somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চারদিনের সিলেট ভ্রমণ

১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শনির হাওড়, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ

প্ল্যান করি এক, আর হয় আরেক। দক্ষিণে যেতে চাইলে উত্তরে যাই। এবারের ভ্রমণের ক্ষেত্রেও তাই। যেতে চাইলাম বান্দরবান আর ঘুরে এলাম সিলেট। সিলেট ভ্রমণের সেই গল্পটাই নাহয় বলা যাক। চারদিনের একাকী ভ্রমণ, আবারো ‘সলো-ট্র্যাভেল’।

অক্টোবরের ৪ তারিখ রাত ১০ টার ট্রেন। বিমান বন্দর স্টেশন থেকে উঠব। বাংলাদেশ রেলওয়ে ইতিহাসে এ এক অবিস্মরণীয় দিন কারণ ট্রেন যথাসময়ে স্টেশনে হাজির। আমি বাকবাকুম করতে করতে ট্রেনে উঠলাম। তারপর নিজের আসন খুঁজে নিয়ে বসে পড়লাম। শোভন চেয়ার। কিন্তু চেয়ারে বসেই বুঝতে পারলাম এটা মোটেও শোভন নয়। এমন গায়ে গায়ে সিট লাগানো যে ঠিকমত পা মেলা যায় না, ঘুমানো তো দূর কি বাত। যাহোক, আল্লা-খোদার নাম নিয়ে রওয়ানা হলাম। ট্রেনে ঘুমানোর অবিরাম চেষ্টা করতে করতে আর মশার ভালোবাসা গায়ে মাখতে মাখতে একসময় যখন সিলেট স্টেশনে পৌঁছালাম তখন ভোর পাঁচটা।

ভোর সময়টা দিনের সবচেয়ে সুন্দর সময়। প্রকৃতি খুব শান্ত আর সজীব থাকে। আমি স্টেশন থেকে বেরিয়ে গুগল ম্যাপে নিকটবর্তী হোটেলের নাম দিয়ে ডিরেকশন দেখে হাটতে শুরু করলাম। প্রথমেই পথে পড়ল সুরমা নদীর (সরু খাল বলাই শ্রেয়) উপর নির্মিত ক্বীন ব্রিজ (Keane Bridge)। ব্রিজ পার হয়ে কোর্ট পয়েন্ট থেকে বামে তালতলা রোড ধরে এগোতে থাকলাম। প্রথম যে হোটেলটাতে ঢু মারলাম তার নাম ‘হোটেল গুলশান’। সিঙ্গেল রুম আছে কিনা জিজ্ঞাসা করাতে ভদ্রলোক বোধহয় মাইন্ড করলেন। বললেন যে আছে একটা চারতলাতে। আমি বললাম, ঠিক আছে। রুমটা একটু দেখি, পছন্দ হলে এখনই উঠব। আমার এই কথা ভদ্রলোকের পছন্দ হলো না। উনি বললেন, দেখানো যাবে না। রুম খুব ভালো। উঠলে উঠে পড়েন। যাহোক, পাত্রী না দেখে বিয়ে করার মত রুম না দেখে ভাড়া নেয়ার রিস্ক আর নিলাম না। অগত্যা, আরো দুটো তিনটা হোটেলে খোঁজ খবর নিয়ে শেষমেশ ‘হোটেল ইস্ট এন্ড (Hotel East End) -এ উঠে পড়লাম। ভাড়ার কথা শুনলে আপনাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে, তবুও বলি – ভাড়া মাত্র ২৫০ টাকা। সিঙ্গেল রুম উইথআউট টিভি। যাহোক, আমি প্রথমে ভাবলাম ভুল শুনছি। তাই দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করে ভাড়া নিশ্চিত হলাম। রুমটাও ভালো। তাছাড়া আমার তো শুধুমাত্র রাতটা ঘুমানোর মত ব্যবস্থা হলেই চলে আর কি। এ হোটেলটা ‘হোটেল হিলটাউন’ এর ঠিক বিপরীতে।



সিলেটঃ ১ম দিন

যে যে জায়গাতে গেলাম
• লাক্কাতুরা চা বাগান
• হযরত শাহ জালাল (রঃ) এর মাজার শরীফ


লাক্কাতুরা চা বাগান

ট্রেনের ধকল সামলাতে হোটেলে উঠে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হতে হতে প্রায় বেলা বারোটা বেজে গেল। কিছুদূর হাঁটাহাঁটি করে একটা রিকশা নিলাম। গন্তব্য লাক্কাতুরা চা বাগান। এটা খুব কাছেই আম্বারখানা পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৫-২০ মিনিটের রাস্তা। কিছুক্ষণের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। ততক্ষণে জুম্মার আযান হয়ে গেছে। আমি পাশের চৌকিঢেকী বাজারের এক হোটেলে ঢুকে ভাত খেয়ে নিলাম। তারপর জুম্মার নামায আদায় করে ঢুকে পড়লাম ‘লাক্কাতুরা টি স্টেট’– এ। গেট দিয়ে ঢুকতে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলো না। আমিও প্রবল ভাব নিয়ে ঢুকে পড়লাম যেন আমারই চা-বাগান, সবকিছু ঠিকঠাক চলতেছে কিনা দেখতে আসছি।

