somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফরমালিন সিক্ত শিউলি ফুল

১২ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আজকের ক্লাসগুলো যে কেন এত বোরিং মনে হচ্ছে আল্লাহই জানে।আর জানে আমার মন। আমার তৃষিত কানটা বার বার শুনতে চাচ্ছে ছুটির ঘন্টার টং টং আওয়াজ!!

অবশেষে ঘন্টা বাজল তার মোহময় টং টং শব্দ নিয়ে।আজ পরিচিত আওয়াজটিই আমার কাছে অতি মধুর মন হচ্ছে!কানে যাবার সাথে সাথে যেন মনে হচ্ছে কেউ সুধাবর্ষণ করছে। কারণটা আর কিছু না “অনু” মেয়েটি!!

মেয়েটি থাকলে বিরক্তিকর ঘন্টার শব্দও মনে হয় সুধাময়।মেয়েটির পাশে বসা থাকলে ভ্যাঁপসা গরমেও মনে হয় আমার শরীরে অদৃশ্য এসি চলছে।মেয়েটিকে দেখলে মনে হয় পাবলো পিকাসোর কোন চিত্রকর্ম যেন বাস্তবরূপ পেয়েছে!মনে হয় ওর আড়চোখে চাহনীর যেন তুলনা হয় একমাত্র পৃথিবী শ্রেষ্ট কোন ভাস্করের আজীবন কালের শ্রেষ্ঠ ভাস্কর্যের সাথে!!
মেয়েটিকে দেখেই আমার চিত্তের সমস্ত প্রেম উদ্বেলিত হয়ে উঠে আসে,আমার ঠোঁট জোড়ায়।তাই আমি মুগ্ধতার আবেশে কথা বলতেই থাকি,শুধু বলতেই থাকি!!

প্রেমও নিবেদন করেছি এই অবর্ণনীয় সুন্দরীকে!উনি গ্রহণ করেননি।বলেছেন আমাদের মধ্যে এটা সম্ভব নয়।মা-বাবা রাজি হবেন না।আরো কত কি!!! কিন্তু ওর কথাগুলো আমার কখনোই আমি হৃদয়ঙ্গম হয়নি! এত সহজে হাল ছেড়ে দিতেই কি জন্ম হয়েছে আমার?আর দেখা হয়েছে এই ভয়ংকর সুন্দরীর সঙ্গে?

আজ কলেজ পর কথা ছিল দেখা হবে।তাই ছুটির আশায় মন চাতকের মত অপেক্ষা করছিল। অবশেষে দেখা হলো!আমার ভয়ংকর সুন্দরী নীল ড্রেস পড়ে দাঁড়িয়ে আছেন শিউলি গাছের তলায়!!মেয়েটি ভালোবাসে শিউলী ফুল।যা একেবারে পাগলামীর পর্যায়ে। ওর পাগলামো যে কত ধরণের তা জানতে হলে আমাকে সারাজীবন ওকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে!আর আমি এটিই চাই!

মেয়েটির সাথে সারাদিন কথা হয় ফেসবুকে।ফোনালাপও হয় ঘন্টাখানেক!! কিন্তু তবুও আমরা “ভালো ফ্রেন্ড” সম্পর্কটাতেই আটকে আছি!! ওর সম্মতি ছাড়া এগোতেও পারছি না!!

ওর ইচ্ছে ছিল,ওকে কেউ শিউলী ফুল দিয়ে প্রেম নিবেদন করবে! আর ওকে প্রেম নিবেদনের প্রায় অর্ধেক বছর পেড়িয়ে শরৎকাল ফিরে এলো প্রকৃতিতে।সাথে করে নিয়ে এসেছে তার নিজস্ব ব্র্যান্ডের শিউলী ফুল।এর জন্যেই আমার অপেক্ষা।আর ওকে এখানে আসতে বলা।
মেয়েটি কেমন যেন।বলে আমরা ভালো ফ্রেন্ড!তবুও তুই করে বলে না।তুমি করেই বলে!এই খানেই আমার মন বারবার সাফল্যের আশ্বাস দেখতে পায়।

