somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিল-অমিল নেপোলিয়ন-হিটলার (চতুর্থ পর্ব বা প্রেম পর্ব)

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সপ্তাহান্তে আবার ফিরলাম। আমার সক্রেটিস নিয়ে এর চতুর্থ পর্বটির বিষয় ছিলো প্রেম। কেন জানি মনে হলো, এবারও এই চতুর্থ পর্বটি হোক নেপোলিয়ন আর হিটলারের প্রেম পর্ব। এমন মানুষদের প্রেম, ভালোবাসা আর বিয়ে সেও নিশ্চয়ই ছিলো তাদের জীবনের মতোই বৈচিত্রে পরিপূর্ণ, এমন মনে হওয়াই স্বাভাবিক। তাই এই পর্বটি তাদের জীবনের সেই রঙিন দিনগুলো, কেমন ছিলো তাদের ভালোবাসার প্রকাশ অথবা ভালোবাসার টান সেই দিকটিকে আলোকপাত করার প্রচেষ্টা চালানো যাক।

নেপোলিয়নঃ

নেপোলিয়নের জীবনে প্রেম কতবার এসেছে, এটা হলফ করে কোন ইতিহাসবিদরাই ঠিক মতো বলতে পারবেন বলে মনে হয় না। তবে স্বীকৃত বিয়ে এবং অস্বীকৃত সম্পর্ক এই সব কিছুতে মোট তিন জন নারীকে দেখা যায়।

১. জেনোফেন (Josephine Bonaparte প্রথম স্ত্রী)
২. মারিয়া ওয়ালেস্কা (Marie Walewska যার গর্ভে নেপোলিয়নের অবৈধ সন্তান জন্ম লাভ করে। তবে নেপোলিয়ন তাকে কোনদিন অস্বীকার করেনি।)
৩. মারিয়া লুইসা (Marie Louise দ্বিতীয় স্ত্রী)
৪. Albine de Montholon
৫. Eleomore Demelle de la Phaigne
এবং ৬. Jules Barthélemy-Saint-Hilaire মা যার পরিচয় পাওয়া যায় না।

এই সব নারীরা ছাড়াও তার জীবনে আর কোনো নারী এসেছে কিনা তা তেমন জানা যায় না। তবে জীবনের প্রথম ভাগে এত দুঃখ-কষ্টের ভেতর মানুষ হয়েছেন যে হয়তো প্রেমে পড়ার মতো সময়ই ছিলো না, আর যখন জীবনের সকল কাটা সরিয়ে ধীরে ধীরে উপরে উঠছিলেন তখন এতো বেশি যুদ্ধে কাটিয়েছেন যে হয়তো প্রেম ভালোবাসার মতো বিষয়গুলো হয়তো গৌণই ছিলো?! :|

নেপোলিয়নের জীবন এত নাটকীয় উপাদানে পরিপূর্ণ যে তার জীবনটাই একটা নাটক মনে হয়। ডাইরেক্টরি শাসনকর্তারা নেপোলিয়নের ওপর ভার দেন প্যারির নাগরিকদের বাড়ি তল্লাশী করে সব অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করতে হবে। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে নেপোলিয়নের অধীনস্থ সেনারা সব অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করছে, এমন সময় একদিন একটি কিশোর বালক নেপোলিয়নের কাছে এসে উপস্থিত। তার আবেদন তার বাবা আলেকজান্ডারের তরবারিটি ফেরত চাই। বাবা রোবসপিয়েরের সন্ত্রাসের যুগে গিলোটিনে প্রাণ দিয়েছে, তার মৃত পিতার স্মৃতিচিহ্ন ওই তরবারিটি।
নেপোলিয়ন জিজ্ঞাস করলেন, -তোমার নাম কী?
বালকটি উত্তর দিল, -ইউজিন।
বালকের দৃঢ়তা দেখে এবং পিতৃভক্তি দেখে নেপোলিয়ন বিস্মিত হলেন। তার নির্দেশে ইউজিনকে তরবারিটি ফিরিয়ে দেয়া হল। বারো বয়সের ইউজিনের চোখে জলের ধারা নেমে এসেছে। মোহিত হলেন নেপোলিয়ন। ছেলের প্রতি এই অনুকম্পার জন্য মা জোসেফাইন নেপোলিয়নের কাছে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাতে এলেন। জোসেফাইনের সৌজন্যবোধ ও মিষ্টি ব্যবহারে বিস্মিত হলেন নেপোলিয়ন। জানতে চাইলেন তার সব কথা।

