somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা কী পান করছি

১৬ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কাঠের সাহায্যে পানীয় জল শোধন

একটি নতুন ধরনের ‘ওয়াটার ফিল্টার সিস্টেম’ ভবিষ্যতে বহু মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারবে৷ এটির নির্মাণ পদ্ধতিও অত্যন্ত সহজ৷ এমনটাই মনে করেন একদল গবেষক৷ তবে প্রশ্ন এই যে, কতটা নিরাপদ এই পদ্ধতি?

ধরা যাক আপনাকে কেউ বললো খুব সাধারণ এক টুকরা কাঠ দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যাবে৷ বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে নিশ্চয়ই৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস-এর ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির এক গবেষক টিম এটির বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করেন৷

কয়েক বছর আগে জীববিজ্ঞানীদের এক কনফারেন্সে আলোচনা শুনে আইডিয়াটা মাথায় আসে যন্ত্র প্রকৌশলী রহিত কার্নিকের মাথায়৷

জাইলেম-এর ভূমিকা

বিষয়টি ছিল উদ্ভিদ ও তাদের জাইলেম৷ অর্থাৎ উদ্ভিদের এক জটিল কাঠের টিসু৷ এ টিস্যুর মাধ্যমে মাটি ও শেকড় থেকে পানি ও খনিজ পদার্থ কাণ্ড, ডালপালা ও পাতায় পরিবহণ করে থাকে উদ্ভিদ৷


রহিত কার্নিক চিন্তা করলেন, উদ্ভিদের জাইলেমকে প্রাকৃতিক ও সুলভমূল্যের পানির ফিল্টার হিসাবেও তো ব্যবহার করা যেতে পারে!

জাইলেমে রয়েছে অতি ক্ষুদ্র ছিদ্রসহ ঝিল্লি৷ অনেকটা ছাকনির মতো৷ অত্যন্ত ক্ষুদ্র ন্যানোমিটার আয়তনের কণাও আটকে যায় তাতে৷ এতে প্রাকৃতিক উপায়েই পানি পরিবহণের সময় উদ্ভিদের ভেতরে বুদ্বুদ তৈরিতে বাধার সৃষ্টি হয়৷ তা না হলে উদ্ভিদের জন্য মারাত্মক হতো৷ যেমন হতে পারে মানুষের রক্তপ্রবাহে বাধা পেলে৷

কার্নিকের আশা, এই ঝিল্লি শুধু বাতাসের বুদ্বুদই নয়, ব্যাকটেরিয়াকেও ফিল্টার করতে পারবে৷ এর ফলে দূষিত পানি আবার পান যোগ্য হবে৷

সাদা-মাটা ফিল্টারও কার্যকর

এই বিজ্ঞানী পাইন গাছের কাঠ ও নল দিয়ে সাদামাটা একটা ফিল্টার তৈরি করেন৷ এরপর পানিতে লাল রং মিশিয়ে তা ফিল্টার করেন৷ সত্যি সত্যি ফিল্টার দিয়ে যে তরল পদার্থটা বের হলো, তা একেবারে পরিষ্কার৷ লাল রংটা জাইলেমের ঝিল্লিতে জমা হয়ে থাকে৷

এরপর এই বিজ্ঞানী আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ব্যাকটেরিয়া নিয়ে৷ এক ধরনের কোলি ব্যাকটেরিয়া ছেড়ে দেন পানিতে৷ ‘‘আমাদের প্রথম প্রচেষ্টাই দেখিয়েছে, ৯৯.৯৯ শতাংশ ব্যাকটেরিয়াই জাইলেম দিয়ে ফিল্টার করা সম্ভব হয়েছে৷'' বলেন কার্নিক৷ মাত্র একটি ফিল্টারই প্রতিদিন চার লিটার পর্যন্ত পানীয়জল পরিষ্কার করতে পারে৷

