somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

দেবশ্রী চক্রবর্ত্তী
আমি চিত্রাঙ্গদা, আমি রাজেন্দ্রনন্দিনী।নহি দেবী,নহি সামান্যা নারী।পূজা করি মোরে রাখিবেউর্ধ্বেখসে নহি নহি,হেলা করি মোরেরাখিবে পিছেখসে নহি নহি।যদি পার্শ্বে রাখ মোরেসঙ্কটে সম্পদে,সম্মতি দাও যদি কঠিনব্রতেসহায় হতে,পাবে তবে তুমি চিন

বর্তমান সময়ের দৃষ্টি ভঙ্গিতে আন্তর্জাতিক শিশু সমস্যা ও আন্তর্জাতিক শিশুদিবস পালনের যৌক্তিকতা

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমান সময়ের দৃষ্টি ভঙ্গিতে আন্তর্জাতিক শিশু সমস্যা
ও আন্তর্জাতিক শিশুদিবস পালনের যৌক্তিকতা

দেবশ্রী চক্রবর্ত্তী


আপনারা কি জানেন, বিশ্বে শিশুদের জন্য একটি দিবস আছে? আর এই দিবসটির নাম হলো 'শিশুকে আঘাত না করা আন্তর্জাতিক দিবস'।
খুবই মজার না? আমরা সবাই আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসের কথা জানি। ১ মে হলো 'আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস'। কিন্তু এ দিবসের আগের দিনই হল 'শিশুকে আঘাত না করা আন্তর্জাতিক দিবস'।
এদিন শিশুরা খুব খারাপ কাজ করলেও বাবা-মা তাকে আঘাত দিতে পারবেন না। মনে হয় এ দিবসটি শিশুদের অনেক পছন্দের, তাই না? বিশেষ করে দুষ্টু প্রকৃতির শিশুদের কাছে।
আপনারা কি জানেন, কারা এ দিবসটিকে নামকরণ করেছে? যুক্তরাষ্ট্রের 'কার্যকর শিক্ষা কেন্দ্রের' উদ্যোগে এ দিবসটি নির্ধারিত হয়।
সারা বিশ্ব জুড়ে ২০শে নভেম্বর আন্তর্জাতিক শিশু দিবস পালিত হতে চলেছে । এই দিনটির যাত্রা শুরু হয়
১৯৫৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর তারিখটিতে, যে দিন সারা বিশ্বে শিশুদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ পর্যবেক্ষণ করা হয় ।
শিশুকেন্দ্রিক একমাত্র মানবাধিকার দলিল 'শিশু অধিকার সনদ'র যাত্রা শুরু কিন্তু ১৯৯০ সালে। কনভেনশন
অন দ্য রাইটস অব দ্য চাইল্ড বা সিআরসি নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত ৫৪টি অনুচ্ছেদ সংবলিত শিশু অধিকার
সনদে বিশ্বের সব শিশুর নাগরিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের বিষয়গুলোকে
অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সনদের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে ১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের দ্বারা
শিশু অধিকার সনদ গৃহীত হয় । যার পরিনতি হিসাবে ১৯৯০ সাল থেকে সারা বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় বিশ্ব শিশু দিবস হিসাবে ।

শিশু দিবস নিয়ে লিখতে বসে প্রথম যে কথাটা মাথায় আসে তা হল আমরা কোন একটি বিশেষদিন পালন কির কেন । এ প্রসঙ্গে বলব
বর্তমান সভ্যতায় সুসভ্য মানুষ এত ব্যস্ত হয়ে পরেছে যে সমাজের গুরুত্বপূর্ন সমস্যা গুলোর প্রতি মনযোগ দেবার সময় তাদের নেই ।
তাই তাঁরা বিশেষ বিশেষ সমস্যা গুলোর জন্য বিশেষ কিছু দিন নির্দিষ্ট করে রেখেছেন । সেই বিশেষ দিনগুলোতে সেই বিশেষ সমস্যা গুলোর
কারন ও তা কি করে নির্মূল করা হয় তাই নিয়ে আলোচনা করা হয় । আজ আমাদের আলোচ্চ বিষয় আন্তর্জাতিক শিশু দিবস ।
বর্তমান বিশ্বের শিশুদের মূল সমস্যা ও আন্তর্জাতিক শিশু দিবস পালনের যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা আজ আলোচনা করব ।

আন্তর্জাতিক শিশু দিবস স্থির হবার পর শিশুদের সংরক্ষণ , কল্যান ও শিক্ষার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্যে পৃথিবীর অধিকাংশ
দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিয়েছে । অথচ আন্তর্জাতিক শিশু দিবস সূচীত হবার ৫০ বছর পর যুদ্ধ, অনাহার
ও রোগ আজও শিশুদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলছে । এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , গত কয়েক বছরের যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের
সংখ্যা ক্ষতিগ্রস্ত সৈনিকদের চেয়েও বেশি । মার্কিন পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ , ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক যুদ্ধ বাধানোর পর ইরাকে
এক লাখেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছেন । তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল নারী ও শিশু । গণতান্ত্রিক কংগোর শিশু সৈনিকদের সংখ্যা খুবই বেশি ।
পৃথিবীতে সাতটি দেশে শিশু সৈনিকদের নিয়োগের সমস্যা গুরুতর । গণতান্ত্রিক কংগো সেই দেশগুলোর অন্যতম । কংগোতে মোতায়েন জাতিসংঘ বিশেষ
দল অনুমান করছে যে, ১৯৯৮ সালে যুদ্ধ বাধার পর কমপক্ষে ৩০ হাজার শিশু কিশোর বাধ্য হয়ে বা স্বেচ্ছায় বিভিন্ন সশস্ত্র চক্রে যোগ দিয়েছে এবং হত্যাকারী ,
কুলি বা যৌণ দাসে পরিণত হয়েছে ।চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়েও সেনাদের হাতে ধর্ষিত হচ্ছে নারী এবং শিশুরা । আমি সত্যি বুঝি না শিশুদের প্রতি যৌন আকর্ষন আসে কি করে ।
যে রুগ্ন শিশু গুলো চিকিৎসার জন্য আসছে, কি অবস্তা, তাদের মধ্যেও যৌন সুখ খুঁজছে এই নর পিশাচের দল ।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক প্রতিবেদনে এই অভিযোগ করেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দুর্ভিক্ষপীড়িত সোমালিয়ায় নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েশিশুদের ধর্ষণ করছে আফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) বাহিনী। সংস্থাটি বলছে, ধর্ষণের শিকার বেশ কিছু নারী অভিযোগ করেছেন, খাবার ও অর্থ দেওয়ার বিনিময়েও সেনারা তাঁদের সঙ্গে যৌনকর্ম করেছে।
দেশটিতে ২২ হাজার এইউ সেনা আছে। তাদের পাঠানো হয়েছে ছয়টি দেশ থেকে। সোমালিয়ার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে তারা আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত আল-শেবাব জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সোমালিয়ায় এইউ বাহিনীকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে।
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধর্ষণের শিকার নারীদের বেশির ভাগই গ্রাম থেকে পালিয়ে সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুর আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন। ২০১১ সালে দেশটিতে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ শুরুর পর তাঁরা ওই সব শিবিরে আশ্রয় নেন। ২১ জন নারী ও মেয়েশিশুর সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে এইচআরডব্লিউর
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমালিয়ার দালালদের মাধ্যমে আফ্রিকান ইউনিয়নের সৈনিকেরা মানবিক সাহায্য দেওয়ার নামে নারী ও শিশুদের যৌনকাজে বাধ্য করে। অনেকে অভিযোগ করেছেন, অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসার জন্য তাঁরা এইউ সেনাদের ক্যাম্পে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন।
যেসব নারী ও শিশুর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, এর মধ্যে ১২ বছরের এক শিশু উগান্ডার এক সেনার দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র দুইজন পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। লজ্জায় এবং পুলিশ, পরিবার ও আল-শাবাবের ভয়ে তাঁরা অভিযোগ করেন না।
এইচআরডব্লিউ বলছে, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে চলমান এই নিগ্রহ বন্ধ করতে হবে। সংস্থার আফ্রিকা অঞ্চলের প্রধান ড্যানিয়েল বেকেল বলেন, যৌন নির্যাতনকারীদের চিহ্নিত ও শাস্তির ব্যবস্থা করার দায়িত্ব আফ্রিকান ইউনিয়ন ও সোমালিয়ার রাজনৈতিক নেতাদের। তিনি বলেন, ‘মোগাদিসুর শিবিরগুলোতে খাদ্যসংকট প্রকট হচ্ছে। পরিবারের ক্ষুধা মেটাতে যেন তাঁদের
শরীর বিক্রি না করতে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’এইচআরডব্লিউর অভিযোগের বিষয়ে এইউ বা সোমালিয়ার এইউ মিশনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

মিশরে আটককৃতদের মাঝে ব্যাপক যৌনসন্ত্রাস চালানো হচ্ছে বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান ফেডারেশন ফর রাইটস।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, যেকোনো রকম আন্দোলন দমনে আটককৃত নারী ও শিশুদের ওপর চরম যৌন নির্যাতন চালাচ্ছে মিশরীয় নিরাপত্তা বাহিনী। অনেকেই সতীত্ব পরীক্ষা, ধর্ষণ এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন।
তবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি মিশরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পড়ে তারা এর ব্যাখ্যা জানাবে বলে জানানো হয়।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০১৩ সালে মিশরে সামরিক অভ্যুত্থানের পর যৌন সন্ত্রাস চরম আকারে বেড়েছে। প্রকৃত অপরাধীরা খুবই কমই শাস্তি ভোগ করছেন এবং কঠোর রাজনৈতিক কৌশলের ফলে আটককৃতরা মুক্তিও পাচ্ছে না।

পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা এবং সেনা সদস্যরা এমন কাজে জড়িত বলে প্রতিবেদনটিতে প্রকাশ করা হয়। নির্যাতনের শিকারদের মধ্যে ছাত্র আন্দোলনকারী, মানবাধিকার কর্মী থেকে শুরু করে শিশুরাও রয়েছে।
নির্যাতনের শিকার এক শিক্ষার্থী জানান, যে তিনি একজন পুলিশকে একজন নারীর বুকে হাত দিতে দেখে বলে উঠেন, আপনি যদি তাকে গ্রেফতার করতে চান তবে গ্রেফতার করুন কিন্তু তাকে এভাবে হয়রানি করার অধিকার আপনার নেই। এরপর পুলিশটি তার সঙ্গেও ঠিক একই কাজ করতে থাকে। এসময়ে আরো দু’জন পুলিশ এসে তাকে মারতে মারতে পুলিশ ভ্যানে তোলে এবং যৌন হয়রানি করতে থাকে। পুলিশগুলো তাকে এতটাই মারতে থাকে যে পরে তিনি আর সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারেন নি।
অনেকে অভিযোগ করেছেন, অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসার জন্য তারা এইউ সেনাদের ক্যাম্পে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন।
যেসব নারী ও শিশুর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, এর মধ্যে ১২ বছরের এক শিশু উগান্ডার এক সেনার দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র দুইজন পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। লজ্জায় এবং পুলিশ, পরিবার ও আল-শাবাবের ভয়ে তারা অভিযোগ করেন না।

এইচআরডব্লিউ বলছে, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে চলমান এই নিগ্রহ বন্ধ করতে হবে। সংস্থার আফ্রিকা অঞ্চলের প্রধান ড্যানিয়েল বেকেল বলেন, যৌন নির্যাতনকারীদের চিহ্নিত ও শাস্তির ব্যবস্থা করার দায়িত্ব আফ্রিকান ইউনিয়ন ও সোমালিয়ার রাজনৈতিক নেতাদের। তিনি বলেন, ‘মোগাদিসুর শিবিরগুলোতে খাদ্যসংকট প্রকট হচ্ছে। পরিবারের ক্ষুধা মেটাতে যেন তাদের শরীর বিক্রি না করতে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

এবার আসব আফগানিস্তানের প্রসঙ্গে । আফগান পরিভাষা 'বাচ্চা বাজি'র আক্ষরিক অর্থ করলে ইংরেজীতে বলতে হয় 'Boy Play' আর বাংলায় বললে বলতে হয় "বাচ্চা ছেলেদের নিয়ে খেলা"। কি এখনও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে? তাহলে আরেকটু খুলে বলি। ১০ - ১৫ বছরে বয়সী ছোট ছোট বাচ্চা ছেলেদের মেয়েদের পোষাক পরিয়ে তাদেরকে দিয়ে নাচ-গানের মাধ্যমে মনোরঞ্জন শেষে বিকৃত যৌন আনন্দের জন্য যখন ব্যবহার করা হয় তখন তাকে 'বাচ্চা বাজি' বলে। গতমাসে পিবিএস নেটওয়ার্কের ফ্রন্টলাইন অনুষ্ঠানে আফগানিস্হানের এই অতি প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা প্রথাটির উপর একটি ডকুমেন্টারি প্রচার করে। ডকুমেন্টারিটির নাম ছিলো "The dancing boys of Afghanistan".

আফগান সাংবাদিক নাজিবুল্লাহ কোরায়শীর এই তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে পিতা-মাতাহীন রাস্তার এতিম ছেলেদের কিংবা কখনও কখনও অত্যন্ত গরীব ঘরের ছেলেদের টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়ে কিভাবে সমাজের প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাবান লোকেরা এদের দিয়ে বিকৃত মনোরঞ্জন শেষে যৌন নির্যাতন করে থাকে। টাকার বিনিময়ে কিনে নেয়া এই এই ছেলেগুলোর নতুন মনিব (Master) নিয়ন্ত্রণ করে এদের জীবনের সবকিছুই। এরকম একজন মনিবের আস্হা অর্জন করে তার সাথে ঘুরে ঘুরে কোরায়শী তুলে ধরেছেন আফগানিস্হানের অন্ধকারতম একটি জগতের।

দস্তগীর হলো এরকমই একজন 'বাচ্চা বাজি'র মনিব যে কিনা একজন প্রাক্তন মুজাহিদীন কমান্ডার এবং দিনের বেলায় গাড়ী ব্যবসায়ী। কিন্তু রাতের বেলায় দস্তগীর এক অন্য মানুষ। দস্তগীরের আস্হা অর্জন করে কোরায়শী বের করে এনেছেন এই অন্ধকার জগতের অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তুলে ধরেছেন কিভাবে প্রভাবশালী ওয়ার লর্ডরা একে অন্যের সাথে প্রতিযোগীতার মাধ্যমে মালিক হয় এইসব ছেলেদের এবং তাদের বাধ্য করে অমানবিক এবং অনৈতিক সব কার্যকলাপে।

মিস্তরী হলো একজন প্রাক্তন সিনিয়র কমান্ডার যার সাথে প্রধান প্রধান সব ওয়ার লর্ডদের রয়েছে যোগাযোগ। তার নিজের ভাষ্যমতে সে নিজেও এরকম একটি ছেলের মনিব ছিলো। কারণ প্রত্যেক কমান্ডারই একজন পার্টনার ছিলো। আর কমান্ডারদের মধ্যে এনিয়ে প্রতিযোগীতা হতো। তার না থাকলে নাকি সে তাদের সাথে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে পারত না। সরকারের প্রভাবশালী লোকেরাও এর সাথে জড়িত। বিশেষ করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের অফিসারদের। অনেক ছেলেই
বিভিন্ন সময় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু তাদের সে চেষ্টার পরিণতি যে খুব একটা ভালো হয়নি সেটা আর বলে দেবার অপেক্ষা রাখে না।

পিবিএসের আলোচ্য অনুষ্ঠানটি শফিক (ছদ্মনাম) নামের একটি ১১ বছরের বাচ্চাকে ফোকাস করে করা হয়েছে। মূল প্রোগ্রামটি ৫৫ মিনিটের। আমার মত আপনারও বাকরুদ্ধ হতে বাধ্য।

দারিদ্র্য ও রোগ শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যহত করছে । জাতিসংঘের প্রকাশিত এক তথ্য থেকে দেখা গেছে, উন্নয়নমুখী দেশগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার শিশু অনাহারে মারা যাচ্ছে । তাছাড়া এইডজ রোগের বিস্তারও অসংখ্য শিশুর ক্ষতি করছে । বর্তমানে পৃথিবীর এইডজ ভাইরাসে আক্রান্ত ৪ কোটি ৩ লাখ লোকের মধ্যে ২৩ লাখ হচ্ছে ১৫ বছরের কম বয়সের শিশু । ২০০৫ সালে নতুন করে এইডজ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সের শিশুদের সংখ্যা ৭ লাখে পৌছেছে ।

দারিদ্র্য লাখ লাখ শিশুকে শিক্ষা গ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে । তারা ক্লান্তিকর দৈহিক শ্রমে শামীল হতে বাধ্য হচ্ছে । জাতিসংঘ শিশু তহবিল সংস্থার প্রকাশিত " ২০০৬ সালে বিশ্বের শিশুদের অবস্থা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে" বলা হয় , উন্নয়নমুখী দেশগুলোতে ১৭ কোটি ১০ লাখ শিশু দুরুহ ও বিপদজনক কারখানা ও খনিতে কাজ করছে । পৃথিবীতে প্রায় ৮৪ লাখ শিশু যৌণ সেবা ও দাসসূলভ কাজে নিয়োজিত রয়েছে ।

শিশু বিশ্বের ভবিষ্যতের প্রতিনিধিত্ব করে । তাদের সুষ্ঠু বিকাশের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষে যুদ্ধের অবসান, দারিদ্র্য মোচন , শিশু শ্রম দূরীকরণ এবং এইডস রোগের আক্রমণ থেকে শিশুদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে আরো বিপুল প্রয়াসের দরকার হবে ।

আমার যখন মেয়ে হয়, বাড়ীর সবাই আনন্দ করেছিল, কিন্তু আমি কেঁদে ছিলাম ।
হস্পিটালের নার্সরা আমাকে দেখিয়ে বলত, ওঁর মেয়ে হয়েছে বলে ওঁ কেঁদেছে ।
কিন্তু ওঁরা এটুকু বুঝতে পারে নি আমি কেন কেঁদে ছিলাম ।
আমি খুঁব ভয়ে ছিলাম, যখন আমার মেয়েটা আমার পেটে ছিল ।
কেন জানি না আমার মনে হত আমার যদি মেয়ে হয়, তাকেও তো শৈশব থেকে আমারই
মতন কয়েকটা পশুর লালসার শিকার হতে হবে । আমি কিন্তু এই কথা ভেবে
আমার সদ্যজাত সন্তানের জন্য কেঁদে ছিলাম ।

আমি এখানে একটা পরিসংখ্যান দেব যেখানে আপনারা দেখতে পাবেন একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে child abuse
এ পৃথিবীর মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে আছে যে দেশ গুলি, তাদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আছে আমাদের দেশ
ভারতবর্ষ । আমি জানি আপনারা অনেকেই আমার কথা বিশ্বাস করবেন না, না করাই স্বাভাবিক, তাই আমি এখানে পরিসংখ্যানটি
তুলে ধরলাম । পড়ুন,
Basing its research on official statistics and reports, IBTimes UK looks into some of the countries with the highest rate of Child Sexual Abuse (CSA).

SOUTH AFRICA :

One child is raped in South Africa every three minutes, according to a 2009 report by trade union Solidarity Helping Hand.

A 2009 survey by the country's Medical Research Council found that one in four men admits to raping someone, 62% of boys over 11 believe forcing someone to have sex is not an act of violence and a third believe girls enjoy rape, the Independent reported.


Related
South African Cardinal Says Child Sex Abuse is a Sickness, Not a Crime
Tennis Grand Slam Champ Bob Hewitt Charged with Child Rape and Sexual Assault

More than 67,000 cases of rape and sexual assaults against children were reported in 2000, according to the Telegraph.

Some of the victims were as young as six-months-old, a number of whom died from their injuries, while others contracted HIV.

Many people in South Africa believe that sex with a virgin can heal someone from HIV/AIDS.

"The idea that having sex with a virgin cleanses you of AIDS does exist and there have been reported cases of this as a motivating factor for child rape. But evidence suggests that this is infrequently the case," Dr Rachel Jewkes, director of the MRC's Gender and Health Research Group told humanitarian news and analysis service IRIN in 2002.

INDIA

In its 2013 report India's Hell Holes: Child Sexual Assault in Juvenile Justice Homes, the Asian Centre for Human Rights said that sexual offences against children in India have reached epidemic proportion.

The report stated that more than 48,000 child rape cases were recorded from 2001 to 2011 and that India saw an increase of 336% of child rape cases from 2001 (2,113 cases) to 2011 (7,112 cases).

"Imagine 48,838 children raped in just 10 years and you have a small measure of how deep the inhuman phenomenon of child rapes runs in India," correspondents Nishita Jha and Revati Laul wrote last year on a Tehelka blog.


Related
India: Deaf, Mute Orphan Girls Raped at Jaipur Therapy Centre, Say Police
India Rape: Girl, 5, Dies from Assault as Mother Demands Death Sentence for Suspects
India: Marriage Annulled of Laxmi Sargara, Girl who was Betrothed as One-Year-Old

"Child sexual abuse is rampant, indiscriminate and cuts across class, geography, culture and religion. It happens in cities and villages, by fathers, brothers, relatives, neighbours, teachers and strangers," Jha and Laul continued.

In 2012, the Indian Parliament passed the Protection of Children from Sexual Offences Act, which incorporates child friendly procedures for reporting, recording of evidence, investigation and trial of offences.

According to a 2007 study by the Indian Government of nearly 12,500 children from across India, 53% of children - boys and girls equally - were victims of sexual abuse.

Zimbabwe

Police spokesperson Assistant Commissioner Charity Charamba said in 2012 that rape cases against children continued to increase countrywide, according to NewsdeZimbabwe.

"The (rape) cases are on the increase and during the week ending 25 September 2012, the cases rose to 81 from 65 the previous week. Evident from our investigations is the fact that relatives commit most juvenile rape cases," said Charamba.


Related
Zimbabwe: Culture, Religion and Poverty Dangerous Mix for Girls?
Damascus, Dhaka, Port Moresby, Lagos and Harare: The Five Worst Cities in the World to Live

In 2011, there were 3,172 rape cases of juveniles recorded countrywide, an increase from 2010, when 2,883 were reported.

A clinic in Harare, capital of Zimbawe, said it had treated nearly 30,000 girls and boys who'd been abused in the previous four years, the Guardian reported in 2009.

Betty Makoni, founder of the Girl Child Network (GCN), said the real number of victims was likely to be double that recorded by the Family Support Trust Clinic.

United Kingdom

A quarter of a million Britons - more than one in every 200 adults - are paedophiles, according to figures released by Scotland Yard, the Telegraph reported in 2000.

In 2012/13, there were 18,915 sexual crimes against children under 16 recorded in England and Wales, according to the National Society for Prevention of Cruelty to Children (NSPCC). Included in that figure were 4,171 offences of sexual assault on a female child under 13 and 1,267 offences of sexual assault on under-13 male children.


Related
100 Britons Suspected in Child Sex Web Streaming Paedophile Ring
Teenage Sex Abuser Paul Ward Used Cutlery to Molest Baby in Leeds

In the UK, one in 20 children (4.8%) have experienced contact sexual abuse and over 90% of children who experienced sexual abuse, were abused by someone they know, NSPCC said.

A paedophile ring linked to Britain's worst abuser Robert Smith, arrested in 2005, is 'still at large', the Herald reported in 2013.

United States

"Even if the true prevalence of child sexual abuse is not known, most will agree that there will be 500,000 babies born in the US this year that will be sexually abused before they turn 18 if we do not prevent it," according to the Children Assessment Centre (CAC).


Related
Arizona Mother Rickesha Burns Pleads Not Guilty to Sexually Abusing Son with Vibrator
Dylan Farrow Repeats Allegations of Child Sex Abuse Against Woody Allen [VIDEO]

The US Department of Health and Human Services' Children's Bureau report Child Maltreatment 2010 found that 16% of young people aged 14 to 17 had been sexually victimized in that year, and over the course of their lifetime, 28% of young people in the US, aged 14 to 17, had been sexually victimized.

"Adult retrospective studies show that 1 in 4 women and 1 in 6 men were sexually abused before the age of 18. This means there are more than 42 million adult survivors of child sexual abuse in the US," said the CAC.

দেশের উন্নতির পয়লা নম্বর নিদর্শন, মহিলাদের নিরাপত্তার পীঠস্থান। গুজরাট সম্পর্কে এমন একটা ধারণাই ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানী দিল্লি সহ গোটা দেশ থেকে যখন একের পর এক নারী নির্যাতনের খবর আসছে, সেই সময় গুজরাটে মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে কোনও প্রশ্নচিহ্ন নেই বলে সেখানকার প্রশাসনের। কিন্তু 'নিরাপদ' গুজরাটের এই ছবিটা টুকরো টুকরো হয়ে গেল চাইল্ড-লাইন ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন ও ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাম্প্রতিক সমীক্ষায়।

এই সমীক্ষায় প্রকাশিত রিপোর্টে গুজরাটের শিশু-নিরাপত্তা নিয়ে এক ভয়াবহ ছবি ধরা পড়েছে। সে রাজ্যের প্রতি ১০টি শিশুর মধ্যে সাতজনই যৌন অত্যাচারের শিকার হয়েছে বলে রিপোর্টে দাবি। বিশেষ করে ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। যৌন অত্যাচারের বলি হওয়া মোট শিশুদের ৪৭%-ই এই বয়সী। সমীক্ষকদের মতে, শিশুদের উপর যৌন অত্যাচারের যতগুলি ঘটনা ঘটে, তার ৯০%-রই রিপোর্ট থানায় পেশ করা হয় না। বহু ক্ষেত্রে ছোট ছেলেমেয়েগুলি আদৌ তাদের সঙ্গে কী হল তা বুঝতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক চাপ অথবা ভয় দেখিয়েও মুখ বন্ধ করে রাখা হয়।

এই সমীক্ষা অনুযায়ী, গত এক বছরে যতগুলি শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তার ৪৭% ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের উপর, ২৬% ৬ থেক ১০ বছর বয়সীদের উপর, ১৩% ১ থেকে ৫ বছর বয়সীদের উপর, ১ থেকে ১১ মাসের ১% শিশু যৌন লালসার বলি হয়েছে এবং এক মাসেরও কম বয়সী ১% শইশুর উপরও যৌন নির্যাতনের সাক্ষী হয়েছে গুজরাট।


ভারতে নাবালিকা ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের ঘটনা যেভাবে বেড়ে চলেছে, তা লজ্জায় গোটা জাতির মাথা হেঁট হবার পক্ষে যথেষ্ট৷ গত ৬ বছরে সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী শিশুদের ওপর যৌন নিগ্রহের ঘটনা বেড়েছে ৩০০ শতাংশ৷





সম্প্রতি রাজধানী দিল্লিতে পাঁচ বছরের একটি শিশু পাশবিক যৌন নির্যাতনের শিকার হলে পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঢল নামে৷ অপরাধীকে কঠোরতম শাস্তির দেবার দাবি জানানো হয়৷ জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান তুলে এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস-এর রিপোর্টে বলা হয়, গত দশ বছরে শিশু ও নাবালিকা ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের ৪৮৩৩৮টি ঘটনা ঘটে৷ গত বছর, অর্থাৎ ২০১২ সালেই ঘটেছে শিশু ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মোট ৮৫৪১টি ঘটনা৷ তার মানে দৈনিক গড়ে অন্তত ২৪টি শিশু যৌন নিগ্রহের শিকার হচ্ছে৷ এরকম ঘটনা সবথেকে বেশি হয়েছে মিজোরামে৷ এছাড়া, সাবালিকা ধর্ষণের ঘটনা তো আলাদা৷


প্রতিদিন ২৪ শিশু ধর্ষণের শিকার!