গেট দিয়ে ঢুকে সামনে কিছুদূর যেতেই হাতের ডানে চা প্রসেসিং জোন। এখানে ড্রায়ার দিয়ে চাপাতা শুকিয়ে প্রসেসিং এর জন্য ভেতরের মেশিনে পাঠানো হচ্ছে। এখান থেকে একটু সামনে এগিয়ে ডান দিয়ে চলে গিয়ে মূল বাগানে প্রবেশ করলাম। দু’পাশে চা-বাগান মাঝদিয়ে সরু পিচঢালা রোড। চারিদিকে সবুজের সমারোহ। চোখভর্তি সবুজ। মন ভরে যায়। চারপাশটা খুব নির্জন। রাস্তায় তখন আমিই একমাত্র হাঁটা-বাবা। হাঁটছি আর মোবাইলে ছবি তুলছি। একসময় খেয়াল করলাম এত যে হাঁটছি তবু রাস্তা আর শেষ হচ্ছে না। লাক্কাতুরা চা-বাগানের আয়তন বিশাল। প্রায় ৩২০০ একর। অনেকদূর গিয়ে দেখলাম ডানদিকে একটা কাঁচা রাস্তা চলে গেছে। সেদিকে কিছুদূর এগোতেই চোখে পড়ল অনেক নারী শ্রমিক চা-পাতা তুলছে। চা-পাতা তোলার এ কাজটি মূলত নারীরাই করে থাকেন। আমি তাদের দু-একজনের সাথে কথা বললাম।

চা-পাতা তোলার কাজ করতে হয় সকাল থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত। ঠিকঠাকমতো কাজ করলে এক একজন নারী শ্রমিক সপ্তাহে ৭১৪ টাকা পান। তার মানে দিনপ্রতি মাত্র ১০২ টাকা। তাদের অমানসিক পরিশ্রমের তুলনায় এটা কোনো টাকাই না। মনটা খারাপ হলো তাদের জীবনযাপনের গল্প শুনে।

দুটি পাতা একটি কুঁড়ির রাজ্য থেকে ফেরার পথে এক রাস্তার বাঁকে তিন দস্যি ছেলের দেখা পেলাম। নাম উজ্জ্বল, সৈকত আর সাগর। তারা টিলার ঢাল বেয়ে সরু ঝিরিতে মাছ ধরছে। তাদের গায়ে-চোখে-মুখে কাদা লেগে আছে। ওদের সাথে অনেক কথা বললাম। উজ্জ্বল ক্লাস সেভেনে পড়ে। খুব চটপটে ছেলে। সৈকত আর সাগর দুজনেই পড়ে ক্লাস ফোরে। তাদের ছবি তুলতে চাইলে, তারা খুব আগ্রহের সাথে পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। ওদের সবার মা চা-বাগানে কাজ করে। ওরা ইউসেপ(UCEP) এর একটি স্কুলে পড়ে। আর স্কুল শেষে চা-বাগানে দস্যিপনা করে। আবার বিকাল হলে ক্রিকেটও খেলে। উজ্জ্বল বেশ ভালো ইংরেজি বলতে পারে। চা-বাগানের রাস্তায় রিজার্ভ পানির লরি গেলে ওরা সবাই ড্রাইভারের দিকে হাত বাড়িয়ে চিৎকার দিয়ে বলে, গিভ আস ওয়াটার। ওয়াটার, ওয়াটার, ওয়াটার, নিড ওয়াটার আর হো হো অট্টহাসি। কখনো পিকআপের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে পিকআপ ধরে ঝুলে পড়ে। বুঝলাম ওরা হলো ‘পাইরেটস ওফ দ্যা চা-বাগান’। ঢাকা শহরে এরকম বাঁধনহারা শৈশব তো দেখি না। লাক্কাতুরা চা-বাগানে এসে পুরোনো গ্রামীন শৈশবের এক ঝলক দেখতে পেলাম। আহা।