তো দুরুদুরু বুকে এগিয়ে গেলাম,ওর কাছে।শুরু হল কথোপকথনঃ

আমিঃ কেমন আছো?
অনুঃ ভালোই! তুমি? ভুলেই গেছি, তুমি তো সবসময় মোটামোটিই থাক!!
আমিঃ (স্বভাবসুলভ স্মিত হাসি)
অনুঃ এবার বল,এখানে কেন ডেকেছো? জানো কত্ত কষ্ট করে বাসা থেকে বের হয়েছি?
আমিঃ কথা ছিল কিছু।সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম।সময় এসেছে।
অনুঃকি কথা??হুহ?
আমিঃ তেমন কিছু না।আমার মনের কথা।যে মনে তুমি অবগাহন করে বেড়াচ্ছ প্রতিনিয়ত!
অনুঃ বুঝেছি তুমি আবার শুরু করবা।সেই ভালোবাসা!
আমিঃ হুম করবো তো! তবে এই ভালবাসা আর মৃত্যুর আগে থামবে না।দেখে নিও!!
অনুঃ যাও যাও।চাপাবাজি বন্ধ কর!!
আমিঃ হুম!

একটু সময় নিলাম যাতে কথাগুলো গুছিয়ে বলতে পারি।আর তার সাথে ব্যাগ থেকে শিউলি ফুলের তোড়াটা বের করলাম।খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে শিউলি গাছকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে ফুলগুলো নামিয়েছি।এরপর নিজের হাতে তোড়াটা বানিয়েছি!!ফুলগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।তাই ফরমালডিহাইড এর পনের শতাংশ জলীয় দ্রবণ ছড়িয়ে দিয়েছিলাম এগুলোর উপর! কিছু করার নাই মাঝে মধ্যে একটু কারসাজি করতে হয়।

হাঁটু গেঁড়ে বসলাম!একে তো পড়েছি নীল পাঞ্জাবি।তার সাথে ঘাম হচ্ছে অবিরত!! যদিও একবার প্রেম নিবেদন করেছি কিন্তু এইবার ভয় হচ্ছে বেশি!!

অনুঃওয়াও!!এত্ত সুন্দর ফুল!! এত তাজা কিভাবে??
আমিঃ রসায়ন এর কারসাজি সুন্দরী!!
অনুঃ বুঝলাম।ফরমালিন দিয়ে নিয়ে আসছ!তবুও খুশি হয়েছি অনেক।ফুলগুলো দাও।
আমিঃ এত্ত তাড়াতাড়ি দিচ্ছি না!অপেক্ষা করতে হবে আপনাকে!!মনযোগ দিয়ে শুনতে হবে সেগুলো!!
অনুঃ তাহলে তাড়াতাড়ি শুরু কর!আমার ফুলগুলো লাগবে!!
আমিঃ

অনু,তোমাকে ভালোবাসি কথাটি বলব না।বারবার একটি কথা তো একঘেয়ে শোনায়! কিন্তু আজ বলতে চাই তুমি আমার কাছে কি!
জানো,ছোটবেলা থেকেই একটা মেয়েকে কল্পনা করেছি।হলুদাভ গায়ের রঙ।চোখগুলো বড় বড় হবে।।আর তার মাঝখানে থাকবে ঘন কালো চোখের মণি!!দেখে মনে হবে দিঘীর জল টলমল করছে।কাকতাড়ুয়া গল্পের এই অংশ উদ্ধৃত করার লোভ সামলাতে পারলাম না।ওর চোখের পাপড়িগুলো যেন খুব ঘন হয়।কাজল না পড়লেও যেন মনে হয় কাজল পড়ে আছে!কিন্তু সে কাজল দিবে।অবশ্যই দিবে।তাঁর ভ্রূটা হবে একেবারে ন্যাচারাল।পার্লার ফেরত তরুণীর মত নয়।পুরোপুরি প্রাকৃতিক!!ওর নাকটা একটু খাড়া থাকবে।বেশি না,এই একটু। আর ওর ঠোঁট জোড়া যেন পাতলা হয়।মেয়েদের পাতলা ঠোঁটেই বেশি লাস্যময়ী মনে হয়।আর সেগুলো যেন গোলাপী বর্ণের হয়।আর যাই করুক সে কখনো ঠোঁটে লিপস্টিক ব্যাবহার করবে না। আর ওর চুল হবে অনেক লম্বা।কোমড় ছাড়িয়ে যায় এমন চুল!! সে দেখতে একটু লম্বা হবে।আমার থেকে বেশি না।কয়েক ইঞ্চি কম হলেই চলবে!!