এই তালিকার শীর্ষে আছে মধ্যপ্রদেশে ৯৪৬৫টি, মহারাষ্ট্রে ৬৮৬৮টি, উত্তরপ্রদেশে ৫৯৪৯টি এবং দিল্লিতে ৩০০০টি৷ অবশ্য এই সংখ্যা হিমশৈলের চূড়ামাত্র৷ নাবালিকা বা শিশুর ওপর যৌন হেনস্থার অনেক বেশি ঘটনা পরিবারের মধ্যেই চেপে রাখা হয় নানা কারণে৷ এইভাবে প্রতিদিন অসংখ্য পরিবারে বা পারিপার্শ্বিকে বিকৃত যৌন নির্যাতনে হারিয়ে যেতে থাকা শৈশবের কথা গোপনই থেকে যায়৷ এই ধরণের ঘটনা পুলিশের কাছে আদৌ পৌঁছোয় না, মনে করেন এসিএইচআর-এর অধিকর্তা৷ তার ওপর ধর্ষণের পর খুনের ঘটনাও আতঙ্কজনক৷ গত বছর এ সংখ্যা প্রায় ১৬০০, যার মধ্যে উত্তরপ্রদেশেই খুন হয় ৪৫০ জন নাবালিকা৷

পাঁচ বছরের যে শিশুটিকে কিছুদিন আগে দিল্লিতে ধর্ষণ করে ৪৮ ঘন্টা আটকে রাখা হয়েছিল, তার মা-বাবাকে পুলিশ থানায় হয়রানি করায় এবং ডাইরি নিতে গড়িমসি করার অভিযোগে দিল্লির শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন কৈফিয়ত তলব করেছেন দিল্লি পুলিশের কাছে৷ অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সে চিকিৎসাধীন শিশুটির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত রিপোর্ট নিয়মিত দেবার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নোটিশও দিয়েছে শিশু সুরক্ষা কমিশন৷

সমাজবিদদের মতে, শিশুরাই বিকৃতকাম মানুষের সহজ শিকার৷ সারল্যের সুযোগ নিয়ে তাদের সহজে ভোলানো যায়৷ প্রথমত তারা বুঝতে পারে না৷ আর বুঝলেও প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করতে জানে না৷ এজন্য আগাম সতর্কতার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবকদের এবং স্কুল শিক্ষকদের৷ গল্পচ্ছলে শিশুদের এ বিষয়ে কিছুটা ধারণা গড়ে তোলাও যেতে পারে৷ কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির আচরণ অস্বস্তিকর ঠেকলে, তা যেন বাড়িতে মা-বাবাকে জানায় তারা, বলছেন সমাজবিদরা৷


কি এবার বিশ্বাস হচ্ছে তো ?


আমি প্রমাণ ছাড়া কোন কথা বলি না । এখানে পাঠকের বোঝার জন্য আমি কয়েকটি CHILD ABUSE এর ঘটনা তুলে ধরব ।

(১) আমি নিজের কথাই প্রথমে বলি । ছোটবেলায় বহুবার আমি নিজের খুঁব আপন কিছু মানুষের দ্বারা শোষিত হয়েছি । প্রথম ঘটনাটি পাঠকের সামনে আগে তুলে ধরি,
তখন আমার বয়স ৩ বছর । যৌন কথাটির অর্থ বোঝার মতন যখন আমার কোন ক্ষমতাই ছিলনা, সেই প্রথম শৈশবে আমি প্রথমবার যৌন লালসার শিকার হই ।
সেই সময় আমার বাড়ীতে আমার দুঃসম্পর্কের এক দাদা বেরাতে আসেন । নাম রনি দাদা । দাদা হলেও সেই ভদ্রলোক ছিলেন আমার বাবার বয়সী ।
লোকটি তাঁর স্ত্রী এবং ছেলেকে নিয়ে বেরাতে এসেছিলেন । একদিন আমার বাবা মা আমি দাদা বৌদি আর দাদার ছেলের সাথে সিনেমা দেখতে গেছিলাম । সিনেমাতে
কি দেখিয়েছিল আমার সত্যি মনে নেই , কারণ সিনেমা যখন চলছিল আমি ঘুমচ্ছিলাম । সিনেমা যখন শেষ হয় তখন অনেক রাত, রাস্তায় রিক্সা কম । আমাকে আমার বাবা রনি দাদার
সাথে বাবার এক বন্ধুর বাইকে করে বাড়ী পাঠিয়ে দেয় । বাড়িতে এসে আমার যেন কিরকম মনে হচ্ছিল রনি দাদা কিরকম যেন অস্বাভাবিক আচরণ করছিল । আমাকে শুইয়ে দিয়ে আমার ওপর
উঠে পড়েছিল, আমি তখন ৩ বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে, তাই আমার পক্ষে কিছু বুঝে ওঠা সম্ভব ছিল না । আমি খুঁব ভয় পেয়ে গেছিলাম, আমি ভয়ে কেঁদে উঠলাম । আমার কান্না শুনে আমার ঠাম্মি
ছুটে এসেছিল । এখন ভাবি আমার ঠাম্মি যদি না আসত, কিংবা আমি যদি ভয় পেয়ে না কাঁদতাম তাহলে আমিও হয়ত ধর্ষিতা হতাম । কেউ আসছে বুঝতে পেরে লোকটা উঠে পড়েছিল । এবং এই ঘটনার
পরও লোকটা আমাদের বাড়ীতে বেশ কিছু দিন ছিল ।

(২) শুধু কি মেয়েরা ধর্ষিতা হচ্ছে ? পুরুষরা কি শৈশবে নিজের পরিবারে যৌন লালসার শিকার হয়না ? আমি বলব কেন হয় না নিশ্চয় হয় । এরকম বহু ঘটনা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি কিংবা দেখে থাকি ।
পরে আবার ভুলেও যাই । এরকম ই একজনের কথা বলব যে আমার কাছের এক বন্ধু, তাঁর সাথে আমার যখন পরিচয় হয় , তখন তাঁকে দেখে আমার খুঁব মজা লাগত, আমাদের পরিচিত মানুষ জনের কাছে
সে ছিল হাসির খোরাক । পাঠকরা ভাবতেই পারেন কেন একটা মানুষকে নিয়ে সবাই হাসা হাসি করে ? কি এমন অস্বাভাবিকতা আছে তার মধ্যে ?
হ্যাঁ, এবার সেই উত্তর আমি দেব ।

ভদ্রলোক পুরুষ হলেও তাঁর মধ্যে অস্বাভাবিক রকমের একটা নারীত্ব বজায় ছিল । কথাবার্তা, হাঁটাচলায় এগুলো প্রকাশ পেত । আমরা মেয়েরা যখন কথা বলতাম ওঁ আমাদের মাঝখানে বসে গালে হাত দিয়ে শুনত , আবার মতামত গুলোও
সুন্দর করে গুছিয়ে মুখের নানা রকম ভঙ্গিমায় আমাদের সামনে তুলে ধরত । পরে জেনেছিলাম ওঁর একজন পুরুষ বন্ধু আছে এবং এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার পুরুষ বন্ধুর পরিবর্তনও ওঁ করেছে । আমার সেই বন্ধুর সঙ্গে যখন আমার বন্ধুত্বটা
খুব গভীর তখন একদিন সাহস করে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, "তোর কি প্রথম থেকেই পুরুষদের পছন্দ ?"

ওঁর মুখে যা শুনেছিলাম তা শুনে আমি মর্মাহত হয়েছিলাম । ওঁ আমাকে জানিয়েছিল ওঁ ছোটবেলায় ওঁর কাকার কাছে শুত । ওঁর আপন কাকা ওঁকে প্রতি রাতে ধর্ষণ করত । সেই থেকে ওঁর মানসিক গঠনটাই এরকম হয়ে গেছে । সেই শৈশবেই
ওঁ মনে প্রাণে এক নারী হয়ে উঠেছিল ।

আমার এই বন্ধুটি এখন SEX CHANGE করে একজন নারী হয়েছেন । আমার এই লেখা লিখতে গিয়ে পরেও তাঁর কথা আবার আমি তুলে ধরব ।

(৩) আমাদের বাড়ীতে মনিকা মাসি কাজ করত । মনিকা মাসি আসত বীরনগর থেকে । সারা দিন আমাদের পাড়ায় ঠিকে ঝিয়ের কাজ করে বিকেলের কৃষ্ণনগরে বাড়ী ফিরত । মনিকা মাসির সাথে আসত ওঁর মেয়ে শ্যামলী । শ্যামলী ছিল আমার শৈশবের
সঙ্গী । একদিন শ্যামলী স্কুলে ভর্তি হল । আমাদের পাড়ারই একটা প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হল ওঁ । শ্যামলীর আমাদের বাড়ীতে আসা বন্ধ হল । মাসির কাছে শুনলাম ওঁ ওঁদের স্কুলের হেড মিস্ট্রেসের বাড়ী থাকে এবং পড়া শুনায় ভালোই মন দিয়েছে ।
কিছুদিন পর শ্যামলী ফিরে আসল আমাদের বাড়ী । শুনলাম পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছে । মনিকা মাসি আমাদের কোন কথা খুলে বলেনি সেই সময় । শ্যামলীর কাছ থেকে আসল খবরটা পেয়েছিলাম আমরা । দিদিমণির বাড়ীতে ভালোই ছিল শ্যামলী । তবে দিদিমণি যখনই বাইরে কোথাও যেত, দিদিমণির বর নিজের গোপন অঙ্গটা বার করে বলত নে ধর । দিদিমণিকে বললে সে বিশ্বাস করত না ।

একদিন দিদিমণি বাড়ী ছিল না, শ্যামলী একা ছিল বাড়ীতে । সেই সুযোগে দিদিমণির বরের হাতে শহীদ হয় ৮ বছরের শ্যামলীর শৈশব ।

আমি শ্যামলীর এই ঘটনা টা নিয়ে একটা কবিতা লিখেছি, কবিতাটা আমার "মনবনীর কাব্য কথা" য় প্রকাশিত হয়েছে ।

নে... ধর

দেবশ্রী

মণিকার মেয়ে শ্যামলী

সরকারি স্কুলের ছাত্রী,

স্কুল শেষে মায়ের সাথে

এ বাড়ী ও বাড়ী ।

পড়াশুনার বিস্তর ক্ষতি,

মা এ পাড়ার কাজের মাসি,

মেয়েকে যে হতেই হবে দিদিমণি ।

স্কুলের বড়দির লাগবে একখানি মেয়ে

হাতে হাতে কাজ করবে যে,

বাড়ীর মেয়ের মতনই থাকবে ।

খাওয়াপরা, মাস গেলে হাজার টাকা পাবে,

শ্যামলীর বর্তমান ঠিকানা বড়দিদির বাড়ী ,

কিরে শ্যামলী, কেমন সে বাড়ী ?

মন্দ নয়, স্কুল শেষে হাতে হাতে

কাজ সারি,

তারপরে দিদির কাছে পড়তে বসি ।

পেট ভরে খেতে পাই, বেশশ খুশি ।

বেশ, তবে আর মন্দ কি ।

ঘড়িতে বিকেল চারটে

ভাদ্র মাসের এক বিকেলে

শ্যামলী আসল আমার বাড়ীতে ।

চোখে মুখে আতঙ্ক, শরীরখানি

একখানি ছেড়া ওড়নায় আবৃত ।

বললি তো ভালো আছি

তবে কেন এপরিনতি ?

দিদিমণির বর

একা পেলেই বলতো

নে... ধর ।

দিদিমণিকে বললে বলতো

এই মেয়ে, চুপ কর ।

আজ সে গেছে বাপের বাড়ী,

আমি একা হাতে কাজ করি ।

পেছন থেকে লাঠির বাড়ি

নে... ধর বলছি,

মেঝের ওপর হলাম বলি ।

দিদি....এখন আমি কি করি ?


(৪)শেষ ঘটনা টিও আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের শোনাব । আমি ছোটবেলা থেকে আঁকা শিখি । এখন যে অভিজ্ঞতাটা বলব তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি । নতুন একটা আঁকার স্কুলে ভর্তি হয়েছি ।
ছুটি হলেই সেই স্কুলের কিছু টিচার আবদার করত যে তাদের ঠোটে চুমু খেয়ে যেতে হবে, না হলে তাঁরা যেতে দেবে না । যথারীতি আমরাও চুমু খেয়ে তার পর ছুটি পেতাম । একদিন আমার এক বন্ধু রেণুকা আমাকে জানাল যে
একজন টিচার নাকি তার সঙ্গে আঁকার স্কুল ছুটি হবার পর এমন অসভ্যতা করেছে যা নাকি সে নিজের মুখে বলতে পারবে না ।

আমার এখন মনে হয় ঐ বেকার পুরুষ গুলো আঁকার স্কুল খুলেছিল বাচ্চাদের দ্বারা নিজেদের যৌন ইচ্ছে গুলো মেটাবার জন্য ।

আমার সত্যি খুঁব দুঃখ হয় যখন দেখি দিল্লিতে তিন মাসের শিশুকে রেপ করে দেওয়ালে ছুড়ে ফেলা হয়েছে, গুজরাটে ছয় মাসের কন্যা সন্তান রেপ হয়েছে তার প্রতিবেশী যুবকের দ্বারা । দক্ষিণভারতের মন্দিরে এখনও রমরমিয়ে দেবদাসী প্রথার নামে চলছে CHILD ABUSE.....ধর্মের নামে শিশুদের দিয়ে চালান হচ্ছে যৌন ব্যবসা । প্রশাসন সব দেখেও নির্বাক দর্শকের ভূমিকা নিয়েছেন । কারণ ভোট ব্যাঙ্ক গুলোকে তো বাঁচাতে হবে । আমি নাম না করেই বলছি ভারতবর্ষের পূর্বদিকের কোন এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী RAPE কে আধুনিকতার সঙ্গে তুলনা করেছেন । ভেবে দেখুন ক্ষমতা কি ভীষণ জিনিস ।

আসমুদ্র হিমাচল কোন শিশুই সুরক্ষিত না এদেশে ।
১৩ বছর বয়সে লক্ষ্মীর (ছদ্মনাম) হেসেখেলে বেড়ানোর কথা। কিন্তু ওই বয়সে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধের সঙ্গে তার বিয়ে দেয়া হয়। বৃদ্ধ ওই স্বামী বিয়ের রাতে তাকে ধর্ষণ করেন। কৈশোরের আলোকিত জীবনে পা দিতে না দিতেই লক্ষ্মী ডুবে যেতে থাকে অন্ধকারে।

তবে বেশিদিন এ দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি লক্ষ্মীকে। ইউনিসেফের সহায়তায় এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পায় সে। সংস্থাটির নারী ও শিশু কল্যাণ বিভাগ লক্ষ্মীকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে দুই বছর ধরে চিকিৎসা চলে তার।

এই গল্প ভারতের বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা লক্ষ্মীর একার নয়, তার মতো আরও হাজারো কিশোরীর। ইউনিসেফ বলছে, ভারতে প্রতি ৫০ জনে একজন মেয়েশিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। ১০ বছর বয়স হতে না হতেই মেয়ে শিশুদের এ ধরনের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। কৈশোর পার হতে না হতেই ৪২ শতাংশ মেয়েশিশু স্বামী, আত্মীয়, বন্ধু, পরিচিত, অপরিচিত এমনকি বাবা অথবা সৎ বাবার মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।

টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনে প্রকাশিত ইউনিসেফের প্রতিবেদন 'হিডেন ইন প্লেইন সাইট'-এ ভারতে মেয়েশিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ওপর যৌন নির্যাতনের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভারতের মেয়েশিশুদের ওপর জনসংখ্যা তাত্ত্বিক ও স্বাস্থ্য বিষয়ে জরিপ চালিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ওই জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ভারতের ১০ থেকে ১৪ বছরের ১০ শতাংশ মেয়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৩০ শতাংশ মেয়ের যৌন নির্যাতনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কৈশোর পার হওয়ার আগেই ভারতের ৪২ শতাংশ মেয়েশিশুকে যৌন নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়।

ওই জরিপে উঠে এসেছে আরও ভয়ংকর সব তথ্য। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৭৭ শতাংশ কিশোরী জানায়, স্বামীরা তাদের ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন। ৬ শতাংশ মেয়েশিশু জানায়, আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে অনেকে তাদের যৌন নির্যাতন করেছে। কমপক্ষে ৪ শতাংশ মেয়েশিশু জানিয়েছে, বন্ধুরা যৌন নির্যাতন করেছে। ৩ শতাংশ মেয়েশিশু জানায়, অপরিচিত কোনো ব্যক্তি তাদের ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে। আর শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বলেছে, বাবা অথবা সৎ বাবারা যৌন নির্যাতন চালিয়েছে তাদের ওপর। অর্থাৎ পরিচিত, অপরিচিত, আত্মীয়, বন্ধু কোনো পুরুষের কাছেই মেয়েরা নিরাপদ নয়।

ইউনিসেফের সাবেক পরামর্শক সুচিত্রা রাওয়ের ভাষ্য, এ ধরনের যৌন হয়রানির কথা মেয়েরা বেশির ভাগ গোপন করে যায়। যখন কেউ সাহস করে পুলিশকে জানায় অথবা আদালতের শরণাপন্ন হয়, তখনই যৌন নিপীড়ন বা নির্যাতনের খবর জানা যায়।

তবে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপের পূর্বাঞ্চল, পাকিস্তান ও নেপালের তুলনায় ভারতের মেয়েদের কিছুটা নিরাপদ বলে মনে করা হয়।(সূত্র : ইন্টারনেট)


এবার যার কথা বলব আপনাদের , তিনি BBC র HEAD OFFICE এ বসে দীর্ঘ্য দিন ধরে ৩০০ র ওপর শিশুর ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়ে ছিল ।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্রিটেনের পোলার্ড নামের তদন্ত কমিটি দেশটির গত কয়েক দশকের সবচেয়ে বড় যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস করেছে। বিবিসির কর্মী, পরিচালক ও সাবেক পরিচালকদের সাক্ষাতকার থেকে বেরিয়ে এসেছে এইসব কলঙ্ক।

ইংল্যান্ডের পুলিশ জানিয়েছে, ব্রিটিশ সরকারের অর্থে পরিচালিত গণমাধ্যম বিবিসি'র কুখ্যাত উপস্থাপক জিমি সেভিলের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে সাড়ে চারশ' শিশু।



এর আগে, বিবিসি'র পরলোকগত উপস্থাপক জিমি সেভিল ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কমপক্ষে ৩০০ শিশু-কিশোরের ওপর ভয়াবহ যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন বলে তদন্তে ধরা পড়ে। নির্যাতিতের মধ্যে ৮২ শতাংশ ছিল নারী আর তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই ছিল শিশু কিশোর। নির্যাতিতদের মধ্যে ৮/৯ বছরের বহু শিশু ছাড়াও পঙ্গু শিশুও রয়েছে। বিবিসি'র দপ্তরের ভেতরেই চালানো হত এইসব যৌন নির্যাতন।



বিবিসি'র বিশেষ প্রতিনিধি ম্যাট প্রোটগার জানান, "সেভিলের বিরুদ্ধে ৪৫০ জনকে যৌন নির্যাতনের খবর অপ্রত্যাশিত ও ভয়াবহ। এক জনের বিরুদ্ধে এত বিপুল সংখ্যক নির্যাতনের ঘটনা পুলিশ আগে কখনো পায়নি।"



২০১১ সালে ৮৪ বছর বয়সে সেভিলের মৃত্যু হয়। জিমি সেভিল ছিলেন ব্রিটিশ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিবিসি ওয়ানের শিশু-কিশোর বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও রেডিও ওয়ানের সঞ্চালক। সেভিল ১৯৯০ সালে ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথের কাছ থেকে বিশেষ পুরস্কার ও স্যার উপাধি লাভ করেন।

পুলিশ জানায়, তারা সেভিলের বিরুদ্ধে ১৭টি পুলিশি এলাকার ১৯৯টি ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে ৩১টি ধর্ষণের ঘটনাও রয়েছে বলে তারা নিশ্চিত করেন। খ্যাতির সুযোগ নিয়ে সেভিল শিশুদের ধোঁকা দিত।





সেভিলের এ অপকর্মের সঙ্গে আরো বহু ব্যক্তি জড়িত রয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং পুলিশ সার্বিকভাবে বিষয়টির তদন্ত করছে। তদন্তের জের ধরে বেশ কিছু উচ্চপদস্থ ও জনপ্রিয় লোকদের আটক করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন, জনপ্রিয় কমেডিয়ান ম্যাক্স ক্লিফোর্ড, ডিজে ডেভ লি ট্রাভিস ও টেলিভিশনের সাবেক প্রযোজক উইলফ্রেড ডিআথ। তবে তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এর আগে, জিমি সেভিলের সহযোগী হিসেবে সাবেক পপ তারকা গ্রে গ্লিটারকে যৌন নির্যাতনের দায়ে আটক করে লন্ডনের পুলিশ।



সেভিল তার বোনের নাতির ওপরও যৌন নির্যাতন চালিয়েছিলেন। বর্তমানে ৪৯ বছর বয়স্ক ওই নাতি সেভিলকে দানব বলে উল্লেখ করেছেন। ব্রিটেনের গার্ডিয়ান বিবিসির উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদেরকে "পরোয়াহীন, মাতাল ও অসংযমী" বলে আখ্যায়িত করেছেন। বিবিসি'র কর্মকর্তারা বিচারের উর্ধ্বে এবং এক্ষেত্রে তারা চীনের কর্মকর্তাদের চেয়েও বেশী সুবিধা ভোগ করেন বলে সংস্থাটির প্রধান লর্ড প্যাটেন নিজেই উল্লেখ করেছেন।

দৈনিক টাইমসও বিবিসি-কে এই বলে অভিযুক্ত করেছে যে সংস্থাটি নেপথ্যের অনেক নাটের গুরু সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আড়াল করেছে এবং সেভিল সংক্রান্ত এই প্রতিষ্ঠানের ঘরোয়া সংকটকে সিভিল-ওয়ার বা গৃহ-যুদ্ধ বলে উল্লেখ করেছে।



পশ্চিমা সমাজে নৈতিক অধঃপতন সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে। এমন কোনো দিন নেই যে ওই দিনে পশ্চিমা সমাজের নৈতিক নানা সংকটের খবর প্রকাশিত হচ্ছে না। পশ্চিমা সমাজের সব ক্ষেত্রে নৈতিক অনাচারের ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পাদ্রি, রাজনীতিবিদ, শিল্পী, খেলোয়াড় ও নামী-দামী ব্যক্তিত্বদের দীর্ঘ তালিকা দেয়া যায়। জিমি সেভিল এটা জানতেন যে তিনি একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব হওয়ায় এবং তার অনুষ্ঠানের বহু দর্শক থাকায় বিবিসি তার যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলো ফাঁস করবে না। আর এ থেকেই বোঝা যায় নৈতিক অনাচার ও ব্যভিচার পশ্চিমা সমাজে কত গভীরভাবে শেকড় গেড়েছে।

যে সমাজটি নিজেকে শিশু অধিকারের সংরক্ষক হওয়ার ও এ জন্য সবচেয়ে বেশি আইনি সহায়তা দেয়ার দাবি করে এবং এ ব্যাপারে অন্যদের জন্য নিজেকে আদর্শ বলে দাবি করে থাকে সেই সমাজেই শিশুরা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু নির্যাতনের দিক থেকে ব্রিটেনের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। দেশটিতে প্রতি বিশ মিনিটে একজন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ব্রিটেনে গত বছরে প্রতিদিন ৬০টিরও বেশি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ তোলা হয়েছে। ব্রিটেনে ২০১০ সালে ২৩ হাজারেরও বেশি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিল।



ব্রিটেনের ডেইলি মেইল জানিয়েছে, গত ৬ বছরে ব্রিটেনে শিশুদের ওপর ধর্ষণের ঘটনা শতকরা ৬০ ভাগ বেড়েছে। ব্রিটেনের পুলিশ ও সরকার দেশটির শিশুদের ওপর ধর্ষণের ঘটনার ব্যাপারে বিস্ময়কর অবস্থান নিচ্ছে। তারা এ ধরনের অপরাধ দ্রুত তদন্তের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও বাস্তবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং ব্যাপক সমালোচনার মুখে জনমতকে প্রবোধ বা সান্ত্বনা দেয়ার জন্যই তারা লোক-দেখানো কিছু ভূমিকা নিচ্ছেন।

সেভিলের পেশাগত সুনামের সোনালী দিনগুলোতে তার মাধ্যমে শিশু ধর্ষণের অনেক ঘটনার কথা শোনা যেত। কিন্তু সে সময় ব্রিটেনের পুলিশ ও বিচারবিভাগ কার্যকর তদন্তের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিবিসিও তার অনুষ্ঠানের ব্যাপক দর্শক-শ্রোতা থাকার অজুহাতে এইসব অভিযোগ ধামাচাপা দিত। অথচ সেভিলের কোনো কোনো যৌন অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে বিবিসি'র কর্মীদের সাক্ষ্যের সুবাদে।



সেভিলের জীবনের শেষের দিকে তাকে নিয়ে একটি ছায়াছবি নির্মিত হয়েছিল। এই ছায়াছবির নাম " গোপন তথ্য ফাঁস: জিমি সেভিলের জীবনের অজানা দিক"। এ ছায়াছবিতে কোনো কোনো মহিলার পরিচয় দেয়া হয়েছে যারা নিজেদেরকে সেভিলের যৌন পাশবিকতার শিকার বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এই ছায়াছবির চেয়েও যে বিষয়টি বেশি হৈ চৈ তুলেছে তা হল, বিবিসি তার নাইট নিউজ অনুষ্ঠানে এই ছায়াছবি প্রদর্শন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সেভিলের যৌন কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর নাইট নিউজ অনুষ্ঠানের সম্পাদক পিটার রিপন এ সম্পর্কিত ছায়াছবি প্রচার না করার জন্য বিবিসির পরিচালকদের পক্ষ থেকে ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। এভাবে বিবিসির পরিচালকরা সত্য গোপন করছেন এবং যৌন পাশবিকতার শিকার ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টি করেছেন। তাই পোলার্ড তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের ঘটনা বিবিসি'র পরিচালকদের জন্য আরো বেশি কলঙ্ক বয়ে এনেছে।



বিবিসি'র কর্মকর্তাদের যৌন কেলেঙ্কারির আরো নতুন ঘটনা ও নতুন খবর ফাঁস হওয়া সত্ত্বেও এইসব কলঙ্ক তদন্তের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে কয়েক দিন পর। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে জিমি সেভিলের মামলার ফাইল। বিবিসি'র মত একটি মাল্টি মিডিয়ার পরিচালকরা খুব ভালভাবেই জানেন কিভাবে ব্রিটিশ জনমতের দৃষ্টি থেকে বাস্তবতা ও বিশেষ করে বিবিসিতে বিরাজিত বাস্তবতাগুলোকে আড়াল করা যায় এবং গুরুত্বহীন ও প্রান্তিক বিষয়গুলোতে জনগণকে মাতিয়ে রাখা যায়।



এদিকে ব্রিটেনের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ দেশটির সংবাদ মাধ্যমের প্রতি কোনো আস্থা রাখেন না বলে এক জরিপে উঠে এসেছে। ব্রিটেনের সাধারণ মানুষ মনে করেন, সংবাদ মাধ্যমগুলো সত্য খবর প্রকাশের চেয়ে মুনাফা অর্জনকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে

ওদিকে আবারও যৌন কেলেঙ্কারিতে ফেঁসেছে ব্রিটিশ সরকারের অর্থে পরিচালিত সংস্থা বিবিসি। নরপশু জিমি সেভিলের পর বিবিসির আরেক লম্পটের সন্ধান পেয়েছে ব্রিটিশ পুলিশ। বিবিসির বিখ্যাত উপস্থাপক স্টুয়ার্ট হলের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ ও ১৪টি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছে তারা।



এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে রোজ রোজ এরকম ঘটনা ঘটছে দেখেও কি আমাদের গান্ধীজীর তিনটি বাদর হয়ে বসে থাকাটা ঠিক হবে ? আমরা মায়েরা সকলেই শৈশবে কোন না কোন সময় victim হয়েও কি গান্ধারী সেজে বসে থাকব ?
আমরা পারি না আমাদের সন্তানদের বাস যোগ্য একটু নিরাপদ পরিবার গঠন করতে ?
আমি নিশ্চিত, আমরা মায়েরা যদি একটু সচেতন হই তা হলে কোন দাদা,বাবা , কাকা কোন কারুর ক্ষমতা হবে না আমাদের সন্তানদের সর্বোনাশ করা ।
Dictionary থেকে হয় তো CHILD ABUSE কথাটাই মুছে যাবে ।