হযরত শাহ জালাল (রঃ) এর মাজার শরীফ

লাক্কাতুরা চা বাগান ভ্রমণ শেষে বিকেলে গেলাম হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজার শরীফে। মাজার সংলগ্ন মসজিদে আসরের নামায আদায় করলাম। দেখলাম মাজার প্রাঙ্গণে হাজারো নারী-পুরুষের ভিড়। জটাধারীও আছেন কয়েকজন। মাজারকে কেন্দ্র করে এদেশে যা হয় আর কি। নারীদের জন্য আলাদা জায়গা করা আছে ডানদিকে। ৩৬০ আউলিয়ার শিরোমণি ঘুমিয়ে আছেন যেখানে সেখানেও তাকে নিয়ে রমরমা ব্যবসা। মাজারের উপর ভক্তরা গোলাপজল ছিটিয়ে দিচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর। আবার দেখলাম দু’জন লোক দাঁড়িয়ে আছেন দর্শনার্থীদের থেকে পাওয়া টাকা সংগ্রহ করার জন্য।

প্রাঙ্গণে এক জায়গায় ছোট্ট করে ঘিরে রাখা। সেখানে ধান ছিটানো আছে। জালালী কবুতর উড়ে উড়ে সেই ধানের উপর এসে বসছে। আবার খেয়েদেয়ে উড়ে যাচ্ছে পাশের ভবনে ওদের বাসায়। কবুতরের এই খাদ্যগ্রহণের দৃশ্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। এখানে অনেক ভক্তরা এসে মানত করে কবুতর ছাড়েন। তাদের উদ্দেশ্যে লেখা আছে ‘এখানে জালালী কবুতর ছাড়া অন্য কবুতর ছাড়া নিষেধ’।

মাজার শরীফ থেকে বের হয়ে রাস্তায় রাস্তায় হাঁটছি এমন সময় পার্থ ভাই ফোন দিলেন। পার্থ ভাই পেশায় ব্যাংকার কিন্তু মনে প্রাণে লোকগবেষক ও সাহিত্যিক। তার সাথে দেখা হলো সিলেট সিটি সেন্টারের সামনে। তার বাইকে করে চলে গেলাম কাজীর বাজার ব্রিজ। যাওয়ার পথে সালমান শাহ – এর বাড়ির সামনে দিয়ে একটু চক্কর দিয়ে গেলাম। ব্রিজের ধারে বসে অনেক গল্প হলো পার্থ ভাইয়ের সাথে। তারপর সাম্পান রেস্টুরেন্টে গিয়ে চা-পানি খেয়ে বিদায় নিলাম।

সাম্পান রেস্টুরেন্টটা বেশ পছন্দ হয়েছে আমার। ভীড় মোটামুটি কম আর খাবারের মানও ভালো। পরে পানসী রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম। কিন্তু এত ভিড় যে কোনরকমে জান নিয়ে বের হয়ে এসেছি।


সিলেটঃ ২য় দিন

যে যে জায়গাতে গেলাম
• জাফলং

জাফলং

দ্বিতীয় দিন ঘুরে এলাম জাফলং। সিলেট থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে। সিলেট শিশুপার্কের সামনে থেকে লেগুনা যায়। ভাড়া ১০০ টাকা। আমি একটা লেগুনায় উঠে বসলাম। কিন্তু লেগুনা নড়ে না চড়ে না। বললাম, কি ব্যাপার? যাবে, নাকি নেমে যাব? হেলপার বললো, এইতো এক্ষুণি যাব, আর পাঁচ মিনিট। আধাঘন্টা চলে যায় কিন্তু সেই বিখ্যাত ‘পাঁচ’ মিনিট আর শেষ হয় না। যাহোক, অনেক সময় খেয়ে অবশেষে ১০ জন যাত্রী নিয়ে লেগুনা চলা শুরু করলো। দেখলাম, যে ভদ্রলোক এতক্ষণ হেলপার হয়ে যাত্রী ডেকেছে, সেই আসলে ড্রাইভার। আমি মনে মনে বললাম, কেয়া বাত! একের ভেতর দুই। কিছুদূর যেতেই লেগুনার মাথা গরম হয়ে গেল। দেখলাম লেগুনা এক পাশে দাড় করিয়ে ড্রাইভার ভদ্রলোক পানি নিয়ে ইঞ্জিনে ঢালছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, মামা, তুমি তো দেখি একের ভেতর সব। হেলপার কাম ড্রাইভার কাম মেকানিক। বেচারা মুচকি হেসে কিছুক্ষণ গ্যা-গো করে আবার গাড়ি চালাতে মন দিল। সারিঘাট পর্যন্ত রাস্তা মোটামুটি ভালোই। সারিঘাট থেকে লালাখাল যাওয়া যায়। এখান থেকে মাত্র ৭ কিমি দূরে। সারিঘাট এর পরেই শুরু হলো ভাঙ্গাচুরা রাস্তায় ধুলার পুলসিরাত। সে পুলসিরাত আর শেষ হয় না। আমাদের সবার শরীরে ধুলার এক ইঞ্চি পুরু স্তর পড়ে গেল। লক্করঝক্কর করতে করতে অবশেষে জাফলং জিরো পয়েন্ট পৌছালাম। লেগুনা থেকে নেমে ধুলো ঝেড়ে হাত-পা-মুখ ধুয়ে নিলাম। তখন বেলা দেড়টার মত বাজে। আমি দুই গ্লাস লেবুর শরবত খেয়ে জাফলং এর ছবি তুলতে লেগে গেলাম। অদূরে মেঘলয় রাজ্যের পাহাড়। পাহাড়ের মাথায় কিছু বাড়িঘর।