জোসেফাইনের ছোটোবেলার নাম ছিল মেরী জোসেফ রোজ টাচার। ১৬ বছর বয়সেই তার বিয়ে হয় হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ বছরের ছাত্র আলেকজান্ডার দ্য বোহারনিজের (Alexandre de Beauharnais) সাথে। ১৭৮০ সালে জন্মায় তার প্রথম পুত্র ইউজিন ( Eugène) এবং ১৭৮৩ সালে কন্যা হরতেনস (Hortense)। স্বামীর সঙ্গে জোসেফাইনেরও গিলোটিনে প্রাণ যাবার কথা,কিন্তু ইতিমধ্যে রোবসপিয়েরের প্রাণটাই যখন চলে গেলো গিলোটিনে, জোসেফাইন প্রাণে বেঁচে যান। আর দু-দিন দেরী হলে আলেকজান্ডারের প্রাণটাও বেঁচে যেত।

এই দুই সন্তানের জননী বিধবা রমনীকে দেখে নেপোলিয়ন একেবারে আত্মহারা হয়ে গেলেন। জোসেফাইন তার চেয়ে বয়স ছয় বড় ছিলো। বিধবা, সুন্দরী হলেও প্রেমে হাবুডুবু খাওয়ার মতো অবস্থা কেন হয়েছিলো তা নেপোলিয়ন ই জানেন। মহিলাদের সংস্পর্শে নানাভাবে তিনি এর আগে আসলেও জোসেফাইন কে তিনি আদর্শ বধূ হিসেবে পেতে চাইলেন। জোসেফাইন প্রথম প্রথম নেপোলিয়নের এই প্রেম নিবেদনকে তেমন পাত্তা দেন নি। পাগলামি ভেবেছিলেন। তাছাড়া পল বারাসের সাথে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলো। বারাস নিয়মিত জোসেফাইনের বাসায় যাতায়াত করতেন। নেপোলিয়ন তা জানতেন। তাই একদিন সাহস করে বারাসের কাছে চলে গেলেন, যা থাকে কপালে এই ভেবে সব কথা খুলে বললেন তাকে। বারাস কিন্তু রাগ করলেন না, তিনি বললেন- 'এটা ঠিক জোসেফাইন আমার রক্ষিতা ছিল কিন্তু সে তো অতীত দিনের কথা, এখন বাপু আমার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তুমি যদি তাকে বিয়ে করতে চাও, সে তো আনন্দের কথা! রূপযৌবন সবই তার ছিল বটে এখন কি কিছু তার অবশিষ্ট আছে!'

নেপোলিয়ন যেন স্বর্গ হাতে পেলেন। জোসেফাইন ও দ্বিধা কাটিয়ে বিয়েতে রাজী হলেন। তখন ফ্রান্সে বিয়ে তেমন কোনো ব্যাপারই না। নতুন আইনে, চার্চ-টার্চের কোনো বালাই নেই, কারো কোনো ধর্মীয় অনুমোদনেরও প্রয়োজন নেই। দুজনে রাজি হলেই বিয়ে হয়ে গেল। নেপোলিয়ন আর জোসেফাইনের বিয়ে হয় ১৭৯৬ সালের ৯ই মার্চ যখন তার বয়স মাত্র ২৬ আর জোসেফাইনের ৩২। জোসেফাইন কিন্তু নেপোলিয়নের দেয়া আদরের নাম। জোসেফাইন কোনোদিন নেপোলিয়নের ভালোবাসা, প্রেম এবং আদর থেকে বঞ্চিত হননি। জোসেফনের সাথে নেপোলিয়নের বিচ্ছেদ হয় ১৮০৯ সালের ১৫ই ডিসেম্বর। একান্তই সিংহাসন রক্ষার জন্য, উত্তরাধিকারের জন্য তিনি জোসেফাইন কে ডিভোর্স দেন। কেননা জোসেফাইন যে তাকে সন্তান উপহার দিতে পারবেন না এটা এতো দিনে তিনি যেনে গিয়েছিলেন। তবে তাদের মধ্যে ছাড়া ছাড়ি হয়ে গেলেও আমৃত্যূ উভয়েই উভয়কে ভালোবেসে গেছেন। মৃত্যূর আগে জোসেফাইনের মুখে শেষ শব্দটি ছিলো 'নেপোলিয়ন' আর নেপোলিয়নের মুখে শেষ শব্দটি ছিল 'জোসেফাইন'। সে এক অমর প্রেমানুরাগ।