সারা বিশ্বের এখন ভয়ংকার পেশার নাম শিশু শ্রম। দিনে দিনে এই শ্রমের শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে, তারা আসহায় হচ্ছে কিন্তু প্রতিকারে কিছুই হচ্ছে না। বিশ্বের বিভিন্ন এনজিও সংস্থা, সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থা এর বিরুদ্ধে আলাপ, আলোচনা, পরিসংখ্যান তুলে ধরলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রতিদিনই জীবন ধারণ আর দু’বেলা আর দু’মুঠো অন্নের জন্য তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতেই দ্বিধাবোধ করছে না। মূলত তাদের নিজেদের খাওয়া আর পরিবারের খাওয়ার জন্য শিশুরা লেখাপড়ার পরিবর্তে পেশার কঠিন আবর্তে জন্মের পরেই চলে যাচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের একটি শ্রেণী তাদের ব্যবহার করে সুবিধা ভোগ করছে।
সারা দেশে প্রায় ৪৫ লাখ শিশু নিষিদ্ধ শিশু শ্রমের শিকার। এদের সোনালী ভবিষ্যত অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। যে বয়সে তাদের খাতা কলম নিয়ে স্কুলে যাবার কথা ছিলো, ঠিক সেই বয়সে শুধুমাত্র দারিদ্র্যের কারণে আজ ওরা শিশু শ্রমিক। গত চার বছরে এই শ্রমিক বেড়েছে ১০ লাখ।
২০১১ সালের সরকারি একটি জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিশু শ্রমিকদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃদ্ধি এমন এক পর্যায়ে এসে গেছে যে পরিস্থিতি দিনের পর দিন বেড়্ইে চলেছে। দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা এখন প্রায় ৭৯ লাখ।
শহর অঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে শিশু শ্রমের প্রবণতা অনেক বেশি। শিশু শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ১৫ লাখ শিশু শ্রমিক শহরে এবং ৬৪ লাখ রয়েছে গ্রামাঞ্চলে। এই শিশু শ্রমিকদের মধ্যে ৪৫ লাখ শিশু শ্রমিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত। ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রমে নিয়োজিত প্রায় ১৩ লাখ শিশু এক সপ্তাহে ১শ ৬৮ ঘণ্টার মধ্যে কাজ করছে প্রায় ৯০ ঘণ্টা।
বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং আইএলও’র জরিপ অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ রয়েছে ৪৫ ধরনের। আর এর মধ্যে ৪১ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করছে শিশুরা। শিশু শ্রমিকদের মধ্যে ৭৩ দশমিক ৫০ ভাগ পুরুষ শিশু এবং ২৬ দশমিক ৫০ ভাগ নারী শিশু। শিশু শ্রমিকের ৬ দশমিক ৭০ ভাগ আনুষ্ঠানিক খাতে এবং ৯৩ দশমিক ৭০ ভাগ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে মোটর ওয়ার্কসপে কাজ করা, ওয়েল্ডিং, গ্যাস কারখানা, বেলুন কারখানা, লেদ মেশিন, রিকশা চালানো, মাদক বাহক, বিড়ি শ্রমিক, বাস-ট্রাকের হেলপার, লেগুনার হেলপার, নির্মাণ শ্রমিক, গৃহ শিশু শ্রমিক, এমব্রয়ডারি, জাহাজ শিল্প, চিংড়ি হ্যাচারি, শুঁটকি তৈরি, লবণ কারখানা, বেডিং স্টোরের শ্রমিক, ইট ভাঙা, ইট ভাটা শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, ট্যানারি এবং রঙ মিস্ত্রিসহ আরো বিভিন্ন ধরনের কাজ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর(বিবিএস) ২০০৮ সালের হিসেবে অনুযায়ী দেশে শূন্য থেকে ১৭ বছর বয়সের শিশুর সংখ্যা ৬ কোটি ৭৭ লাখের বেশী। এদের মধ্যে প্রায় ৩৫ লাখ শিশু নানা ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত। মোট শিশু শ্রমিকদের মধ্যে ১৩ লাখ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। ২০০৮ সালের হিসেবে থেকে ২০১২ সালের হিসেবে যে পার্থক্য তৈরি হয়েছে তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সরকারি প্রকল্পগুলো তেমন একটা কাজে আসেনি। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে ১০ লাখ। শুধু তাই নয় আগের চেয়ে নির্যাতনের মাত্রা কমেনি, বরং বেড়েছে। শিশু শ্রমিকদের কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মালিকরা স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক কোন আইনের তোয়াক্কা করছে না কেউ। এমনকি মজুরি কম দিয়ে প্রতিনিয়তই তাদের ঠকাচ্ছে। সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদ উপেক্ষা করে শিশুদের দিয়ে জোর করে কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অথচ এখন পর্যন্ত শিশু শ্রমের দায়ে বাংলাদেশে একজনকে শাস্তি পেতে হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না।
শিশুর বয়স নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। কত বছর বয়স পর্যন্ত শিশু হিসেবে ধরা হবে তা সুনির্দিষ্ট একটি আইনে বলা নেই। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা(আইএলও) শিশু আইনের বিভিন্ন ধারায় কাজের ধরনের ক্ষেত্রে শিশুর বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ১৬ থেকে ১৮ বছরের শিশুরা এই কাজ করতে পারবে। ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের শিশুরা হালকা পরিশ্রমের কাজ করতে পারবে।
অন্য দিকে বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের শিশু আইনে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত একজনকে শিশু হিসেবে ধরা হয়েছে। আবার জাতীয় শিশু নীতিতে ১৪ বছর বয়সের কাউকে শিশু হিসেবে চিত্রিত করার বিধান দেওয়া আছে। ভিন্ন ভিন্ন বয়সের সুযোগ নিয়ে শিশুদের বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। আইনে শূন্য থেকে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের সবধরনের শ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ৫ বছর বয়সের শিশুকেও জোর করে নানা ধরনের কাজে নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে।
জানা গেছে, সরকার ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধে আইএলও’র ১৮২ সনদে স্বাক্ষর করেছে। আইন অনুযায়ী শিশু বিক্রি, পাচার, ভুমি দাসত্ব, বেশ্যাবৃত্তি, অশ¬ীল দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য শিশুর ব্যবহার, মাদক দ্রব্য উৎপাদন, মাদক পাচারে শিশুর ব্যবহার করাকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। এই সনদ অনুযায়ী ১৬ থেকে ১৮ বছরের কম বয়সের কোন শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে পারবে না।
বাংলাদেশে শিশু শ্রমের অন্যতম বা একমাত্র কারণ হলো দরিদ্র্য। দেশের ৩১ দশমিক ৬ ভাগ মনুষ দরিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। এ সব পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু আয় দৈনিক ৮০ টাকারও কম। এদের অনেকের নূন্যতম কোন জমিও নেই। ফলে এসব পরিবারের শিশুরা তাদের পেটের ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য শিশু শ্রমে নিপতিত হয়। নিজেদের জন্য, পরিবারের জন্য তারা জীবন বাজি রেখে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতেও দ্বিধা বোধ করে না।
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অর্থাৎ শিশু শ্রম নিবরণ করতে হলে প্রয়োজন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগ। পরিবারগুলোর আর্থিক সামর্থ্য বৃদ্ধি ও পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কারণ অধিকাংশ দরিদ্র্য পরিবারের বেশি সন্তান থাকে। শিক্ষা ব্যবস্থায় বৃত্তিমূলক শিক্ষা দিতে হবে। প্রয়োজনে এ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক স্তর থেকে কারিগরি স্কুলের ব্যবস্থা করে উপবৃত্তির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। যাতে তারা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠা হতে পারে।

১২ জুন বিশ্ব শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) উদ্যোগে ২০০২ সালের ১২ জুন পৃথিবীতে প্রথম বিশ্ব শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়। চলতি বছরে দিবসটির প্রতিপাদ্য হল Extend social protection : combat child labour. আমাদের দেশেও দিবসটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এ দেশকে এখনও শিশু শ্রমমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি।

শিশু শ্রমের দিক থেকে বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। দেশে তিন শতাধিক কাজে অন্তত ৭৪ লাখ শিশু নিয়োজিত। অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৯টি কাজে নিয়োজিত ১৩ লাখ শিশু।
সরকারি হিসাবে, ৯৯ শতাংশের বেশি শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছে। ঝরেপড়া শিশুদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন শ্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।
২০১১ সালের সরকারি একটি জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। রিপোর্টে দেখা যায়, শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে শিশু শ্রমের প্রবণতা অনেক বেশি। শিশু শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ১৫ লাখ শিশু শ্রমিক শহরে এবং ৬৪ লাখ রয়েছে গ্রামাঞ্চলে। শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আমরা কি তাদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে পারছি? এ বিষয়ে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে মানুষকে আগে সচেতন হতে হবে, তবেই দেশ শিশু শ্রমমুক্ত হবে। - See more at: Click This Link

ভারতের শিশু শ্রমের উচ্চ হার নিয়ে চিন্তিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, আইএলও। তবে সাম্প্রতিক এক সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে গত এক দশকে দেশটিতে শিশু শ্রমের হার কিছুটা কমেছে। দরিদ্র শিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে শিশু শ্রম আইনে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে ভারত সরকার।

দশ বছরের পার্বতীর দিন শুরু হয় ভোর ৫টায়। ঘুম থেকে উঠেই বাবা-মা আর দু'বোনের সঙ্গে বেরিয়ে পড়তে হয় আবর্জনা কুড়াতে। বাড়ি ফিরে চলে কুড়ানো জিনিসপত্র বাছাইয়ের কাজ। ইচ্ছে না থাকলেও প্রতিদিন এই একই রুটিন মেনে চলতে হয় পার্বতীকে।

পার্বতী বলে 'আমার খুব স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বাবা-মা'কে সাহায্য করতেই আমাকে এত কষ্ট করতে হয়। মাঝে মাঝে হাতে অনেক ব্যথা নিয়েই কাজ করতে হয়।'

ভারতে দরিদ্রতাকে এড়িয়ে যেতে না পারায় পার্বতীর মতো কয়েক মিলিয়ন কর্মজীবী শিশু বঞ্চিত প্রাথমিক শিক্ষা থেকে। কিন্তু পরিবারের সব সদস্যের মুখে দু'বেলা দুমুঠো অন্ন জুটাতেই নিজের ছোট্ট শিশুটিকে বাধ্য হয়েই পাঠাতে হয় এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর কাজে।

পার্বতীর বাবা বলেন, 'আমার একার পক্ষে সংসার চালানো সম্ভব নয়। তাই তিন মেয়েকেই কাজে পাঠাতে হচ্ছে। আমরা ৫জন মিলে দিনে ৪শ' থেকে ৫শ' রুপি আয় করি।'

দরিদ্র শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করে কাজের সুযোগ তৈরি করতে ভারতের ১৯৮৬ সালে প্রণীত শিশু শ্রম আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে। যাতে করে ১৪ বছরের কমবয়সী শিশুরা তাদের স্কুলের পর কিংবা স্কুল ছুটিতে পরিবার ও পারিবারিক ব্যবসায় সাহায্য করতে পারবে।

এ ব্যাপারে এনজিও পরিচালক কমাল গানোত্রা বলেন, 'আমরা উন্নত দেশের তালিকায় নাম লিখাতে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের বিশাল অঙ্কের জনগণের অবস্থা এখনও অনুন্নত। এক সময় না এক সময় আমাদের অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা যদি আজ তাদের পড়াশোনার সুযোগ তৈরি করতে না পারি তবে পরবর্তীতে এই প্রজন্মকে ভুগতে হবে।'

আইএলও'র এক রিপোর্টে দেখা গেছে, অনুন্নত দেশগুলোতে দরিদ্র শিশুরা কম বেতনে এবং অনেক সময় বিনা বেতনের কাজে নিয়োজিত থাকে। পড়া-শুনা করতে না পারাসহ দীর্ঘদিন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করায় এসব সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা বড় হলে নানারকম সমস্যায় ভুগে। যার নেতিবাচক ফল ভোগ করতে হয় ঐ দেশ ও জাতিকে।



আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)’র মহাসচিব গায় রাইডার বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশু-কিশোর নিয়োগ ও কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি নিরসনে জাতীয় নীতিমালা থাকা জরুরী।
শিশু শ্রম ২০১৫ ওয়ার্ল্ড রিপোর্টে আইএলও মহাসচিব বলেন, আমাদের নতুন প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, শিশু শ্রম নিরসন ও শিশু-কিশোরদের জন্য শালীন কাজের অভাব পূরণে একটি সুসঙ্গত জাতীয় নীতিমালা প্রয়োজন। শিশুদেও চাকরির ন্যুনতম বয়স পর্যন্ত স্কুলে ধরে রাখা এবং সারা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যুনতম শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টিতে এটি জরুরী। কারণ এই শিক্ষাই তার ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে। এসব শিশুদের মৌলিক জ্ঞান ও ভবিষ্যত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে এটাই একমাত্র পথ।
শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আইএলও প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট অন চাইল্ড লেবার ২০১৫: পেভিং দ্য ওয়ে টু ডিসেন্ট ওয়ার্ক ফর ইয়ং পিপল’ প্রতিবেদনে গায় রাইডার বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রম পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ পরামর্শ দেন। ১২ জুন ছিলো আন্তর্জাতিক শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস।
আইএলও প্রতিবেদনে বলা হয়, নি¤œ আয়ের দেশগুলোতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ শিশু ১৫ বছর বয়সের মধ্যে স্কুলের পড়ালেখা শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করে।
শান্তির জন্য নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী এ প্রতিবেদনে শিশু শ্রম নিরসনে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “যখন আমরা আমাদের ঔরসজাত সন্তানের জন্য ভাবি, তখন আশা করি তারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং অধ্যাপক হওয়ার জন্য জন্মেছেÑ সারা দুনিয়াটাই তাদের জন্য। কিন্তু যখন আমরা অন্য শিশুদের সম্পর্কে কথা বলি, তখন ভাবি ঠিক আছে, তারা গরীব শিশু, তারা কাজ করুক, আমরা তাদের একটু একটু সহায়তা করবো। আমাদের এ মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সব শিশুকেই আমাদের শিশু বলে বিবেচনা করতে হবে।”
শিশু অধিকার কর্মী ভারতীয় নাগরিক কৈলাশ সত্যার্থি গত ১১ জুন জেনেভায় পক্ষকালব্যাপী শুরু হওয়া আইএলও’র ১০৪তম অধিবেশনে বক্তব্য দেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয় শিশু শ্রম বন্ধ এবং কিশোরদের জন্য শালীন চাকরি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে দু’টি বাধা রয়েছে। ১২টি দেশে পরিচালিত জরিপে শিশু শ্রমের সাথে যুক্ত শিশু এবং ন্যুনতম শিক্ষা শেষ না করেই যারা স্কুল ত্যাগ করেছে তাদের ভবিষ্যতও কর্মসংস্থান অনিশ্চিত হয়ে পরে। তারা দক্ষতা ও শিক্ষার অভাবে পরবর্তীতেও ভালো চাকরির পায় না।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা তাড়াতাড়ি স্কুল ত্যাগ করেছে তারা নিরাপদ এবং স্থিতিশীল চাকরি পায় না। অনেক দেশেই ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা কাজ করে এবং তারা ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত একটি বিশেষ শ্রেণী হিসেবে চিহ্নিত।
এই প্রতিবেদনে শিশুদের ন্যুনতম শিক্ষা নিশ্চিত করার পর একটি শালীন কাজে যোগ দেয়ার পরিস্থিতি তৈরি করতে হস্তক্ষেপ করার পরামর্শ দেয়া হয়। এতে ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ৪৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে মেয়ে শিশু ও নারীদের প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগ দিতে বলা হয়।
আইএলও’র সাম্প্রতিকতম অনুমানে বলা হয়েছে, বিশ্বের ১৬৮ মিলিয়ন শিশু শ্রমে যুক্ত এবং এদের মধ্যে ১২০ মিলিয়ন শিশুর বয়স ৫ থেকে ১৪ বছর। এ প্রতিবদনে এ বিষয়টির ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।

২০০২ সালে বিশ্বজুড়ে শিশুদের জন্য এই দিবসটি ঘোষনা করেছিল। পৃথিবীর নানা প্রান্তে লক্ষ লক্ষ শিশু কল-কারখানা, হোটেল রেস্তোরা, ঘর বাড়ীতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। শৈশবের আনন্দ, মাতা পিতা পরিবার পরিজন থেকে স্নেহ বঞ্চিত শিশুদের কোথাও কোথাও আইন লঙ্ঘন করে অমানবিক পীড়ন করার ঘটনা আকছার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক স্তরে তথা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি দেশের শিশু শ্রম বন্ধ করার আইনের ফাঁক দিয়ে একশ্রেনীর মানুষ অবাধে শিশুদের দিয়ে কম মজুরীতে কাজ হাসিল করছে। একদিকে সরকারী আইন অন্যদিকে বাস্তব পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ংকর আকার নিচ্ছে। প্রতিবছর ১২ই জুন তারিখে আন্তর্জাতিক ভাবে পালিত হয় শিশু শ্রম বিরোধী দিবস – বহু সময় অতিক্রান্ত হয়েছে INTERNATIONAL LABOUR ORGANISATION-র ঘোষনা, এখনো বিশ্বের বুক থেকে দূর হয়নি শিশুর অমানবিক শ্রমদানের দৃশ্য। আধুনিক সভ্যতার যুগে শিশু শ্রম দগদগে ক্ষত হিসেবে চিহ্নিত।
২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক শিশু শ্রম বিরোধী দিবসে INTERNATIONAL LABOUR ORGANISATION-র এবারের বিষয় – NO TO CHILD LABOUR, YES TO QUALITY EDUCATION.
পৃথিবীর নানা প্রান্তের পাশাপাশি রাজ্যেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পালিত হয় আন্তর্জাতিক শিশু শ্রম বিরোধী দিবস।



প্রতিবছর বাংলাদেশে উদযাপিত হচ্ছে শিশু অধিকার সপ্তাহ। এ সময়ে শিশুদের নিয়ে বেশ ক'টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্ব কন্যা শিশু দিবস, বিশ্ব শিশু দিবস, পথশিশু দিবস ইত্যাদি। যেহেতু শিশুদের নিয়ে অনেকগুলো দিবস পালন করা হয়ে থাকে সে কারণে ১৯৯০ সাল থেকে বাংলাদেশে এ সময়কালে শিশু অধিকার সপ্তাহ উদযাপন করা হয়ে থাকে। 'বয়ঃসন্ধিকালে সৈনিক যারা_ বিশ্ব জয় করবে তারা' এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশে এবার শিশু অধিকার সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। মানব সন্তান জন্মের পর থেকে কত বছর বয়স পর্যন্ত তাকে শিশু বলা যাবে, এই প্রশ্নের উত্তরে জীবনের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘের "শিশু অধিকার সনদ"-এ মতামত রাখা হয়েছিল, ১৮ বছর হবে শিশুর সর্বোচ্চ সময়কাল। আমাদের দেশে শিশুর বয়স নির্ধারণসহ শিশু উন্নয়ন বিষয়ক ছয়-সাতটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বার করলেও প্রকৃতপ েশিশুর কোন সুনির্দিষ্ট বয়স দীর্ঘদিন ধরে নির্ধারিত ছিল না। এসব চুক্তির কোনটিতে শিশুর বয়স ধরা ছিল ১৪ বছর, কোনটিতে ১৬ আবার ত্রে বিশেষে ১৮ বছর। এ ছাড়াও আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে শিশুর বিভিন্ন ধরণের বয়সের উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশে ১৯৯৪ সালে প্রণীত জাতীয় শিশু নীতিতে শিশুর বয়স সীমা ১৪ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। বিভিন্ন মহলের প থেকে একাধিক স্তরে বিন্যস্ত শিশুর বয়সকালগুলোকে একটিমাত্র সময়কালকে শিশুর বয়স নির্ধারণ করার দাবি ওঠার পরিপ্রেেিত ২০০৩ সালের ১ জুন সরকার শিশুর একটি বয়স সীমা চিহ্নিত করেছে। সেখানে শিশুর বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয় ১৬ বছর সময়কে। প্রতিটি শিশু বেঁচে থাকার ও বিকশিত হওয়ার অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। ছেলেশিশুর মতো কন্যাশিশুরাও এ অধিকারের সমান দাবিদার। আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদের ৬ নম্বর ধারায় স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, 'রাষ্ট্র শিশুর জীবন রা ও পূর্ণ বিকাশে সকল প্রকার দায়িত্ব পালন করবে।' এছাড়া ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সব শিশুর মৌলিক, মানবিক প্রয়োজন পূরণ আমাদের সাংবিধানিক অঙ্গীকারও বটে। উল্লেখ্য, দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশের বেশি শিশু। এসব শিশুর সুরায় রয়েছে জাতীয় শিশু নীতি, জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা, শিশু সনদসহ নানা ধরনের আইন। শিশুদের অধিকার রায় সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রতি বছর নানা দিবস পালিত হয়। শিশুরা তাদের অধিকার পূরণের প্রত্যাশা করে সরকারের কাছে। সরকার আসে সরকার যায়; কিন্তু তাদের অধিকার আর পূরণ হয় না। নির্যাতনের করুণ কাহিনী রয়ে যায় একই তিমিরে। এদিকে শিশুদের চাহিদা ও প্রয়োজনের কথা ভেবে তৈরি হয়েছে শিশুদের জন্য একটি দলিল বা শিশু সনদ। ১৯৮৯ সালে ঘোষণাকৃত এ সনদ আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হয় ১৯৯০ সালে। এ সনদে প্রথম স্বারকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশও একটি। শিশু অধিকার সনদ প্রণয়নের পটভূমি

১৯২৩ সালে সেভ দি চিলড্রেনের প্রতিষ্ঠাতা ইগল্যান্টিং জেব শিশু অধিকারের জন্য সাতটি বক্তব্য বিষয় তৈরী করেছিলেন যা পরবর্তীকালে সেভ দি চিলড্রেন আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে ।
১৯২৪ সালে তৎকালীন লীগ অব নেশনস্ - এ অধিকারগুলো গ্রহণ করে এবং " মানবজাতির সর্বোত্তম সেবা যা কিছু দেবার আছে তা শিশুরাই পাওয়ার যোগ্য" বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষিত সনদে দুটি অনুচ্ছেদে শিশুদের অধিকার স্বীকার করে নেয়া হয়।
১৯৫৩ সালের অক্টোবর মাসে ইউনিসেফ ও আন্তর্জাতিক শিশু কল্যাণ ইউনিয়নের উদ্যোগে শিশুদের বিশেষ বিবেচনায় আনার ল্যে প্রথম 'বিশ্ব শিশু দিবস' উদযাপিত হয়।
১৯৫৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে শিশুদের বিষয়ে ১০ টি অধিকার সম্বলিত একটি ঘোষণা পত্র প্রকাশিত হয়।
১৯৭৯ সালকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক শিশু বর্ষ হিসেবে ঘোষণা দেয়।
১৯৯১ সালে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে শিশু অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ কমিটির প্রথম অধিবেশনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয় -
বৈষম্যহীনতা: গোত্র, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক, জাতীয়তা কিংবা সামাজিক পরিচয়, শ্রেণী, জন্মসূত্র কিংবা অন্য কোন মর্যাদা নির্বিশেষে প্রতিটি শিশুই কোন প্রকার বৈষম্য ছাড়াই এই ঘোষণায় বর্ণিত সব ধরণের অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করবে।
শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ: সরকারী ও বেসরকারী সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান, আদালত, প্রশাসন বা আইন প্রণয়নকারী ব্যক্তিবর্গ যে-ই হোক না কেন শিশু বিষয়ে যে-কোন ধরণের কার্যক্রমে শিশুর স্বার্থই হবে প্রথম ও প্রধান বিবেচনার বিষয়।
শিশুর বেঁচে থাকা ও বিকাশ: প্রতিটি শিশুর বেঁচে থাকার জন্মগত অধিকারকে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ স্বীকৃতি দেবে। অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র শিশুর বেঁচে থাকার এবং উন্নয়নের জন্য যথাসম্ভব সর্বাধিক নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করবে।
শিশুর অংশগ্রহণ: প্রতিটি শিশু তাদের বক্তব্য/ মতামত দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে বা সম্ভব হলে বাস্তব কাজে অংশ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন েেত্র অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে সকল েেত্র শিশুদের অংশগ্রহণ অবশ্যই তাদের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হতে হবে।
জবাবদিহিতা: ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও সংগঠন প্রত্যেকে যে কোন অবস্থান থেকেই শিশু অধিকার সংরণে ভূমিকা রাখতে পারে। এ েেত্র জবাবদিহিতার জন্য প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাছে দায়বদ্ধ।
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের অধীনে শিশু অধিকারসমূহ

