এক দেশে এক গানওয়ালা ছিলো । ছোটবেলায় মা যখন তাকে বকত, তখন সে অঞ্জন দত্তের ক্যালসিয়াম শুনত । ছেলেবেলা খুব একটা ভাল না কাটলেও কৈশরে সে জীবণটা উপভোগ করতে শুরু করে । লিংকিন পার্কের ক্রলিং গানে খুজে পায় নিজেকে । কিন্তু কিছুই করার নেই । ধর্ষন মেয়েদের হয়, ছেলেদের না । আত্মকেন্দ্রিক এই চাপা ছেলেটি নিজের মাঝেই হারিয়ে থাকত । কখনো লিংকিন পার্ক, কখনো ব্রেকিং বেঞ্জামিনের লিরিক্সের মধ্যে নিজেকে খুজে বেড়ায় । এত কিছুর মধ্যেও ছেলেটি একটা মেয়ের ওপর ক্রাশ খায় । মেয়েটা জানতেই পারে না । গানওয়ালা যখন কলেজে উঠে তখন তার ক্রাশ রিলেশনশীপে জড়িয়ে পরে তাকে ফ্লার্ট করে। তাতে থেমে যায় নি গানওয়ালার জীবন । গানতো আছে । সে নিকৃষ্ট ১ ও ২ শোনে আর ধিক্কার দেয় ।
বসন্ত সবার জীবনেই আসে । গানওয়ালাও প্রেম করে । কোনো এক খরখরে রোদেলা দিনে মেয়েটাকে প্রথম দেখে । তার প্লেলিস্ট বদলে যায় । নিকৃষ্টকে সড়িয়ে আনমনে, ঘুণে খাওয়া রোদ বদলে তোমাকে, কিংবা মহারাজ, অশনী সংকেত, সত্য, না গানগুলো বদলে তোমাকে, যত দূরে, অবাক ভালবাসা ও পূর্ণতায় রূপ নেয় ।
সব চলছিলো আগের মতই । হঠাৎ এক বিদেশ ফেরত ইঞ্জিনিয়ার তার প্রেমিকাকে বিয়ে করে নিয়ে যায় । গানওয়ালার কিছুই করার থাকে না । বন্ধুদের কাছে সলিউশন চাইতেই একটা হাতে বানানো সিগারেট ধরিয়ে দিল । সেই সিগারেটটা দেখে তার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায় ।
-ভাইয়া সিগারেটটা এমন কেন?
-কাল গুরুর সাথে দেখা হয়েছে । গান টান গাইলো । তাই উনিই দিয়ে গেছে ।
-কোন গুরু? গান গায়?
সিগারেটটার ধোয়া ভাইয়া ইচ্ছা করেই যেন ভিতরে রাখছে ।
-হ্যা গান গায় ।
-তার গান শুনব ।
-শুনাবো । কি করতে হবে মনে আছে তো?
আমাদের গানওয়ালা প্যান্টটা খুলে ফেলল ।
*
সেই ছোট্টবেলার এই কাহিনীগুলো এখনো গানওয়ালাকে কাদায় । কিছুই করার নেই । ধর্ষণ মেয়েদের হয় । ছেলেদের না ।
গানওয়ালা সেই হাতে বানানো সিগারেটটা খায় । মনে হচ্ছিলো সে পৃথিবীতে একা । সবাই অনেক দূরে দূরে ।
পাশ থেকে কোনো এক ফ্রেন্ড তার কানে হেডফোন গুজে দিয়ে বলে শোন গুরুর গান শোন । ফিলিংস নে । বাবা কত দিন কতদিন দেখি না তোমায়.....
গানটা শুনে গানওয়ালা মুচকি হাসে! বাবা! মা! সত্যিকার অর্থে বাবা মায়ের সাথে গানওয়ালার অত ভাল সম্পর্ক নেই । বাবা তাকে ইনভেস্টমেন্ট মনে করে । তার কাছে ফিডব্যাক চায় । আর মা?
শৈশবের ভয়াল দিনগুলোতেই মায়ের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে । গানওয়ালা পারে নি তার ভালবাসার কথা বাবা মাকে বলতে । অনেক অনেক দিন পর গানওয়ালার সাথে তার প্রেমিকার দেখা হয় । একটা অনুষ্ঠানে । কোন একটা ব্যান্ড অনিকেত প্রান্তর কভার দিচ্ছে সেই অনুষ্ঠানে । ছেলেটা বুকের বামপাশে ব্যাথা আর চোখের কোনে জল অনুভব করল । কেন সেদিন বাবা মাকে কথাটা বলল না ?
ছেলেটা শুয়ে আছে । ঘুমুবে । প্রতিদিনের মত আজও ওর হেডফোন ওকে ঘুম পারাচ্ছে । "সব আলো নিভিয়ে দাও..... ঘুমাবো আমি আলোর শেষে ।"
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৫২