somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক বোকা বুড়োর গল্প

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন বুড়া কৃষক তার ছাপোষা জীবনে প্রাথমিক শিক্ষার পর আর কোন প্রাতিষ্ঠানিক লেখা পড়া করতে পারেনি । কিন্তু জানার আগ্রহ ছিল প্রচন্ড । তাই নিজে নিজেই গণিত - বিজ্ঞান ভুগোগ মহাকাশ এসব নিয়ে পড়াশুণা করেছিল । নিজের মত থাকত । কাজকাম সেরে ফেলে , তারার আলো ঝরা রাতগুলোতে আকাশের তারা চিনার চেষ্টা করত। কখনও সন্ধ্যা বেলায় প্রাইম নাম্বারের রহস্য বুঝার চেষ্টায় রত , কখনও ক্যসিওপিার পেটের মাঝে ধ্রুব তারা , কালপুরুষের কোমর বন্ধনী আর লুব্ধকের অবস্হান দেখে দেখে সময় পার করত । ভালই চলছিল দিন কাল ।

হঠাৎ গ্রামের পুরাণো কিছু পুরোহিত হাত দেখা ও জ্যাতিষ শাস্ত্রের চর্চা শুরু করল । আর এটাকেই বিজ্ঞান বলে চালিয়ে দিল। বুড়ো সবাইকে বুঝানোর চেষ্টা করল হাত দেখা আর জ্যোতিষের জারিজুরি এগুলো বিজ্ঞান না । শণির দশার সাথে শনি গ্রহের কোন যোগাযোগ নেই । অন্তত বিজ্ঞান তাই বলে।

বুড়ার এক বন্ধু আশ, আরেক বন্ধু কাশ । এর দুজনেই বুড়ার কাজে মহা বিরক্ত । আশ বলে বুড়াবয়সে লোক দেখানোর খায়েশ হয়েছে । মামুলি দুনিয়া ফানা হয়ে যাবে। শনি বৃহষ্পতি নিয়ে এত মাতামাতির কি আছে ! আল্লাহ আল্লাহ কর , দুদিন পরে কবরে গেলে কাজে দিবে । বুড়া বুঝাতে চায় দুনিয়া ফানা হবে - সোয়াব গুনাহ তো থেকে যাবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে সোয়াব পাওয়া যাবে।

আর কাশ সমাজসেবী । জনতা তাকে গুরু বলে মান্য করে । তার সমাজ সেবা চালাতে সামাজিক ঐক্য খুব দরকার । আর বুড়া যেটা করছে তাতে সামাজিক ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে । বন্ধু 'কাশ'কে বুড়া বুঝাতে চায় মিথ্যার সাথে ঐক্য দরকার নেই । সত্য পথে অল্প লোক থাকলে তাদের সেটাই যথেষ্ট । মিথ্যার সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্হান থেকে সত্যের পথে থেকে অশান্তি ভোগ করাও ভাল । সমাজের প্রকৃত কল্যান সেটাতেই ।

যথারিতী জ্যাতিষিরা গেলো ক্ষেপে । প্রথমেই তাদের অভিযোগ বুড়ো তো এসএসসি -ই পাশ করেনি । বুড়োর আগ্রহ ছিল জ্ঞান চর্চায় , ডিগ্রীতে না । তাই সার্টিফিকেট পর্যন্ত যাওয়া হয়নি । আর অভাব অনটনে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চালাবার মত ব্যবস্হাও দুষ্কর ছিল তার জন্য । তাই প্রতারক জ্যোতিষীরা যখন তাকে অশিক্ষিত বলল সে মনে মনে কষ্ট পেলো , মনে মনে ভাবল চুপ করে যাবে । কিন্তু কষ্ট পেলেও আতংকিত হলো এই ভেবে যে তার চুপ থাকার সুযোগে প্রতারক জ্যোতিষীরা গ্রামের সাধারণ জনগন বিভ্রান্ত করবে । অশিক্ষা আর কুসংক্সকার বৃদ্ধি পাবে । সামগ্রিক ভাবে জগতের ক্ষতি হবে - যেটা মেনে নেওয়া যায় না।

বুড়ো চিন্তা করল সে প্রাতিষ্ঠানিক একটা ডিগ্রী নিলে অবস্হা পরিবর্তন হবে । তাই বুড়া স্হানীয় একটা কেন্দ্রে ওপেন ইউনিভার্সিটি পোগ্রামে ভর্তি হয়ে এস এসসি পাশ করে ফেললো । ফল যা হলো - এখন তাকে কেউ অশিক্ষিত তো আর বলে না - কিন্তু মহাকাশ - শণি বৃহষ্পতি নিয়ে সে যা বলে সেটাও মেনে নেয় না । জ্যোতিষীদের নাম পত্রিকার আসে, তোমার নাম কি পত্রিকায় এসেছে ?