অপরাধের েেত্র ন্যায় বিচার
গ্রেফতার ও দন্ড থেকে সুরা
দত্তক গ্রহণ ও প্রদান
পাচার থেকে সুরা
পরিবার বঞ্চিত শিশুর েেত্র সঠিক যত্ন
মর্যাদা ও সুনাম
মানবিক আচরণ
শিক্ষা লাভ
শোষণ থেকে রক্ষা
সামাজিক নিরাপত্তা
অবসর ও বিনোদন
চিকিৎসা পরিচর্যা
পারিবারিক সংহতি
প্রতিবন্ধী শিশু
বেঁচে থাকা
বাংলাদেশে শিশু পরিস্থিতি
মৃত্যু হার: ১৯৯০ সালে এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এক হাজার শিশুর মধ্যে জন্মের কয়েক ঘন্টা পর ১২টি শিশু, জন্মকালীণ জটিলতায় ৮টি, অকালপক্কতার কারণে ৪টি শিশু মারা যায়, জন্মের পরবর্তী এক সপ্তাহে আরও ২৩টি শিশু অকালপক্কতায় ১৬টি এবং ধনুষ্টংকারে ৭টি শিশু মারা যায়।
শিক্ষা: ১৯৯৬ সালে প্রাঃ, শিঃ, অঃ -এর এক জরিপে দেখা গেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযুক্ত (৬-১০বছর বয়সী) শিশুর সংখ্যা ১কোটি ৯০ লাখ ৬১ হাজার, ১৯৯৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯৬%, ১৯৯১ এ হার ছিল ৭৭%।
উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা: বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা, ঝরে পড়া অথবা শিার বয়স পার হয়ে গেছে এমন শিশুর সংখ্যা ১কোটি ৯০ লাখ। এদের জন্য সরকার উপ-আনুষ্ঠানিক শিা চালু করেছে, ৪৩৫টি এনজিও উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পরিচালনা করছে।
লিঙ্গ বৈষম্য: সমাজ ব্যবস্থায় পরিচিত বৈশিষ্ট্য ঃ পরিবার তথা সমাজের প্রায় প্রতিটি স্তরে ছেলের তুলনায় মেয়ে শিশুরা বিভিন্ন অধিকার ভোগ করার েেত্র বৈষম্যের স্বীকার হয়।
শিশুশ্রম: শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও বেঁচে থাকার নির্মম প্রয়োজনে বিপুলসংখ্যক শিশু ুদ্র কারখানা, ওয়ার্কশপ, খাবারের দোকান, বাস-স্কুটার, গৃহস্থালীসহ বিভিন্ন শ্রমে নিযুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছে।
পুষ্টি ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা: ২০০৫ সালের বিশ্ব শিশু পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুসারে অপুষ্টির কারণে প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে ৫ বৎসর পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা যায় ৬৯টি শিশু।
পথশিশু: সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিশু ঃ দারিদ্র, সংসার ভেঙ্গে যাওয়া, বাড়ী পালানো, যৌন নিপীড়নসহ বিভিন্ন কারণে শিশুরা পথশিশু হয়ে ওঠে। এরা রেল ও বাস ষ্টেশন, পার্ক, খোলা আকাশের নীচে ইত্যাদি ঝুঁকিপূর্ণ যায়গায় জীবন যাপন করে।
বাংলাদেশে শিশু শোষণ
বাল্যবিবাহ
প্রতিবন্ধী শিশু
পতিতালয়ে বেড়ে ওঠা শিশু
কর্মে নিয়োজিত শিশু
গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশু
গার্মেন্টস শ্রমিক
বিড়ি শিল্পে শিশু শ্রমিক
দেশে শিশু অধিকার লঙ্ঘনের চিত্র এখনো স্বাভাবিক হয়নি। নানা কারণে শিশুদের নিয়ে তাদের পরিবারের দিন কাটে আতঙ্কে। গত কয়েক বছরের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে শিশুর প্রতি অপরাধ প্রবণতা কমে এলেও এখনো চলছে শিশু নির্যাতন। এখনো হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, বখাটেদের উৎপাত, পাচার, অস্বাভাবিক মৃতু্য, এসিড নিপেসহ শিশু অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। ইউনিসেফের 'বিশ্ব শিশু পরিস্থিতি ২০০৬' অনুসারে, দেশে দেড় কোটির বেশি শিশু সুরার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে সমাজের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ দেশের প্রায় ৭০ লাখ শিশু নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত। ৫০ লাখ শিশু বস্তিতে বসবাস করছে। ৩০ লাখের বেশি শিশু শিৰা সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বছরে বাংলাদেশের ১২ লাখ শিশু বিভিন্ন দেশে পাচারের শিকার হচ্ছে। ১৪ লাখ শিশু শারীরিক প্রতিবন্ধী আর ১ হাজারেরও বেশি শিশু দেশের বিভিন্ন জেলে আটক রয়েছে। গত কয়েক বছরে শিশু হত্যার কয়েকটি লোমহর্ষক ঘটনা এ দেশের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছিল। এরপর দ্রম্নত বিচার আইনের আওতায় শিশু হত্যার ঘটনায় আদালতের বেশ কয়েকটি রায়ে মানুষ কিছুটা আশ্বস্ত হলেও সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম (বিএসএএফ) রিসোর্স সেন্টারের তথ্য অনুসারে দেশে এখনো চলছে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণসহ লোমহর্ষক ঘটনা। তবে আগের তুলনায় এর ভয়াবহতা কিছুটা কমে এসেছে। সূত্র মতে, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এক বছরে দেশে ৩ হাজার ৬৮টি শিশু নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এ সময়ে দেশে খুন হয়েছে ১৭৬টি শিশু। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৪২টি, অপহৃত হয়েছে ৭৭টি, নির্যাতিত হয়েছে ৬০টি, আত্মহত্যা করেছে ৮৬টি শিশু। এছাড়া শিশুরা হত্যা চেষ্টা, এসিড নিপে, বখাটেদের অত্যাচার, কটূক্তিসহ নানান অপরাধের শিকার হয়েছে। ২০০৬ সালে শিশু অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৯৩৬টি। এর আগে ২০০১ সালে মোট ৩ হাজার ৭৭৬টি শিশুর অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছিল। ২০০২ সালে তা দ্বিগুণ হয়ে ৭ হাজার ৪৪৫-এ এবং ২০০৩ সালে ৭ হাজার ২৬৮-এ দাঁড়িয়েছিল। ২০০২ সালে শিশু হত্যার ঘটনায় দেশে এক ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। ওই সময় বাপ্পি, তৃষা, রত্না, ডন, রম্নবেল ও নওশিনসহ শিশু হত্যার লোমহর্ষক ঘটনায় সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল প্রতিটি পরিবার। শিশুর সঙ্গে খেলা করা নিয়ে শিশু রত্নাকে, ডনকে যৌতুকের লোভে, শিহাবকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য হত্যা করা হয়েছিল। বাবার কোলে নিহত হয়েছিল শিশু নওশিন। এসব হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ তখন ােভে ফেটে পড়েছিল। এ দেশ শিশুদের বসবাসের অনুপযোগী মনে করে ধিক্কার জানিয়েছিল বিবেকবান মানুষ ও বিশ্ববাসী। এরপর থেকে সরকারও তৎপর হয়েছে শিশু হত্যা ও নির্যাতন বন্ধে। এদিকে এখনো বন্ধ হয়নি শিশু শ্রম। আইএলওর সহযোগিতায় সর্বশেষ সরকারি এক হিসাবমতে, দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৭৯ লাখ ৮ হাজার। তবে বর্তমানে এ সংখ্যা ১ কোটির ওপরে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। বিএসএএফের তথ্যমতে দেশে ৪৩০ ধরনের শিশু শ্রম রয়েছে। এর মধ্যে ৬৭টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১১টি গুরুতর ঝুঁকিপূর্ণ। দেশে শিশু পাচারের ঘটনাও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এছাড়া হাজার হাজার প্রতিবন্ধী শিশু তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। প্রায় ৬৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী পথশিশু শিার সুযোগ পাচ্ছে না। পথশিশুদের অবস্থাও ভয়াবহ। সমাজসেবা অধিদফতরের ২০০১ সালের এক জরিপমতে, দেশে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ২২৬টি পথশিশু রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৮০৭টি। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা মতে, এ সংখ্যা প্রায় ২০ লাখের কাছাকাছি। এ সব দুঃখজনক চিত্র বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে আমাদের দেশে। শিশু অধিকার বিষয়ক অনুষ্ঠানমালায় শিশু অধিকার রার কথা বলে বলে মুখে ফেনা তুললেও অবস্থা যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। যদিও সরকার ইতোমধ্যেই শিশু বান্ধব অনেক আইন ও নীতি প্রণয়ন করেছে, অনেকগুলো বাস্তবধমর্ী পদপেও নেওয়া হয়েছে। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলোও শিশু অধিকার রায় কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু তারপরও অবস্থা যে তিমিরে সেই তিমিরে রয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেন? তাহলে কি আমরা বড়রা যেসব পরিকল্পনা করছি ছোটদের জন্য তা' তেমন কার্যকরী হচ্ছে না? আমাদের মনে হয় শিশুদের মঙ্গলে যে সব পদপে নেওয়া হচ্ছে তা' শিশুদের-ই পরিকল্পনা করা উচিৎ। বড়রা শুধুমাত্র তাদের ভাবনা-চিন্তার সমন্বয় ঘটিয়ে তাদের তাদের দিয়েই কর্মপরিকল্পনা তৈরি করাতে পারলে অবস্থার পরিবর্তন আসতে পারে।

উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে ইতালিতে যাওয়া অভিবাসী শিশুরা শোষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে সেদেশে অভিবাসী শিশুদের দুর্দশার এই চিত্র ফুটে উঠেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে দুই হাজার ৫৫৬ জন শিশু ইতালির ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে এসেছে। এই শিশুদের বেশির ভাগ সঙ্গীহীন। তারা মিসরসহ উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে ইতালিতে এসেছে। কমবয়সী এই শিশুরা অনুমোদনহীনভাবে কুলির কাজ করে।
দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে মুক্তির প্রত্যাশায় এই শিশুরা জন্মভূমি ছেড়েছে। কিন্তু ইতালিতে এসে তাদের আশা ভঙ্গ হয়েছে। সেখানে তারা পড়েছে নতুন সংকটে। ইতালিতে নামমাত্র মজুরিতে তারা অবৈধভাবে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এ ছাড়া যৌন নিপীড়নেরও শিকার হচ্ছে এসব শিশু।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ইতালির উপকূলে ৪৫ হাজার ৪০০ জন অভিবাসন-প্রত্যাশী এসেছে। এই একই সময়ে গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৪১ হাজার ২৪৩ জন। অর্থাৎ, এ বছর অভিবাসন-প্রত্যাশীদের আগমন বেড়েছে। এবার আসা অভিবাসন-প্রত্যাশীদের মধ্যে হাজারো শিশু রয়েছে।

গত মাসের শেষের দিকে রোমে ফল ও সবজির একটি পাইকারি বাজারে গিয়ে অন্তত ১০ জন মিসরীয় শিশুকে কাজ করতে দেখা যায়। তাদের বয়স ছিল খুব কম। এক ব্যবসায়ীর ভাষ্য, সেখানে শিশুদের সংখ্যা ইদানীং বাড়ছে।

উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসী শিশুদের ঢলে ইতালির কর্তৃপক্ষও দিশেহারা। দেশটির কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন, সঙ্গীহীন অনেক শিশু ইতালিতে অবৈধভাবে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এই শিশুরা নানাভাবে শোষিত হচ্ছে। তাদের রক্ষায় আইনে পরিবর্তন আনার দাবি উঠছে।

সরকারি তথ্য অনুসারে, ইতালিতে মিসরের অনেক শিশু আছে।

পরিবারই ওই শিশুদের ইতালিতে পাঠিয়েছে। লক্ষ্য একটাই—অর্থ উপার্জন, সেই অর্থে পরিবারের ঋণের বোঝা কমানো। কিন্তু সে প্রত্যাশা খুব কমই পূরণ হচ্ছে। কারণ শিশুরা খুব কম মজুরি পায়। উল্টো জোটে শোষণ।

ইতালিতে কুলি হিসেবে কাজ করছেন মিসরের ১৮ বছর বয়সী মাহমুদ। তাঁর ভাষ্য, তিনি দিনে ২০ ইউরো করে মজুরি পান। ১৬ বছর বয়স থেকে ইতালিতে কুলি হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।

রোমে অন্য এক ব্যবসায়ী জানালেন, কাজ পেতে শিশুদের অনেকেই তাদের বয়স নিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামনেই অভিবাসী শিশুদের কাজ করতে দেখা গেছে। কিন্তু তাঁরা ওই শিশুদের কিছুই বলছেন না। কাজ করতে গিয়ে অভিবাসী শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যেও পড়ছে।

সমস্যার কথা স্বীকার করে ইতালির শ্রম ও সামাজিকবিষয়াবলী মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কোনো একক কর্তৃপক্ষ এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।

সেভ দ্য চিলড্রেনের কর্মকর্তা ইলারিয়া ওলিভিরি বলেন, ‘পরিবারকে অর্থ পাঠাতে যথেষ্ট আয়ের আশায় শিশুরা আসে। কিন্তু আসার পর তারা বুঝতে পারে, ব্যাপারটা অত সহজ নয়।’

সেভ দ্য চিলড্রেনের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘অনেক শিশু মজুরি পাওয়ার আগেই চাকরি হারায়। এটা এক ধরনের শোষণ।’

উত্তর আফ্রিকার ওই অভিবাসী শিশুরা ইতালিতে কেবল শ্রমশোষণই নয়, যৌন নির্যাতনেরও শিকার হচ্ছে। অনেক শিশু আবার অর্থের জন্য যৌন পেশায় জড়িত হচ্ছে। এতে ওই সব শিশুর মধ্যে যৌনবাহিত রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

এক চিকিৎসকের ভাষ্য, তাদের চিকিৎসা দলের কাছে আসা আফ্রিকান শিশুদের অর্ধেক যৌন নিপীড়নের শিকার।

ভাগ্য বদলের আশায় ইতালিতে এসে মোহভঙ্গ হয়েছে উত্তর আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসী শিশুদের। এই শিশুদের এখনকার অনুভূতি প্রতিফলিত হয় ১৬ বছর বয়সী মিসরের এক শিশুর কণ্ঠে। তার ভাষ্য, ‘আমি যদি আবার ইতিহাসটা পাল্টে দিতে পারতাম, কখনোই মিসর ছাড়তাম না।’

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে আলোচিত শিশু যৌন-নির্যাতনের ঘটনায় সাতজনকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, জিম্মি ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে শত শত শিশুকে দিয়ে যৌন নির্যাতশিনের ঘটনা ঘটিয়ে তা ভিডিওতে ধারণ করে রাখতো একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ওই ঘটনায় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বিচার বিভাগী তদন্তের নির্দেশ দেন। চক্রটি কয়েক বছর ধরে শিশুদের দিয়ে এ নির্যাতন চালিয়ে আসছে। তাদেরকে জিম্মি করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে যৌন নির্যাতন করা হতো। এসব ঘটনার ভিডিওচিত্রও করে রাখা হতো। সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে এসব ঘটনা কাউকে বলত পারতো না নির্যাতনের শিকার শিশু ও তাদের অভিভাবকেরা। অবশেষে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কাসুর শহেরর নিকটবর্তী গ্রাম হুসেন খান ওয়ালার ২৮০ শিশুকে যৌন নির্যাতনের ১৫০টি ভিডিও ক্লিপস উদ্ধার করে; যাদের প্রত্যেকের বয়স ১৪ এর নিচে। এসব ভিডিও বাইরে বিক্রি করে দেওয়া হতো বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে চক্রের মূল হোতা হাশেম আলিও (২৫) রয়েছে। চক্রটির বাকি সদস্যকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পাঞ্জাবের পুলিশ কর্তৃপক্ষ। গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, তারা কয়েক বছর ধরে এ ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। ছেলে ও মেয়ে শিশুদের ধর্ষণ করে তা ভিডিওচিত্র ধারণ করে অভিভাবকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হতো। এসব ভিডিও আবার বাইরে বিক্রিও করতো তারা। বিবিসি ইসলামাবাদ কেন্দ্রের সংবাদ বিশ্লেষক ইলিয়াস খান এ ব্যাপারে বলেন, শিশু যৌন নির্যাতনের ঘটনা পাকিস্তানের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের শিশুরা এর বেশি শিকার। ২০১৪ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটিতে সাড়ে ৩ হাজার শিশু যৌন-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, এর ৬৭ শতাংশই গ্রামাঞ্চলে।
শয়তানী ধর্মীয় নির্যাতন মানে একধরনের নৈতিক আতঙ্ক জাগানো মানুষের মাঝে যা ৮০-এর দশকের দিকে আমেরিকাতে শুরু হয়, পরে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং পর্যায়ক্রমে সারা বিশ্বে । তবে ৯০-এর দশকের শেষের দিকে তা একেবারে কমে যায়। শয়তানী ধর্মীয় নির্যাতন জাতীয় কর্মকান্ডে একজন মানুষকে শারীরিকভাবে এবং যৌন হয়রানি করা হয় গুপ্তবিদ্যা বা শয়তানের উপাসনার নামে।চূড়ান্ত মাত্রার সংজ্ঞায় বলা যায় এটা এক ধরনের ষড়যন্ত্র যেখানে সারা বিশ্বের অভিজাত পরিবারের সন্তানদের অপহরণ করা হয় এবনগ তাদের লালন করা হয় উৎসর্গ করার জন্য,পর্ণোগ্রাফি এবং পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার জন্য

১৯৮৭ সালে একটি সূচকের তালিকা প্রকাশিত হয় ক্যাথেরিন গোল্ড যেখানে তিনি বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেন যে কিভাবে শয়তানী ধর্মীয় নির্যাতন করা হয়েছে ছোট বাচ্চাদের সাথে। ৮০-এর দশকের শেষের দিকে সারা বিশ্বে এটা ছড়িয়ে পড়ে যেমন-স্ক্যান্ডিনেভিয়া, হল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া,ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডে। শয়তানী ধর্মীয় বিকৃতির প্রতি বিশ্বাস দ্রুত গড়ে ওঠে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও যেখানে বিভিন্ন শিক্ষা সেমিনারের মাধ্যমে তারা বিশ্বাস করেন যে শয়তানী ধর্মের উপস্থিতি সম্পর্কে এবং এতে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের অদ্ভুত হারানো স্মৃতিশক্তি সম্পর্কে। এখানে প্রমাণ হিসেবে হাজির করা হয় হেভি মেটাল ব্যান্ডের অ্যালবামের কাভার, রোগী কর্তৃক আঁকা ছবি এবং অঙ্গহানি করা পশুর ছবি প্রদর্শন করে। সেমিনারে রোগীরা তাদের অভিজ্ঞটা সম্পর্কে প্রশংসাপত্র দেন এবং উপস্থাপকরা তাদের স্মৃতিশক্তি উদ্ধার সম্পর্কে জোর দেন তাদের সুস্থ হওয়ার জন্য।

১৯৮৬ সালে সবচেয়ে বড় শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে অস্ট্রেলিয়াতে যেখানে শয়তানী ধর্মীয় নির্যাতন করা হয়।
১৯৮৭ সালে ইংল্যান্ডে এ জাতীয় অনেক ঘটনা ঘটে ।
১৯৮৯ সালে স্যান্ডি গ্যালান্ড নামের একজন পুলিশ ডিটেক্টিভ এব্যাপারে সাক্ষাৎকার দেন এবং প্রায় একই সময়ে অনেক থেরাপিস্ট সারা ইংল্যান্ড ভ্রমণ করেন শয়তানী ধর্মীয় নির্যাতন সম্পর্কে তাদের মন্তব্য তুলে ধরতে।
১৯৯২ সালে মার্টেন্সভাইল্লির শয়তানী যৌন গুজবের ভিত্তিতে একটা মামলা হয় , কিন্তু শিশুদের সাক্ষাৎকারে অনেক তারতম্য থাকার কারণে এই মামলা প্রমাণে অভাবে ১৯৯৫ সালে স্তিমিত হয়ে যায়।
শয়তানী ধর্মীয় নির্যাতনের একটা ঢেউ আছড়ে পড়ে নিউজিল্যান্ডে ১৯৯১ সালে এবং নরওয়েতে ১৯৯২ সালে।

শয়তানী ধর্মীয় নির্যাতনের সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো ধর্মীয় আচারে নির্যাতন। বলা হয়ে ৮০-এর দশকের শুরুর দিকে একটা শয়তান উপাসকের দল তাদের গোপন উপাসনার জন্য এসব করত এবং তাদের অপরাধী কর্মকান্ডের মধ্যে ছিল জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা , মাদকবন্টন এবং পর্ণোগ্রাফি।এটাও ধারণা করা হয় যে শিশুদের যৌন নির্যাতন এবং অত্যাচার করা হত শয়তানের দাস হিসেবে সারা জীবন কাজ করার জন্য। আরো মনে করা হয় তারা জোর করে মানুষের মাংস খাওয়াতো, অকালে গর্ভপাত করে সন্তানকে ভক্ষণ করাতো,জোর করে রক্ত, মল এবং বীর্যকে ব্যবহার করাতো, মানুষকে শয়তানের উদ্দেশ্য বলি দিত এবং কিছু শয়তান পুলিশ অফিসারও ছিল যারা এসব কর্মকান্ডের প্রমাণকে লুকিয়ে ফেলতে সাহায্য করত এবং ক্রিস্টানদের কবরের পবিত্রতা নষ্ট করত। এসব ঘটনার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নাই।যেসব প্রমাণ হাজির করা হয়েছে সেগুলো হয়ত কোন ব্যাক্তির শিশুকালে স্মৃতি , অত্যন্ত বিতর্কিত স্বীকারোক্তি বা কোন শিশুর প্রশংসাপত্র।

আমাদের প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হলো, কেবল ধর্ষণই যৌন নিপীড়ন। তাহলে শিশু যৌন নিপীড়ন কি? শিশু যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞা বিভিন্ন দেশের আইনে কিংবা গবেষণায় বিভিন্ন রকম। খুব সহজভাবে বলা যায়, কোনও ব্যক্তি কর্তৃক কোনও শিশুর প্রতি যে কোনও শারীরিক, মৌখিক বা চাক্ষুষ যৌন আচরন হলো শিশু যৌন নিপীড়ন।

শিশু অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি হলো দ্য ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য রাইটস অব দ্য চাইল্ড (সিআরসি), যার ৩৪ ও ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে সদস্য দেশগুলো সব প্রকার যৌন নিপীড়ন হতে শিশুদের রক্ষা করার জন্য নীতিগতভাবে বাধ্য। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে সিআরসিতে স্বাক্ষর করে শিশু অধিকার রক্ষার এই চুক্তির সদস্য দেশ হয়।

আন্তর্জাতিক আইনে ১৮ কম বয়সী যে কেউ শিশু। কিন্তু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০০৩ অনুযায়ী আমাদের দেশীয় আইনে ১৬ বছরের কম বয়স্ক যে কেউ শিশু বলে বিবেচিত হবে।

আমাদের প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হলো, কেবল ধর্ষণই যৌন নিপীড়ন। তাহলে শিশু যৌন নিপীড়ন কি? শিশু যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞা বিভিন্ন দেশের আইনে কিংবা গবেষণায় বিভিন্ন রকম। খুব সহজভাবে বলা যায়, কোনও ব্যক্তি কর্তৃক কোনও শিশুর প্রতি যে কোনও শারীরিক, মৌখিক বা চাক্ষুষ যৌন আচরন হলো শিশু যৌন নিপীড়ন।

দ্য আমেরিকান সাইকোলজিস্টের দেওয়া সংজ্ঞা মতে এটি এক ধরনের শিশু নিপীড়ন যেখানে কোন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বা নিপীড়নের শিকার শিশুটির চেয়ে বয়সে বড় বা শারিরীক শক্তিতে বলশালী বা শিশুটির উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। অথবা যে কেউ যদি নিজের যৌন উত্তেজনার কাজে কোনও শিশুকে যৌনকর্মের অংশগ্রহণের জন্য বা অনুচিত কোনও যৌন আচরণ করার জন্য প্ররোচিত বা বাধ্য কিংবা উৎসাহিত করে সেটিও নিপীড়ন।

কোথায় শিশুরা অনিরাপদ? বড়দের ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনের ঘটনা সাধারণত ঘটে বাইরে এবং অপরিচিত ব্যক্তি দ্বারা। অপরপক্ষে, শিশু যৌন নিপীড়ন হতে পারে সেই সব স্থানে যেখানে আমরা মনে করি শিশু সবচাইতে নিরাপদ, যেমন, ঘরে, স্কুলে কিংবা শিশু শ্রমের স্থানে।

আর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন, ২০০৩ এর ১০ ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, "যদি কোনও ব্যক্তি অবৈধভাবে তাহার যৌনকামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তাহার শরীরের যে কোনও অঙ্গ বা কোনও বস্তু দ্বারা কোনও শিশুর যৌনাঙ্গ বা অন্য কোনও অঙ্গ স্পর্শ করেন তাহা হইলে তাহার এই কাজ হইবে যৌন পীড়ন।" আর যৌন নিপীড়নের শাস্তি সবোর্চ্চ ১০ বছর আর সবর্নিম্ন তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। এর সঙ্গে দোষী ব্যক্তি আথির্ক দণ্ডে ও দণ্ডনীয় হবেন।

একই আইনের ৯ ধারায় বলা হয়েছে, কোনও শিশুকে ধর্ষণ করলে তার জন্য শাস্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড আর ধর্ষণের কারণে শিশুর মৃত্যু হলে দোষী ব্যক্তি সবোর্চ্চ মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।

প্রশ্ন জাগতে পারে, শিশুদের উপর যৌন নিপীড়ন কোথায় হয়? কোথায় শিশুরা অনিরাপদ? বড়দের ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনের ঘটনা সাধারণত ঘটে বাইরে এবং অপরিচিত ব্যক্তি দ্বারা। অপরপক্ষে, শিশু যৌন নিপীড়ন হতে পারে সেই সব স্থানে যেখানে আমরা মনে করি শিশু সবচাইতে নিরাপদ, যেমন, ঘরে, স্কুলে কিংবা শিশু শ্রমের স্থানে। বাল্যবিবাহকে কন্যা শিশুর উপর করা সবচাইতে প্রচলিত শিশু যৌননিপীড়ন ও শোষণ বলে অভিহিত করেছে ইউনিসেফ।

যদিও শিশু যৌন নিপীড়ের প্রায় সব গবেষণাই কন্যা শিশুকে নিয়ে, কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, ছেলে শিশুর প্রতি করা যৌন নিপীড়নকে অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই আমাদের। সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রতি চারজনের একজন কন্যা শিশু ১৬ বছর বয়সের আগেই যৌন নিপীড়নের শিকার হয়, অপরপক্ষে ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে সে সংখ্যা নূন্যতম প্রতি ১০ জনের একজন। ইউএনডিপি, ইউএনএফপিএ এবং ইউএনভি-এর নোট-স্ট্যাটিস্টিক্স অব বাংলাদেশ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে শিশু যৌন নিপীড়নের উদ্বেগজনক শতকরা হার ২২থেকে ৩৭ এর মধ্যে।

প্রতি ১০ জনের নয়জন নিপীড়নের শিকার শিশু তাদের পীড়নকারীকে চেনে বা জানে। এই পীড়নকারী ব্যক্তি সাধারণত শিশুর পরিচিত এবং পারিবারিক বন্ধু কিংবা আত্মীয়, যাদেরকে শিশু ভালোবাসে বা ভরসার আশ্রয় মনে করে।

প্রশ্ন জাগতে পারে শিশু যৌন নিপীড়নকারী কে বা কারা? সহজ উত্তর যে কোনও পুরুষ, মহিলা, বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোর- কিশোরী বা কোনও শিশু ও অন্য শিশুকে যৌন নির্যাতন করতে পারে। নারীর তুলনায় পুরুষেরা বেশি শিশু যৌন নিপীড়ন করে থাকে। অধিকন্তু, নারী কর্তৃক যৌন পীড়নের ঘটনা প্রকাশ হয় না বললেই চলে এবং অধিকাংশ সময় একে যৌন পীড়ন বলে ধরাই হয় না।

ইনসিডিন বাংলাদেশ ২০০০ এর এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাণিজ্যিকভাবে পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত শিশুদের প্রায় শতকরা ছয় ভাগ বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে কারণ তারা তাদের নিজগৃহে বা পরিবারের কোনও সদস্য দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হতো।

প্রতি ১০ জনের নয়জন নিপীড়নের শিকার শিশু তাদের পীড়নকারীকে চেনে বা জানে। এই পীড়নকারী ব্যক্তি সাধারণত শিশুর পরিচিত এবং পারিবারিক বন্ধু কিংবা আত্মীয়, যাদেরকে শিশু ভালোবাসে বা ভরসার আশ্রয় মনে করে। যার ফলস্বরূপ নিপীড়নের শিকার শিশু হয়ত পুরো ঘটনাটি কাউকে বলতে পারে না। অনেকসময় সে খুব দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে বা ঘটনার জন্য নিজেকে দোষী মনে করে, ভয় পায় কিংবা ধরে নেয় কেউ তার কথা বিশ্বাস করবে না। পীড়নকারী শিশুটিকে ভয় দেখায় বা বলে সে এই ঘটনা কাউকে বললে শিশুটির পরিবার ভেঙে যাবে।

খুব কম বয়স্ক শিশু এবং প্রতিবন্ধী শিশু তুলনামূলকভাবে বেশি অরক্ষিত কারন শব্দ স্বল্পতা বা অক্ষমতার কারণে, তাদের সাথে এই ঘৃন্য ঘটনাটি যে ঘটছে বা ঘটেছে তা তারা অন্য কাউকে জানাতে সক্ষম হয় না। বিপিএফ ও সেইভ দ্য চিলড্রেন যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী শিশুদের অর্ধেক যৌন নিপীড়নের শিকার।

যৌন নির্যাতনের শিকার হলে শিশুর মধ্যে কিছু অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা যায়। যেমন,হঠাৎ আক্রমণাত্মক আচরণ, চুপচাপ হয়ে যাওয়া, ঘুমের সমস্যা, ঘুমের মধ্যে বিছানা ভিজিয়ে ফেলা, নেতিবাচক মনোভাব

আবার কন্যা শিশুদের তুলনায় ছেলে শিশুদের ক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নের ঘটনা অন্য কোনও ব্যক্তিকে অবহিত করার হার অত্যন্ত কম। ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ ছেলে শিশু তাদের নিপীড়নের কথা প্রকাশ করে না। ছেলেদেরকে হতে হবে শক্তিশালী, সে নিজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারবে - এ সমস্ত স্টেরিওটাইপড ধারণা আমাদের সমাজ ব্যবস্থা ছোটবেলা থেকেই ছেলে শিশুকে শিখিয়ে দেয়। আবার বড়রা সবসময়ই সঠিক, বড়রা কোনও অন্যায় বা ভুল করেনা কখনও তাই বড়দের কথার অবাধ্য না হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয় শিশুদের; যার ফলে যৌন নির্যাতনকারী অনায়াসে পার পেয়ে যায়।

নিপীড়নকারী কোনও শিশুকে যৌন পীড়ন করে তার কোনও সুস্পষ্ট কারণ জানা নেই। তবে বিকৃত যৌন চাহিদা, ক্ষমতা প্রয়োগ বা নিয়ন্ত্রণ করার অভিলাষ, ব্যক্তিগত শৈশবের যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতা বা ক্ষোভ এমনকি অস্থির পারিবারিক পরিবেশ - এগুলোর যেকোনও কিছুই শিশু যৌন নিপীড়নকারীর নিয়ামক হতে পারে। আবার শিশু পতিতাবৃত্তি বা প্ররনোগ্রাফির ক্ষেত্রে অর্থলিপ্সা হতে পারে যৌন পীড়নের অন্যতম কারণ।

