গল্প সিরিজঃ বেগুনী নিয়ন
পর্ব -১ঃ প্রিলুড
হাতের ঘড়িটার শব্দ টিক টিক করছে। রোলেক্স এর রেপ্লিকা, টার্গেট থেকে ৯ ডলারে কেনা সস্তা ঘড়ি, ১ম বার দেখে বোঝার কোন উপায়ই নাই। নীরবতার মাঝে শব্দটা যেন একটু বেশিই কানে বাজছে। হাতটা সামনে বাড়িয়ে স্টিয়ারিং এর কাছে নিয়ে দেখে নিলাম, রাত ৯টা বেজে ২০ মিনিট। হুম, কাছাকাছি।
গাড়ীর ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার, রাস্তার পাশের বড় একটা স্ট্রিপ মলের বাউন্ডারির পার্কিং লটের চিপায় পার্ক করেছি। এই স্ট্রিপের মধ্যে দোকান ৩টা, ৩টাই বন্ধ, পার্কিং লটে কোন বাতি জ্বলা নেই।
তবে একটা মুশকিল আছে। বাতিগুলা সব মোশন সেন্সর। হূট করে জ্বলে উঠে। রাস্তার ঐপাশের ওয়ারহাউজ থেকে কেউ যদি এদিকে তাকায়, হুট করে যদি তখন এই ল্টে বাতি জ্বলে, অহেতুক এট্রাকশন ড্র করা হবে। তবে সেই রিস্ক নিতেই হচ্ছে।
তবে গাড়ীতে চুপচাপ হাউড আউটে শান্তি আছে এইটুকুই, লেগ স্পেস অনেক। অল্ড রিলায়েবল ফোর্ড ক্রাউন ভিক্টোরিয়া, "ক্রাউন ভিক" বললেই একনামে সবাই চেনে।
ভারি V-8 ইঞ্জিন, সিম্পল ফ্রেমের গাড়ী, ইঞ্জিনের পাওয়ার দারুন।
বিশাল সময় ধরে ডজন ডজন পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এ ফেইথফুলি এই গাড়ীটা সার্ভ করেছে এইজন্যই।
যেটাতে বসে আছি, আমার এই গাড়ীটাও প্রাক্তন পুলিশ ক্রুজারই ছিল।
এই গাড়ী নিয়ে এখানে আজকে রাতে বসে থাকার অন্যতম কারন এটাও।
পাশের প্যাসেঞ্জার সিটে রাখা জিনিষটা হাতে তুলে নিয়ে আলতো করে আদর করলাম। DJI ফ্যান্টম এর ড্রোন, ফ্যান্টম ৪। চমৎকার , চমৎকার একটা জিনিষ। অবশ্য কাজ শেষে এটার অবস্থা কি হবে ভাবতে মন খারাপ হচ্ছে। কিছু করার নাই, এত বড় প্ল্যান এর বিশাল অংশ নির্ভর করবে ২০০০ ডলারের এই লোহার পাখিটার উপরে।
আমার কানে লাগানো ব্লু টুথ হেডসেট হটাত জ্যান্ত হয়ে ঊঠল
" চার্লি টিম হেয়ার। প্যাকেজ এইমাত্র ফ্রিওয়ে থেকে এক্সিট নিল"
ভুলেই গেসিলাম ফোনটা কনফারেন্স কল এ দেয়া। অবশ্য সবার ইন্সট্রাকশন ক্লিয়ার, দরকার ছাড়া মেইল মিউট করে রাখবে। একটু হাসলাম, লোপেজ কে এত বকাবকি কইরা অবশেষে আলফা ব্রাভো চার্লি বলাতে পারছি।
আলফা ব্রাভো চার্লি ডেল্টা ব্লা ব্লা ব্লা এই স্টাইলে আর কিছুই না, এ বি সি ডি এর কোড বলা আর কি। মিলিটারি স্টাইলে ফাপড়। ফোনে হলেও, সিকিউড়িটির খাতিরে জোড় করছিলাম লোপেজ যেন নাম ধরে না ডেকে এইটা বলে। লোপেজ হল টিম সি, মানে চার্লি। আমি টিম ব্রাভো। টিম আলফা হল পিটার।
কানে লাগানো ব্লু টুথ হেডসেট আবার জ্যান্ত হয়ে ঊঠল
" প্যাকেজ খোয়াড়ে আসলো বলে। ETA ৭-১০ মিনিট। আরো ৩টা সিগনাল ক্রস করলেই দেখতে পারা উচিত। আমি সেকেণ্ড সিগন্যালে গিয়ে পাশের সেভেন ইলেভেনে ঢুকে পড়বো। "
ঐতো। দেখা যাচ্ছে ।
কনভয় আসছে।
সামনে একটা ফোর্ড রেঞ্জার ট্রাক, মিড সাইজ, নীল রং এর । ফোর্ডের পিছে আস্ত একটা ১৮ হুইলার ট্রাক।
আর অনেক খানি দুরত্ব বজায় রেখে, আরেক জোড়া জ্বলজ্বলে নতুন এলইডি হেডলাইট দেখা যায়।।
এই এরিয়া এই রাস্তায় একেবারেই বেমানান। ঝকঝকে সিল্ভার কালারের অডি Q7 এসইউভি. দূর থেকে শুধু হেডলাইট আর রেডিয়েটর গ্রিল দেখা গেলেও, শিরদাড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল।
এইটাই। এই গাড়ীর হুইলের পিছে বসে থাকা শয়তানটাই। খাদেম মির্জা।
(চলবে )
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৫৫