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বছরে ১.৬ মিলিয়ন মানুষ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত পানি পান করে নানা অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়৷ এর মধ্যে ৯০ শতাংশ শিশু৷ সাধারণত পানি শোধন করার জন্য ক্লোরিন কিংবা কার্বন ফিল্টার ইত্যাদি পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়৷ এ সব পদ্ধতি হয় বেশ খরচসাপেক্ষ নয়ত বেশি পরিমাণ পানিতে তেমন কার্যকর নয়৷ এছাড়া এ জন্য প্রয়োজন হয় প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুতশক্তি৷ যে সব অঞ্চলে পানিদূষণের প্রকোপ বেশি, সেসব অঞ্চলে বিদ্যুৎশক্তির অভাবও প্রকট৷ কার্নিক বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস জাইলেম ফিল্টারের মাধ্যমে সবার জন্য সহজে ও সুলভমূল্যে জলপরিশোধন করা সম্ভব৷ কোনো রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ছাড়াই৷''

প্রয়োজন আরো কিছুটা সময়

তবে প্রচলিত পদ্ধতিগুলির সঙ্গে জাইলেম পদ্ধতির তুলনা করার সময় এখনও আসেনি৷ এজন্যা আরো কিছু সময় লাগবে৷ বলেন এই বিজ্ঞানী৷ বর্তমানে কার্নিক ও তাঁর টিম বিভিন্ন ধরনের কাঠের ফিল্টারের কার্যক্ষমতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন৷ এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত যে কোনো কোনোটি ব্যাকটেরিয়া দূর করার ব্যাপারে আরো কার্যকর হবে৷

তবে এই পদ্ধতির ফিল্টার কাজে লাগানোর উপযোগী করতে ২/৩ বছর লেগে যেতে পারে৷ আর একটি সমস্যা হলো এই পদ্ধতিতে ২০০ ন্যানোমিটার আকারের ব্যাকটেরিয়া ফিল্টার করা গেলেও কিন্তু আরো ছোট আকারের ভাইরাসকে আটকানো যায় না৷ এছাড়া ফিল্টারের কাঠটিকে সবসময় ভেজা রাখতে হয়, যাতে ফিল্টারের গুণাগুণ বজায় থাকে৷ ফেডারেল পরিবেশ দপ্তরের হার্টমুট বার্টেল সমালোচনা করে বলেন, ‘‘এই ধরনের ফিল্টার পদ্ধতিকে বলা যায় অনেকটা ‘নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো'৷ আমাদের স্বাস্থ্যসম্মত পানীয়জলের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই৷''

আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে

অন্যদিকে প্রযুক্তি সংক্রান্ত সাহায্য সংস্থা, ‘টেকনিশেস হিল্ফসওয়ার্ক'-এর নিকোল সান্ডার এই পদ্ধতির ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন৷ কেননা প্রচলিত ফিল্টার পদ্ধতির সঙ্গে মিল রয়েছে এটির৷ তবে এই পদ্ধতির উন্নয়ন ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার দিকে লক্ষ্য রাখা হবে বলে জানান তিনি৷

রহিত কার্নিক জানেন, তাঁর টিমটির সামনে অনেক কাজ বাকি৷ একদিন হয়ত পানির কলে এই ধরনের একটি ফিল্টার লাগিয়ে পাওয়া যাবে জীবাণুমুক্ত পানি৷ এই স্বপ্ন তাঁর৷ ‘‘আমরা আশা করি, আমাদের পদ্ধতি সেইসব জায়গায় কাজে লাগানো যাবে, যেখানে অন্যান্য পদ্ধতি ব্যয়সাপেক্ষ কিংবা সহজলভ্য নয় এবং তা যত দ্রুত সম্ভব ততই ভালো'', বলেন গবেষক কার্নিক

.................................

আমরা কী পান করছি?


সবুজ পরী!

