somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চরিত্র

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি একটা চরিত্র। আমার আপাতত কোনো পরিচয় নেই। আমি যখন লেখকের মাথায় এসেছি তখন সে বাসে। ক্লাস এবং এসাইন্মেন্টের চাপে ক্লান্ত হয়ে তিনি বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন। দুই সিট পেছনে বসে এক আংকেল ভর্তি পরীক্ষার্থী এক ছেলে কে বুঝাচ্ছিলেন,"আমার ছেলের বুয়েটে হয় নাই একটুর জন্য। জাহাঙ্গীরনগর এ ১২৫০ হইছিলো। ভর্তি করি নাই। খুব বেশি হইলে ইকোনমিক্স পাইতো। কি লাভ? অর্থনীতি পৌরনীতি পড়ানের জন্য কি ১২ বছর সাইন্সে পড়াইছি?"
ছেলেটা মাথা নিচু করে শুনে গেল।
যেহেতু আমি একটা চরিত্র, তাই সবার আগে আমার একটা পরিচয় দরকার। এ দিক থেকে লেখক স্বাধীন। আমার পরিচয় হতে পারে যা ইচ্ছা তাই। বাসের হেল্পার থেকে যেকোনো কিছু। এমনকি মানুষ না হয়ে কোনো পশুপাখি।
লেখক আমাকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র বানাবেন ভাবলেন। সাধারণত লেখক আর চরিত্রের বয়স যতটা কাছাকাছি হবে গপ্পটা তত বেশি বাস্তবসম্মত হবে এটাই স্বাভাবিক। ২০ বছরের ছোকড়া কি ৪০ বছরের লোকের কষ্ট বুঝতে পারে?
লেখক আমার বয়স ঠিক করলেন ২১। একেবারে নিজের সমান! একবার ভাবলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াবেন। এতে পেপার পত্রিকাগুলো বেশি ছাপায়, কে যেন একবার নোবেল টোবেল পাবেন বলেও গুঞ্জন উঠেছিল। তার উপন্যাসের নায়ক নায়িকাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়ত।
যেহেতু আমি যার মাথার নিউরনে ঘোরাঘুরি করছি সে নিতান্তই ফেসবুক রাইটার, সেহেতু উপরের দুটোর একটাও তার দরকার নেই সেহেতু সে আমাকে জাহাঙ্গীরনগরেই পড়াবে ঠিক করল।
বিভাগ নির্বাচন হল নির্বাচন নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হবে যদিও, সেক্ষেত্রে আমার গল্পটার প্লটটা ক্যাম্পাসের বাইরেই হবে!
ক্যাম্পাসের বাইরে কোথায় গল্প বানানো যায়? ভেতরেই বা কোথায়? কলা ভবন কে নতুন পুরাতন বানালে মানুষের অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক! কারণ তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর কলাভবন চিনে অভ্যস্ত। এটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। চেতন ভগতের গপ্প নিয়ে সিনেমা বানানোর পর বাংলাদেশীরা যাও আই আই টি চিনেছে। তা না হলে এদের দৌড় ওই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্তই। আজকাল অনুপম ঋতুপর্ণদের বদৌলতে যাদবপুরকেও চিনছে অবশ্য।
যাই হোক ক্যাম্পাস নির্বাচনতো হল । এবার প্লট নির্বাচন করা দরকার। প্লটটা কি ক্যাম্পাসের ভেতরে হবে? এই আরেকটা সমস্যা! লোকজন তো চিনবে না! পলাশীর মোড়ে হাত ধরে হাটলে মানুষ আমাকে কল্পনা করতে পারতো, টিএসসিতে পানিপুরি খেলেও কল্পনা করতে পারত। কিন্তু চৌরঙ্গী বললে মানুষ আমায় কল্পনা করতে পারবে না। বিসিএস পরীক্ষার পরীক্ষার্থীগন অবশ্য আমাকে কল্পনা করতে পারেন গাজীপুর চৌরাস্তায়। জাগ্রত চৌরঙ্গীর পাশে, রাস্তাপাররত অবস্থায় অথবা জ্যামে আটকা পড়া কোনো ম্যাজিস্ট্রেট বা সচিব হিসেবে!
ঢাকা আরিচা মহাসড়কে প্লটটা নেয়া যায়, কিন্তু সমস্যা হল, সেখানে কোনো রোমান্স গল্প হবে না! অবশ্য আমার লেখক লুতুপুতু প্রেমের উপন্যাস লিখতেও পারেননা। এজন্য তার তেমন ফ্যান্স ফলোয়ার নেই। ফেসবুক ফ্যান্স আরকি!
আজকাল ধর্ম আর প্রেম ছাড়া ফেসবুকে বেল পাওয়া কঠিন কাজ। যদিও এখন সেগুলোও পুরোনো হয়ে যাচ্ছে! এখন ইউটিউবে ভিডিও বানিয়ে হিট হওয়া যায় শুনেছি। সেক্ষেত্রে আমার মত চরিত্ররা আর আসবে না। আচ্ছা যাই হোক। প্লট হিসেবে বাসটাকেই নির্বাচন করা হোক তাহলে।
আপাতত আমার পরিচয় আমি একটা বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র। আমার বয়স একুশ। লেখক আনরোমান্টিক হওয়ায় আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই।
আমার সাথে বাসে কি কি হতে পারে?
প্রথমত, হেল্পার আমার কাছে বেশি ভাড়া চাইতে পারে।
দ্বিতীয়ত, বাসটা এক্সিডেন্ট করতে পারে।
তৃতীয়ত, ছিনতাই খুন বা বিবিধ অপরাধ হতে পারে।
লেখক এই মূহুর্তে ক্লান্ত তাই কোনো প্লট ভাবতে পারছে না। আমি তাই তার মাথার ভেতর দৌড়ে বেড়াচ্ছি। আমার একটা কাহিনী চাই, আমার একটা কাহিনী চাই বলে চেঁচাচ্ছি। লেখক আমায় কল্পনা করছে শহীদ মিনারে, একা একা কোনো দাবী নিয়ে চিৎকার করে যাচ্ছি। আমার আশেপাশে কেউ নেই। কারন আমার কোনো কাহিনী নেই, আমার আশেপাশে অন্য কোনো চরিত্রও নেই। আমি চিৎকার করছি। ওহহো আপনারা আবার ঢাকা মেডিকেলের সামনের শহীদমিনার ভাববেন না যেন! এটা লাল শহীদমিনার। পানির ট্যাংকের মত দেখতে। কল্পনা করতে কষ্ট হলে গুগল করে দেখে নিন। লেখক কি তবে প্রশাসন হয়ে গেল! না না। রাজনৈতিক কোনো চরিত্রতো আমার হওয়ার কথা নয়! আমার লেখক সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক প্রোলেতারিয়েত। খেটে নোট বানায় তারপর পরীক্ষার আগে সেটা হারিয়ে ফেলে এবং পরীক্ষা দিয়ে আসার পর খুঁজে পায়। এমন খেটে খাওয়া লোক পাওয়া দুষ্কর। তবে কি আমার কোনো কাহিনী হবে না! হাজারটা চরিত্রের মত হারিয়ে যাবো? লেখক ঘুমিয়ে যাচ্ছে। আমি হাজারটা চিন্তার মধ্যে মস্তিষ্কে হারিয়ে যাচ্ছি। আমাকে লেখক ভুলে যাচ্ছে! অথচ আমি একটা সুন্দর গল্পের নায়ক হতে পারতাম!

#চরিত্র
২৯.১০.২০১৭ ইং
মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×