লেখাটা কিভাবে শুরু করি বুঝে উঠতে পারছি না। আমি দুই সময়ের দুই জনপ্রিয়ো নেতা কে নিয়ে লিখতে চাচ্ছি। এদের দেশ ভিন্ন, সময় ভিন্ন, প্রেক্ষাপট ভিন্ন তবু কিছু কিছু মিল আছে। এমন মিল যে এড়ানো যায় না। ইতিহাস আমাদের কিছু শিক্ষা দেয়। অনেক সময় বলা হয়, ইতিহাস নাকি পুনরাবৃত্তি হয়। এও মনে হয়, একি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি না সময়ের পুনরাবৃত্তি? খুব জনপ্রিয়ো একটা মিল দেখা যায় আব্রাহাম লিংকন আর জন, এফ, কেনেডির মধ্যে। কিন্তু ইনাদের মধ্যে এতো মিল নেই। তবে যে মিল গুলো আছে তাও কম নয়। আমি মিল আর অমিল এই দুই মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করবো। তবে আগে তাদের পরিচয় জেনে নেয়া ভালো। ইনারা ইতিহাসের খুবই বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। এক জন The great Nepoleon Bonaparte এবং অন্যজন Adlof Hitler। আপনারা কেউ কেউ হয়তো আমাকে পাগল ঠাওরাচ্ছেন। এ কি কথা বলে? পাগল নাকি? না, পাগল না। সত্যি কিছু কিছু মিল আছে। ইতিহাস এর সাক্ষী। আসুন এবার আগে একটু একটু করে জেনে নেই। ইতিহাসের এই বীর সন্তানদের। আমরা ইনাদের জীবনের খুঁটিনাটি জানতে জানতে মিল অমিল খুঁজবো।
নেপোলিয়ান বোনাপার্টঃ
আসলে ঠিক কোথাকে যে শুরু করবো তাকে নিয়ে বুঝতে পারছি না। যে সকল ব্যক্তিবর্গ তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছা, দোষ-গুণের সূত্র ধরেই পালটে ফেলেছেন পৃথিবীর ইতিহাস, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তেমনি একজন সময়ের নায়ক, এক বিস্ময়কর প্রতিভার নাম। লা মার্টিন বলেছেন- ‘নেপোলিয়ন ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি’। কেন? ইতিহাস খুঁড়লে দেখা যায় চরম বিপর্যয়ের মুখেও অবিচল থেকে নিজের ভাগ্য জয় করে নেবার দুর্দমনীয় মানসিক শক্তি, সামরিক দক্ষতা ও অকল্পনীয় দূরদৃষ্টি আমাদের বিস্মিত করে।
জন্মঃ নেপোলিয়ন জন্মেছিলেন ইতালির পশ্চিম ভূমধ্যসাগরের বুকে ছোট্ট একটি দ্বীপ কর্শিকাতে(Cosica)। এটি ফরাসি উপকূল থেকে প্রায় একশো মাইল দূরে। এই দ্বীপেরই একটি ছোট্ট শহর আয়াসিওতে (ইতালিয় উচ্চারণ আয়াচ্চো- Ajaccio) তিনি জন্মগ্রহন করেন ১৭৬৯ সালের ১৫ই আগস্ট। এর মাত্র দুই মাস আগে দ্বীপটি ফরাসীদের দখলে আসে।
বাবাঃ নেপোলিয়নের বাবা ছিলেন একজন আইনজীবী এবং অভিজাত শ্রেণীর মানুষ।
মাঃ মায়ের নাম লেটিসিয়া। তিনি ছিলেন বেশ কঠোর স্বভাবের এবং ভীষণ রকম শৃঙ্খলাপরায়ণ। তার আত্মমর্যাদাবোধ ছিল তীব্র। মার কাছ থেকে কষ্টসহিষ্ণুতা এবং ধৈর্য্য- এই গুণ দুটি পান বালক নেপোলিয়ন।
ভাই-বোনঃ নেপোলিয়নের ভাই-বোন ছিলো সব মিলিয়ে বারো জন। এর মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
এডলফ হিটলারঃ
পৃথিবীর ইতিহাসে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘৃণিত চরিত্র এডলফ হিটলার, যার নির্দেশে ষাট লাখ ইহুদীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খলনায়ক এডলাফ হিটলার। কিন্তু তিনি যদি জিতে যেতেন তবে ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখা হত। তিনিই হতেন সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনীতিবিদ এবং ইতিহাসের মহানায়ক। ইতিহাস কেবল বিজয়ীদের জন্য লেখা হয়, বিজিতের জন্য নয়। কিন্তু এই বিজিত শুধু ইতিহাস গড়েননি, পৃথিবীর ইতিহাসকে পালটে দিয়েছেন বলা যায়।
জন্মঃ ফরাসি বিপ্লবের ঠিক একশো বছর পরে, ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল উত্তর অস্ট্রিয়ার ইন (Inn) নদীর তীরে ব্রাউনাউ (Braunau) শহরে সন্ধের সময় হিটলার এক পান্থশালায় জন্মগ্রহণ করেন।
বাবাঃ হিটলারের বাবা এলইস হিটলার। তিনি একজন কাস্টমস অফিসার ছিলেন। অতিরিক্ত মদ্যপানের জন্য তার মেজাজ সব সময় সপ্তমে চড়ে থাকতো। ছেলেমেয়েদের পেটাতে তার হাত সবসময় নিশপিশ করত। ছেলে-মেয়েদের তিনি কড়া শাসনেই রাখতেন। কিন্তু তেমন লাভ হয়নি। হিটলার তার বাবার মতোই গোয়ার ছিলেন।
মাঃ হিটলারের মায়ের নাম ক্লারা হিটলার। তিনি স্বামীর চেয়ে তেইশ বছরের ছোট ছিলেন। তিনি ছিলেন হিটলারের বাবার তৃত্বীয় স্ত্রী। এবং হিটলার ছিল তার চতুর্থ সন্তান। কিন্তু তার বড় দুই ছেলে আর এক কন্যা মারা যায় অল্প বয়সেই। তাই তিনি হিটলারকে খুব ভালোবাসতেন। হিটলার ও ছিলেন মা-অন্ত প্রাণ।
কিছু মিল খুঁজে পেলেন? ইনারা কেউই তার জন্ম স্থানের সম্রাট বা রাজা বা জেনারেল ছিলেন না। দুজনেই জন্মনিয়েছিলেন ভিন্ন দেশে। নেপোলিয়ন ফ্রান্সের সম্রাট হলেও জন্মনিয়েছিলেন ইতালিতে। আর হিটলার জার্মানীর চেন্সেলর হলেও জন্মনিয়েছিলেন অস্ট্রিয়ায়।
আরো একটা মিল আছে এক জন সিংহ রাশির জাতক (নেপোলিয়ন) অন্য জন মেষ রাশির জাতক (হিটলার)। কিন্তু সিংহ আর মেষ দুটোই আবার অগ্নি রাশি।
অমিল খুঁজে নিন। আজ এ পর্যন্তই। চলবে।
মিল-অমিল নেপোলিয়ন-হিটলার (দ্বিতীয় পর্ব)
মিল-অমিল নেপোলিয়ন-হিটলার (তৃত্বীয় পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৩৪