somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সঙ্ঘবদ্ধ দান আনে অফুরন্ত কল্যান-২

০১ লা এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সঙ্ঘবদ্ধ দান আনে অফুরন্ত কল্যান- ১


গোপনে দানের গুরুত্ব

নবীজী (স.) বলেন, হাশরের দিন যখন আরশের ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া অবশিষ্ট থাকবে না তখন আল্লাহ তায়ালা যে সাত ধরণের ব্যক্তিকে আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন তাদের একজন হলেন - যিনি অতি গোপনে দান করতেন।

পবিত্র বাইবেলেও আছে, সাহায্যের জন্যে বাড়িয়ে দেয়া তোমার হাতকে প্রভু দেখেছেন এবং এজন্যে তিনি প্রকাশ্যে তোমাকে পুরস্কৃত করবেন।

যা আছে তা থেকেই দান করুন

আগে সচ্ছল হয়ে পরে দান করবো - এ দৃষ্টিভঙ্গি একবারেই ভ্রান্ত। বরং বলা যায়, সচ্ছল হওয়ার জন্যেই দান করা প্রয়োজন। প্রাচুর্যের কোয়ান্টাম পঞ্চসূত্রের একটি হচ্ছে দান। কোয়ান্টাম সূত্র অনুসারে আপনি যখন দান করবেন, তখন সেখানে শূন্যতা সৃষ্টি হয়। প্রাকৃতিক নিয়মেই সে শূন্যস্থান পূরণে চারপাশ থেকে প্রতিদিন আসতে শুরু করে। যেভাবে বাতাসের শূন্যতা ঝড় সৃষ্টি করে, একইভাবে সৎ দান প্রতিদানের প্লাবন সৃষ্টি করে।

দানের ধর্মীয় নির্দেশ- নিজ নিজ সামর্থ্যানুযায়ী ধনী-গরীব সবার জন্যেই প্রযোজ্য। আপনার যা আছে তা থেকেই দান করুন। দানের ক্ষেত্রে পরিমাণ নয়; আপনার আন্তরিকতাই প্রমাণ করবে আপনি বিশ্বাসী না অবিশ্বাসী। নবীজী (স.) বলেন, যে ব্যক্তি তার বৈধ উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করে, আল্লাহ ঐ দান নিজ হাতে গ্রহণ করেন এবং তাতে বরকত দিয়ে করে তোলেন পাহাড়তুল্য।

দানে নিরুৎসাহিত করা গুরুতর অন্যায়

কাউকে দানে নিরুৎসাহিত করা গুরুতর অন্যায়। এ ধরণের কাজকে কোরআনে অবিশ্বাসীদের কাজ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা মাঊনে বলা হয়েছে, যারা বিশ্বাসী নয়, তারা মিসকিনদের খাবার দেয়ার ব্যাপারে লোকদেরকে উৎসাহিত করে না। এমনকি সূরা ফজরের ১৬ থেকে ২০ আয়াত ব্যাখ্যা করলে আমরা বুঝতে পারি, দারিদ্রের অন্যতম কারণ হচ্ছে অভাবগ্রস্তকে সাহায্য করতে অন্যদের উৎসাহিত না করা।

বুদ্ধবাণীতে বলা হয়েছে, কেউ যখন কাউকে দান করতে বাধা দেয় তখন সে তিনটি অন্যায় করে। প্রথমত, সে দাতাকে একটি ভালো কাজ থেকে বিরত করে। দ্বিতীয়ত, সে গ্রহীতাকে সাহায্য থেকে বঞ্চিত করে। তৃতীয়ত, নীচতার প্রকাশ ঘটিয়ে সে নিজের সত্তাকেই অপমানিত করে। (অংগুত্তর নিকয়া সূত্র নং ৫৭)।

অন্যকে দানে উৎসাহিত করুন

শাশ্বত ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে আমরা নিঃসংশয়ে বলতে পারি, অন্যকে দানে উৎসাহিত করা বিশ্বাসী হওয়ারও গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। তাই নিজে দানের পাশাপাশি অন্যকেও দানে উৎসাহিত করুন। সৎকাজে উৎসাহ দেয়ায় তার দানের কল্যাণের ভাগীদার আপনিও হবেন। আপনার জীবনেও কল্যাণের পরিমাণ বাড়তে থাকিবে।