মারিয়া ওয়ালেস্কা এর সাথে নেপোলিয়নের প্রথম দেখা হয় ১৮০৬ সালে পোল্যান্ড এর ব্লনি অথবা জেবলোন্নাতে। সেখানে তার সোন্দর্যে মুগ্ধ হন নেপোলিয়ন। যদিও এই সম্পর্ক এর কথা খুব গোপন রাখা হয়। তবুও ১৮০৯ সালে তার গর্ভে নেপোলিয়নের সন্তান এলে নেপোলিয়ন বৈধ সন্তানের জন্য আবার বিয়ে করেন।


রাশিয়ার সম্রাটের মা মন স্থির করতে পারছিলেন না, নেপোলিয়নের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিবেন কিনা। কিন্তু নেপোলিয়নের জন্য এই দ্বিধান্বিত অবস্থা অসম্মানজনক। নেপোলিয়ন অস্ট্রিয়ার সম্রাটের কাছে দূত পাঠালেন। অস্ট্রিয়ার সম্রাট চার্লস তার অপূর্ব সুন্দরী কন্যা মারিয়া লুইসার সাথে নেপোলিয়নের বিয়ের প্রস্তাব লুফে নিলেন। লুইসার সাথে নেপোলিয়নের বিয়ে হয় ১৮১০ সালে। কোনো সূত্র মতে ২রা এপ্রিল, কোনো সূত্রমতে ১১ই মে। তবে এই বিয়েকে কেন্দ্র করে আড়ম্বরের শেষ ছিল না।

এছাড়াও আর যাদের সাথে নেপোলিয়নের সম্পর্ক হয়েছিলো সেগুলো সম্পর্কে তেমন কিছু বলার নেই।

হিটলারঃ

সৈয়দ মুজতবা আলী তার 'হিটলার' বইতে হিটলারের ভালোবাসা সংক্রান্ত নিজস্ব মতবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার ব্যাক্তিগত মতে হিটলার ভালোবেসেছিলেন 1/2 + 1 + 1/2 (হাফ প্লাস ওয়ান প্লাস হাফ) অর্থাৎ সর্বসাকুল্যে দুবার।'

জেনে নেয়া যাক এই ১/২ + ১ + ১/২ ইনাদের পরিচয়।
প্রথম হাফ- স্টেফানি (Stefanie Rabatsch)
ওয়ান - গেলী
দ্বিতীয় হাফ- ইভা ব্রাউন।

স্টেফানি এর সাথে হিটলারের কিশোর বয়সের প্রেমকে আমরা প্লেটনিক প্রেম বলতে পারি। সেই লিনঝে থাকা কলীন ১৬ বছর বয়সে হিটলার স্টেফানির প্রেমে পরেন। স্টেফানির স্কুলে যাওয়ার পথে দাঁড়িয়ে থাকতেন। সে প্রেম ছিলো অনেকটাই অব্যক্ত এবং একতরফা। তবে প্রেম নিবেদন করতে হিটলার পেছপা হননি। তবে এর প্রকাশ ভঙ্গি ছিলো সংযত। ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে মাত্রাতিরিক্ত আবেগে বাড়াবাড়ি কিছু করে ফেলা হিটলারের চিরদিনই খুব অপছন্দের। গোপনে মনের কথা জানিয়ে এবং মেয়েটির প্রশংসা করে হিটলার মেয়েটির হাতে তার প্রেমপত্র পৌছে দেন।
পুষ্পোৎসবের সকালে হিটলার তার সবচেয়ে ভালো জামা-কাপর পরে পথের পাশে অপেক্ষা করতে থাকেন প্রিয়ার জন্য। সময় যেন কিছুতে কাটতে চায় না। অবশেষে তিনি এলেন। হিটলার হ্যাট তুলে অন্য দিনের চেয়ে বেশি সসম্ভ্রম অভিবাদন জানালেন। সেই ভিড়ের মধ্যেও প্রিয়া তাকে লক্ষ্য করে তার হাতের ফুলের ডালা থেকে একটি ফুল তুলে নিয়ে তার দিকে ছুড়ে ফেলে মৃদুহাস্য করলেন। চার বছর পর্যন্ত হিটলার চেষ্টা করেছেন স্টাফানির সাথে পরিচয় হতে, কিন্তু কি কারনে সামনে আসেন নি এ এক বড় আশ্চর্যের কথা। কেবলই বলতেন কথা হবে 'Tomorrow'।