কিভাবে বুঝবেন শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার? শিশুটি নিজে থেকেই তার আস্থার কোনও ব্যক্তি যেমন বাবা, মা, বড় ভাই-বোন বা শিক্ষককে কোন সূত্র বা ইঙ্গিত দিতে পারে। তাছাড়া, যৌন নির্যাতনের শিকার হলে শিশুর মধ্যে কিছু অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা যায়। যেমন,হঠাৎ আক্রমণাত্মক আচরণ, চুপচাপ হয়ে যাওয়া, ঘুমের সমস্যা, ঘুমের মধ্যে বিছানা ভিজিয়ে ফেলা, নেতিবাচক মনোভাব, স্কুল পালানো বা লেখাপড়ায় অমনোযোগী আচরণ।

শুধু শিশুকেই লক্ষ্য করলে চলবে না, একজন অভিভাবক হিসাবে আমাদের সচেতন থাকতে হবে শিশুর প্রতি কোনও ব্যক্তি বা আত্মীয়ের অস্বাভাবিক আচরণের প্রতিও।

সে অল্প বয়সেই কোনও যৌন আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়তে পারে বা এমন কোনও শব্দ ব্যবহার কিংবা আচরণ করতে পারে যা তার জানার কথা নয়। শিশু কোনও বিশেষ ব্যক্তি বা আত্মীয়কে এড়িয়ে চলতে পারে বা একাকী তার সঙ্গে সময় কাটাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করতে পারে। নিপীড়নের শিকার হলে শিশু শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, যৌনাঙ্গ ফুলে উঠতে পারে এমনকি সে গর্ভবতী হয়ে পড়তে পারে। শিশুকে যৌন নিপীড়ন থেকে সুরক্ষিত রাখতে অভিভাবকদের কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

প্রথমত: শিশুর সঙ্গে খোলামেলা ও সহজ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা যাতে শিশু মনে করে সে যে কোনও বিষয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারে।

দ্বিতীয়ত: শিশুকে না বলতে শেখান এবং তাদেরকে শেখাতে হবে যে তার শরীরের উপর শুধুই তার নিয়ন্ত্রণ।

তৃতীয়ত: শিশুকে পরিস্কার করে বুঝিয়ে বলুন গোপন অঙ্গ কী এবং বাবা-মায়ের উপস্থিতি ছাড়া কারও সামনে সে গোপনঅঙ্গ উন্মুক্ত করবে না।

শুধু শিশুকেই লক্ষ্য করলে চলবে না, একজন অভিভাবক হিসাবে আমাদের সচেতন থাকতে হবে শিশুর প্রতি কোনও ব্যক্তি বা আত্মীয়ের অস্বাভাবিক আচরণের প্রতিও। কেউ আপনার শিশুকে অযাচিত বা বারবার কোনও খেলনা, চকলেট দিচ্ছে কিনা, শিশুর সঙ্গে একাকী সময় কাটাতে চাচ্ছে কি না অথবা প্রায়ই শিশুকে একা বাইরে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে চাইছে কিনা তা লক্ষ্য রাখা খুব জরুরী।

যদি আপনি জানতে পারেন বা সন্দেহ করেন যে, আপনার বা আপনার পরিচিত কোনও শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে, নির্দ্বিধায় পুলিশকে জানান কিংবা নিকটস্থ ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে শিশুকে নিয়ে যান। যে কোনও বয়সী নারীর প্রতি সহিংসতা মোকাবেলায় দেশে আটটি মেডিকেল কলেজে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের ( ওসিসি) ব্যবস্থা আছে। ওসিসির মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা, পুলিশী সহায়তা, এনজিও সহায়তা, আইনী সাহায্য, আশ্রয় কেন্দ্র আর চিকিৎসা ও ডি এন এ টেস্ট এ সবকিছুর ব্যবস্থা একস্থানে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু ওসিসি এর প্রদত্ত সুবিধা থেকে ছেলে শিশু বঞ্চিত।

আমাদের দেশে শিশু যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে আইন বলতে 'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন' আর দেড়শ বছরের পুরানো পেনাল কোড, ১৮৬০ এর কিছু ধারা প্রচলিত।

ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের করা ২০০৭ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতে ৫৩ শতাংশ শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, যার প্রতিকারে ২০১২ সালে "দ্য প্রটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সচুয়াল অফেন্স অ্যাক্ট" প্রনয়ন করা হয়েছে।

আমাদের প্রচলিত সনাতন আইন আর আইনের দুর্বল ব্যাখ্যার দরুণ ছেলে শিশুদের প্রতি ধর্ষণকে শুধুমাত্র যৌন নিপীড়ন হিসাবে দেখা হয়, ধর্ষণ নয়। শিশুর সঙ্গে কোনও শারীরিক সংস্পর্শ বা যৌন কাযর্ক্রম না করলে তাকে যৌন নিপীড়ন বলা হয় না।

অথচ, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ২০০৩ সালে আলাদাভাবে "সেক্সচুয়াল অফেন্স অ্যাক্ট" প্রবর্তন করছে, এই আইনে কোনও শিশুর উপস্থিতিতে যৌনকর্ম করা বা তা দেখতে শিশুকে বাধ্য করা , এমনকি যৌন পরিচর্যার (গ্রুমিং) জন্য শিশুর সঙ্গে দেখা করাকেও অপরাধ হিসাবে অন্তভূর্ক্ত করেছে।

ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের করা ২০০৭ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতে ৫৩ শতাংশ শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, যার প্রতিকারে ২০১২ সালে "দ্য প্রটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সচুয়াল অফেন্স অ্যাক্ট" প্রনয়ন করা হয়েছে। এই আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞাকে বর্ধিত করে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ আইন করা হয়ছে, ফলে ছেলে-মেয়ে উভয়ের প্রতি করা নিষিদ্ধ যৌন আচরণ এখন ধর্ষণ বলে গণ্য হতে পারে। শুধু তাই নয়, শিশুর প্রতি কোন যৌন নিপীড়নের ঘটনা পুলিশকে রিপোর্ট করা না হলে সে অপরাধে সর্বোচ্চ ছয়মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

দিন দিন শিশু নিপীড়নের হার যেভাবে বেড়েই চলেছে, এখন আমাদের প্রয়োজন আরও কঠোর আইন জারি ও যথাযথ প্রয়োগ। এর সঙ্গে অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি একান্ত কাম্য। অসচেতনতা বা লোক লজ্জার ভয়ে হাজারো নিপীড়ন চাপা পড়ে যায়। যার ফলে নিপীড়নকারী পুনরায় একই শিশু বা অন্য কোনও শিশুকে নিপীড়নের সুযোগ পায়।

শিশু যৌন নিপীড়ন একটি ঘৃন্য অপরাধ। তাই শুধু নিজের শিশু নয়, আপনার বাসার শিশু শ্রমিকটির শৈশব নিপীড়নমুক্ত করতে সচেতন ও সচেষ্ট হোন। শৈশব হোক নির্যাতন আর নিপীড়নমুক্ত, অনাবিল।

নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আফগানিস্তানে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ অনুসন্ধান করবে যুক্তরাষ্ট্র। এ খবর দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন ওই নির্যাতনের অভিযোগ না দেখার ভান করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। গত মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের রিপোর্টে বলে যে, আফগান পুলিশ ও কমান্ডাররা টিনেজ ছেলেদের বিরুদ্ধে যে যৌন নির্যাতন চালিয়েছে। অনেক সময় এ ঘটনা ঘটেছে সেনা ঘাঁটিতেও। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে নিয়োজিত তার সিনিয়র কর্মকর্তাদের এসব বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এমন রিপোর্টের পর পেন্টাগনের ইন্সপেক্টর জেনারেল অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ইন্সপেক্টর জেনারেলের অফিসের একটি মেমো ফাঁস হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে রিপোর্ট করা থেকে আনুষ্ঠানিক বা অন্য কোন উপায়ে কোন নির্দেশনা দিয়েছিল? শিশুর ওপর যৌন নির্যাতনের বিষয়ে কি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে নাকি তা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। এই মেমো পাঠানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে। আফগানিস্তানের সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কি পরিমাণ শিশুর ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আছে সে তথ্যও চাওয়া হয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস বহু সেনা সদস্যের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ওই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।


বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স ১৯৯৪ সাল থেকে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ কর্মসূচি সমন্বয়ক রোকসানা সুলতানা ছোট শিশুদের তার শরীরের সীমানা সম্পর্কে সচেতন করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুদের বলি, তোমার শরীরের একটি সীমানা আছে। দুই হাত দুই দিকে সমান করে তুলে ধরার পর বলা হয়, এইটুকু হলো সীমানা। তোমরা যাকে পছন্দ করবে না, তাদের এই সীমানার মধ্যে আসতে দেবে না।’
বাংলাদেশে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স ১৯৯৭ সালে এক গবেষণায় পারিবারিক বলয়ে শিশুর যৌন নির্যাতনের ৫০টি ঘটনা খতিয়ে দেখেছিল। এর মধ্যে ১৬ জন শিশুর নির্যাতনকারী ছিলেন তাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠজন৷ ৩০ জন শিশুর নির্যাতনকারী পারিবারিক বন্ধু, গৃহশিক্ষক, পাড়া-প্রতিবেশী বা চেনাজানা লোক। মাত্র চারজন শিশুর নির্যাতনকারী ছিলেন অপরিচিত ব্যক্তিরা।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মাল্টি সেক্টরাল প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত সাত বিভাগে সাতটি এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৮৬ জন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। এর মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশই ধর্ষণের শিকার।
১৩টি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আশক) করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত সাতজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। একক ধর্ষণের শিকার হয় ৫৪ জন। দুজন গণধর্ষণের শিকারসহ মোট ৬২ শিশু এ ধরনের নির্যাতনের শিকার। ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা করা হয় চারজন শিশুকে।
ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত পাঁচ বছরে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার এবং ঢাকা শিশু হাসপাতালে মোট ৩৯৬ জন শিশু (১৮ বছরের কম বয়সী) শুধু কাউন্সেলিংয়ের আওতায় আসে। এদের মধ্যে ৮৪ জন ছিল ছেলেশিশু।
গবেষক এবং চিকিৎসক-পরামর্শকেরা বলছেন, মেয়েশিশুর পাশাপাশি ছেলেশিশুদেরও যৌন নির্যাতনের ঝুঁকি প্রবল। ছেলেমেয়ে-নির্বিশেষে অভিভাবকদের সচেতন নজরদারি সমান জরুরি।




জাতিসংঘের শিশু-তহবিল সংস্থা ইউনিসেফ ২০১৪ সালকে শিশুদের জন্য সবচেয়ে সহিংস বছর বলে অভিহিত করেছে। এই বছরটিতে কেবল মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইরাক, দক্ষিণ সুদান, ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও ইউক্রেনের প্রায় দেড় কোটি শিশু যুদ্ধ ও সহিংসতার কারণে উদ্বাস্তু হয়েছে। ইউনিসেফের কার্যনির্বাহী পরিচালক বলেছেন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর কখনও শিশুরা এতো বেশি নির্যাতনের শিকার হয়নি যতোটা হয়েছে চলতি বছরে। শিশুরা স্কুলের ক্লাসে উপস্থিত কিংবা রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় নিহত হচ্ছে। শিশুদের ইয়াতিম করা হচ্ছে ও অপহরণ করা হচ্ছে। তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে এবং এমনকি দাস হিসেবে বিক্রিও করে দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও যুদ্ধসহ নানা ক্ষেত্রে অপব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদেরকে।

ইউনিসেফ জানিয়েছে, বর্তমান বিশ্বের দুই কোটি ত্রিশ লাখ শিশু যুদ্ধ ও সহিংসতার শিকার। সিরিয়া ও ইরাকে আইএসআইএল গোষ্ঠীর উত্থানের পর সিরিয়ায় ৩৭ লাখ ও ইরাকে ২৭ লাখ শিশু সহিংসতা আর উগ্রতার শিকার হয়েছে। এ ছাড়াও গত গ্রীষ্মকালে দখলদার ইসরাইলের ৫০ দিনের হামলায় গাজার ৫৪ হাজার শিশু গৃহহারা এবং ৫৩৮ শিশু হয়েছে শহীদ।

মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের প্রায় দশ হাজার শিশুকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে সশস্ত্র নানা গ্রুপ। তারা সেখানকার ৪৩০ শিশুকে হত্যা করেছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ অঞ্চলে শিশু হত্যার সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে।

দক্ষিণ সুদানে ৫ বছরের কম বয়সী দুই লাখ ৩৫ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। সেখানে গত এক বছর ধরে যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধের ফলে উদ্বাস্তু হয়েছে সাত লাখ ৫০ হাজার শিশু।

'শিশুদের রক্ষা করুন' শীর্ষক একটি দাতব্য সংস্থার পরিচালক জাস্টিন ফোরসাইথ বলেছেন: 'সিরিয়ার শিশুরা প্রতিদিনই নানা ধরনের নৃশংস পদক্ষেপের শিকার হচ্ছে। স্কুলগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় কিংবা যুদ্ধ এড়াতে অথবা পরিবারকে সহায়তা দেয়ার মতো নানা কারণে বর্তমানে সিরিয়ার প্রায় ত্রিশ লাখ শিশু পড়াশুনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।' জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সিরিয়ার শতকরা ৫০ থেকে ৬০ ভাগ শিশু প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে এবং তারা স্কুলের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। দেশটির তিন হাজারেরও বেশি স্কুল ধ্বংস হয়ে গেছে বলে আগের এক রিপোর্টে উল্লেখ করেছিল জাতিসংঘ।

সিরিয়ার উদ্বাস্তু শিশুদের বেশিরভাগই পরিবারের অন্য সদস্যদের জীবিকার খরচ যোগাতে কঠিন কাজ করছে। শ্রমজীবী এইসব শিশুর কারো কারো বয়স মাত্র সাত। এমনকি অনেক শিশু পরিবারের জন্য অর্থ যোগাতে চোরাকারবারিদের কাছে কিডনির মতো অঙ্গ বিক্রি করতেও বাধ্য হয়েছে।

সিরিয়ার উদ্বাস্তু বা শরণার্থী শিবিরের কিশোরীরা পরিবারের জন্য অর্থ যোগাতে বয়স্ক আরব শেখ বা নিজের চেয়েও কমপক্ষে দশ বছর বেশি বয়স্ক ব্যক্তির স্ত্রী হতে বাধ্য হচ্ছে একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও। বিয়ের দিনটি তাদের জন্য একটি ট্র্যাজেডি হিসেবে বিবেচিত হয়। এদের মধ্যে রয়েছে ১৪ বছরের এক সিরিয় বালিকা যে ৫০ বছর বয়স্ক এক কুয়েতি ব্যক্তিকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে।

সিরিয়া ও ইরাকের মতো দেশগুলোতে সন্ত্রাসী হামলা ও সহিংসতার কারণে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে বা বাসস্থান থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে শিশুসহ বেসামরিক অনেক নাগরিককে। সহিংসতায় শিশুসহ অনেকেই হতাহত হচ্ছে। ইরাকে শিশুদের অনেকেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।

সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো শিশুদের মানব-ঢাল হিসেবেও ব্যবহার করছে। সন্ত্রাসী গ্রুপ আইএসআইএল ২০১৪ সালের ১৭ ই জুন দশ শিশুকে সঙ্গে নিয়ে এক গোয়েন্দা অভিযান চালায় এবং এমনকি তাদেরকে গাড়ির জানালার বাইরে ধরে রাখে যাতে ইরাকি সেনারা তাদের ওপর হামলা না চালায়। তারা গত ২১ জুন দশ থেকে ১৫ বছর বয়সের দশ জন শিশুকে তাদের সামনে রাখে এবং তাদেরকে দিয়ে বালির বস্তার বাঙ্কার তৈরি করে। এভাবে তারা ইরাকি সেনাদের মোকাবেলায় শিশুদেরকে খুবই বিপজ্জনক কাজে ব্যবহার করছে। সন্ত্রাসী গ্রুপ আইএসআইএল শিশুদেরকে দিয়ে আত্মঘাতী বোমা হামলাও চালাচ্ছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা লায়লা জারুগ্বি জানিয়েছেন:

চলতি বছরের (২০১৪) প্রথম থেকে এ পর্যন্ত সন্ত্রাসী গ্রুপ আইএসআইএল-এর আত্মঘাতী হামলাগুলোয় বহু শিশুকে ব্যবহার করেছে তারা। এইসব হামলা চালাতে গিয়ে প্রায় সাতশত শিশু আহত বা পঙ্গু হয়েছে। আইএসআইএল ১৩ বছরের শিশুদেরকে সেনা হিসেবে অপব্যবহার করছে এবং তাদেরকে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত স্থানগুলো পাহারা দেয়াচ্ছে। এই শিশুদের দিয়ে তারা বেসামরিক লোকদের গ্রেফতার করছে এবং আত্মঘাতী হামলা চালাচ্ছে বলেও জারুগ্বি জানান। এমনকি এই সন্ত্রাসী গ্রুপ প্লে বা নার্সারি গ্রুপের স্কুল ছাত্রদেরকেও গলা কাটার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যাতে তারাও ভবিষ্যতে শত্রুর মাথা কাটতে অভ্যস্ত হয়।

গাজার সাম্প্রতিক যুদ্ধে শিশুদের ওপর দখলদার ইসরাইলের নির্যাতন বিশ্ব-রেকর্ড গড়েছে। ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ও পাথর নিক্ষেপের কারণে হানাদার ইহুদিবাদী সেনারা ফিলিস্তিনি শিশুদের বন্দি করছে এবং তাদেরকে বিশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দিচ্ছে।

ইসরাইলি কারাগারে ফিলিস্তিনি শিশুদের সঙ্গে অত্যন্ত নির্দয় আচরণ করা হচ্ছে। এই শিশুদেরকে হিব্রু ভাষা শেখাতে তাদের বলা হয়, হিব্রু ভাষা শেখো, তাহলে কারাগার থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু ফিলিস্তিনি শিশুরা এই ভাষায় প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না। আর এ কারণে ইসরাইলিরা তাদের ওপর নির্যাতন বাড়িয়ে দিয়েছে। বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি শিশুকেই গভীর রাতে গ্রেফতার করে ইসরাইলি সেনারা। তারা শিশুদের আতঙ্কিত করার জন্য তাদের কক্ষগুলোতে হামলা চালায় এবং হাত-পা ও চোখ বেধে তাদের আটক করে। তাদেরকে বন্দি রাখা হয় আটকের স্থান থেকে অনেক দূরে। তাদেরকে গালি-গালাজ ও অশালীন ভাষা শোনানো, মারধোর করা, দেয়ালের মধ্যে মাথা ঠুকিয়ে কষ্ট দেয়া, ধর্ষণ এবং নানা যন্ত্র দিয়ে নির্যাতন চালানো ও আত্মীয়-স্বজনসহ বাবা-মায়ের ওপর নির্যাতন চালানোর হুমকী দেয়া, দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো ও বহু দিন- এমনকি বহু সপ্তাহ ধরে নির্জন সেলে তাদের বন্দি করে রাখা- এসবই সেখানকার নিত্যদিনের ঘটনা।

ইসরাইলি সেনারা ফিলিস্তিনি শিশুদের মানব-ঢাল হিসেবেও ব্যবহার করছে। ইসরাইলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের যেসব ধ্বংস-প্রায় বাড়িতে ঢুকতে মৃত্যুর আশঙ্কা করে, কিংবা ফিলিস্তিনিদের পাথর নিক্ষেপের আশঙ্কা করে যেসব স্থানে সেখানে তারা ফিলিস্তিনি শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। কোনো এক ঘটনায় এক ইসরাইলি সেনা অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়ে কিছু সন্দেহজনক ব্যাগ খুলে দেখাতে নয় বছরের এক ফিলিস্তিনি শিশুকে বাধ্য করে। এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটছে, কিন্তু এইসব হানাদার ইসরাইলি সেনাদের সে জন্য কোনো শাস্তি দেয়া হয় না।

শিশুদের বিরুদ্ধে নির্যাতন কেবল মধ্যপ্রাচ্য বা এশিয়া-আফ্রিকায় সীমিত নয়, তা পাশ্চাত্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি আমরা দেখেছি যে কিভাবে পাকিস্তানের তালেবান সন্ত্রাসীরা পেশোয়ারে একটি স্কুলে বহু শিশু ছাত্রকে গুলি চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সীমিত পর্যায়ে হলেও আমেরিকায়ও এমন ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।

শিশুদের বিরুদ্ধে নির্যাতন কেবল মধ্যপ্রাচ্য বা এশিয়া-আফ্রিকায় সীমিত নয়, তা পাশ্চাত্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি আমরা দেখেছি যে কিভাবে পাকিস্তানের তালেবান সন্ত্রাসীরা পেশোয়ারে একটি স্কুলে গুলি চালিয়ে ১৩২ শিশু ছাত্রকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সীমিত পর্যায়ে হলেও আমেরিকায়ও এমন ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। পেশোয়ারের ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরে ইয়েমেনের রাজধানী সানআ’র দক্ষিণে ১৫ শিশু কন্যা ছাত্রী বহনকারী একটি বাসে বোমা হামলার ঘটনায় বাসটির সব আরোহী নিহত হয়। ইউনিসেফ ওই দিনটিকে ‘তিক্ত ২০১৪ সালের শেষের সপ্তাহ’র অন্ধকার দিন’ বলে অভিহিত করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে বোর্নিও এলাকায় বোকো হারাম নামক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ১০০’রও বেশি নারী ও শিশু অপহরণ করে এবং এই গোষ্ঠীর হামলায় সেখানে ৩৫ জন নিহত হয়।

দক্ষিণ সুদানে যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় সেখানে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং এর ফলে কয়েক মাসের মধ্যে ৫০ হাজার শিশু মারা যেতে পারে। সেখানকার মিকাসি অঞ্চলে শিশুরা অপুষ্টির শিকার হবে বলে ইউনিসেফ হুঁশিয়ারি দিয়েছে যা সেখানে এর আগে কখনও ঘটেনি। এ অঞ্চলে অর্থ ও খাদ্য সাহায্য দেয়া সম্ভব না হলে ৫ বছরেরও কম বয়সী অন্তত ২০ হাজার শিশু প্রাণ হারাবে বলে সংস্থাটি আশঙ্কা করছে।

চলতি বছর নাইজেরিয়ায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সের প্রায় ১০০ কন্যা শিশুকে অপহরণ করে সন্ত্রাসী দল বোকো হারাম। স্কুল থেকে অপহরণ করা হয় তাদেরকে। অথচ স্কুল হওয়া উচিত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের নিরাপদ কেন্দ্র। স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সহিংসতা অব্যাহত থাকলে বাবা-মায়েরা ভবিষ্যতে তাদের সন্তানকে আর স্কুলে পাঠাবেন না।


পাশ্চাত্যের দেশগুলো গণতন্ত্র, নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের কেন্দ্র হওয়ার দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও সেখানেও শিশুরা হত্যা, দারিদ্র ও যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের নৃশংসতার শিকার হচ্ছে। ইউরোপের শতকরা প্রায় ২০ ভাগ শিশুই নানা পন্থায় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। এ ধরনের নির্যাতন ক্রমেই বাড়ছে। যৌন-নির্যাতনের অনেক ঘটনাই শিশুরা লজ্জায় বা ভয়ে প্রকাশ করে না। ইউরোপে শিশুদের যৌন-ব্যবসার কাজে ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেট মাধ্যম ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যাপক মাত্রায়।

শিশুদের ওপর যেসব নিপীড়ন চালানো হয় তার ক্ষতিকর প্রভাব তাদের মনে বড় হওয়ার পরও থেকে যায়। ২০১২ সালে বিশ্বে মোট ৯৫ হাজার শিশু ও কিশোর নিহত হয়। শিশুদের নিহত হওয়ার ঘটনা দরিদ্র বা মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বেশি ঘটে থাকলেও এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বের ৩৪ টি ধনী দেশের মধ্যে আমেরিকায় শিশু নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি।

আমেরিকায় ২০১২ সালে প্রতি এক লাখ কিশোর-কিশোরীর মধ্যে চার জন নিহত হয়েছে। ইরাকে ২০০৩ সালের মার্কিন হামলার পর এ বিষয়ে আমেরিকা ও ইরাক একই অবস্থানে রয়েছে। ইউনিসেফ জানিয়েছে, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকায় ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী তরুণদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া। ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি প্রযোজ্য। গোটা দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যে ব্রাজিল শিশু হত্যার দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। এ অঞ্চলে শিশু-কিশোর হত্যার ঘটনা এতো ব্যাপক হওয়ার অন্যতম কারণ হলো অপরাধী চক্রগুলোর সদস্য হওয়া। যেমন, ২০১১ সালে এ অঞ্চলের দুই লাখ ৭৪ হাজার শিশু প্রায় ত্রিশ হাজার অপরাধী চক্রের সদস্য হয়েছিল।

ইউনিসেফ জানিয়েছে, বিশ্বের যেসব উন্নত দেশে শিশুদের মধ্যে তুলনামূলক দারিদ্র রয়েছে সেইসব দেশের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থান দ্বিতীয়। এক্ষেত্রে আমেরিকার অবস্থা লিথুনিয়া, বুলগেরিয়া, স্পেন, গ্রিস ও ২৯ টি অন্য দেশের চেয়েও খারাপ। বিশ্বের ৩৫টি ধনী দেশের প্রায় তিন কোটি শিশু দারিদ্রের শিকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৩ দশমিক এক শতাংশ শিশুই তুলনামূলক দারিদ্রের শিকার। সম্পদ ও অর্থের সুষম বণ্টনের অভাবেই তুলনামূলক দারিদ্র দেখা দেয় যার ফলে উন্নত বা স্ট্যান্ডার্ড জীবন-যাপনের নানা সুবিধাগুলোর অভাব দেখা যায়। বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে উন্নত দেশগুলোর ২৬ লাখ শিশু দারিদ্র-সীমার নীচে বসবাস করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের দারিদ্র ৩৪ টি অঙ্গরাজ্য থেকে ৫০টি অঙ্গ রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

উন্নত দেশগুলোতে শিশুরা দারিদ্র ছাড়াও যৌন নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে অহরহ। নিষ্পাপ শিশুরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই আধুনিক যুগেও যেসব বর্বরতা ও নৃশংসতার শিকার হচ্ছে তা ভাবতেও অবাক হতে হয়। শিশুদের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যেও সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে।

পশ্চিমা সরকারগুলো মানবাধিকারের দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও তাদের দেশের শিশুদের কিংবা বিশ্বব্যাপী শিশুদের রক্ষার কোনো উদ্যোগ তো নিচ্ছেই না বরং মধ্যপ্রাচ্যে শিশুদের ঘাতক ইহুদিবাদী ইসরাইলসহ ওয়াহাবি-তাকফিরি সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে অর্থ ও অস্ত্রসহ সব ধরনের সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক সহায়তাসহ পাশ্চাত্যের সরকারগুলোর নানা ধরনের সহায়তা নিয়েই ইহুদিবাদী ইসরাইল বিশ্বে শিশু নির্যাতনের বিশ্ব-রেকর্ড গড়েছে। পাশ্চাত্যেরই দুধ-কলায় লালিতো তাকফিরি সন্ত্রাসী গ্রুপ আইএসআইএল মধ্যপ্রাচ্যে নারী ও শিশুসহ সাধারণ বেসামরিক মানুষের ওপর প্রায়ই গণহত্যা চালাচ্ছে।



