somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যালাইডোস্কোপের আচ্ছন্নতা

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তন্দ্রাচ্ছন্নতায় বছরটা শেষ হয়ে আসলো প্রায়। বহুবছর যাবত উষ্ণতা দিয়ে চলা এক রঙা কালো চাদরটার বদলে নতুন কেনা জলপাই রঙের জ্যাকেটটা গায়ে অফিস থেকে বের হতে হতে বাজলো রাত সাড়ে নয়টা । নানা কারণে বিরক্ত, রাগান্বিত বা চিন্তিত সাথে বের হওয়া অন্য চারজনও । পথে রাস্তা পেরোনোর সময় আইলেনে চোখে পরে অফ হোয়াইট কালারের একটা কুকুর পায়ে মুখ রেখে শুয়ে আছে, কেমন মনমরা ভাব, যেন বেশ মন খারাপ কোন কারণে । আমি তাকে জিজ্ঞাস করি কি হয়েছে, তার মন খারাপ কিনা? জবাবে সে একটু চোখ পিটপিট করে উদাস ভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে । মনমরা ভাব কাটাতে উৎসাহ দিয়ে আবারও বলি - অফিস ছুটির রাতে এমন ঝিম মেরে থাকলে তো হবে না রে বেটি .. এই রাত হলো Chilling এর রাত .. So, chill. শুনে সে উঠে দাড়িয়ে আমাদের সঙ্গী হয়।

নির্জীব অফিস পাড়ার রাস্তার লাইটের নিচে কিছুক্ষণ মিথ্যে আন্তরিকতায় গল্প হয় দাড়িয়ে দাড়িয়ে। প্রোমোশন - ইনক্রিমেন্টের গল্প, গ্রামের বাড়ির মিষ্টি পাট শাকের গল্প, ডুব সাঁতার দিয়ে উঠে মুখের সামনে সাপ দেখার গল্প, আবেদনময়ী হতে চাওয়ার প্রানান্তকর চেষ্টা করেও ক্রমাগত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলা পরিচিত কোন তরুনীর গল্প, কিংবা এমন পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার গল্প যার চুড়োয় দাড়ালে ধোঁয়াটে মেঘ ঘিরে ফেলে সারা শরীর - যে মেঘ হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়, আবার যায়ও না । আমার সবার মাঝে দাড়িয়েও বিভ্রম হয় আমি বুঝি দাড়িয়ে আছি তুষার ঢাকা কোন বিরাণ প্রান্তরে। চলতে চলতে আমার স্লেজ গাড়িটা গেছে ভেঙে। চোখ, মুখ, হৃৎপিন্ড গ্রাস করে তুষারের নিঃস্পৃহ শীতলতা।

তখন আমি ফিরে গেলাম অতীতে, প্রায়ই যেমন যাই, অকারণে। যেন জামরুল, অড়বড়ই গাছের উঠোনে কোন এক সন্ধ্যায় হারিকেন জ্বালিয়ে, শীতল পাটিতে আধশোয়া হয়ে স্কুলের পড়া পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গিয়েছি, আর এখনও ঘুমিয়েই আছি... একটু পর ঘুম ভাঙ্গবে। চোখ মেলে দেখবো হারিকেনে কেরোসিন শুকিয়ে সলতের আগুনের কালিতে চিমনি কালো হয়ে যাচ্ছে। চিমনি খুলে পরিষ্কার করতে গিয়ে আবারও হাত কেঁটে যাব। তখন আমার মায়ের খোঁজে ঘরে ঢুকবো... দেখবো মা অল্প আলোতে তার সেলাই মেশিনটাতে বসে অনাত্নীয় কারও কোন পোষাক সেলাই করে চলেছেন ধ্যানের নিমগ্নতায়.. আমার আঙ্গুল তিনি সেই সেলাইয়ের কাপড়ের বাড়তি কোন টুকরো দিয়ে যত্নে বেঁধে দেবেন। রাত বাড়বে। একসময় আমি আমার মা'কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যাবো। তিনি আমার মাথার চুলে বিলি কেটে চলবেন আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পরও অনেকক্ষণ। মনে হয় পাশের ঘরে গেলেই যেন তাকে দেখবো। অথচ তাকে দেখার তেমন তাড়া বা আগ্রহ কখনো ছিলো বললে নিতান্তই অসত্য বলা হবে। মানুষের অনুপস্থিতির রেশ তার উপস্থিতির চেয়ে তীব্রতর।

দেয়ালে বৃষ্টি ভেজা কাকের মতো টুকরো বিষন্ন মন্তব্য আসে - আজকের দিনটাও শেষ হয়ে গেলো ।
আমি হেসে বলি - বছরটাই তো শেষ হয়ে গেলো ।
- সময় যে কোনদিক দিয়ে যায় বুঝি না ।
- সময় আসলে চলে যাওয়ারই জিনিস ... চলেই যায় ।
যাচ্ছে যাক ... চলে যাওয়া নিয়ে ভাবার অবসর কই? আমার বদলে আপাতত আমার শেলফে অলস সময় কাটিয়ে চলা হুমায়ুন, কুন্ডেরা, মুরাকামি, রেমার্ক, কোয়েলহোরা বরং যৌথ বিস্ময়ে ভেবে চলুক বহমান নিস্তরঙ্গ এ সময়ের আশ্চর্য চলে যাওয়া নিয়ে । কখনো অবসর এলে তখন আমারও না হয় ভাবা যাবে। এখন অবসর নেই।

" ... ঘাসের ভিতরে নীল শাদা ফুল ফোটে হেমন্তরাগে;
সময়ের এই স্থির এক দিক,
তবু স্থিরতর নয়;
প্রতিটি দিনের নতুন জীবাণু আবার স্থাপিত হয় । "
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×