কানে হেডফোন দিয়েই ঘুমিয়েছিলাম । এই অজ পাড়াগায়ে বিদ্যুতই এসে পৌছায় নি । ইন্টারনেটতো বহুদূর । সে যাই হোক । হুট করে ঘুম ভেঙে গেলো । পাশে শোয়া অনি কে ডাক দিলাম,"দোস্ত, ঘুম ভাইঙা গেছে ।" অনি বলল,"হালকা মুতে শুয়ে পর ।"
-দোস্ত একটা লুঙ্গিই আনছি ।
-বাইরে টয়লেট আছে ।
অনি ঘুমিয়ে গেল । বাইরে বের হলাম । রাত দেড়টা বাজে । চারদিকে কোনো লাইট নেই । কিন্তু আলোর অভাব নেই । ব্যাপারটা শুধু গ্রামেই পাওয়া সম্ভব । একটা সিগারেট ধরিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে আছি । ঘুম নেই । অদূর ভবিৎষতেও আসার সম্ভাবনা নেই । ধ্রুবতারা, সেভেন সিস্টারস সবাই যেন তাকিয়ে আছে । দুদুটো সিগারেট শেষ তাও যেতে ইচ্ছা করছে না । তবে অনেকক্ষন যাবৎ খেয়াল করছি কেউ গান গাইছে । কি ভাষা তা বোঝা যাচ্ছে না । সুরটা খুব তীক্ষ্ন । মেয়েলী গলা । শব্দটা আস্তে আস্তে বাড়ছে ।
কিছুক্ষন পর খেয়াল করলাম গানটা কানের কাছে বাজছে । পিছু ঘুরতেই দেখি একটা মেয়ে ।
- কে তুমি?
- ভূত ।
- মানে?
- ভূত মানে ভূত ।
- ও আচ্ছা কি ভূত?
- কি ভূত মানে?
- কোন জনরার ভূত?
- মামদো, পেত্নি, শাখচুন্নি?
- এত সব জানো কিভাবে? কে বলেছে ।
- গুগল ।
- সে কে?
- দৈত্য দৈত্য ।
- হা হা ।
- হাসো ক্যান? গুগল জানে না এমন কিছু নাই ।
- হা হা । এত ভূতের নাম বলেছে নিশী ভূতের নাম বলেনি?
- বলেছেতো । তুমি কি নিশী ভূত না কি ??
- হ্যা ।
- তাই আমারে গান শুনাইতেছিলা?
- হ ।
- কিন্তু আমি তোমার ডাকে সারা দেই নি । কারন আমি গুগল ভক্ত ।
- এই এই বেয়াদব । আমার সামনে অন্য ভূতের কথা বললে ঘাড় মটকামু কিন্তু ।
- গুগল ভালো । ঘাড় মটকায় না ।
- এই বার কিন্তু.....
- ওকে ওকে । তুমি যে গানটা গাইতেছিলা ওইটা কি গান?
- অর্কেষ্ট্রা ।
- তুমি অর্কেষ্ট্রা শিখলা কইথেকে??
- আমার স্বামি ব্রিটিশ ছিলো ।
- বয়স কত তাইলে??
- ২৯০ । আচ্ছা গুগল গান শোনায় না । একটা শোনা তো ।
- শুনাইতে পারি । একটা কথা রাখলে ।
- ঠিক আছে । আগে শোনা ।
আমি ফোন বের করলাম ।
- এত আলো কেন । পুড়ে গেলাম ।
- ঠিক আছে ওই গাছের আড়ালে যাও ।
আমি থেকে একটা হেভি মেটাল প্লে করে দিলাম ।
- শুনলা তো? এইবার আমার কথা রাখ ।
- বল । আর এই গুগলের বাড়ি কই?
- বাড়িতো চিনিনা । আমায় একটা গার্লফ্রেন্ড খুজে দিবা? একটু স্মার্ট আর কিউট । তোমার মত ।
- আচ্ছা । সময় মত পেয়ে যাবি । তার আগে গুগলকে আমার চাই । ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না ।
পরেরদিন বিকেলে আমার যখন জ্ঞান ফেরে তার কিছুক্ষন আগেই একটা অশ্বত্থ গাছের নিচ থেকে আমাকে উদ্ধার করা হয় । ওই গাছের নিচে নাকি প্রায়ই মানুষের ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায় । আমিই প্রথম বেচে ফিরলাম । তারপর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর । সেই ভূতের সাথে গুগলেরও আর দেখা হয় নি । আমারও গার্লফ্রেন্ড পাওয়া হয় নি । তবে ওই গ্রামগুলোতে আর কেউ মারা গেছে বলে শোনা যায় না ।
সায়ানাইড সাকিব
৭ই মে, ২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:২৯