বিশ্ব জুড়ে আরেকটি বড় সমস্যা হল অপুষ্টির শিকার শৈশব ।আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) তথ্যমতে, দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৪২ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছে।
যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল-এ (২০০৯) বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ শিশু ও ৪০ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারী রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন। এ ছাড়া সন্তানদানে সক্ষম তিনজন নারীর একজন অপুষ্টির শিকার।
আইসিডিডিআরবির পুষ্টি বিভাগের পরিচালক তাহমিদ আহমেদ জানান, অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কিশোরীদের পুষ্টি-পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। অপুষ্টির শিকার কিশোরী মা হলে সে একটি অপুষ্ট শিশুরই জন্ম দেবে। তিনি আরও জানান, আমাদের দেশে শতকরা ৩০ ভাগ মা অপুষ্টিতে ভুগছেন। এ ছাড়া অনেক কিশোরীর ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়। এতে তাদের অপুষ্ট সন্তান জন্মদানের আশঙ্কা বেশি থাকে। অপুষ্টির শিকার মায়ের নানা জটিলতা দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে অপুষ্টির শিকার মায়েরা কম ওজনের শিশু অর্থাৎ আড়াই কেজি ওজনের নিচে শিশুর জন্ম দেন। এই শিশুদের পরবর্তী সময়ে অপুষ্টিতে মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি থাকে। তাহমিদ জানান, তবে অপুষ্টিতে শিশুমৃত্যু অনেক কমেছে এবং এতে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় ভালো করেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, অপুষ্টির শিকার মা কম ওজনের সন্তান জন্ম দেন। ওই সন্তান পরে খর্বকায় হয়, তার মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এই পরিস্থিতি কিশোরী বয়সেও অব্যাহত থাকে। কিশোরী মা হলে গর্ভাবস্থায় তার ওজন তেমন বাড়ে না। সেও আরেকটি অপুষ্ট শিশুর জন্ম দেয়। শিশুটি কন্যাসন্তান হলে অপুষ্টির চক্র আর শেষ হয় না। এর সঙ্গে বিভিন্ন বয়সে পর্যাপ্ত খাদ্য, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য পরিচর্যা না পেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়। একপর্যায়ে শিশু মারা যেতে পারে।
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ও বিশ্বব্যাংকের সিজনাল হাঙ্গার অ্যান্ড পাবলিক পলিসিস বইয়ে বলা হয়েছে, মৌসুমি খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা শিশু অপুষ্টির একটি কারণ। বিশ্বব্যাংকের বইটিতে ১৩টি দেশের তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, এসব দেশের দারিদ্র্য ও ক্ষুধার সঙ্গে শিশু অপুষ্টি, শিশুর কম ওজন ও শিশুমৃত্যুর সম্পর্ক রয়েছে।
দেশগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। বইটির অন্যতম লেখক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, দরিদ্র পরিবারে খাদ্য বিতরণে শিশুরা বৈষম্যের শিকার হয়। তবে মৌসুমি ক্ষুধা বা মঙ্গার কারণে শিশুর পুষ্টি বিশেষভাবে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
বাংলাদেশে ৩০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। তাদের মধ্যে ১৮ শতাংশ মানুষ বাস করে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল বলছে, তারা দৈনিক এক হাজার ৮০৫ কিলো ক্যালরির কম খাবার পায়।
অর্থনীতিবিদ ও পুষ্টিবিদেরা বলছেন, সারা বছর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে অপুষ্টি দূর হবে না। আর অপুষ্টিতে শিশুর মৃত্যুও কমবে না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দেশের পুষ্টি নিয়ে সরকারের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। অনেক সময় অপুষ্টি দূর করতে সরকার যেসব কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তা বিভিন্ন কারণে সফল হচ্ছে না। পুষ্টি কার্যক্রম সফল করতে তাই পুষ্টিনীতি ও কর্মসূচি ঢেলে সাজাতে হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইউএসএআইডির গবেষণায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, অপুষ্টির সমস্যা সমাধান করা না গেলে ২০১৫ সালের মধ্যে অতিদরিদ্র ও ক্ষুধা নিরসন, সবার জন্য শিক্ষা, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনা, এইচআইভি বা এইডস, ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য রোগ নিয়ন্ত্রণের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে, তা পূরণ করা সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও জনমিতি জরিপ, ২০১১ (বিডিএইচএস) অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪১ শতাংশ শিশু বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম বা খর্বাকৃতির , ১৬ শতাংশ শিশু উচ্চতার তুলনায় রুগ্ণ ও বয়সের তুলনায় ওজন কম ৩৬ শতাংশ শিশুর। বিডিএইচএসের ২০০৭ সালের প্রতিবেদনে খর্বাকৃতির শিশুর হার ছিল ৪৩ শতাংশ, উচ্চতার তুলনায় রুগ্ণ শিশু ১৮ শতাংশ ও বয়সের তুলনায় ওজন কম—এমন শিশুর হার ছিল ৪১ শতাংশ।
১৯৯৬-৯৭ থেকে ১৯৯৯-২০০০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ শতাংশ হারে অপুষ্টি কমেছে, কিন্তু ২০০০-২০০৭ সাল পর্যন্ত বয়সের তুলনায় কম ওজনের শিশুর সংখ্যা কমেছে ১ শতাংশ হারে। একই সময়ে খর্বকায় শিশুর সংখ্যা কমেছে ৮ শতাংশ হারে এবং উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের শিশুর সংখ্যা বেড়েছে ৫ শতাংশ হারে।
২০০৮ সালে বিখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট নিউট্রিশন সিরিজে গোটা পৃথিবীর ৪৮টি পুষ্টি কর্মসূচি পর্যালোচনা করা হয়। তাতে দেখা যায়, ৩৬টি দেশ ৯০ শতাংশ অপুষ্টির বোঝা বহন করছে। তার মধ্যে বাংলাদেশও আছে।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের (বিডিএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে দেশের পুষ্টি-পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটেছে। স্বল্প ওজনের শিশুর সংখ্যা ৩৬ শতাংশে নেমেছে। অর্থাৎ এখনো তিনজনের মধ্যে একজন শিশু এ পরিস্থিতির শিকার। দেশের ৪১ শতাংশ শিশুরই বয়স অনুযায়ী উচ্চতা কম বা খর্বকায়। ২০০৭ সালে ৪৩ শতাংশ শিশু ছিল খর্বকায়। অথচ কোনো কার্যক্রম পরিচালনা না করলেও দশমিক ৫ শতাংশ করে প্রতিবছর এ হার কমার কথা।
২০০৭ সালের ১৭ শতাংশ থেকে ২০১১ সালে শিশুর উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কম বা কৃশকায় শিশুর হার হয়েছে ১৬ শতাংশ। দুই থেকে আড়াই বছর পরও যদি কোনো শিশু খর্বকায় থাকে, তবে তার সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ে। তিন বছর বয়সের মধ্যে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে। খর্বকায় শিশুদের মস্তিষ্ক ঠিক সময়ে বিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়। তাদের বুদ্ধি কম হয়। পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারে না। স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। বুদ্ধি কম বলে ভবিষ্যতেও ভালো কিছু করতে পারে না। এই শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে। যেসব শিশু খর্বকায় নয়, তাদের চেয়ে এই শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি থাকে তিন থেকে চার গুণ বেশি।
কৃশকায় শিশুদের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা আরও কম থাকে। কৃশকায় এর মাত্রা মাঝারি ও তার নিচে নামলে তখন শিশুরা মারাত্মক অপুষ্টির শিকার হয়, তাদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে ১০ গুণ। দেশে এ ধরনের শিশু আছে প্রায় ছয় লাখ।


হাড় জিরজিরে শিশু। ঘাড়ের ওপর বড় মাথা। বেলুনের মতো পেট। থালা সামনে নিয়ে বসে আছে। তাতে সামান্য খাবার। সেই খাবারের ওপর মাছি উড়ছে। এ ধরনের দৃশ্যের কথা ভাবলে চোখের সামনে দুর্ভিক্ষপীড়িত কোনো দেশের ছবিই ভেসে ওঠে। বিশেষ করে আফ্রিকার চাদ, বতসোয়ানা ও অ্যাঙ্গোলার মতো দেশে পুষ্টিহীন এমন শিশুর দেখা অহরহই পাওয়া যায়। সেই শিশুর পুষ্টি পরিস্থিতি বাংলাদেশেও খুব বেশি ভালো নয়। যে কারণে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের শিশুর দেখা মিলে। এমনই এক শিশুর নাম রায়হান। যার বয়স কুড়ি মাস, ওজন আড়াই কিলোগ্রাম। নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ার হতদরিদ্র এক শ্রমিক পরিবারের উত্তরসূরি এই রায়হান। এ বয়সেই সে নানা রোগে জর্জরিত। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুধু রায়হানই নয় এদের সংখ্যা অনেক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার গালভরা কথা আর হাজারও পরিসংখ্যান ঠেলে চোখ মেললেই ধরা পড়বে এমন বিবর্ণ মুখচ্ছবি। যারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অলি-গলি থেকে রাজপথে। অনাদরে-অবহেলায় ধুলোবালির সঙ্গে মিলেমিশে বড় হচ্ছে।

খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর হিসাব বলছে, দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শতকরা ৪৫ ভাগ শিশু মৃত্যুর কারণ পুষ্টিহীনতা। অথচ একটি উন্নত দেশে এই জাতীয় শিশু মৃত্যুর হার মাত্র ৪ শতাংশ। উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এখনও অনেকটা পিছিয়ে। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এ পর্যায়ে আসতে হবে দেশটির। চলছে সে চেষ্টাও। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা পদে পদে। হাড় জিরজিরে রায়হান নামের শিশুটি মাতৃজঠর থেকেই অপুষ্টি নিয়ে এসেছে। অল্প বয়সে পুষ্টির অভাবে ভুগতে ভুগতে মা হয়েছেন আরিফা বেগম। সেই মা কিভাবে হৃষ্টপুষ্ট রায়হানদের জন্ম দেবে? এমন হাজারও প্রশ্ন নিয়েই ৭ আগস্ট থেকে রায়হানের চিকিৎসা শুরু হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক )হাসপাতালে। ১১ দিন চিকিৎসা শেষে ১৮ আগস্ট রায়হানকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে যান হতভাগ্য মা আরিফা বেগম।
ঢামেক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবদুল মতিন বললেন, চরম অপুষ্টির শিকার শিশুদের হরহামেশাই হাসপাতালে নিয়ে আসছেন অভিভাবকরা। এদের দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসার প্রয়োজন। অনেক সময় অভিভাবকরা লম্বা সময় ধরে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে থাকতে চান না। টানা ১১ দিন চিকিৎসার পরও শিশুটির (রায়হান) শারীরিক উন্নতি না হওয়ায় মায়ের অনুরোধে তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। শিশুরোগ বিভাগের প্রধান প্রফেসর এখলাসুর রহমান বলেন, সরকারি হাসপাতালে রোগী ঠাসা। মেঝেতেও ঠাঁই নেই। এ অবস্থায় চরম পুষ্টিহীনতার শিকার শিশুদের মেঝেতে রেখেও চিকিৎসা দেয়া হয়। এসব শিশুর মায়েরাও চরম পুষ্টিহীনতায় ভোগে। দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা হওয়ায় অনেক অভিভাবকই নিরাশ হয়ে অসুস্থ শিশুদের নিয়ে বাড়িতে চলে যান। বস্তি এলাকায় জন্ম ও দরিদ্র শ্রেণীর সন্তানরাই বেশি পুষ্টিহীনতায় ভুগে। তারাই চিকিৎসা নিতে আসে। চিকিৎসকের তথ্যানুসারে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের একাধিক বস্তিতে গিয়ে দেখা মিলে এমন দৃশ্যের। একটি বস্তির ঝুপড়ি ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ে উদোম শরীরে একটি শিশু চিৎ হয়ে পড়ে আছে। তার নাম পান্না। বয়স মাত্র চার মাস। তার পাঁজরের সবকটা হাড় অনায়াসেই গোনা যাচ্ছিল। তার ছোট-কাঠির মতো সরু হাত-পায়ের চামড়া কুঁকড়ে গেছে। ওর পেটের দিকে তাকালে অপুষ্টির ছবিটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পান্নার মতো শাকিব, মিলন, সোনিয়া, করিম, মিন্টু ও সুজিত সাহাও অপুষ্টির শিকার। বস্তির অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই তাদের জন্ম। পলিথিন আর বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি ছয় ফুট বাই সাত ফুট জায়গায় তাদের বাস। এ বস্তি সে বস্তি ঘুরে গরুর নাড়ি-ভুড়ি বিক্রি করেন শিশু সোনিয়ার বাবা হিরণ মিয়া। প্লাস্টিক টোকায় সুজিতের বাবা প্রীতম সাহা। আর শাকিবের বাবা বাবুল মিয়া দিনমজুর। তাদের ভাষ্য, পুষ্টিকর খাবার আবার কী। দুমুঠো ভাত, এক টুকরো কাপড় আর একটু আশ্রয়ের জন্য যাদের প্রতি মুহূর্তে লড়াই করতে হয়, তাদের কাছে পুষ্টিকর খাবার শব্দটি শুধু হাস্যকর। তাদের কাছে বেঁচে থাকাই বড় কথা। কোনোভাবে বেঁচে থাকার লড়াই করতে গিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের মুখে পুষ্টিকর খাবার তুলে দিতে পারেন না। অভাবের তাড়নায় শাকসবজি কিনতে পারেন না। তাই পান্তা ভাত খেয়েই তাদের জীবন চলে।
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল ঘেঁষা টিকাটুলি সুইপার কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, ঝুপড়ি ঘেঁষে মলমূত্র ভাসছে। একটু বৃষ্টি হলেই মলমূত্রসহ নোংরা পানি ঢুকে প্রায় ঘরেই। বর্ষা মৌসুমে মলমূত্রের মাঝেই সময় কাটে এ কলোনির অধিকাংশ শিশুর। যে মা শিশুর জন্ম দিচ্ছে তাকেও বছরের বেশির ভাগ দিনই কাটাতে হয় না খেয়েই, অথবা আধপেটা খেয়ে। পুষ্পিতা বয়স ২১ বছর। কোলে তার ৫ মাসের শিশু। পাশেই বড় সন্তান রাজন, বয়স ৩ বছর। মা ও দুসন্তান- দুজনই অপুষ্টিতে আক্রান্ত। সুইপার কলোনির পঞ্চাশোর্ধ্ব রাহুল, বিমল ও পঙ্কজ বললেন, তাদের এ কলোনিতে প্রায় দেড় হাজার শিশু আছে। তারাই সবচেয়ে বেশি অপুষ্টির শিকার। সরকার কিংবা কোনো সংস্থা তাদের পুষ্টিহীন সন্তানদের দিকে তাকায় না। তাই দিন আসে দিন যায়, তাদের স্ত্রী-শিশুরা খেয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকে। প্রায়ই মৃত্যু হয় মা-শিশুর।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার রেলওয়ে বস্তি, তেজগাঁও বস্তি, কড়াইল বস্তি, মোহাম্মদপুর বসিলা বস্তি, মিরপুর কালসী বস্তি ও সায়েদাবাদ সুইপার কলোনি ঘুরে দেখা গেছে পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত শিশুদের আরও ভয়াবহ চিত্র। কারওয়ান বাজার রেলওয়ে বস্তির ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘরে বিউটি নামের এক মহিলা অসুস্থ শিশু সন্তান নিয়ে বিড়বিড় করে কাঁদছেন। কাঁদছেন কেন, বাচ্চার এ অবস্থা কেন? অভিযোগ করেন জন্ম দিয়ে পালিয়েছে তার স্বামী। ফলে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। বাচ্চাটা দেখিয়ে বলেন ও কাঠ হয়ে গেছে। বসিলা বস্তিতে গিয়ে কথা হয় সন্তানসম্ভবা কহিনূরের সঙ্গে। অপুষ্টির কারণে হাত-পায়ের হাড়গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বললেন, স্বামী জহির মিয়া বাঁশে পেঁচিয়ে মিঠাই বিক্রি করেন। ওই দেখেন, (ঝুপড়ির ভেতর) আমার বড় মেয়ে খাবার না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। পেটে খিদে নিয়ে দাঁত কামড়ে বসে থাকি, গর্ভের শিশুর কি যে অবস্থা হয়। তারপরই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন কহিনূর। পঙ্গু হাসপাতালের পশ্চিম পাশে গড়া সুইপার কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, ওখানকার শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির চিত্র স্পষ্ট। ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘর। সূর্যের আলো ঢোকে না। বাইরের বাতাস ঘরে আন্দোলিত হয় না। ঘরের ভেতর হাত ধুলে সেই পানি ফেলার জায়গাও নেই। এ কলোনির বাসিন্দা সুষমা গীতা বললেন, আমরা যে কি কষ্টে আছি তা বলে বোঝাতে পারব না। আমাদের ঘরের বাচ্চাদের অসুখ-বিসুখ সারতে চায় না। অপুষ্টির হাত থেকে শিশুদের বাঁচাতে কেউ এগিয়েও আসছে না। দিনের পর দিন দাম বাড়ছে খাদ্যদ্রব্যের। আমরা সেই অসম যুদ্ধে টিকে থাকব কিভাবে? কড়াইল বস্তিতে গিয়ে কথা হয় ২০/২৫ জন মহিলার সঙ্গে। তাদের মধ্যে আসমা বেগম, রোজিনা, বিলকিস ও সালমা বেগম বললেন, নিজে না খেয়েও সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেন। তারপরও রোগ-বালাই ছাড়ে না শিশুদের। তাদের দুরাবস্থা দেখিয়ে বললেন আমরা শিশুদের নিয়ে কিভাবে বেঁচে আছি দেখেন। কোনো সাহায্য-সহযোগিতাও পাই না।
সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সংস্থা থেকে মাতৃত্বকালী ভাতা পাচ্ছেন না বস্তির আসমা, রোজিনা, বিলকিস ও সালমারা। এদের প্রসঙ্গে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি যুগান্তরকে বলেন, তার মন্ত্রণালয় থেকে সারা দেশে আড়াই লাখ মহিলাকে দরিদ্র মার জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রাজধানীতেই প্রায় এক লাখ মাকে এ ভাতা দেয়া হচ্ছে। বস্তিগুলোতে গর্ভবতী মায়েরা কেন ভাতা পাচ্ছেন না তা খতিয়ে দেখবেন বলেও তিনি জানান।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তারিক-উল-ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এ মন্ত্রণালয় থেকে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত মহিলাদের ভাতা প্রদান প্রকল্প চালু রয়েছে। মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান বিষয়ে আলোচনা করা হবে জানিয়ে বললেন, পুষ্টিহীনতার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে খাদ্য ঘাটতি। এ জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, দেশে শিশু মৃত্যুর একটা বড় কারণ তো অপুষ্টি। পুষ্টির সঙ্গে স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যের সঙ্গে নিরাপদ মাতৃত্বের একটি নিবিড় সর্ম্পক রয়েছে।
জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিঠান ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার জাতীয় পুষ্টি সেবার উপ-পরিচালক ডা. তপন কুমার বিশ্বাস জানান, দেশে ৪২ শতাংশ শিশু পুষ্টিহীনতা ও রক্তশূন্যতায় ভুগছে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ শিশু তীব্র পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে-২০১৪ তথ্যানুসারে দেশে প্রতি হাজার নবজাতকের মধ্যে ২৮ জন জম্মের পর ২৮ দিনের মধ্যে মারা যায়। শূন্য থেকে ২ বছরের নিচে ৩৮ জন, পাঁচ বছরের নিচে ৪৬ জন শিশু মারা যাচ্ছে। এছাড়া ৪১ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতি, ১৬ শতাংশ শিশু রুগ্ন ও ৩৬ শতাংশ শিশু কম ওজনে জন্মগ্রহণ করে। প্রতি বছর ৬৫ হাজার শিশু অপুষ্টিজনতি জটিলতায় ভোগে মারা যায়। এদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্র ছিল তা এখনও অর্জিত হয়নি।
এই দীর্ঘ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৩ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে তীব্র অপুষ্টির কারণে প্রতি বছর ৬৫ হাজার শিশু মারা যায়। ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৫ লাখ শিশু অপুষ্টিজনিত নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত। এসব শিশুর চিকিৎসা সেবার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই।
জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও জাতীয় পুষ্টি রোগ লাইন ডিরেক্টর ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য সেবায় আমাদের অনেক অর্জন রয়েছে, কিন্তু শিশু ও মায়েদের পুষ্টি নিশ্চিতকরণে যথাযথ অর্জন করতে পারছি না। গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের পুষ্টি ছাড়া শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, শিশু ও মায়েদের পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

অপুষ্টির কারণে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে শিশুদের। স্বাস্থ্যখাতে অগ্রগতি হলেও পুষ্টি পূরণের ক্ষেত্রে এখনও দেশ অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পুষ্টির অভাবে শূন্য থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে শতকরা ৩৮ দশমিক ৭ ভাগ ছোট আকৃতির, ৩৫ দশমিক ১ ভাগ কম ওজনের এবং ১৬ দশমিক ৩ ভাগ শিশুর আকৃতি ছোট হচ্ছে।

সম্প্রতি এক বৈঠকে পুষ্টি ও প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা পুষ্টিক্ষেত্রে দেশের সার্বিক এ চিত্র তুলে ধরতে এসব পরিসংখ্যান জানানো হয়। পরিসংখ্যানে জানা যায়, পুষ্টির অভাবে শিশুরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস ও অপুষ্টিতে ভোগার আশঙ্কায় বেশি থাকে। রক্তস্বল্পতাসহ নানা রোগেও আক্রান্ত হয়ে থাকে।

পুষ্টি ও প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেন, অপুষ্টির শিকার মা ও শিশুর সংখ্যা আগের তুলনায় কমলেও তা খুব বেশি ইতিবাচক নয়। পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে ভাতের ওপর চাপ কমবে এবং শিশুদের মেধার বিকাশ ঘটবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপুষ্টির প্রধান কারণ জনসংখ্যা, দারিদ্র্য, পুষ্টি সম্পর্কে অজ্ঞতা ও জনসচেতনতার অভাব। দরিদ্র পরিবারে খাদ্যের সহজলভ্যতা না থাকার সঙ্গে সঙ্গে স্বচ্ছল ও অবস্থাপন্ন পরিবারেও শিশুদের অপুষ্টির শিকার হতে দেখা যাচ্ছে। পুষ্টিকর খাবার না দিয়ে শিশুদের আবদার মেটাতে পানীয়, জুস ও চিপস দিচ্ছে। জাঙ্ক ফুডের কারণেও শিশুদের শরীরে ক্ষতি হচ্ছে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বা কম খেতে দেয়াও অপুষ্টির কারণ। বয়স অনুপাতে কতোটুকু খাবার, কী খাবার, কতক্ষণ পর খাবে, তা অনেক মা-বাবা বুঝতে পারেন না। অপুষ্টি দূর করতে শিশুর সুষম খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এটা শুধু শিশুই নয়, কিশোর-কিশোরীসহ সব বয়সের মানুষের জন্যও প্রযোজ্য।

তারা আরো বলেন, রক্তস্বল্পতা, ঠোঁটের কোণায় ঘা, পেটের অসুখ, চোখের নানা সমস্যা, চর্মরোগ, আমাশয়, চুলপড়া, পেটে কৃমি, শারীরিক গঠন সঠিক না হওয়া ও স্নাযুতন্ত্রে বিকাশ ব্যাহত ইত্যাদি অপুষ্টির কারণে হয়ে থাকে। অনেকে মনে করেন, বেশি দুধ ও মাংস খেলে স্বাস্থ্য ভাল হয়। কিন্তু তা নয়, শিশুসহ প্রতিটি মানুষের বয়স অনুপাতে মিশ্র খাবার অর্থাৎ সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। সে জন্য মাংস ও দুধের সঙ্গে মাছ, ডিম, ডাল, ভাত, সবজি, ফলমূল খেতে হবে।

সম্প্রতি সাউথ এশিয়া ফুড এন্ড নিউট্রিশন সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (এসএএফএএনসিআই)-এর তথ্যপত্রে দেখা গেছে, বাংলাদেশে অপুষ্টির হার ১৯৯০ সালের পর থেকে ব্যাপকভাবে কমে এসেছে। ২০১৫ সালের মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ওজন স্বল্পতার হার অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যেহেতু নারী ও ছোট শিশুরা বেশি অপুষ্টির শিকার হয়, সেহেতু মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জলাভূমির টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে, ছোট জাতের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে মাছের সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধি, এবং পুষ্টিমান বাড়াতে এ গবেষণায় গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা, পুষ্টিশিক্ষা এবং শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠতে সহায়তা করতে মা-বাবা’র সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ জন্য হাসপাতাল ও গণমাধ্যমের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। দৈনন্দিন খাবারে যথেষ্ট অণুপুষ্টি না পেলে শিশুরা অপুষ্টির শিকার হয়। ফলে তাদের পক্ষে স্কুলে শেখা এবং পরবর্তীতে কর্মজীবনেও ভাল করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ ধরনের ক্ষতি অপূরণীয়। অপুষ্টির শিকার যারা তাদেরসহ অন্যান্যদের এ বিষয়ে আরো অধিক মনোযোগি হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

ইউনিসেফের এক জরিপ থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে শতকরা ৬০ ভাগ শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। খাদ্য ঘাটতির কারণে কম বয়সী শিশুদের শতকরা ৪৭ ভাগ শিশুই মারাত্মক স্বাস্থ্যহীনতায় ভোগে। এর মধ্যে রক্তস্বল্পতা একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।

চিকিৎসকদের মতে, অপুষ্টি একটি মারাত্মক জনসমস্যা। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে কোন খাবারে কি পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে সে সম্পর্কে অভিভাবকদের সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন। সমাজে কিছু সমস্যা রয়েছে, যা শিশু অপুষ্টির কারণ, তা হলো মাতৃদুগ্ধের বিকল্প খাদ্যের ব্যবহার। নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমেও বিকল্প এ মাতৃদুগ্ধ মা’র হাতে পৌঁছে থাকে।

এদিকে, মাতৃত্বকালীন ভাতার অর্থ থেকে পুষ্টিকর খাবারের সুবিধা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার ২০০৭-২০০৮ অর্থবছর থেকে এ ভাতা চালু করে। মাতৃত্বকালীন ভাতার আওতায় একজন দুস্থ গর্ভবতী নারী পাচ্ছেন ৩শ’ টাকা করে মাসিক ভাতা। এ ভাতা ২৪ মাস পর্যন্ত বরাদ্দ থাকে। মূলত মা ও শিশুর পুষ্টিজনিত অভাব মেটাতে সরকার এ কর্মসূচি চালু করেছে।

বিডিএইচএসের সর্বশেষ এক জরিপে দেখা যায়, ২০১১ সালে বাংলাদেশে কম ওজনের শিশু ছিল শতকরা ৩৬ ভাগ। অর্থাৎ এই শিশুরা আড়াই কেজির কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে।

২০১১-১২ সালে জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে জাতীয় অনুপুষ্টি সমীক্ষা হয়েছিল। সেখানে দেখা যায়, ৯ থেকে ১৪ বছরের কিশোরী মেয়েরা আয়রন (লৌহ জাতীয়) খাবার প্রয়োজনের তুলনায় ২০ শতাংশ কম খায়। শতকরা ১০ ভাগ মাছ ও মাংস খেতে পায়। এ সমস্যা কিশোর-কিশোরী উভয়ের।

মানবশিশুর অসহায়ত্বের একটি প্রধান দিক হলো, ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া। পশুকুলে মাতৃহীন শিশু পশুগুলোকে অন্য পশুরা খাবারে ভাগ বসাতে না দেওয়ার জন্য শিশুটিকে গুঁতো মেরে তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু মানবশিশুর ক্ষেত্রে চিত্রটা একেবারেই অন্যরকম, অনেক সময় খাওয়া-আশ্রয় তো দেয়ই না বরং অন্য রকম সুযোগে নেওয়ার চেষ্টা করে তা হলো যৌন অত্যাচার। জীবনের প্রথম থেকেই শিশুরা বিভিন্নভাবে বহুমাত্রিক যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। মানুষের বিকৃত যৌনলিপ্সা চরিতার্থ করার একটি সহজ মাধ্যম হলো শিশুরা। শিশুদের উপর যৌন অত্যাচার করাটাকে এই বিকৃত রুচির মানুষেরা নিরাপদ মনে করে। কারণ তারা মনে করে শিশুরা হয়ত বিষয়টাকে বোঝে না বা তারা অন্যের কাছে বলবে না, আর বললেও মানুষ তা বিশ্বাস করবে না।
শিশুরা পরিবার থেকে সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র (শিশুশ্রমের স্থানগুলো) সহ প্রায় সর্বত্রই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা গেছে, বিশ্বে পায় ২০% মেয়েশিশু এবং ৮% ছেলেশিশু কোন না কোন ভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আফ্রিকার পরিস্থিতি সব থেকে খারাপ, সেখানে প্রায় ৩৪% শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে, অন্যদিকে ইউরোপে প্রায় ৯% এবং আমেরিকা ও এশিয়ায় ১০ থেকে ২৪ শতাংশ।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই চিত্রের খুব একটা হেরফের হয় নাই। প্রতিদিন বিভিন্ন মাত্রিক যৌন সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসের বলি হচ্ছে অনেক নারী ও শিশু। যদিও মিডিয়ায় শুধুমাত্র নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার ঘটনাগুলো প্রকাশ্যে আসছে, কিন্তু বিপুল সংখ্যক পথশিশু ও শ্রমজীবি শিশু (বিশেষতঃ ছেলেশিশু) যে প্রতিনিয়ত যৌন লালসার শিকার হচ্ছে তা অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও পরিবর্তিত আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে মানুষের জীবিকার সন্ধানে শহরমূখী প্রবণতা শিশুদের অনেক বেশি অনিরাপদ জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বাবা-মা কাজের সন্ধানে বাইরে এলে তাদের শিশুকে দেখভালের তেমন কেউ থাকে না, এই অবস্থার সুযোগ নেয় নিপীড়নকারী। আবার অন্যদিকে দারিদ্রতার কারণে অনেক শিশুকে নিজেকেই জীবিকার সন্ধান করতে শহরে আসতে হয় যাদেরকে অধিকাংশক্ষেত্রেই অনিরাপদ আশ্রয় তথা বস্তি বা পথে জীবন কাটাতে হয়। এই সকল পথশিশু বা টোকাই ও শ্রমজীবি শিশুদের জীবন সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ। অশিক্ষিত এই সকল পথশিশু ও শ্রমজীবি শিশুদের এক তৃতীয়াংশের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে এবং তারা পরিবার বা বন্ধুবান্ধব ছাড়াই শহরে বিশেষতঃ ঢাকায় চলে আসে।

সমীক্ষা বলছে, ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুরাই সব থেকে বেশি যৌন নির্যাতনের ঝুঁকির মধ্যে বাস করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরিচিত, আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সদস্য বা পারিবারিক বন্ধু, শিক্ষক ও গৃহশিক্ষক বালক ও প্রাপ্ত বয়স্কদের দ্বারাই তারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। কিশোর, যুবক ও মধ্য বয়সী পুরুষেরা এই সকল অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে থাকে। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ৩০% শিশু নিকট আত্মীয় যথাঃ ভাই, বাবা, কাকা-জ্যাঠা-মামা-মেসো, কাকাত-জ্যাঠাত-মামাত-পিসতুতো ভাই ইত্যাদির দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। অন্যদিকে, ৬০ ভাগ শিশু তাদের পারিবারিক বন্ধু, আয়া, বা প্রতিবেশিদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয় এবং ১০ ভাগ অপরিচিতের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। যদিও অধিকাংশ নির্যাতনই পুরুষমানুষের দ্বারা ঘটে থাকে, কিন্তু প্রায় ১০% ক্ষেত্রে দেখা গেছে মহিলারাও শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনে সামিল হয়েছে। যৌন নির্যাতনের ঘটনা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট জাতি-গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটা পৃথিবীর সর্বত্র সকল সমাজ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিস্তৃত।

যৌন সহিংসতা শিশুদের জীবনে শারীরিক ও মানসিকভাবে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব তৈরী করে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে সকল শিশু যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে তারা যারা যৌন সহিংসতার শিকার হয়নি তাদের চেয়ে অনেক বেশি মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থতায় ভোগে, অবসাদ্গ্রস্থ হয়, আত্মবিশ্বাস হারায়। তারা মানুষের উপর বিশ্বাস রাখতে পারে না, নিঃসঙ্গতায় ভোগে। আবার অনেক সময় দেখা গেছে তারাই আবার পরবর্তী জীবনে যৌন নিপীড়নকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। যৌন সহিংসতার শিকার হওয়া শিশু বিশেষতঃ পথ শিশু বা যারা শ্রম বিক্রি করে থাকে তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের নেশায় আসক্ত হওয়ার হার অনেক বেশি।

ধরুন, আপনার শিশু কারো দ্বারা সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজড বা যৌন হয়রানি/নিপীড়নের শিকার হলো (ছেলে বা মেয়ে যে কেউ হতে পারে) এখন আপনার করণীয় কী?