দান যখন ভিক্ষা

ইসলামসহ অন্যান্য সকল ধর্মে দান এবং তার মাহাত্মের যে কথা বলা হয়েছে, আমাদের সমাজে প্রচলিত ভিক্ষা-ব্যবসা কোনভাবেই তার আওতায় পড়ে না। সম্প্রতি সাপ্তাহিক ২০০০, দৈনিক যায়যায়দিন ও দৈনিক ইত্তেফাকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ সংক্রান্ত কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ভিক্ষা-ব্যবসায়ী নেটওয়ার্কঃ বছরে আয় ৩০ কোটি টাকা

ভিক্ষুকদের ঘিরে উতোমধ্যে গড়ে উঠেছে এক বিশাল নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছে পেশাদার ভিক্ষুক-গডফাদাররা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে তারাই পরিচালনা করছে রাজধানীর ভিক্ষাভিত্তিক ‘ব্যবসা’কে। ভিক্ষুক-গডফাদাররা সারা দেশ থেকে ভিক্ষুক সংগ্রহ করে তাদের ভিক্ষার নানা কৌশল শিখিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে। সাধারণভাবে ১০০ টাকায় ৫০ টাকা, কখনো কখনো ৪০/৪৫ টাকা পায় ভিক্ষুকরা, বাকিটা চলে যায় ভিক্ষুক-গডফাদারদের পকেটে।

ভিক্ষাবৃত্তিতে ঢাকা শহরে বছরে প্রায় ৩০ কোটি টাকা করে সঙ্ঘবদ্ধ ভিক্ষুকের দল। এদের প্রতিদিনের আয় গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। মাসিক আয় ৯ হাজার টাকা এবং বছরে আয় ১ লাখ টাকার ওপর। (সাপ্তাহিক ২০০০, ১৮.০২.২০০৫)।

ভিক্ষুক জমির আলীর জমি আছে ৩৫ বিঘা

ভিক্ষুক জমির আলীর জমি আছে ৩৫ বিঘা। ভিক্ষার টাকা জমিয়ে প্রতিবকছর রংপুরে তার গ্রামের বাড়িতে এক বিঘা করে জমি কেনেন। ছেলেমেয়েদের জন্মদিনে পাঠান ঢাকার অভিজাত কনফেকশনারির কেক।

১২টি বেবিট্যাক্সি ও ২টি মাইক্রোবাসের মালিক ভিক্ষুক জালাল মোল্লার মাসিক আয় ৬০ হাজার টাকা। গ্রামের বাড়িতে তার দোতলা বিল্ডিংয়ের নাম দিয়েছেন মুসাফিরখানা।

ভিক্ষুক করম আলী শেখের আছে সুদের ব্যবসা। শহরে ভিক্ষুক সেজে ভিক্ষা করলেও গ্রামে রয়েছে তার আলিশান বাড়ি, প্রাইভেট রিকশা। রিকশাওয়ালার বেতনই দেন মাসে আড়াই হাজার টাকা। (দৈনিক ইত্তেফাক, ১৩.০১.২০০৭)।


ভিক্ষুক যখন আতঙ্ক

ভিক্ষাবৃত্তির একাধিক কলাকৌশল ছাড়াও কখনো কখনো ভিক্ষুকরা হয়ে ওঠে আতঙ্ক। একশ্রেণীর মাদকসেবী ভিক্ষুক হাতে ব্লেড নিয়ে ভয় দেখিয়ে রিকশা কিংবা বেবিটেক্সি যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। মাঝে মাঝে ছিনতাইও করে। আরেকদল ভিক্ষার নামে মানুষের মল-মূত্র গায়ে মেখে গায়ে মল ছিটিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে কেড়ে নেয় পথচালীর বা রিকশাযাত্রীর সর্বস্ব।

ভিক্ষায় আরো বেশি আয়ের জন্যে পঙ্গু বা বিকলাঙ্গ হতে ডাক্তারের কাছেও ধর্না দেয় এদের কেউ কেউ। (দৈনিক যায়যায়দিন, ১২.১০.২০০৬)।

আপনি যখন দানকে ভিক্ষায় রূপান্তরিত করছেন, তখন আপনি সামাজিক পরগাছা সৃষ্টিতেই সাহায্য করছেন। নবীজী (স.) এ জন্যেই ভিক্ষাবৃত্তিকে অপছন্দ করেছেন এবং ভিক্ষাবৃত্তি নির্মূলে বাস্তব পদক্ষেপও নিয়েছেন। (সমাপ্ত)

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:০২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×