সবুজ রংয়ের কারণে অ্যাবসিন্থকে ‘সবুজ পরী’ নামে ডাকা হয়৷ তবে এতে উচ্চমাত্রার অ্যালকোহল থাকায় চিন্তিত ইইউ সাংসদরা৷ এছাড়া এতে রয়েছে ‘তুজন’ নামক একটি বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ৷ ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডের এই পানীয় স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চেক প্রজাতন্ত্র সহ কয়েকটি দেশে জনপ্রিয়৷


পুড়ে যেতে পারে মুখ

‘সাম্বুকা’ নামের একটি পানীয়তে থাকে দাহ্য অ্যালকোহল৷ তাই কেউ যদি সাম্বুকা পাবার সঙ্গে সঙ্গেই পান করা শুরু করে, তাহলে তার মুখ পুড়ে যেতে পারে৷ এ থেকে রক্ষা পেতে একটু অপেক্ষা করা প্রয়োজন৷


তরল নাইট্রোজেন ককটেল

গত অক্টোবরে ব্রিটিশ এক তরুণী তার ১৮তম জন্মবার্ষিকীতে শখ করে তরল নাইট্রোজেন ককটেল পান করেছিলেন৷ কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার বুকে ব্যথা অনুভব হয় ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়৷ এই ককটেল বিপজ্জনক হলেও বিশ্বের অনেক দেশেই এটা নিষিদ্ধ নয়৷


পার্টি ড্রিংক!

পার্টিতে গিয়ে কোনো পানীয় পান করার পর যদি মাতাল হতে সময় লাগে, তাহলে তো সেই পানীয়ই ভাল৷ তাই না! জার্মানির ইয়েগেরমাইস্টার এই ধরণেরই একটি পানীয়৷ অনেকে এর সঙ্গে এনার্জি ড্রিংক ‘রেড বুল’ মিশিয়ে নেন৷ ফলে মজাটা আরও বেড়ে যায়৷ কিন্তু তা করতে গিয়ে বিপদও হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা৷


এনার্জি ড্রিংক ‘রেড বুল’

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এনার্জি ড্রিংক রেড বুল৷ এতে এক কাপ কফির মতোই ক্যাফেইন রয়েছে৷ এছাড়া রয়েছে প্রয়োজনীয় চিনি আর টাউরিন৷ তবে টরাইনের প্রভাব সম্পর্কে এখনো ততটা জানা যায়নি৷


৭৫ শতাংশ অ্যালকোহল

হুইস্কিতে থাকে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ অ্যালকোহল৷ কিন্তু ‘বাকার্ডি ১৫১’ নামের রাম’এ থাকে প্রায় ৭৫ শতাংশ৷ রাশিয়া আর স্কটল্যান্ডে এই রাম এর প্রচলন বেশি৷ ফলে অ্যালকোহলজনিত সমস্যাও সেখানে বেশি৷


মৃত্যুও হতে পারে

অতিরিক্ত অ্যালকোহল স্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি করতে পারে, এমনকি মৃত্যুরও কারণ হতে পারে৷ ঠিক যেমনটা হতে পারে খুব কম পানি পান করলে৷
...............................।
পানির অপচয় রোধের দশ উপায়


এক কাপ কফি তৈরিতে ১৪০ লিটার পানি!

আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য বা পানীয় তালিকার কিছু পণ্য তৈরিতে অনেক পানি প্রয়োজন হয়৷ যেমন এক কাপ কফি বাগান থেকে আপনার টেবিল পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ হচ্ছে ১৪০ লিটার পানি৷ আর এক লিটার দুধের পেছনে ব্যয় ১,০০০ লিটার পানি৷ তাই এ সব পানীয়র অপচয় কমানোর মাধ্যমে পানির অপচয় রোধ করা সম্ভব৷


মাংস খাওয়া কমাতে পারেন

ওয়াটারফুটপ্রিন্ট ডটঅর্গ-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এক কেজি মাংস উৎপাদনে সবমিলিয়ে খরচ হয় ১৫ হাজার লিটারের মতো পানি৷ এই হিসাবের মধ্যে পশুর জন্ম এবং বেড়ে ওঠার সময় প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণও বিবেচনা করা হয়েছে৷ এবার ভেবে দেখুন, এক বেলা মাংস না খেয়ে কতটা পানি বাঁচানো সম্ভব?