মেয়েটি সম্পর্কে তার বাল্য বন্ধু কুবিজেক বলেন, "a distinguished- looking girl, tall and slim" কিন্তু একদিন হিটলার তার প্রিয়াকে দেখতে পান এক আর্মি অফিসারের বাহু-বন্ধনে। সেই দিন যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিলো তার মাথায়। রাগে আক্রোশে ফেটে পড়েছিলেন। অভিসম্পাত করতে থাকেন সেই পাপাত্মা আর্মি অফিসারদের। নিজেকে এমনকি পারলে পুরো বিশ্বব্রহ্মান্ড ধ্বংস করেন। একবার এমন পরিকল্পনাও করেছিলেন, স্টেফানিকে কিডনেপ করে দানিয়ূব নদীতে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবেন। এরপর সে ভিয়েনায় চলে আসেন।

হিটলার মারা যাওয়ার বেশ কয়েক বছর পর খুঁজে বের করা হয় স্টেফানি কে। সেই ইন্টারভিউয়ে তিনি জানান, হিটলারের মতো এক তরুণের কাছে থেকে তিনি এক প্রেমপত্র পেয়েছিলেন। সেখানে, হিটলারের গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন, এরপর তারা বিয়ে করবেন। তবে তিনি এর কোনো উত্তর দেন নি।

তরুণ বয়সে হিটলার আর কোনো প্রেমের খবর পাওয়া যায় না। এর পরবর্তী হিটলার এর জীবনে প্রেম খোজা আর পাথর নিংড়ে রস বের করা এক মনে হতে পারে। এমন কি প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে জার্মানী সৈনিকরা যখন অবসরে আড্ডা দিতেন যেখানে কিছুটা মেয়েদের নিয়ে খিস্তি-খেওর ই বেশি হতো, সেই সব থেকে নিজেকে দূরে রাখতেন।

এই দিকে যখন হিটলার নাৎসি দলের কর্তাব্যক্তি হয়ে উঠেছেন, আর বয়স ও পড়ন্ত যৌবনে, তিনি বিয়ে করেন না। সবাই এই দিকটি ইঙ্গিত করতেই তিনি বলেন, 'জার্মানীই আমার জীবনসঙ্গিনী'। হিটলার তার রাজনৈতিক বন্ধুদের নিয়ে কফি হাউজে মিলিত হতেন। আড্ডা দিতেন। আর আড্ডার মধ্যমনি যথারীতি হতেন তিনি। এমনই এক সন্ধ্যায় তিনি এক হাটুর বয়েসি মেয়েকে নিয়ে হাজির হলেন। মেয়েটির নাম গেলী। গেলী তার ডাক নাম। ভালো নাম এ্যাঞ্জেলিনা মারিয়া (Angela Maria Geli Raubal)।

Geli Raubal

গেলীর সাথে হিটলারের প্রেম যে গভীর আন্তরিক প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তা পৃথিবীর মানুষের কাছে অনেকদিন পর্যন্ত গোপন ছিল। হিটলারের মৃত্যূর দশ বছর পর ১৯৫৫ সালে হিটলারের বিশেষ প্রিয়পাত্র এবং নিত্যসঙ্গী, ফটোগ্রাফার হায়েনরিস হফম্যানের (Heinrich Hoffmann) লেখা বই, 'Hitler was my friend' থেকে গেলী সম্পর্কে সমস্ত তথ্য মানুষের সামনে আসে।

হিটলারের সৎ মা ফ্রানজিসকার কন্যা এ্যাঞ্জেলা, অর্থাৎ সে হিটলারের সৎ বোন। এ্যাঞ্জেলার সাথে হিটলারের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল, সে হিটলারের বাড়িতে তাকে দেখাশুনার করত। এই এ্যাঞ্জেলার মেয়ে গেলী। সম্পর্কে হিটলারের ভাগ্নী। হিটলার এর বয়স তখন চল্লিশ। এই সময় ছটফটে মেয়ে গেলীকে দেখে হিটলার একেবারে গলে গেলেন। গেলীর মুখে সর্বদাই কথার ফুলঝুরি, আর অসাধারণ সুন্দরী। এই গেলীর প্রতি হিটলার এমন আকৃষ্ট হলেন যে তাকে ছাড়া এক মুহুর্তও চলে না। যেখানে যান পারলে গেলীকে নিয়ে যান। গেলীর সমস্ত বায়না সাথে সাথে মিটিয়ে দেন। এমনকি গেলীর টুপি জুতো কিনতে যাওয়ার মত বিরক্তকর বিষয়গুলোকেও মেনে নিতেন। হিটলার নিজেই বলেছেন, গেলীর সঙ্গে হ্যাট টুপি কাপড় কিনতে যাওয়ার চেয়ে কঠিনতর অগ্নিপরীক্ষা ত্রিসংসারে নেই।