যদিও এখন জাফলং ভ্রমণের উপযুক্ত সময় নয়। বর্ষাকালেই জাফলং এর রূপ পুরোপুরি খোলে। তবুও খুব একটা খারাপ লাগলো না। যাহোক, আমি ট্রাইপডে মোবাইল সেট করে ছবি তুলছি। এমন সময় দেখি এক উৎসাহী ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকে কাছে ডাকলাম। আলাপে জানলাম তার নাম ইমরান। ভাগ্যিস নামের শেষে ‘হাশমী’ নেই। ভদ্রলোক মিনিট্রাক চালান। তারা প্রায় ৬০ জনের মতো এসেছেন এখানে পিকনিকে। আরো অনেক কথা হলো। শেষে ওই ভদ্রলোকসহ আরো অনেকের সাথে ফটোসেশন সেরে আমি জাফলং এর পানিতে নেমে পড়লাম। এর মধ্যে আছেন মাছ ব্যবসায়ী সেকেন্দার ভাই ও তার দল। আমরা হাত উচিয়ে ছবি তুললাম কয়েকটা।

জাফলং - এ পানি অল্প থাকলেও স্বচ্ছ আর ঠান্ডা পানি ছুঁয়ে মন আনন্দে ভরে উঠল। আমি পাড়ে রাখা নৌকায় পানিতে পা ঝুলিয়ে বসে থাকলাম। নদী থেকে অনেকেই পাথর উত্তোলন করছে। এদের মধ্যে ছোট ছোট শিশুরাও আছে। বুঝলাম, সরকার লোডশেডিং (!) এর মত শিশুশ্রমকে এখনো জাদুঘরে পাঠাতে পারে নাই। ওদের কয়েকজনের সাথে ভাব জমিয়ে আমিও পাথর তোলার কাজটা শিখে নিলাম। ওরা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পাথর তুলে প্রত্যেকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় করে। ওখানে একটা ছোট মেয়েকে দেখলাম হাতে গ্লাস আর জগ নিয়ে খাবার পানি বিক্রি করছে। ওর কাছে শুনলাম, ওর বাবার চোখে পাথর পড়েছে, তাই মেয়েকে রোজগার করতে পাঠিয়েছে। ছোট মেয়েটার করুণ মুখে যে অসহায়ত্ব ফুটে উঠল কথা বলার সময়, তাতে করে মনটা খুব বিষণ্ণ হয়ে গেল।

জাফলং থেকে ফেরার পথে গেটলক বাসে উঠলাম। বাস ছাড়ল সাড়ে চারটার সময়। সিলেট পৌছাতে পৌছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সোজা হোটেলে গেলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে সিলেটের রাস্তায় রাস্তায় হেঁটে বেড়ালাম অনেক রাত পর্যন্ত।

সিলেটঃ ৩য় দিন

যে যে জায়গাতে গেলাম
• তাহিরপুর, টাংগুয়ার হাওড়, শনির হাওড়
• যাদুকাটা নদী, লাউড়ের গড়
• বারিক্কা টিলা, নিলাদ্রি, শিমুলবাগান

তাহিরপুর, টাংগুয়ার হাওড়, শনির হাওড়

জাফলং থেকে ফিরে ওইদিন রাতেই ঠিক করে রেখেছিলাম যে সুনামগঞ্জের টাংগুয়ার হাওড় যাব। সুতরাং খুব ভোরে উঠে বেরিয়ে পড়তে হবে। যে কথা সেই কাজ। আদার-ব্যাপারী ওয়েবসাইটে সুনামগঞ্জের কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে নিয়ে ঘুমুতে গেলাম। সকাল ৬ টায় বহুকষ্টে ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়লাম সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে। সিএনজি নিয়ে বাস কাউন্টারে গিয়ে সুনামগঞ্জের গেটলক বাসে উঠে বসলাম। গাড়ি ছাড়ল প্রায় সাড়ে ৭ টার সময়। ড্রাইভারের অসাধারণ নৈপুণ্যে মাত্র দেড় ঘন্টায় পৌঁছে গেলাম সুনামগঞ্জ। সুনামগঞ্জ নাম শুনলেই হাসন রাজা আর বাউল সম্রাট আবদুল করিমের কথা মনে পড়ে।