১) আপনার শিশু যদি কারো নামে আপনার কাছে নালিশ করে, শিশুকে বিশ্বাস করুন। শিশুরা সাধারণত এই ব্যাপারে মিথ্যা বলে না। আপনি অবিশ্বাস করলে ভবিষ্যতে হয়তো আর কখনোই শিশুটি আপনার সাথে শেয়ার করবে না।

২) আপনার শিশুকে এটা বুঝতে দেয়া যাবে না তার সাথে খুব ভয়ংকর কিছু ঘটে গেছে। আপনি আপনার শিশুর সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করুন, অস্থির হয়ে যাবেন না।

৩) নিয়মিত একজন ভালো শিশুমনোবিজ্ঞানীকে দিয়ে কাউনসেলিং করান।

৪) শিশুটি যদি খুব গুরুতর নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও শিশু মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিন। কখনোই শিশুটিকে এ নিয়ে তো নয়ই, উপরন্তু এ সময়টাতে কোনকিছু নিয়েই বকাবকি করা যাবে না। বরং তাকে আশ্বস্ত করতে হবে যা হয়েছে তা কোনভাবেই তার অপরাধ নয়, অপরাধ ওই ব্যক্তির।
ব্যাপারটি যদি আদালত পর্যন্ত যায়, বিশেষ ব্যবস্থায় মনোবিজ্ঞানীর মাধ্যমে শিশুর জবানবন্দী নিতে হবে, কখনোই শিশুকে জনসমক্ষে ‘তার সাথে কী হয়েছে’ এর বর্ণনা দিতে বলা যাবে না। এসব শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

৫) ভিকটিম শিশুটি যদি খুব অল্প বয়সী হয়- তাহলে হয়তো সে আপনাকে নির্যাতনকারীর কথা বলতে পারবে না। আপনাকে আগেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুকে একাকী যার-তার কোলে দেবেন না।

নিচের লক্ষণগুলো দেখা গেলে সাবধান হোন, প্রয়োজন হলে ডাক্তার দেখান। তবে এগুলো অন্য কারণেও হতে পারে।
• শিশুর গোপনাঙ্গে কোন ক্ষত বা অস্বাভাবিক ফোলা ভাব,
• মুখে ক্ষত,
• পেট খারাপ,
• খাওয়ায় অরুচি,
• বিশেষ কোন ব্যক্তিকে দেখে ভয় পাওয়া,
• হঠাৎ চমকে ওঠা ইত্যাদি।

নির্যাতনকারী কদাচিৎ অচেনা মানুষ হন ।

অধিকাংশ সময় সে নিকট বা দূরসম্পর্কের আত্মীয়, শিক্ষক, পরিবারের লোক, পারিবারিক বন্ধু, প্রতিবেশী, কাজের লোক ইত্যাদি হন।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে- কেবল সন্দেহ করে অহেতুক কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না । এতে ব্যক্তিগত সম্পর্ক খারাপ হতে পারে। আবার, নিশ্চিত হলে লজ্জায় চুপ করে থাকবেন না । সে আপনার যত ঘনিষ্ঠ বা সম্মানিত জনই হোক না কেন। পারিবারিকভাবে সালিশ করা গেলে ভালো, কিংবা আইনি সহায়তা নেবার প্রয়োজন হলে নিন।

আমরা তো এখন আধুনিকতার দোহাই দিয়ে অনেক বিকৃতিকেই স্বাভাবিকভাবে নেয়া শুরু করেছি। ভাবলে ভেতরটা হিম হয়ে আসে ।
একসময় হয়তো আমরা চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ, পেডোফিলিয়া এবং ‘অজাচার’ (ইনসেস্ট) এর মতো জঘন্যতম বিকৃতিগুলোকেও স্বাভাবিক ভাবে নিতে শুরু করবো।

আপনার আমার নীরবতাই হাজারো শিশুর নির্যাতিত হওয়ার পথ সুগম করে দেবে।
আসুন, এদের মুখোশ খুলে দিই সভ্য সমাজে, ধিক্কার দিই, কঠোর আইন প্রণয়ন করি, আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড় করাই, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করি।
সুস্থ-স্বাভাবিক-নিরাপদ শৈশব- প্রতিটি শিশুর অধিকার । আমাদের শিশুরা বেড়ে উঠুক নিবিড় স্নেহাশীষের পবিত্রতায়।

সবচেয়ে বড়কথা, নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে কিছুতেই ভাবতে দেয়া যাবে না যে, তার জীবনে ‘ভয়াবহ’ কিছু ঘটে গেছে, যার কারণে তার সারাটা জীবনই অভিশপ্ত হয়ে উঠবে।

বরং তাকে এটা বুঝতে দিতে হবে যে, যেহেতু বিশ্বে এখনও অনেক নরাধম আছে, বিকৃত রুচির মানুষ আছে, তাই তাদের পক্ষে এরকম কিছু ঘটানো সম্ভব আর এর প্রতিকারও সম্ভব। সে একা নয়, আমরা সবাই তার পাশে আছি আনন্দে-ভালবাসায়, এটা শিশুটিকে বুঝিয়ে বলতে হবে। আর পরিবারের অতিআগ্রহীদের এসময় ধারেকাছে ঘেঁষতে না দেয়াই ভাল। পারলে শিশুটিকে নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরে আসুন, ওকে ভুলিয়ে দিন সবকিছু।



সারা বিশ্ব জুড়ে আরেকটি বড় সমস্যা ভ্রুন হত্যা ।চীনের এক সন্তান নীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বলা হয় বিবিসি’র হংকং সংবাদদাতা জুলিয়ানা লিউ–এর জন্ম ১৯৭৯ সালে। তখন চীনে এক সন্তান নীতির কারণে তার মা-বাবা দ্বিতীয় সন্তান নিতে পারলেন না।



লিউ-এর বাবা–মা দুজনেই তখন চাকরি করেন। তারা যদি দ্বিতীয় সন্তান নিতেন, তাহলে চাকরি হারাতে হতো।

“আমার মা দু’বার সন্তান সম্ভবা হয়েছিলেন। কিন্তু দু’বারই তাকে গর্ভপাত করাতে হয়েছে। কারণ চীনে তখন এক সন্তান নীতি। সবাই সে আইন জানতো।”



বিশেষজ্ঞদের মতে এক সন্তান নীতির কারণে চীনে ৪০ কোটি শিশুর জন্ম হয়নি।



জুলিয়ানা লিউ বলেন, নিজের সবচেয়ে আদরের সন্তান গর্ভাবস্থাতেই মেরে ফেলার বিষয়টি কতটা বেদনার সেটি নিজে মা হয়ে আমি ভাবতেই পারি না। চীনে অনেক পরিবারের এ ধরনের গল্প রয়েছে। লিউ শৈশবে যাদের সাথে কাটিয়েছেন তাদের কারো ভাই-বোন ছিল না। সবাই ছিল একমাত্র সন্তান।



একমাত্র সন্তান হবার কারণে বাবা–মায়ের সব প্রত্যাশা ছিল তাকে ঘিরে। স্কুলে ভালো ফলাফল করা, ভালো চাকরি করা, সঠিক মানুষটিকে বিয়ে করা–এ ধরনের সব প্রত্যাশা। এক কথায় সব কিছুতেই পরিপূর্ণ হতে হবে। কারণ আমি একমাত্র সন্তান।



চীন যখন এক সন্তানের নীতি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিলো তখন জুলিয়ানা লিউয়ের আনন্দে মন ভরে গেলো।



বিবিসি চায়না বিভাগের ইউয়েন ইউ পাঁচ ভাইবোন ছিলেন। কিন্তু তার নিজের এক সন্তান ।



এক সন্তান হবার কারণে অনেকই সাবলম্বী হিসেবে গড়ে উঠেছে। তিনি যখন সন্তান সম্ভবা তখন সেই সন্তান জন্মদানের জন্য কত প্রস্তুতি। কারণ সেই সন্তানই প্রথম এবং সেই সন্তানই শেষ। তিনি এক সন্তান নীতিকে সমর্থন করেছিলেন। কারণ, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন চীনের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা রোধের জন্য ব্যক্তিগত কিছু ত্যাগ করতে হবে।





কিন্তু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার যদি আগে থেকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতো, তাহলে হয়তো এক-সন্তান নীতির প্রয়োজন হতো না। কমিউনিস্ট আমলে চীনের প্রথম আদমশুমারি হয় ১৯৫৩ সালে। সেখানে দেখা যায়, চীনের জনসংখ্যা তখন ৬০ কোটি। এর মধ্যে তার আগের চার বছরেই চীনের জনসংখ্যা বেড়েছে ১০ কোটি!



পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাও ইয়েনচু অধিক জন্মহার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। তিনি বিষয়টি চীনের নেতা মাও সেতুং-এর কাছে তুলে ধরেন। কিন্তু জন্মহার কমানোর বিষয়টি মাও সেতুং পছন্দ করেননি।



কারণ, তখন চীনে মনে করা হতো অধিক জনসংখ্যা মানে অধিক কর্মক্ষম মানুষ। সেজন্য তখন পরিবারগুলোকে বেশি সন্তান নিতে উৎসাহ দেয়া হতো। সেজন্য ইউয়েন ইউ-এর বাবা-মায়ের পাঁচ সন্তান ছিল। কিন্তু এখন ইউয়েন ইউ-এর এক সন্তান।



এক সন্তান হবার কারণে অনেকেই বাড়তি যত্নে বেড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, কিভাবে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে পরিস্থিতি বদলে যায়! যদি তখন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হতো তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের উপর এক সন্তান নীতি চাপানোর প্রয়োজন হতো না।



এখন এক সন্তান হবার কারণে ইউয়েন ইউ-এর কন্যা অনেকটা স্বাবলম্বী। সে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে শিখেছে এবং কিভাবে বন্ধু তৈরি করতে হয় সেটিও সে জানে। তার মেয়ে স্বাধীন এবং পরিশ্রমী। একমাত্র সন্তান হবার কারণেই ইউয়েন ইউ-এর কন্যা এভাবে গড়ে উঠেছে।



ইউয়েন ইউ বলেন, আমার মেয়ে যেভাবে বেড়ে উঠেছে তাতে আমি খুশি। কিন্তু আমার ইচ্ছে হয়–যদি তাকে একটি ভাই-বোন দিতে পারতাম।


১৮০৬ খ্রীঃ মহারানা রনজিৎ সিং তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে শতদ্রু পার করে লুধিয়ানা এবং অন্যান্য রাজ্য দখল করে নেন ।
এই সময় তার সৈন্য দখল করা অঞ্চলে লুঠতরাজ চালান এবং জাঠ নাগরিকদের মেঝে খুড়ে প্রচুর ধন সম্পদ লাভ করেন । এই সময় জাঠদের মেঝে খুড়ে এএক বিচিত্র অ অভিজ্ঞতা হয় তাদের ।তারা মেঝে খুড়ে প্রতিটি জাঠ বাড়ীতে খুজে পান মেয়েদের কঙ্কাল ।

পাঞ্জাব অঞ্চলের "বেদী" সম্প্রদায়ভুক্ত লোকেদের মধ্যে এই বিভৎস কন্যাহত্যা প্রথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল । ব্রিটিশ বাহিনী ১৮৪৬ খ্রীঃ লাহোর দখল করে নেন । পাঞ্জাবের রাজা তখন দলীপ সিংহ । এসময় রাজা দলীপ সিংহের সাথে এক চ্যুক্তি অনুসারে বিপাসা ও শতদ্রুর মধ্যবর্তী দোয়াব অঞ্চল ইংরেজদের দখলে আসে । সদ্য দখলকৃত দোয়াব ও লাহোর অঞ্চলের প্রথম ইংরেজ কমিশনার হন জন লরেন্স । এসময় কমিশনার লরেন্স সাহেব ওই "বেদী" সম্প্রদায়ভুক্ত লোকেদের সাথে কথা বলে কন্যা হত্যার কারন জানতে চান । তখন লরেন্স সাহেবের প্রশ্নের উত্তরে বেদী সম্প্রদায়ের লোকেরা বলে যে, এই কন্যাহত্যা প্রথা তাদের মধ্যে গত ৪০০ বছর ধরে চলে আসছে । তারা লরেন্স সাহেবকে অনুরোধ করেন, ইংরেজ সরকার যেন তাদের এই পুরাতন রীতি মেনে হস্তক্ষেপ না করে । এই ঘটনার পর লরেন্স সাহেব ২০০ বেদী পরিবারের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে একটাও কন্যা সন্তান খুজে পান নি ।

ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কিছু অংশে "কন্ধ" নামে এক আদিবাসী সম্প্রদায় বাস করে । এদের এক দেবতা আছেন যার নাম "আদিবা বুড়া পেনু" , এই বুড়া পেনুর ভক্তরা মনে করেন পৃথিবীতে নারীই সব নষ্টের মূল । তাই নারীর সংখ্যা যত কমবে ততই মঙ্গল । এজন্য কন্যা জন্মের সাতদিন পর একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এরা কন্যা সন্তানটিকে হত্যা করত । একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে এদের মধ্যে ধর্ষন বিভীষিকায় পরিনত হয়েছিল ।

জন্মের আগেই সন্তানের লিঙ্গ শনাক্ত করতে পারার কারণে গর্ভপাত করে হত্যা করা হচ্ছে কন্যা সন্তানের ভ্রূণ৷ ফলে ভারতে দিনদিন কমে যাচ্ছে কন্যা সন্তানের সংখ্যা৷

কন্যা সন্তান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যেন কাঙ্খিত নয় ভারতে৷ সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভারতে বর্তমানে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে ছেলে শিশুদের থেকে মেয়ে শিশুদের সংখ্যা প্রায় ৭১ লাখ কম৷
‘দ্য ল্যানসেট' সাময়িকীতে প্রকাশিত সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়, ভারতের যেসব পরিবারের প্রথম সন্তানটি মেয়ে, সেইসব দম্পতিদের অনেকেই দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেওয়ার আগেই আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নেন তাদের সন্তানটি ছেলে না মেয়ে? যদি জানতে পারেন মেয়ে তাহলে গর্ভপাত করিয়ে ফেলেন এই আশায় যে, পরবর্তী সন্তানটি হয়ত ছেলে হবে৷
এই সমীক্ষার হিসেব অনুযায়ী, ১৯৮০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ৪০ লাখ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ মেয়ে শিশুর ভ্রুণ হত্যা করা হয়েছে কেবল তারা মেয়ে এই কারণে৷ বলা হয়েছে, যাদের প্রথম সন্তান মেয়ে তাদের মধ্যে গর্ভপাত করে মেয়ে শিশুর ভ্রুণ নষ্ট করার প্রবণতা গত কয়েক দশকে অনেক বেড়ে গেছে, যা ছেলে শিশু এবং মেয়ে শিশুদের স্বাভাবিক অনুপাতকে ব্যাহত করছে৷ ৬ বছর পর্যন্ত বয়সের শিশুদের মধ্যে ১৯৯১ সালে ছেলে শিশুর চেয়ে মেয়ে শিশুর সংখ্যা ৪২ লাখ কম ছিলো, যা ২০০১ সালে এসে দেখা যায় মেয়ে শিশুর সংখ্যা ছেলে শিশুদের চেয়ে ৬০ লাখ কম৷
সমীক্ষাটির গবেষক বলছেন, ছেলে সন্তানদের প্রতি আগ্রহের কারণে মেয়ে শিশুদের ভ্রূণ চিহ্নিত করে করে হত্যা করার ফলে মেয়েদের সংখ্যা কমছে৷ কেবল এ কারণেই ভারতের ২ থেকে ৪ শতাংশ গর্ভবতী নারী গর্ভপাত করিয়ে থাকেন৷
সমীক্ষায় গবেষকদের অন্যতম প্রভাত জয়া ঝা৷ যিনি ইউনির্ভাসিটি অফ টরেন্টো'র সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ এর গবেষক৷ ২০১১ সাল পর্যন্ত গত কয়েক বছরের আদমশুমারির তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গবেষণামূলক সমীক্ষাটি করা হয়৷ এছাড়া গবেষকরা জাতীয় সমীক্ষা থেকে আড়াই লাখ জন্মের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন৷ সেখানে তারা এমন সব পরিবারকে বেছে নেন যেসব পরিবারের প্রথম সন্তান মেয়ে৷ এবং সেইসব পরিবারের দ্বিতীয় শিশুটি ছেলে না মেয়ে তার ওপর ভিত্তি করে দ্বিতীয় সন্তানের মধ্যে ছেলে ও মেয়ের অনুপাত বের করেন৷

লিঙ্গ সমতা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ভারতে গত দুই দশক ধরে বছরে প্রায় আড়াই লাখ কন্যাভ্রূণ হত্যা করা হয়৷ ভূমিষ্ঠ হবার আগে থেকেই লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হতে হয় মেয়েদের৷
বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, গত দুই দশকে ভারতে বছরে প্রায় আড়াই লাখ কন্যাভ্রূণ হত্যা করা হয়েছে
বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, গত দুই দশকে ভারতে বছরে প্রায় আড়াই লাখ কন্যাভ্রূণ হত্যা করা হয়েছে
তাহলে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের উদ্বেগ কি মেকি নয়?
দেশের আইন বলছে, লিঙ্গ নির্ধারণ বা কন্যাভ্রূণ হত্যা করলে বা সদ্যোজাত কন্যাসন্তান পরিত্যাগ করলে কিংবা অবৈধ গর্ভপাত করা হলে কড়া সাজা হবে ডাক্তার বা রেডিওলজিস্টের৷ এ জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় শাস্তির সংস্থান আছে৷ সেই ধারায় ক'টা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে? যদি হতো, তাহলে অন্তত এক কোটি মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যেত৷ ‘লিঙ্গ সমতা ও উন্নয়ন' সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, গত দুই দশক ধরে ভারতে বছরে প্রায় আড়াই লাখ কন্যাভ্রূণ হত্যা করা হয়েছে৷ এই পরিসংখ্যানে সমাজের মাথা হেঁট হয়ে যায় ঠিকই, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় সমাজ চোখ বুজে না থাকলে এটা কি সম্ভব হতো?
সমীক্ষা বলছে, ভারতে ৫৩ শতাংশ কন্যা সন্তান বাল্য বয়স থেকেই কোনো না কোনো যৌন নির্যাতনের শিকার
সমীক্ষা বলছে, ভারতে ৫৩ শতাংশ কন্যা সন্তান বাল্য বয়স থেকেই কোনো না কোনো যৌন নির্যাতনের শিকার
পশ্চিমবঙ্গের জনৈক স্বাস্থ্য অধিকর্তা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, যে দেশে ব্যাপক হারে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ চলেছে৷ প্রি-ন্যাটাল ডায়গনস্টিক পদ্ধতিতে যদি দেখা যায় কন্যাভ্রূণ, তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই ভ্রূণহত্যা করা হয়৷ পরিণামে গোটা দেশে পুরুষের তুলনায় মেয়েদের অনুপাত কমে যাচ্ছে৷ প্রতি হাজার পুরুষে মেয়েদের গড় সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯১৪৷
ভারতে নারী অধিকার, নারী স্বাধীনতা এবং লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে কত আন্দোলন, প্রতিবাদ, মিছিল, আলোচনাচক্র লাগাতার চলেছে, কিন্তু তাতে ভেতরের ছবিটা পালটায়নি আদৌ৷ সব যেন প্রহসন বলে মনে হয়৷ ২০১৩ সালের মানব উন্নয়ন রিপোর্টে বলা হয়, কন্যা সন্তানরা শিশুকাল থেকেই অপুষ্টির শিকার হয় বেশি৷ ফলে তাঁরা যখন মা হন, তখন তাঁদের অপুষ্টির ফল ভোগ করতে হয় সন্তানদের৷ ভারতে প্রায় ৪২.৫ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভোগে৷ মেয়েদের পুষ্টিহীনতা অনেক বেশি হয়, কারণ খাওয়াপরা ও যত্ন পরিচর্যার দিক থেকে পুত্রসন্তানদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়৷ ছোটবেলা থেকে মেয়েদের ভাবতে শেখানো হয়, ছেলেরা সংসারের সম্পদ৷ প্রায় ৫৪ শতাংশ শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ হয়না৷ ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় অনেক আগেই৷
এখানেই শেষ নয়, কন্যা সন্তানদের ওপর দৈহিক নির্যাতন ও যৌন নিগ্রহের পরিধি ব্যাপক৷
ভারতে বিয়ের ব্যাপারে প্রতি ১০ জন মেয়ের মধ্যে পাঁচ জনের মত নেয়া হয়না
ভারতে বিয়ের ব্যাপারে প্রতি ১০ জন মেয়ের মধ্যে পাঁচ জনের মত নেয়া হয়না
শিশু নিগ্রহ সংক্রান্ত জাতীয় সমীক্ষা বলছে ৫৩ শতাংশ কন্যা সন্তান কোনো না কোনো যৌন নিগ্রহের শিকার বাল্য বয়স থেকেই এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটা হয় তাঁদের পরিচিতজন বা আত্মীয়দের দ্বারা৷ শিশু যখন নারী হয়ে ওঠে, তখনো এটা চলতে থাকে৷ জাতীয় অপরাধ ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১২ সালে প্রায় ২৫ হাজার ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়৷ এর ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষণকারী ধর্ষিতার পরিচিত৷ ঘরে মেয়েদের জন্য শৌচালয় না থাকায় রাতে তাঁদের যেতে হয় মাঠে বা ঝোপঝাড়ে৷ সেখানেও থাবা মারে ধর্ষকরা৷
মেয়েদের পারিবারিক ও সামাজিক শোষণের তালিকা দীর্ঘ৷ বিয়ের ব্যাপারে প্রতি ১০ জন মেয়ের মধ্যে পাঁচ জনের মত নেয়া হয়না, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জনকে ডাক্তার দেখাতে হলে ঘরের অনুমতি নিতে হয়৷ সাবালিকা হবার আগেই বিয়ে হয়ে যায় মেয়েদের৷ ২৫ বছরের বেশি বয়সের মহিলাদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ স্বীকার করে তাঁদের বিয়ে হয় প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগে৷ মহিলাদের মধ্যে বিশেষ করে গরিব মহিলারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে প্রাণ হারান৷ ভারতে বছরে দুই কোটি ৭০ লাখ শিশুর জন্মদান কালে অন্তত ৫৪ হাজার প্রসূতির মৃত্যু হয়৷
পৃথিবীর আলো দেখার আগে কন্যাভ্রূণ হত্যা থেকেই শুরু হয়ে যায় মেয়েদের প্রতি পাশবিকতা৷ কাগজে কলমে এর বিহিত করার সংস্থান থাকলেও কার্যক্ষেত্রে তার প্রয়োগ হয়না বললেই চলে৷ শাস্তির বিধানই শেষকথা নয়৷ এর বিরুদ্ধে তৈরি করা দরকার ব্যাপক জনমত ও জনসচেতনতা৷ সেটা কে করবে, কী ভাবে করবে?