পানির ট্যাপের দিকের নজর রাখুন

মুখ ধোয়া বা দাঁত ব্রাশ করার সময় পানির ট্যাপ বন্ধ রাখুন৷ একান্ত যদি গরম পানি পেতে ট্যাপ একটু খুলে রাখতে চান, তাহলে সেই পানি ব্যবহার করতে পারেন ব্রাশ ধোয়ার কাজে৷


কাপড় বা থালাবাসন পরিষ্কারে সতর্ক হন

কাপড় ধোয়া বা থালাবাসন পরিষ্কারের মেশিন এখন ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে৷ পুরোপুরি ভর্তি না হওয়া অবধি এ সব মেশিন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন৷


অপ্রয়োজনে ফ্লাশ নয়

অনেকেই যখন-তখন টয়লেট ফ্লাশ করে থাকেন৷ এতে প্রচুর পানি অপচয় হয়৷ তাই একান্ত প্রয়োজন না হলে ফ্লাশ করা থেকে বিরত থাকুন৷


পুকুরে ময়লা ফেলা নয়

বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষ সুযোগ পেলেই পুকুর বা খালে ময়লা ফেলে৷ এতে করে পানি দূষিত হয়৷ আর দূষিত পানি পুনরায় পান উপযোগী করে তুলতে খরচ হয় প্রচুর অর্থ এবং বিদ্যুৎ৷ তাই পুকুরে বা খালে ময়লা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে বা মাটিতে গর্ত করে ময়লা ফেলুন৷ (ফাইল ফটো)


পানির পাইপের দিকে নজর দিন

অনেক সময় পানির পাইপে থাকা বিভিন্ন জোড়া হালকা হয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি বাইরে পরে যায়৷ একটু সতর্ক হলেই এভাবে পানির অপচয় রোধ করা যায়৷ এছাড়া ছাদের ট্যাংকি ভর্তি হয়ে যাতে পানি বাইরে পরে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখুন৷ সময়মতো পানির পাম্প বন্ধ করে দিন৷


গোসলের সময় অপচয় নয়

বাথরুমে থাকা গতানুগতিক বা পুরনো পানির ঝরনাগুলো সরিয়ে ফেলুন৷ বর্তমানে বাজারে পানি সাশ্রয়কারী ঝরনা পাওয়া যায়৷ সেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে ২০ থেকে ৬০ শতাংশ পানির অপচয় রোধ সম্ভব৷ আর গোসলের সময় প্রস্রাব করার অভ্যেস তৈরির মাধ্যমে দিনে অন্তত একবার ফ্লাশ করার পানি বাঁচানো সম্ভব৷


পানি কখনো ফেলে দেবেন না

পানি পান করার পর যদি গ্লাসের তলায় খানিকটা পানি থেকে যায়, তাহলে তা ফেলে দেবেন না৷ সেটুকু আপনার গাছের গোড়ায় ঢালতে পারেন কিংবা চায়ের কেটলিতে জমাতে পারেন৷


সম্ভব হলে বৃষ্টির পানি জমা করুন

বৃষ্টির পানি জমা করে তা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার এমনকি পান করাও সম্ভব৷ বর্তমানে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের বিভিন্ন সরঞ্জামও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে৷ মনে রাখবেন, আপনার সামান্য উদ্যোগ পানির অপচয় রোধে বড় ভূমিকা রাখতে পারে৷ তাই চেষ্টা করে দেখুন না!