বাস থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে তাহিরপুরের সিএনজিতে বসলাম। বসে আছি তো আছিই, সিএনজি আর ছাড়ে না। ন্যূনতম পাঁচজন না হলে ছাড়বে না। কি আর করা। অবশেষে প্রায় সাড়ে দশটার দিকে ড্রাইভারের সুমতি হলো। ততক্ষণে অবশ্য পাঁচজন প্যাসেঞ্জার হয়ে গেছে। আমরা চলতে শুরু করলাম তাহিরপুরের উদ্দেশ্যে। কিছুদূর যেতেই শুরু হলো ড্রাইভার সাহেবের বকবক। এইরকম ম্যারাথন কথা বলা লোক আমি জীবনে খুব কমই দেখছি। দুনিয়ার হেন বিষয় নাই, যা নিয়ে সে বকবক করতে না পারে। আমি উৎসাহ দিচ্ছিলাম না দেখে সে তার পাশের যাত্রীর সাথে সমানে বকেই চলেছে। বেচারা ড্রাইভারের বকবক শুনতে শুনতে একসময় তাহিরপুরে পৌঁছে গেলাম। দেখলাম ঘড়িতে তখন দুপুর সোয়া বারোটা।

সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর যাওয়ার এই পথটা অত্যন্ত মনোরম। রাস্তার দুপাশে সবুজ ধানক্ষেত। বিশ্বম্ভরপুর বাজার এর এদিকটায় রাস্তার দুপাশে লক্ষ লক্ষ লাল শাপলা ফুটে আছে। সে এক অসাধারণ দৃশ্য।

তাহিরপুর পৌঁছে প্রথমে বাজারটা ঘুরে একটা হোটেলে হালকা নাস্তা করে চলে গেলাম হাওড়ের পাড়ে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দেখি এক মধ্যবয়সী মাঝি নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য রওনা দিচ্ছে। ডাক দিয়ে বললাম, চাচা আমিও যাই আপনার সাথে, হাওড়ে খানিক্ষণ ঘুরে আসি। মাঝি চাচা জানালেন যে তার ফিরতে ফিরতে বিকেল হতে পারে। আমি বললাম, সমস্যা নেই। আমার কোনো তাড়া নেই। মাঝি চাচা রাজি হয়ে গেলেন। ব্যাস! খুশিতে বাকবাকুম করতে করতে আমি নৌকায় উঠে বসলাম। ছইবিহীন বৈঠাওয়ালা ছোট্ট নৌকা। একটু নড়াচড়া করলেই দুলে ওঠে। কথায় কথায় জানলাম, চাচার নাম ইমামুল। তিনি সারাদিন মাছ ধরে তাহিরপুর বাজারে বিক্রি করেন। এতে করে দিনে চারশ থেকে পাঁচশ টাকা আয় হয় প্রতিদিন। এতেই তার সংসার চলে।

চাচা আমাকে সাথে নিয়ে হাওড়ে অনেকটা দূর গিয়ে তার কারেন্ট জাল পাতা শুরু করলেন। বিশাল লম্বা জাল। পুরো জাল পাততে পাততেই প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট লেগে যায়। এদিকে আকাশে প্রচণ্ড রোদ। আমি ব্যাগ থেকে সানস্ক্রিন ক্রিম নিয়ে আচ্ছা করে মুখে মেখে নিলাম। তারপর মাথার উপর গামছা মেলে তাপ থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে থাকলাম। অবশ্য হাওড়ে যথেষ্ট বাতাস থাকার কারণে তাপের পরিমান মোটামুটি সহনীয়ই ছিল।

হাওড়ের বাতাস সত্যিই অপূর্ব। মাঝে মাঝে পানকৌড়ি উড়ে যাচ্ছে। একপাড়ে দেখলাম অনেকগুলো হাঁস দলবেধে কূলের দিকে যাচ্ছে। হাওড়ের মাঝে একসারিতে অনেকগুলো বড় বড় গাছ। চাচা জাল ফেলা শেষ করলে আমরা সেই গাছের ছায়ায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম করলাম।

চাচার সাথে নানান বিষয়ে গল্প করতে করতে যখন বুঝলাম বেশ খানিকটা ভাব জমে গেছে তখন ঝোপ বুঝে কোপ মারলাম। বললাম, চাচা, যদি কিছু মনে না করেন তাহলে মাছ ধরে যে ক’টা পাবেন তা আমি দিয়ে দেই, আপনি আমাকে হাওড়টা ঘুরিয়ে দেখান। চাচা তখন জালে মাছ পড়েছে কিনা দেখায় ব্যস্ত। কিছুদূর পর পর জালে সরু লম্বা মাথার কাকিলা মাছ পড়ছে। যাহোক, চাচা আমার কথায় রাজি হলেন। বললেন, আরে আরো আগে এই কথা বললেই তো আমি এদিকে জাল ফেলতাম না। ওইদিকে জাল ফেলে আপনারে ঘুরাই নিয়াসতাম। আমি বললাম সমস্যা নাই, চলেন এখনো অনেক সময় আছে।