যেদিন প্রথম তোমাকে দেখেছিলাম,সেদিনই লাগছিলো আমার কল্পনা থেকে তুমি উঠে এসেছ। মনে হয়েছিল তোমার উপর শুধু আমার অধিকার!অন্য কারো না।তাই কাউকে সহ্য করতে পারি না,তোমার পাশে!! মাঝে মধ্যে হীনমন্যতায়ও ভুগি।আমি কি সত্যিই তোমাকে পাবার যোগ্য।

আমি অন্য সবার মত বলব না, তুমি যদি আমাকে ভালো না বাস,তাহলে আমি আত্মহত্যা করব।বরং বলব,তুমি যদি পাশে না থাকো,তাহলেও বেঁচে থাকব।বেশ ভালো মতই বেঁচে থাকব। মা-বাবার কথাতে সময়মত বিয়ে করব!!বাচ্চা কাচ্চা থাকবে!!কিন্তু যা থাকবে না,তা হচ্ছে আমার স্বপ্নগুলো।যেগুলো তোমাকে কেন্দ্র করেই জীবন লাভ করেছে।দেহ ঠিকই থাকবে।যা থাকবেনা তা হলো, বেঁচে থাকার আগ্রহ!! কি আজব তাই না?সব থেকেও কিছু নেই!!
আর কিছু বলব না।তোমার সাথে আমি মিথ্যে বলি না।ইনা,মিনা,রিনা,টিনা যত মেয়ে একবিন্দু হলেও আমার জীবনে জড়িয়ে ছিল,সবার কথা আমি তোমাকে বলেছি!!এখনো দিনে কার কার সাথে কথা হয় তোমাকে বলি!যদিও তুমি শোনতে চাও না।কোন ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেইলও করব না।

শুধু বলব, এই হাতটুকু ধরে কি আমার সারা জীবনের সঙ্গী হবে?সুখী করতে পারব কি না জানিনা।তবে ভালোবাসার কোন কমতি হবে না...

অনুঃ উফফ,তুমিও পারো বটে!! এত কথা বললা এক সাথে।। যা ইচ্ছে তা কর। আমার ফুলগুলো লাগবে ওইগুলো দাও।
আমিঃ না দিব না। আগে বলতে হবে ভালবাসি।
অনুঃ ধ্যেত।ওগুলো মুখে বলতে হয় না!! বুঝে নিতে হয়!!
আমিঃ তাই না বান্দরনী??? আমি বুঝতে চাই না। দেখতে চাই।
অনুঃকিভাবে দেখবা??হুহ?
আমিঃ কাল এই জায়গায় তুমি শাড়ি পড়ে আসবা।লাল পাড় সাদা শাড়ি।লাল ব্লাঊজ তার সাথে কপালে মাঝারী সাইজের লাল টিপ!!আর চুলগুলো যেন খোলা থাকে। আমি গন্ধ শুঁকব!
অনুঃকি আবদার!!!যাও কালকের ব্যাপার কালকে দেখা যাবে।আজকে ফুল দাও!!
আমিঃহুম!! হাত বাড়াও।

ও হাত বাড়াতেই খপ করে ধরলাম। বলেছিলাম,আসো একটু হাত ধরে হাঁটি।অনেক জোরাজুরির পর রাজি হল!!

আমাকে আর পায় কে? মনের আনন্দে গান গাচ্ছি.........কত স্রোত ভেঙেছি বাসতে ভালো তোমাকে!!!আর স্বপ্নের সংসার সাজাচ্ছি আমার এই ভয়ংকর সুন্দরীর সাথে!
***********************************************************************************************************************
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১:৪১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×