.............................।
সবার জন্য দূষণমুক্ত পানি



সারা বিশ্বে দূষিত পানীয় জলের কারণে বহু মানুষ রোগাক্রান্ত হয়৷ প্রতিদিন মারা যায় তিন হাজারের মত শিশু৷ বিশেষ করে এশিয়া আফ্রিকার দেশগুলিতেই সমস্যাটা তীব্র৷



২০০০ সালে জাতিসংঘের এক ঘোষণায় সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা স্থির করা হয়৷ এতে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য হ্রাস করার পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার ওপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে৷ ২০১০ সালে জাতিসংঘের আরেক ঘোষণায় বিশুদ্ধ পানির অধিকারকে মানবাধিকার হিসাবে গণ্য করা হয়েছে৷ পাশাপাশি পয়ঃনিষ্কাশন পদ্ধতির উন্নয়নের ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷

ইতোমধ্যে বিশ্বের ৮৯ শতাংশ মানুষ পরিষ্কার পানি পাচ্ছেন৷ বিশেষ করে চীন ও ভারতে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে পানি সরবরাহেরও উন্নতি হয়েছে৷ ২০১৫ সাল নাগাদ ৯২ শতাংশ মানুষের কাছে পরিষ্কার পানি পৌঁছে দেয়া যাবে বলে আশা করছে জাতিসংঘ৷

কিন্তু পরিসংখ্যানটা অন্যভাবে দেখলে বোঝা যাবে বিশ্বের জনসাধারণের একটা বিরাট অংশ অর্থাৎ ১১ শতাংশ মানুষ বিশুদ্ধ পানি পান থেকে বঞ্চিত৷ অন্য কথায় পৃথিবীর প্রায় ৮০ কোটি (৭৮৩ মিলিয়ন) মানুষ প্রতিদিন দূষিত পানি পান করছে৷ টয়লেটের সুবিধা থেকে বঞ্চিত ১ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ৷ এই প্রসঙ্গে বলিভিয়ার এক বেসরকারি সংস্থার প্রধান এলিজাবেথ বার্গাস বলেন, ‘‘জাতিসংঘে সুপেয় পানির অধিকারকে মানবাধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে বলিভিয়ার ছিল অগ্রণী ভূমিকা৷ কিন্তু সেখানেই লক্ষ্য করা যায় যে, শুধু কাগজে কলমে আইন করে কাজ হয় না৷ আমার মনে হয় এটা অত্যন্ত জটিল বিষয়, যার বাস্তবায়নও সহজ নয়৷ এজন্য প্রয়োজন বিশেষ কলাকৌশলের৷''

বাংলাদেশে প্রকট সংকট

বাংলাদেশ – বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় পানির সংকট অত্যন্ত প্রবল৷ আবর্জনা, কলকারখানার বর্জ্য, মলমূত্র নদীনালায় পড়ে পানীয় জলকে দূষিত করছে অনবরত৷ বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষার চারপাশে দেখা যায় আবর্জনার স্তূপের পাশাপাশি ও অসংখ্য শৌচাগার৷ নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষরা গৃহস্থালির বর্জ্য নদীতে ফেলে ভরিয়ে ফেলছেন৷ এই সব আবর্জনা পচে অবস্থাকে আরো সঙ্গিন করে তুলছে৷ এমনকি রাজধানীর লেকগুলিও দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না৷

ওয়াসার পানিতেও ভীষণ দূষণ

অন্যদিকে পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াসার ওপরও নির্ভর করতে পারছে না মানুষ৷ পাইপ দিয়ে দুর্গন্ধময় নোংরা পানি ও বর্জ্য আসছে৷ অনেক ক্ষেত্রে পাইপে ছিদ্র হয়েও এরকমটি ঘটে থাকে৷ গ্রীষ্মকালে অবস্থাটা চরমে ওঠে৷ এই পানি পান বা ব্যবহার করে কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, চর্মরোগ ইত্যাদি অসুখ বিসুখে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ৷ হাসপাতালগুলিও সামলাতে পারে না রোগীর চাপ৷ বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়৷ জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি৷ ২০০৩ সালের ওয়াসার এক রিপোর্টে জানা যায়, ঢাকার ৮০ শতাংশের কিছু বেশি পানি সংগ্রহ করা হয় ভূগর্ভ থেকে বাকিটা নদীর পানি শোধন করে৷ শহরের জনসংখ্যা গত পাঁচ বছরে বেড়েছে ২৫ শতাংশ, কিন্তু পানি সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ৷ ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নেমে যাচ্ছে৷