ইমামুল চাচা জাল গুটিয়ে আমাকে নিয়ে হাওড়ে ঘুরতে শুরু করলেন। টাংগুয়ার হাওড় খানিকটা ছুঁয়ে আমরা শনির হাওড়ে ঘুরতে থাকলাম। দূরে শাপলার অস্তিত্ব দেখতে পেয়ে চাচাকে বললাম শাপলার ভেতরে নিয়ে যেতে। দুপুর বলে শাপলা ফুল সব বুজে আছে। চাচা বলল, সকালে সব শাপলা ফুটে যায়গাটা শাদা হয়ে যায়। দেখতে খুব ভালো লাগে। আমি যদি রাতে তাহিরপুর থাকি তাহলে পরদিন ভোরে আমাকে তিনি শাপলা দেখতে নিয়ে আসবেন এখানে। আমি বললাম, আচ্ছা আমি থাকলে আপনাকে জানাবো সন্ধ্যায়। চাচাকে সন্ধায় কোথায় পাওয়া যাবে জেনে নিয়ে হাওড় ঘোরা শেষে যখন পাড়ে উঠে এলাম তখন বেলা প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে।


যাদুকাটা নদী, লাউড়ের গড়

লাউড়ের গড় আর শাহ আরেফিনের মোকাম যেতে তাহিরপুর বাজার থেকে মোটরসাইকেল নিতে হয়। যাওয়ার ভাড়া ২০০ টাকা। আমি একটা মোটরসাইকেল ঠিক করে উঠে বসলাম। ড্রাইভার ভদ্রলোক মধ্যবয়সী। নাম সুজন। তার দুই ছেলে আর দুই মেয়ে। বড় ছেলে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে তিন বছর হলো তার মতো মোটরসাইকেল চালায়। বড় মেয়েটা ইন্টারমিডিয়েট-এ পড়ে। ভদ্রলোক ছেলেকে নিয়ে হতাশা আর মেয়েকে নিয়ে আশার বানী শোনালেন। আমিও উৎসাহ দিলাম যাতে মেয়েটাকে ঠিকমতো পড়াশোনা করায়। আর চাকরিবাকরি করার আগেই যেন বিয়ে না দিয়ে দেয়। আমার কথা শুনে ভদ্রলোক বললেন, গ্রামে এক ছেলে নাকি মেয়েটাকে রাস্তায় উত্যক্ত করতেছে কিছুদিন যাবত। সেই ছেলের বাবা নাকি বিয়ের প্রস্তাবও পাঠিয়েছে। আমি এই বিষয়টা গুরুত্বের সাথে দেখতে বললাম। বললাম, আপনি ছেলের বাবার সাথে খোলাখুলি কথা বলেন আর প্রয়োজনে ওর কলেজের স্যারদেরও বিষয়টা জানিয়ে রাখেন। তবুও এইসব চাপে নিজেরে দায়মুক্ত করতে মেয়েকে যেন বিয়ে দিয়ে দিয়েন না। মেয়েটাতো আর আপনার কাছে বোঝা না তাই না? সুজন ভাইও অবশ্য চান মেয়েটাকে পড়াশোনা করাতে। মেয়েটার ব্রেন নাকি খুব ভালো, শুধুমাত্র গণিতে কিছুটা দূর্বল।

তাহিরপুর থেকে লাউড়ের গড় যেতে গেলে যাদুকাটা নদী পার হয়ে যেতে হয়। আর যাদুকাটা নদীটা অত্যন্ত মনোহর। তবে সর্বভূক মানুষজন নদী থেকে ক্রমাগত ভটরভটর শব্দ করে বালু আর পাথর তুলছে তো তুলছেই। নদীটাকে গিলে না খাওয়া পর্যন্ত তাদের স্বস্তি নেই। মোটরসাইকেলসহ নৌকা পার হয়ে আমরা মিনিট পাঁচেকের মধ্যে লাউড়ের গড় গ্রামে পৌছালাম। এটা ভারতের সীমান্তবর্তী একটি সুন্দর গ্রাম। এখানে শাহ আরেফিনের মোকাম থেকে ঘুরে এলাম যেখানে প্রতি বছর তিনদিন ব্যাপি শাহ আরেফিনের মেলা হয়। এ মোকামের পেছনেই দেখা যাচ্ছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের অনুচ্চ পাহাড়শ্রেণি।


