় না । কারনটা হল আমরা ২০ বছর পিছিয়ে আছি । আমরা এখন যাদের গান শুনি তারা অনেক আগেকার লোক । আর ২০১৬ তে যত সহজে সাউন্ডক্লাউড রিভার্বন্যাশনের মাধ্যমে গান প্রোমট করা যায় ১৯৯৬ সালে যদি তা করা যেত তাহলে অবশ্যই কেউ না কেউ ইন্টারন্যাশনালি ফেমাস হয়ে যেত । আর এখন পশ্চিমে চলছে ইলেক্ট্রো আর ডাবস্টেপ । এগুলো এখন যত সহজে বিদেশীদের খাওয়ানো যায় তত সহজে রক খাওয়ানো যায় না । এখনো যে ব্যান্ডগুলা গ্র্যামি বা ওই টাইপের পুরষ্কার পাচ্ছে তাতে একটু হলেও ইলেক্ট্রো মিউজিকের ছোয়া থাকছেই ।
ইলেক্ট্রো মিউজিককে গালি দিলে সেই ভুল টাই করবেন যে ভুলটা আশি নব্বইয়ের মানুষরা করেছিলো রক কে গালি দিয়ে । কারন জনরা চেঞ্জ হবেই । সময় যেমন গিটারে এম্প্লিফায়ার লাগিয়েছে, তেমনি সেই সময়ই এনেছে ফিউচার বেইজ । এটা হবেই । কেউ আটকাতে পারবে না । মনে আছে যখন সমর্পন এলবামের আরশিনগর গানটা জোড়ে শুনছিলেন তখন আপনার বাবা কি বলছিলেন?
আপনার ছেলে যখন ডাবস্টেপ শুনবে আপনিও তাই বলবেন ।
ছোট্ট একটা উদাহরণের মাধ্যমে শেষ করছি ।
একদিন এক বন্ধু মন খারাপ করে বসে আছে । কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলল,” দোস্ত, ভাগ্নে আমার ম্যামরী কার্ড কামড়ায়া ভাংছে ।“
আমি হাসতে লাগলাম । ও রেগে বলল হাসিস কেন?
আমি বললাম, “মনে আছে তোর মামার আজম খানের সেই ক্যাসেটটির কথা যেটা দিয়া খেলার জন্য কি মাইর খাইছিলি?”
বন্ধুটি অতীতে হারিয়ে গেল ।।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×