গেলী অবশ্য জানতো হিটলার তাকে ভালোবাসেন, কিন্তু সেই প্রেম কত অতল গভীর সে সম্পর্কে হয়তো বেচারীর ধারনাও ছিলো না। এই গেলী সম্পর্কে লিখতে গেলে পুরো একটা প্যারা লেখা সম্ভব। এমনিতেই অনেক বড় হয়ে গেছে তাই লেখা সংক্ষিপ্ত করার লক্ষ্য এইটুকু বলি, গেলী সম্পর্কে বলতে যেয়ে হিটলার হফম্যান কে বলেছেন,' আপনি জানেন, হফম্যান, গেলীর ভবিষ্যৎ আমার কাছে এমনই প্রিয়, এমনই মূল্যবান যে তাকে সর্বক্ষণ চোখে চোখে রাখা আম আমার কর্তব্য বলে মনে করি। এ-কথা খুবই সত্য আমি গেলীকে ভালোবাসি এবং আমি তাকে বিয়েও করতে পারি, কিন্তু বিয়ে করা সম্বন্ধে আমার মতামত কি আপনি ভালো করেই জানেন, এবং আমি যে কদাপি বিয়ে করবো না বলে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছি সে কথাও আপনি জানেন। তাই আমি এটাকে আপন ন্যায়সম্মত অধিকার বলে ধরে নিয়েছি যে যতদিন না গেলীর উপযুক্ত বর এসে উদয় হয় ততদিন পর্যন্ত সে যার সঙ্গে পরিচয় করতে যায় এবং যারা তার পরিচিত তাদের উপর কড়া নজর রাখা। আজ গেলী যেটাকে বন্ধন বলে মনে করছে সেটা প্রকৃতপক্ষে বিচক্ষন আত্মজনের সুচিন্তিত সতর্কতা। আমি মনে মনে দৃঢ়তম সংকল্প করেছি গেলী যেন জোচ্চারের হাতে না পড়ে বা এমন লোকের পাল্লায় না পড়ে যে গেলীকে দিয়ে আপন ভবিষ্যৎ গুছিয়ে নেবার আয়াডভেঞ্চারের তালে আছে।' ১৯৩১ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর গেলী আত্মহত্যা করেন।



গেলী আত্মহত্যার কিছুদিন বলা যায় এক-দুই বছর আগে ইভা ব্রাউন এর সাথে পরিচয় হয়। ইনি হফম্যান এর স্টুডিওতে কাজ করতেন। গেলী মৃত্যূর পর ধীরে ধীরে ইভা হিটলারের জীবনে প্রবেশ করে। তবে গেলীর মতো প্রভাব বিস্তার করতে পারেন নি। ইভার বিশেষ কোনো গুণ ছিলো না। তবে ভালো নাচতে পারতেন। আর ছিলেন অসামান্যা সুন্দরী। চ্যান্সেলর হওয়ার পর থেকে ইভা তার সঙ্গিনী এবগ পরবর্তী বারো বছর ধরে তাকে হিটলারের সঙ্গিনী হয়েই কাটাতে হয়েছে। জার্মান প্রেস বা রেডিও কোনো দিন ইভার কথা উল্লেখ্য করেনি। ইভা ছিলো অন্তরালবর্তিনী। এমন জীবন কোনো নারীরই কাম্য নয়। তাই ১৯৩৫ সালের মে মাসে ঘুমের ঔষধ খেয়ে ইভা আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই নারী হিটলারের পাশে ছিলেন। ২৯ শে এপ্রিল ভোরবেলা একান্ত কয়েকজন সহচরের সামনে বর-বধূ বেশে হিটলার আর ইভা এসে দাড়ালেন। বিয়ের নথিতে সই করলেন। ইভা হলেন হিটলারের জীবন সঙ্গিনী। আসলে মরন সঙ্গিনী। এর আগেই হিটলার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন আত্মহত্যা করবেন। পরের দিন দুজন মিশে এক সাথে আত্মহত্যা করেন। জানা যায় মাত্র একটি বুলেটে তাদের দুজনের মৃত্যূ হয়। (ইভা সায়ানাইড পিলে কামড় দেওয়ার সাথে সাথে সোফায় লুটিয়ে পড়েন। আর হিটলার রিভলবার মাথায় ঠেকিয়ে ট্রিগার টিপে দেন। সংশোধিত।)

আজ এ পর্যন্তই।
মিল-অমিল নেপোলিয়ন-হিটলার (প্রথম পর্ব)

মিল-অমিল নেপোলিয়ন-হিটলার (দ্বিতীয় পর্ব)

মিল-অমিল নেপোলিয়ন-হিটলার (তৃত্বীয় পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:০২
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×