বারিক্কা টিলা, নিলাদ্রি, শিমুলবাগান

লাউড়ের গড় দেখে আমরা গেলাম বারিক্কা টিলাতে। লাউড়ের গড় থেকে খুব কাছেই। নদীর এপার ওপার। ওখান থেকে ভারতের পাহাড়গুলোর খুব সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। বারিক্কা টিলাতে খুব বেশি সময় থাকিনি। কারণ সন্ধ্যা হয়ে যাবে দ্রুতই। তাই আমরা নিলাদ্রি দেখতে ছুটলাম। নিলাদ্রি টেকেরঘাট-এ অবস্থিত। এটি আসলে একটি পরিত্যাক্ত চুনাপাথরখনি। আর তার পাশের ছোট একটি লেক। লেকের চারপাশে ছোট-বড় টিলা আছে যা পুরোটা সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়া। বিকেল কাটানোর জন্য বেশ ভালো একটা জায়গা। বারিক্কা টিলা থেকে নিলাদ্রি যাবার পথটাও সবুজের চাদরে মোড়ানো। একপাশে পাহাড় একপাশে সবুজের সমারোহ। নিলাদ্রি থেকে ফেরার পথে আমরা বিখাত শিমুলবাগান এর পথ ধরে ফিরলাম। যদিও ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে গেছে তাই শিমুল বাগানের বাইরে থেকে উঁকি দিয়েই ক্ষান্ত দিয়েছি।

ঘোরাঘুরি শেষ করে আবার তাহিরপুরে ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত ৮ টার কাছাকাছি। তারপর তাহিরপুরের দি হোটেল টাংগুয়া ইন – এ একটা সিঙ্গেল রুম নিলাম। ফ্রেশ হয়ে বাজারে বের হলাম ইমামুল চাচার সন্ধানে। দু’একটা দোকান ঘুরে উনার নাম্বার জোগাড় করে উনাকে জানিয়ে রাখলাম যে কাল সকালে ফজরের পর হাওড়ে ঘুরতে বের হব।

সিলেটঃ ৪র্থ দিন

যে যে জায়গাতে গেলাম
• শনির হাওড় (ভোরে শাপলা ফুল আর মাছ ধরা দেখা)
• সিলেটের রাস্তায় রাস্তায়


শনির হাওড় (ভোরে শাপলা ফুল আর মাছ ধরা দেখা)

ভোরে ওঠা আমার স্বাভাবিক কর্মের মধ্যে পড়ে না, তাই কয়েকটা এলার্ম দিয়ে তবেই রাতে ঘুমাতে গেলাম। যথাসময়ে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ফজরের আযানের কিছুক্ষণ পর বের হলাম। তখনও আবছা অন্ধকার। কাছের মসজিদে জামাত শুরু হয়নি। আমি ওযু করে নামায পড়ে নিলাম। এতে করে ঘুম ঘুম ভাবটাও কেটে গেল।

নামায শেষে ইমামুল চাচাকে মসজিদে খুজে না পেয়ে হাওড়ে যেখানে উনার নৌকা থাকে সেদিকে হাটা দিলাম। কিছুদির যেতেই দেখি তিনিও হাসিমুখে আমার দিকে আসছেন। তো আর কি! উঠে পড়লাম নৌকায়। বলা বাহুল্য, এর আগে এত ভোরে নৌকায় চড়ে কখনো শাপলা দেখতে যাইনি। অনিন্দ্যসুন্দর এক অনুভূতি হলো। সকলের বাতাসটাও অসম্ভবরকম স্নিগ্ধ। একদম মন ভরিয়ে দেয়। চাচা বললেন, এইটা পুবালী বাও। 'পুবালী বাতাসে' গানটাও মনে পড়ে গেল।

চাচা নৌকা নিয়ে ফুটন্ত শাপলার ভেতর নিয়ে গেলেন। শাদা শাপলার সমাহার। কোথাও কোথাও দু একটা লাল শাপলা। শাপলার ফুলে পাতায় ফড়িং উড়ে বেড়াচ্ছে। এখানে ওখানে দু'একটা মাছ পানিতে বাড়ি মারছে। শাপলা দেখা শেষ করে কারেন্ট জালে মাছ পড়েছে কিনা দেখতে গেলাম। ইমামুল চাচা জাল দেখে দেখে মাছ রাখছেন নৌকার ভেতরের পাত্রে। বেশিরভাগ চাপিলা, পুটি, এই জাতীয় মাছ। সকালের দিকে এগুলোই পড়ে। একেকে ভাগা ৫০ টাকা করে বিক্রি করেন ইমামুল চাচা। এদিকে সকালের সূর্য উঁকি দিচ্ছে পূবাকাশে। জানান দিচ্ছে একটি দিনের আগমনী বার্তা। দূরে দেখা যাচ্ছে আমাদের মতো আরো কিছু নৌকা মাছ ধরতে নেমে গেছে। সূর্যের সোনা রঙ পানিতে খেলায় মেতে উঠছে। সব মিলিয়ে সকালে হাওড়ে ঘোরার এই সময়টা ছিল সবচেয়ে সুন্দর।