দূষণমুক্ত করার উপায়

পানিকে দূষণমুক্ত করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল ভাল করে ফোটানো৷ এতে প্রায় সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস মারা যায়৷ তবে শুধু পানীয় জলের ক্ষেত্রে নয়, গৃহস্থালির সব রকম কাজেই ফোটানো পানি ব্যবহার করা উচিত৷ কেননা নানা ভাবে আমাদের শরীরে ব্যাকটেরিয়া ঢোকে৷

পানির রিজার্ভার ও ট্যাঙ্ক নিয়মিত পরিষ্কার করা প্রয়োজন৷ ক্লোরিন দিয়ে পানিকে জীবাণুমুক্ত করা যায়৷ ব্লিচিং পাউডারে ক্লোরিন থাকায় নিয়মিত পানির ট্যাঙ্কে ব্লিচিং ফেলা যেতে পারে৷ তবে তা পরিমাণমত হতে হবে৷ পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, আয়োডিন ইত্যাদিও জীবাণুনাশক হিসাবে কাজ করে৷

টিউবওয়েলের পানিও অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক৷ নলকূপের গভীরতা ২০০ ফুটের মত হতে হবে৷ তা না হলে আর্সেনিকের মিশ্রণ থাকার সম্ভাবনা থাকে, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত হানিকর৷

রাসায়নিক বর্জ্য অত্যন্ত মারাত্মক

পানিতে রাসায়নিক বর্জ্যের উপস্থিতিটা আরো মারাত্মক৷ পরিশোধনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ঢাকা ও আশেপাশের অঞ্চলের গার্মেন্টস, ডায়িং, প্লাস্টিক, পলিথিনও চামড়ার কারখানা থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬২ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ বুড়িগঙ্গা নদীতে পড়ছে, যাতে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ধাতু যেমন তামা, দস্তা, সিসা ইত্যাদি৷ এই সব পদার্থ মিশ্রিত পানি পান করলে ক্যানসারের মত মারাত্মক ব্যাধিও দেখা দিতে পারে৷ অন্যদিকে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকায় মাছের মত জলজ প্রাণীগুলিও নদীতে টিকে থাকতে পারছে না৷ কোনো কোনো রাসায়নিক পদার্থ এতই বিষাক্ত যে, এগুলিকে পরিশোধন করার মত প্রযুক্তি বা পরীক্ষাগারও নেই ওয়াসার কাছে৷

সবশেষে বলা যায়, পানির দূষণ রোধ করতে হলে সরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন তো রয়েছেই, তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করা৷ স্থানীয় পর্যায়ে ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমেও এগিয়ে যাওয়া যায়৷ এক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের, যেমন মেক্সিকোর ফানমেক্স নামের প্রতিষ্ঠানটির কার্যকলাপ থেকে দৃষ্টান্ত নেয়া যেতে পারে৷ প্রতিষ্ঠানটির পানিবিষয়ক প্রকল্পের সমন্বয়কারী ফাবিওলা গার্দুনো জানান, ‘‘স্থানীয় পর্যায়ে আমরা নানা ধরনের শিক্ষামুলক কর্মসূচি ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকি৷ এতে স্কুলের শিক্ষক, পরিচালকমণ্ডলী, ছাত্রছাত্রী ও তাদের মা বাবা এবং স্থানীয় সংস্থাগুলিকে সম্পৃক্ত করা হয়৷ এইভাবে আমরা পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের সমস্যা তুলে ধরতে পারি, সমাধান খুঁজতে পারি, বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়েও নিতে পারি৷''




......................................।
সুত্র:এখানে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১:১২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×