বুড়া পত্র -পত্রিকা, জন সমাবেশ, মিটিং সেমিনার থেকে দূরে থাকে , অস্বস্তি লাগে । কিন্তু গ্রামের লোকদের কথা ভেবে চিন্তা করল দেখি বুড়া বয়সে আমার এস এস সি পাশের খবরটা পত্রিকায় আনা যায় কিনা ! বুড়ার এক বন্ধু ছিল যার সাথে সাংবাদিকডের সাথে পরিচয় ছিল । বন্ধুর অনুরোধে এক সাংবাদিক বুড়ার এস এস সি পাশের গল্প পত্রিকায় ছেপে দিল । কিছু কিছু গ্রামবাসী বুরার কথা মেনে নিল । কিন্তু জ্যাতিষীরা তবুও মানল না । রুটি হালুয়ার ব্যাপার ।

জ্যোতিষীদের এক কথা " ঐ মিয়া , তুমি কি মহাকাশে গেছো ?"

বুড়ো বলে মর জ্বালা ! মানুষ তো মহাকাশে যাবার আগেই চাদ সূর্যের দূরত্ব মেপেছে। মহাকাশ নিয়ে কথা বলতে হলে আগে আকাশে উড়াল দিতে হবে কেনো ? কিন্তু কে কাকে কি বুঝাবে ? বুড়া ইন্টারনেটে দেখলো স্পেস টুরিসম বলে একটা জিনিষ আছে , ২০-৪০ মিলিয়ণ ডলার খরচ করলে মহাকাশে যাওয়া যায় । বুড়ার জন্য ২০-৪০ টাকাও অনেক কিছু । তবুও বুড়া হাল ছাড়ে না । চোখের সামনে পুরা গ্রামের লোককে বিভ্রান্ত করা হবে এটা কেমন কথা ? কিভাবে মেনে নেওয়া যায় ?

অবশেষে বুড়া ঠিক করল কর্পোরেট স্পন্সর ধরবে। সারা দুনিয়াটাই নাকি কর্পোরাটেদের পয়সায় কিনা !

বুড়া ঠিক করল বিভিন্ন পাঠশালায় ঘুরে ঘুরে ঘুরে শিশুদের ফ্রী জ্ঞান বিলাবে । সপ্তর্ষিমন্ডল কি ? চাদ কেন কমে বাড়ে ? শরতের আকাশে ক্যাসিওপিয়া কোনদিকে তাকালে দেখকা যাবে ? শণির বলয়ের ছবি কেমন ? এভাবেই মানুষের মাঝে জ্ঞানের বিস্টার ঘটাতে হবে । আর জ্ঞানের বিস্তারই দূর করতে পারে অন্ধকার ।

হতে পারে একসময় কর্পোরেট তার 'চেষ্টা'কে 'ব্যবসায়িক পণ্য' বানিয়ে বুড়াকে মহাকাশে পাঠানোর পয়সা দিবে । বুড়ার চিন্তা ওরা ব্যবসা তো এমনিতেও করবে , একটা ভাল কাজ যদি তাও ব্যবসার উসিলায় হয় অসুবিধা কি ! আর মহাকাশে যাওয়া হোক বা না হোক পাঠশালায় ঘুরে ঘুরে জ্ঞানের কিছুটা বিস্তার তো ঘটানো যাবে !

জ্ঞানের বিস্তার শুরু হলে জ্যোতিষীরা একজোট হয়ে তাকে মুরতাদ ফতোয়া দিয়ে মৃত্যুদন্ড দিলো । সমাজপতিরা বুড়াকে হত্যার জন্য কেউ প্রকাশ্যে সমর্থণ দিল, কেউ নীরব থেকে সমর্থণ দিল । সবার অভিযোগ মোটামুটি একই বুড়া সমাজের শান্তি নষ্ট করছে !

বুড়া মনে মনে ভাবে বয়স তো অনেক হলো, আজ না হয় কাল তো মরতেই হবে । মরার ভয় করে আর লাভ কি ? কিন্তু বার বার বুড়ার মনে পরে আগুনে পুড়ে মরার আগে চার্চের উদ্দেশে ব্রুনোর শেষ কথাটা , "পুড়ছি আমি কিন্তু ভয় দেখছি তোমাদের চোখে।"
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×