সিলেটের রাস্তায় রাস্তায়

শাপলা দেখা, মাছ ধরা সব শেষ করে তাহিরপুর থেকে সুনামগঞ্জ এলাম। সেখান থেকে সোজা সিলেট। ততক্ষণে সূর্য মধ্যগগনে। বাকি দিনটা আর তেমন কোথাও যাইনি। বাজারে বাজারে হেটে বেড়িয়েছি। রেল স্টেশনে গেলাম ঢাকার টিকিট কাটতে। টিকিট কেটে আসার পথে দেখি ফুটপাতে একটা বেঞ্চে বসে দুটো ছোটো ছেলে ছোলা দিয়ে ভাত খাচ্ছে। আমি কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার নাম কি? ছেলেটা বললো ওর নাম মামুন আর ওর ভাইয়ের নাম ইমন। আমি বললাম, বলো কি ! আমার নামও তো মামুন। জিজ্ঞেস করে জানলাম ওর মা এই অস্থায়ী দোকানের মালিক। দেখলাম খিচুড়ি আর ছোলা রান্না (ছানা) বিক্রি করছে। আমিও এক প্লেট নিয়ে ছেলেটার পাশে বসে খাওয়া শুরু করলাম। খাওয়া শেষ করে ক্বীন ব্রিজের ডান দিকের রোড ধরে হাঁটতে থাকলাম। প্রচণ্ড ব্যস্ত রাস্তা। মানুষ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে বসেছে। বেচাকেনা চলছে হরদম। এটা ওটা স্ট্রিটফুড খেলাম। প্রচণ্ড ঝাল আর লবণযুক্ত পেয়ারা মাখানোও খেলাম। তারপর হাটি হাটি পায়ে হোটেলে ফিরে বিশ্রাম নিলাম।

বিকালে আবার বের হলাম সিলেটের রাস্তায় রাস্তায়। জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, মীরা বাজার, মির্জাজাংগাল, তালতলা রোড, আরো কত কত জায়গা।

সন্ধ্যার দিকে আম্মু ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলো আমি কি করছি। বললাম, রাস্তায় রাস্তায় হেটে বেড়াচ্ছি। আম্মু হেসে বললো, একা একা হাটতে তোর ভালো লাগে? কী আর বলবো! হাসতে হাসতে বললাম, ভালোই তো লাগতেছে।

এদিকে আমার বন্ধু শুভ ফোন দিয়ে বলল, যেন 'পাঁচ ভাই হোটেল'-এ খাই। ওখানখার খাবার নাকি খুব সুস্বাদু। বন্ধুর অনুরোধের ঢেঁকি গিলতে আমি চলে গেলাম পাঁচভাই রেস্টুরেন্টে। ভাত খাব বলতেই ভাত আর কয়েক পদের ভর্তা এনে হাজির করল। আমি শুধু চিংড়ি ভর্তা আর বরবটি ভাজি নিয়ে বাকি ভর্তা ফেরত দিলাম। কারণ একটা শুটকি ভর্তা যা আমারে লাখ টাকা দিলেও খাবো না। আরেকটা যেন কি ভর্তা ভুলে গেছি। যাহোক, কবুতরের মাংস খেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু না থাকায় ভাবলাম নতুন ধরণের মাংস এক্সপেরিমেন্ট করে দেখি। তাই নিলাম কোয়েল পাখির মাংস। একটা আস্তো রান্না করা কোয়েল পাখি বাটিতে নিয়ে এলো। আমি প্রবল আগ্রহে মাংস ছিঁড়ে মুখে দিলাম। কিন্তু তেমন ভালো লাগলো না। মনে হয় অনভ্যস্ততার কারনে এমন লেগেছে। যাহোক, খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে ফিরলাম। তারপর হোটেলে চেক আউট করে রাত সাড়ে নয়টার দিকে রেলস্টেশনে চলে এলাম। এরপর ট্রেনে উঠে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে আমার চারদিনের সিলেট ভ্রমণের ইতি টানলাম।


ছবিতে ছিলেট ভ্রমণ

১। লাক্কাতুরা চা বাগান






২। হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজার শরীফ





৩। জাফলং






৪। শনির হাওড়, টাংগুয়ার হাওড়









৫। যাদুকাটা নদী, লাউড়ের গড়, বারিক্কা টিলা, নিলাদ্রি








৬। সিলেটের রাস্তায় রাস্তায়






বি দ্রঃ বিছানাকান্দি আর রাতারগুল সম্পর্কে কিছু না থাকায় হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নাই। এই দুইটা জায়গা ক্লিশে হয়ে গেছে। যাওয়ার ইচ্ছাও ছিল কিছুটা কিন্তু পানি তেমন নাই ওদিকে এখন। তাই যাওয়া হয় নি। আশাকরি কোনো এক ভরা বর্ষায় যাব।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:০২
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×