somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওদের জ্ঞান দাও প্রভু,ওদের ক্ষমা করো!

০১ লা মে, ২০০৭ ভোর ৪:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[যারা এখনো রাজাকারদের সংজ্ঞা ও শাস্তি নিয়ে সন্দিহান,লেখাটা তাদের জন্য]
ওরা আমাদের সব ভুলে যেতে বলে। বলে নতুন বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে,পা মিলিয়ে যেতে হবে আমাদেরো। সস্তা আবেগ আর অতীতকে জলাঞ্জলী দিয়ে পূর্বপুরুষদের স্মৃতিকে কবরে রেখে আমাদের আধুনিক হতে হবে।যোদ্ধাদের কবরে পা রেখে পিশাচের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এদেশকে ঠেলে তুলতে হবে অনেক ওপরে,আমাদের সন্তানরা সেই কবরকেও মাটিচাপা দিয়ে হাইটেক বিশ্বে দেশের ভার বয়ে নিয়ে যাবে। তা নিক,ভাবতে ভালোই লাগে। আমরা তো সবাই এই দেশের ভালো চাই,চাওয়াটা শুধুই আলাদা রকমের। ভালো চাইলে আপোষ তো করতেই হবে,দানবের সাথে দেবতাকেও একাসনে বসে একপাতে খেতে হবে।দেবতারা খেয়েছেও,পিশাচের নরকের বাহনে উড়েছে আমাদের দেবলোকের রক্তলাল পতাকা।দেশ আজ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে,পিশাচরাই তো কর্মী,ওরা না থাকলে কি হতো? আমরা খুশি,আমরা বেজায় খুশি,আমরা ভুলে যেতে চাই সব,আমাদের সন্তানদেরো ভুলিয়ে দিতে চাই,ওদের আমরা নতুন বিশ্বের দুধে-ভাতে রাখতে চাই,আবেগ দিয়ে তো পেট ভরে না,দুধ-ভাতও জোটে না। আমাদের দেবতারা বোঝেন সেটা,তাই তাদের সন্তান থাকে অনেক দূরের স্বর্গে,আকাশ থেকে নেমে আসে তারা পুষ্পকরথে করে,আমরা চেয়ে চেয়ে দেখি,মনে মনে ভাবি,হুঁ হুঁ বাবা,একদিন আমরাও,শুধু ভুলে যেতে হবে সব,কঠিন কিছু না।
কিন্তু আমরা বোকা,আমি বোকা। ভুলতে পারিনা আমরা,ভুলতে পারিনা আমাদের পূর্বপুরুষদের,ভুলতে পারিনা আমাদের অতীতকে,শুধুই পেছনে টানে। পেছনে টানে কবরে শুয়ে থাকা ৩০ লক্ষ মানুষের অতৃপ্ত আত্মা,পেছনে টানে ২ লক্ষ মা-বোনের চিতকার। আমরা ভুলতে পারিনা 'একাত্তরের দিনগুলি',আমরা ভুলতে পারিনা 'জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা'দের কথা।আমরা গর্বিত হই পিশাচপুরী থেকে পুষ্পকরথ ছিনিয়ে উড়ে আসা মতিউরের কথা ভেবে,আমরা মাথা উঁচু করে বলি সিপাহী মোস্তফার গল্প। আমরা তো বোকা,ভবিষ্যত দেখার চোখ নেই,অতীত নিয়েই সময় কাটাই। আমরা আবেগী,আমরা বর্বর,তাই আমরা ক্ষমা করতে পারিনা আমাদের ভাইয়ের খুনীকে,আমার দেশকে ছারখার করে দিয়ে যারা অট্টহাসি দিয়েছে,তাদের প্রতি অনন্ত ঘৃণা আমাদের বুকে,প্রতিশোধের আগুন জন্ম-জন্মান্তরে বয়ে বেড়াই আমরা। কিন্তু,প্রশ্ন তবু জাগে,আমরা তো সাচ্চা মুসলমান,আমাদের তো বলা হয়েছে ক্ষমাশীল হতে,আমরা কেন ক্ষমা করবো না? হ্যাঁ,ভাবনার বিষয়। ক্ষমা তো আমি করতেই পারি,কিন্তু আমার ধর্মই তো আমাকে বাধা দেয়। কোথায় যেন শুনেছিলাম,আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে ক্ষমা করেন না যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা ক্ষমা না করে। তাহলে? কি হবে? কবরে শুয়ে থাকা ৩০ লক্ষ মানুষ কি ওদের ক্ষমা করেছে? ওরা কি মাটির নিচ থেকে উঠে এসে বলে গেছে আমাদের আর কোন দাবী নেই,আমরা সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম? আমি কিভাবে ওদের ক্ষমা করবো? যতক্ষণ পর্যন্ত সেই শিশুটি ওদের ক্ষমা না করবে যাকে ওরা বুটের নিচে পিষে মেরেছিল,আমি ওদের ক্ষমা করবোনা। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন যাকে ওরা বেয়নেট দিয়ে খুচিঁয়ে মেরেছিল,অথবা নূর মোহাম্মদ যাকে ওরা অবলীলায় তুলে দিয়েছিল নরপশুদের হাতে,তারা ওদের ক্ষমা না করলে আমি কিভাবে ক্ষমা করি? আমার মা-বোনরা যাদের ওরা হাসতে হাসতে হায়েনার মুখে ছেড়ে দিয়েছিল ছিঁড়ে খাবার জন্য,তারা কি ওদের ক্ষমা করেছে? অথবা আমাদের শিক্ষাগুরুরা,যাদের ১৪ ডিসেম্বরের এক রাতে তাঁদেরই শিষ্যরূপী পিশাচরা তুলে নিয়ে গিয়েছিল,যাদের লাশ এখনো পড়ে আছে কোন এক বধ্যভুমিতে? তাঁরা কি বলেন? কি বলেন শহীদ মুনীর চৌধুরী,কি বলছেন ডাঃ ফজলে রাব্বি,কি বলবেন জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা বা সেলিনা পারভীন? শহীদ আজাদের মা,শহীদ রুমীর মা কি ভাববেন,অথবা বাংলার লক্ষ মা যারা এখনো তাদের সন্তানের আশায় পথ চেয়ে আছেন তারা কি আমাদের অভিশাপ দেবেন? আমি ওদের ক্ষমা করার কে? ওদের তো ক্ষমা করবে কবরের মানুষরা,স্বজনহারা দুঃখীরা,আমি তো না। অত্যাচারিতের কান্নার অভিশাপে জাহান্নামের নিকষ কালো আগুনে আমি পুড়তে চাইনা,আমি ওদের ক্ষমা করবো না। তারপরেও যারা ভুলে যেতে বলে,আমি তাদের অভিশাপ দেবনা,শুধু বলবো--"ওদের জ্ঞান দাও প্রভু,ওদের ক্ষমা করো।"

পুনশ্চ : হেদায়েতে কাজ না হলে ধর্মে তরবারির রাস্তার কথা বলা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৫১
৬৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×