জন্মের আগেই সন্তানের লিঙ্গ শনাক্ত করতে পারার কারণে গর্ভপাত করে হত্যা করা হচ্ছে কন্যা সন্তানের ভ্রূণ। ফলে ভারতে দিন দিন কমে যাচ্ছে কন্যা সন্তানের সংখ্যা। গত ৩০ বছরে ১ কোটি ২০ লাখ মেয়ে ভ্রূণ হত্যা করা হয়েছে।
কন্যা সন্তান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যেন কাঙ্ৰিত নয় ভারতে। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভারতে বর্তমানে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে ছেলে শিশুর থেকে মেয়ে শিশুর সংখ্যা প্রায় ৭১ লাখ কম। 'দ্য ল্যানসেট' সাময়িকীতে প্রকাশিত সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়, ভারতের যেসব পরিবারের প্রথম সনত্মান মেয়ে, সেইসব দম্পতির অনেকেই দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেয়ার আগেই আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নেন তাদের সন্তানটি ছেলে না মেয়ে? যদি জানতে পারেন মেয়ে তাহলে গর্ভপাত করিয়ে ফেলেন এই আশায় যে, পরবর্তী সন্তানটি হয়ত ছেলে হবে। খবর ওয়েবসাইটের।
এই সমীক্ষার হিসেব অনুযায়ী, ১৯৮০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ৪০ লাখ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ মেয়ে শিশুর ভ্রূণ হত্যা করা হয়েছে কেবল তারা মেয়ে এই কারণে। বলা হয়েছে, যাদের প্রথম সনত্মান মেয়ে তাদের মধ্যে গর্ভপাত করে মেয়ে শিশুর ভ্রূণ নষ্ট করার প্রবণতা গত কয়েক দশকে অনেক বেড়ে গেছে, যা ছেলে শিশু এবং মেয়ে শিশুদের স্বাভাবিক অনুপাতকে ব্যাহত করছে। ৬ বছর পর্যনত্ম বয়সের শিশুদের মধ্যে ১৯৯১ সালে ছেলে শিশুর চেয়ে মেয়ে শিশুর সংখ্যা ৪২ লাখ কম ছিল, যা ২০০১ সালে এসে দেখা যায় মেয়ে শিশুর সংখ্যা ছেলে শিশুদের চেয়ে ৬০ লাখ কম।
সমীক্ষার গবেষক বলছেন, ছেলে সনত্মানদের প্রতি আগ্রহের কারণে মেয়ে শিশুদের ভ্রূণ চিহ্নিত করে করে হত্যা করার ফলে মেয়েদের সংখ্যা কমছে। কেবল এ কারণেই ভারতের ২ থেকে ৪ শতাংশ গর্ভবতী নারী গর্ভপাত করিয়ে থাকেন।
সমীক্ষায় গবেষকদের অন্যতম প্রভাত জয়া ঝা। যিনি ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোর সেন্টার ফর গেস্নাবাল হেলথ-এর গবেষক। ২০১১ সাল পর্যন্ত গত কয়েক বছরের আদমশুমারির তথ্য-উপাত্ত বিশেস্নষণ করে গবেষণামূলক সমীক্ষাটি করা হয়। এছাড়া গবেষকরা জাতীয় সমীক্ষা থেকে আড়াই লাখ জন্মের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। সেখানে তারা এমন সব পরিবারকে বেছে নেন যেসব পরিবারের প্রথম সনত্মান মেয়ে। এবং সেইসব পরিবারের দ্বিতীয় শিশুটি ছেলে না মেয়ে তার ওপর ভিত্তি করে দ্বিতীয় সনত্মানের মধ্যে ছেলে ও মেয়ের অনুপাত বের করেন।

ভারতে বছরে প্রায় আড়াই লাখ কন্যাভ্রূণ হত্যা করা হয়। ভূমিষ্ঠ হবার আগে থেকেই লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হতে হয় মেয়েদের।লিঙ্গ সমতা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, গত দুই দশক ধরে ভারতে বছরে প্রায় আড়াই লাখ কন্যাভ্রূণ হত্যা করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেছেন যে ,বর্তমানে ভারতে ব্যাপক হারে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ চলেছে। প্রি-ন্যাটাল ডায়গনস্টিক পদ্ধতিতে যদি দেখা যায় কন্যাভ্রূণ, তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই ভ্রূণহত্যা করা হয়। পরিণামে গোটা দেশে পুরুষের তুলনায় মেয়েদের অনুপাত কমে যাচ্ছে। প্রতি হাজার পুরুষে মেয়েদের গড় সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯১৪।
অথচ ভারতের আইন বলছে, লিঙ্গ নির্ধারণ বা কন্যাভ্রূণ হত্যা করলে বা সদ্যোজাত কন্যাসন্তান পরিত্যাগ করলে কিংবা অবৈধ গর্ভপাত করা হলে কড়া সাজা হবে ডাক্তার বা রেডিওলজিস্টের। এ জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় শাস্তির বিধান রয়েছে।
তাছাড়া ভারতে প্রায় ৪২.৫ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। তাদের মধ্যে মেয়েদের পুষ্টিহীনতা অনেক বেশী। কারণ খাওয়া ও যত্ন পরিচর্যার দিক থেকে পুত্রসন্তানদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
২০১৩ সালের মানব উন্নয়ন রিপোর্টে বলা হয়, কন্যা সন্তানরা শিশুকাল থেকেই অপুষ্টির শিকার হয় বেশি। ফলে তারা যখন মা হন তখন তাদের অপুষ্টির ফল ভোগ করতে হয় সন্তানদের।
শিশু নিগ্রহ সংক্রান্ত জাতীয় সমীক্ষা বলছে ৫৩ শতাংশ কন্যা সন্তান কোনো না কোনো যৌন নিগ্রহের শিকার বাল্য বয়স থেকেই এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেটা হয় তাদের পরিচিতজন বা আত্মীয়দের দ্বারা।
জাতীয় অপরাধ ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১২ সালে প্রায় ২৫ হাজার ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়। এর ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষণকারী ধর্ষিতার পরিচিত।
এছাড়া সাবালিকা হবার আগেই বিয়ে হয়ে যায় মেয়েদের। তাছাড়া বিয়ের ব্যাপারে প্রতি ১০ জন মেয়ের মধ্যে পাঁচ জনের মত নেয়া হয়না, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জনকে ডাক্তার দেখাতে হলে ঘরের অনুমতি নিতে হয়।
ভারতে বছরে দুই কোটি ৭০ লাখ শিশুর জন্মদান কালে অন্তত ৫৪ হাজার প্রসূতির মৃত্যু হয়।

ভারতে শিক্ষিত, ধনী পরিবারের মধ্যেই কন্যাভ্রুণ হত্যার প্রবণতা বেশি। সেজন্যই গত এক দশকে ভারতে এক হাজার পুরুষ পিছু মেয়েদের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে কমে গিয়েছে। গর্ভপাত নিষিদ্ধ করে চালু থাকা (পি সি পি এন ডি টি) আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে রমরমিয়ে চলছে গর্ভপাত, কন্যাভ্রুণ হত্যা। এর ফলে ১৯৮০ থেকে ২০১০ সাল গত কুড়ি বছরে ভারতে গর্ভপাতের বলি হওয়া শিশুকন্যার সংখ্যা ৪২ লাখ থেকে বেড়ে ১ কোটি ২১ লাখে পৌঁছেছে। বর্তমান পত্রিকা। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্বাস্থ্যপত্রিকা ‘ল্যানসেট'-এ এই রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। তাই জন্মের আগে লিঙ্গ নির্ধারণসহ ভ্রুণ হত্যা রুখতে ‘প্রি কনসেপশন অ্যান্ড প্রি ন্যাটাল ডায়গনেস্টিক টেকনিকস অ্যাক্ট'এর প্রয়োগে সরাসরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের উদ্যোগ চাইছে কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, উত্তর প্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্যের ভার যে মহিলা মুখ্যমন্ত্রীদের হাতে, তাঁরা এ ব্যাপারে বাড়তি পদক্ষেপ নিন, চায় মোদি সিং সরকার। জনগণনা অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১২১ কোটি ১ লাখ ৯০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষের হার ৫১.৫৪ শতাংশ। মহিলা ৪৮.৪৬। পশ্চিমবঙ্গে লিঙ্গানুপাতের হার ৯৪৩ থেকে বেড়ে ৯৪৭ হলেও গোটা দেশে এক দশকে এক হাজার পুরুষ অনুপাতে মহিলার সংখ্যা ৯২৭ থেকে কমে ৯১৪ হয়েছে। কিছু অসাধু নার্সিংহোম ও চিকিৎসকের সঙ্গে গর্ভবতী মা ও তার পরিবারের ‘বেআইনি' বোঝাপড়াই এর কারণ বলে মনে করছে কেন্দ্র। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চের ডিরেক্টর অধ্যাপক প্রকাশ যা, প্রাক্তন রেজিস্ট্রার জেনারেল ডাঃ জয়ন্ত ভানতিয়ার, শৈলজা চন্দ্র, অধ্যাপক রাজেশকুমার ও ডাঃ ফৌজদার রামের গবেষণালদ্ধ ‘ল্যানসেট' পত্রিকার রিপোর্ট বলছে, গরিব, আদিবাসী, অশিক্ষিত পরিবারে সন্তান নষ্ট করার প্রবণতা প্রায় নেই, যা অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত, ধনী পরিবারে আছে। সমীক্ষায় প্রকাশ, যে পরিবারে প্রথম সন্তান ছেলে, তারা দ্বিতীয় সন্তানটি কন্যা, এটা জেনে যাওয়ার পর তাকে সানন্দে গ্রহণ করে। কিন্তু তার পরের সন্তানটিও মেয়ে, এটা লিঙ্গ নির্ধারণ পরীক্ষায় জেনে নিয়ে সেই ভ্রুণকে মেরে ফেলছে। এমনকি দেশের আইন ফাঁকি দিতে সিঙ্গাপুর, হংকং গিয়েও গর্ভপাত করানো হচ্ছে বলে জানান অন্যতম সমীক্ষক তথা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন সায়েন্স-এর ডিরেক্টর ডাঃ ফৌজদার রাম। কোন গর্ভবতী মহিলা বিদেশে যাচ্ছেন, সন্তান না নিয়ে দেশে ফিরছেন, তা নজরে রাখতে রাজ্য তথা কেন্দ্রের উদ্যোগে প্রয়োজন বলে তাঁর মত।
জেলায় জেলায় আলট্রা সাউন্ড মেশিনের সুবিধা যত বাড়ছে, ততই গর্ভপাত বাড়ছে বলে সমীক্ষায় জানা গিয়েছে। তাই আলট্রা সাউন্ড মেশিনের যথাযথ ব্যবহারে নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। নজরদারিসহ রাজ্য সরকারকে সুপারিশ করার লক্ষ্যে ৩৫ সদস্যের সেন্ট্রাল সুপারভাইজারি বোর্ড নতুন করে সাজিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।

পুত্র সন্তানের প্রত্যাশায় ভারতে প্রতিদিন দুই হাজার কন্যা শিশুকে হত্যা করা হয়। মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায়ই এদের অধিকাংশকে হত্যা করা হয়। কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী মানেকা গান্ধী সোমবার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

ভারতে গর্ভের সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে প্রসবের আগে তা পরীক্ষা করা আইনত নিষিদ্ধ। তবে দেশটির সিংহভাগ অঞ্চলেই এই আইন মানা হয় না। ভারতের অধিকাংশ পরিবারই কন্যা সন্তান নিতে আগ্রহী নয়। পুত্র সন্তানকে এখানে বংশ রক্ষক হিসেবে মনে করা হয়। এছাড়া ধারণা করা হয়, পুত্র সন্তানই বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মার ভরণপোষণ করবে। তাই পুত্র সন্তানের প্রত্যাশায় জম্মানোর আগেই এসব কন্যা শিশুকে হত্যা করা হয়।

মানেকা গান্ধী বলেন, ‘প্রতিদিন মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় ২ হাজার শিশুকে হত্যা করা হয়। কিছু শিশু জম্মগ্রহণ করে এবং তাদেরকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়।’

২০১১ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল সাময়িকী ল্যাঞ্চেট জানায়, গত তিন দশকে ১ কোটি ২০ লাখ কন্যা শিশুকে গর্ভে নষ্ট করা হয়েছে। এর ফলে দেশটিতে ছেলে-মেয়েদের অনুপাতে ফারাক দেখা দিচ্ছে। ২০১১ সালে ১ হাজার ছেলের বিপরীতে মেয়ের সংখ্যা ছিলো ৯১৮ জন। তবে ১৯৮১ সালে একই সংখ্যক ছেলের অনুপাতে মেয়ের সংখ্যা ছিল ৯৬২জন।

কন্যা সন্তানদের রক্ষায় মোদি সরকার ‘কন্যা বাঁচাও,কন্যাকে শিক্ষিত কর’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন মানেকা গান্ধী। তিনি জানান, এ প্রকল্পের বদৌলতে কন্যা শিশু হত্যার পরিমাণ কমছে। গত জানুয়ারি থেকে এ প্রকল্পের সুফল আসতে শুরু করেছে। যে একশটি জেলায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের হার অনেক কম সেসব জেলায় শিশুর জম্মপূর্ব লিঙ্গ পরীক্ষা বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ হচ্ছে। এছাড়া মেয়েরা যাতে বেশি করে শিক্ষিত হতে পারে সে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, ‘কমপক্ষে এক কিংবা দুই বছরের মধ্যে কোন ভালো কিছু ঘটবে আমারা তার আশা করি না। কারণ এটা মন পরিবর্তনের বিষয়।’

তিনি আরও জানান, সরকারের প্রকল্পের কারণে শিশু হত্যা কমছে। তবে এসব শিশুদের অনাথ আশ্রমে ফেলে আসা হয়। এটাকে ভালো প্রতিক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এর মানে তারা ‘হত্যার পরিবর্তে শিশুদের বের করে দিচ্ছে।’

ওষুধ খেলেই পুত্র সন্তান জন্ম নেবেই। বাবা রামদেবের এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার 'পুত্রজিবা রক্সাবুর্ঘি' বিক্রি প্রসঙ্গে উত্তাল হল রাজ্যসভা। জেডিইউ সাংসদ এসে ত্যাগি এই বিষয়টি রাজ্যসভা তুলে তদন্তের দাবি জানান। প্রসঙ্গত, এই ওষুধ বিক্রি করছে বাবা রামদেবের দিব্যা ফার্মেসি।
এই ওষুধের প্যাকেট সাংসদ জয়া বচ্চন ধরিয়ে দেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে কে নাড্ডাকে। হইহই পড়ে যায় রাজ্যসভায়। প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠেন বিরোধী সাংসদরা।
পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য বাবা রামদেবের ফার্মেসি এবার বিশেষ ওষুধ বেচতে শুরু করল। হরিয়াণাতে দিনের পর দিন কমছে মেয়েদের সংখ্যা। কন্যাভ্রূণ হত্যা রোধ ও সামগ্রিকভাবে কন্যা সন্তানের সুরক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর স্বপ্নের প্রকল্পের সূচনার জন্য তাই প্রথমেই বেছে নিয়েছিলেন হরিয়ানাকে। আর সে রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর যোগগুরু রামদেবই এবার পুত্রসন্তান লাভের জন্য মহিলাদের মধ্যে 'ওষুধ' বিক্রি করা শুরু করেন।
রামদেবের দিব্য ফার্মেসি জোর কদমে তাদের আয়ুর্বেদিক ওষুধ ''পুত্রজীবক বীজ'' বিক্রিতে ব্যস্ত। এই ওষুধের সঙ্গেই আর একটি ওষুধ বিক্রি করছে দিব্য ফার্মেসি। নাম 'শিবলিঙ্গ বীজ' যার মধ্যে রয়েছে 'পুত্রজিবা রক্সাবুর্ঘি'। আয়ুর্বেদ মতে এই ওষুধটি নাকি বন্ধ্যাত্ব রোধক এবং কামোদ্দীপক।
যদিও 'পুত্রজীবক বীজ' ওষুধটির মোড়কে নির্দিষ্ট করে লেখা নেই যে পুত্রসন্তান লাভের জন্য এই ওষুধ কার্যকরী। তবে এর নামটি থেকেই স্পষ্ট এই ওষুধ বিক্রির মূল লক্ষ্য কী। বিভিন্ন যে ওয়েবসাইট গুলির মাধ্যমে রামদেবের কোম্পানির বিশেষ প্রোডাক্টগুলো বেচা হয় তারাও এই এক দাবিই করেছে।
চণ্ডীগড় ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দিব্য ফার্মেসির বিভিন্ন আউটলেটগুলিতে অনুসন্ধানের পর দেখা গেছে তারাও এই ওষুধটি বেচছে পুত্র সন্তান লাভের নাম করেই। ২০০ গ্রাম 'পুত্রজীবক বীজ'-এর দাম ৩০টাকা।

মহাবীর ফোগতের কি মাথা খারাপ হয়ে গেল? নাহলে নিজের মেয়েদের কুস্তির আখড়ায় নামায়? তাও কিনা ছেলেদের সঙ্গে একসঙ্গে?? মরদের খেলা কুস্তিতে লাজলজ্জার বালাই না রেখে লড়বে মেয়েরা?' গ্রাম জুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে; মহাবীরের মা পর্যন্ত চান না, তার আদরের নাতনীরা ছেলেদের খেলা কুস্তি শিখে নিজেদের বরবাদ করুক। মহাবীর ফোগত তাতে কান না দিয়ে বাড়ির গোয়ালঘরের পাশে আটচালায় বানিয়ে ফেলেছেন মাটির আখড়া। বড় দুই মেয়ে গীতা আর ববিতার কুস্তির তালিম শুরু এখানেই।

সেদিন একঘরে হওয়ার ঝুঁকি আর টিটকিরির কাছে মহাবীর মাথা নীচু করলে আমরা গীতা, ববিতা, ভিনেশ সমেত হরিয়ানার ‘বালালি সিস্টার্স' নামে বিখ্যাত ছয় বোনকে পেতাম না, যাদের নিয়ে আজ চর্চা হচ্ছে গোটা দুনিয়া জুড়ে। এদের মধ্যে গীতা-ববিতা-ভিনেশ ইতিমধ্যেই কমনওয়েলথ গেমসে সোনার পদক জিতেছেন। দুই বোন গীতা আর ববিতা বিশ্ব মহিলা কুস্তিতে ব্রোঞ্জ পদক জিতে নজির গড়েছেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ২০১৪ বুশান এশিয়ান গেমসে মেয়েদের কুস্তিতে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন ভিনেশ। বাকি তিন বোন- সঙ্গীতা, রীতু ও প্রিয়াঙ্কাও ইতিমধ্যে জুনিয়র স্তরের এশীয় ও বিশ্ব প্রতিযোগিতায় একাধিক পদক জিতেছেন।

কুস্তি-গুরু চাঁদ্গীরামের উৎসাহে সংস্কার ভাঙার এই কাজ মহাবীর ফোগত শুরু করেন ১৫-১৬ বছর আগে। ১৯৭০ এশিয়ান গেমসে হেভিওয়েট কুস্তির সোনাজয়ী চাঁদ্গীরামই মেয়েদের কুস্তির পথপ্রদর্শক। ১৯৯৭ সালে ঘোষণা হয়, ২০০৪ সালে এথেন্স অলিম্পিকে মেয়েদের কুস্তি চালু হবে। তারপরেই চাঁদ্গীরাম তার নিজের দুই মেয়ে দীপিকা ও সোনিকা কালিরমণকে কুস্তির আখড়ায় নিয়ে আসেন এবং মেয়েদের কুস্তিকে জনপ্রিয় করার জন্য নানা জায়গায় তাদের নিয়ে কুস্তি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। এটা করতে গিয়ে তাকে প্রচণ্ড বিরোধিতা শুধু না, বহু জায়গায় আক্রান্তও হতে হয়েছে। সোনিকা বহুবার জাতীয় সেরা হয়েছেন এবং বিশ্ব প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।



চাঁদ্গীরামের পথেই তার শিষ্য ও সহকারীদের অনেকেই সমাজে নানা বাধার মধ্যেও মেয়েদের কুস্তি ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নেন এবং নিজেদের পরিবারের মেয়েদের কুস্তির আখড়ায় আনেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে মনে রাখার মত কয়েকটি নাম হল নেহা রাঠি, অলকা তোমর, গীতিকা জাখর। অলকা তোমর প্রথম ভারতীয় হিসেবে বিশ্ব মহিলা কুস্তিতে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছেন ২০০৬ সালে। ২০১০ সালে অলিম্পিক রূপোজয়ী কানাডার প্রখ্যাত কুস্তিগীর টোনিয়া ভেরবেককে হারিয়ে জিতেছেন কমনওয়েলথ গেমসে সোনার পদক। গীতিকা প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে দোহা এশিয়ান গেমসে নিজের বিভাগে জেতেন রূপোর পদক।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে মহাবীর ফোগত চাঁদ্গীরামের আখড়ার ছাত্র হন এবং খুব তাড়াতাড়ি তার নজরে পড়েন। পরবর্তী সময়ে গুরুর দেখানো পথে তিনি যখন নিজের মেয়েদের কুস্তির আখড়ায় নিয়ে আসছেন, তখনও গুরু তাকে বলেন, পথে যতই বাধা আসুক থেমে যেও না। সমালোচনায় দমে যেও না, তার মুখোমুখি দাঁড়াও।

গুরুবাক্য মনের ভেতরে গেঁথে নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন মহাবীর ফোগত। আর যখন এই অভিযান শুরু করেন তার বড় দুই মেয়ে গীতার বয়স ১০ আর ববিতার ৮। কোন সংস্কার না রেখে তাদের তালিম দিলেন ছেলেদের সঙ্গে কুস্তি লড়িয়ে। ছেলেদের সঙ্গে তালিম নিয়ে তারা এতটাই কুশলী হয়ে উঠল যে আশেপাশের গ্রামে দঙ্গল কুস্তিতে এরা অনায়াসে নিজের বয়সের ছেলেদের হারিয়ে দিতে শুরু করল। ফলে তাদের দেখলে আর স্থানীয় ছেলেরা ভয়ে লড়ত না।

ভোটের সঙ্গে বউয়ের কোন তেমন কোন সম্পর্ক না থাকলেও ভোটের বিনিময়ে বউ দেওয়ার এমন অদ্ভুত দাবী করছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হরিয়ানার তরুণরা। সেখানে কেউ ভোট চাইতে এলেই তরুণরা অনুযোগের সূরে বলছেন, ‘‘বহু লাও, ভোট পাও’। মানে বউয়ের বিনিময়ে ভোট আর কি!

পৃথিবীতে থেকে বিনিময় প্রথা বহু আগেই বিলুপ্ত হলেও ভারতের হরিয়ানার তরুণদের এমন অদ্ভুত আবদার অনেকের মনে হাসির খোড়াক জুগিয়েছে। তবে তরুণরা যে বিপাকে পরে মওকা বুঝে ভোট প্রার্থীদের কাছে বউ এনে দাওয়ার দাবী করছেন সেটা বোঝাই যায়। তবে এর পেছনে লুকিয়ে আছে সামাজিক সমস্যা।

ভোটের বিনিময়ে বউয়ের দাবীর পেছনে তাদের অকাট্য যুক্তি আছে। যুক্তিটা হল, হরিয়ানায় পুরুষের তুলনায় নারীদের সংখ্যা আনুপাতিক হারে কম। ভারতের আদমশুমারীর ২০১১ সালের তথ্য অনুযায়ী প্রতি হাজারে পুরুষ পিছু মেয়ের সংখ্যা ৮৭৯জন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন অনেকদিন ধরে কন্যাভ্রুণ হত্যার কুফল এটি।

এই ঘটনাকে পুঁজি করে চলতি লোকসভা নির্বাচনে সমস্যাটিকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে বিবিপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সুনীল জাগলান। তিনি ফেব্রুয়ারি মাসে ‘অবিবাহিত পুরুষ সংঘ’ নামে একটি সংঘঠন করেছেন। সংগঠনটির উদ্দেশ্য হল, কন্যাভ্রুণ হত্যার কুফল সবাইকে বোঝানো। সামাজিক এই সমস্যাটি জাতীয় রাজনৈতিকদের দৃষ্টিগোচড়ে আনতে চান সংগঠনটি।

এ বিষয়ে জাগলানের ভাষ্য, ‘কন্যাভ্রুণ হত্যা এক গভীর সমস্যা হতে চলেছে। এখনই এর মোকাবিলা করা না গেলে ভবিষ্যতে ফল হবে মারাত্মক। কিন্তু আপনাদের স্লোগানের মধ্য দিয়ে কি বউ পাওয়ার বাসনাই মুখ্য হয়ে ফুটে উঠছে না যা সমস্যার গুরুত্বকে কিছুটা লঘু করে দিতে পারে।’

জাগলান জানান, বউ দাও ভোট নাও স্লোগানটির মানে কিন্তু এটা নয় যে সব অবিবাহিত ছেলের এখনই বউ চাই। কিন্তু সমস্যাটির প্রতি রাজনৈতিক দলগুলির দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা রয়েছে এতে।


সাফল্যের রাস্তা দেখালেন গীতা। এশিয়ান ক্যাডেট কুস্তি প্রতিযোগিতায় ২০০৩ থেকে ২০০৫ টানা তিনবছর সেরা হয়ে। ২০০৯ সালে জলন্ধরে কমনওয়েলথ কুস্তিতে একই সঙ্গে গীতা আর ববিতা নিজেদের বিভাগে সেরা হলেন। আর ২০১০ সালে গীতা কমনওয়েলথ গেমসে মহিলা কুস্তি ৫৫ কেজি বিভাগে সোনার পদক জেতার পর থেকে বাধার শেষ বাঁধটুকু ভেঙে গেল। ঐ গেমস থেকেই ববিতা পেলেন দ্বিতীয় স্থান। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিক গেমসে প্রথম ভারতীয় মহিলা কুস্তিগীর হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করলেন। লন্ডনে পদক না পেলেও ওই বছরেই ছোট বোন ববিতার সঙ্গে বিশ্ব মহিলা কুস্তি প্রতিযোগিতায় জোড়া ব্রোঞ্জ পদক জিতে তৈরি করেছেন নতুন ইতিহাস।

বড়দিদি গীতার সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে একে একে বাকি চার বোনও আখড়ায় নাম লেখাল। মহাবীর পরিবারের ৪জন- গীতা, ববিতা, রীতু আর সঙ্গীতা মহাবীরের নিজের মেয়ে আর সঙ্গে অকাল দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া তার ভাইয়ের ২ মেয়ে ভিনেশ আর প্রিয়াঙ্কা, যাদের পরম মমতায় মহাবীর তার সংসারে পালন করেছেন। একই পরিবারের ৬ বোনের ৬ জনই কুস্তি লড়ে নানা স্তরের আন্তার্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে পদক নিয়ে আসছেন এই ঘটনার কোন নজির দুনিয়ার আর কোথাও নেই! ইতিমধ্যেই ‘বালালি সিস্টার্স' নামে এদের নিয়ে বহু লেখা বেরিয়েছে। একদা অখ্যাত গ্রাম বালালি আজ এদেরই দৌলতে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে।


হরিয়ানার মত একটি রাজ্যে এই ঘটনা সত্যি একটা বিপ্লবের মত। কারণ এখানে মেয়েদের স্বাধীনতা দূরের কথা, বহুক্ষেত্রে বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত নেই। মেয়ে জন্মালে গর্ভেই তাকে খুন করে ফেলার মত ঘটনা এখানে আকছাড় ঘটে থাকে। লেখাপড়া থেকে বেঁচে থাকার সামান্য প্রয়োজনগুলি পান না তাঁরা। মেয়েদের প্রতি এই অবহেলা আর হিংসার ফলে আজ হরিয়ানায় পুরুষের তুলনায় মেয়েদের অনুপাত সবচেয়ে কম। প্রতি ১০০০ জন পুরুষ পিছু মহিলার সংখ্যা মাত্র ৮৭৯। আর ৬ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে প্রতি ১০০০ ছেলে পিছু মেয়েদের সংখ্যা ২০০১ সালে ছিল ৯৬৪। ২০১১ সালে তা কমে হয়েছে মাত্র ৮৩৪। ‘নারীমুক্তি', ‘নারী স্বাধীনতা' এইসব কথা এখানে মূল্যহীণ। সব কিছু নিয়তির মত মেনে নেওয়াই অভ্যাস এখানে।

স্বাধীনতার আগে থেকেই মেয়েদের মুক্তি, সমানাধিকার এসব নিয়ে চর্চা কম হয় নি। বরেণ্য মানুষ থেকে রাষ্ট্রনেতাদের বক্তব্য, নারীবাদী আন্দোলন অনেক কিছুই দেখেছি আমরা। কিন্তু আলোচনা, চর্চা, গালভরা কথার থেকে জীবনের নানা ক্ষেত্রে মেয়েদের এক একটা কীর্তির দাম যে অনেক বেশি বারবার তার প্রমাণ পেয়েছি আমরা।


হরিয়ানার পেছিয়ে পড়া গ্রাম বালালির ছয় কুস্তিগীর বোন ঠিক এই কাজটিই করেছেন কুস্তি লড়ে; অজ্ঞতা, কুসংস্কার ভেঙে পুরুষশাসিত একটা সমাজে নতুন জোয়ার এনেছেন। কুস্তির মত একটা অবহেলিত খেলা দিয়ে এই কাজ করা যায়, তা কিন্তু নারীমুক্তির সবচেয়ে বড় প্রবক্তারাও ভাবতে পারেন না। এখানেই ‘বালালি সিস্টার্স' রা অনন্যা, অতুলনীয়া।

মেয়েদের এই ‘কুস্তি বিপ্লব' আজ এতটাই সাড়া ফেলেছে এখন আর মহাবীর ফোগত বা তার মেয়েদের টিটকিরি শুনতে হয় না, কেউ আজ তাদের একঘরে করার ভয় দেখায় না। যারা বলতেন, এদের বিয়ে হবে না, বাচ্চাকাচ্চা হবে না, এরা সব ছেলে হয়ে যাবে, তারাই আজ বুক চাপড়ে গর্ব করে বলেন, হামারা গাঁও কি শান, হামারা গাঁও কি বেটি। শুধু বালালি না, আজ সব বাধা ভেঙে আশেপাশের গ্রাম থেকে বহু মেয়ে আসছে মহাবীর ফোগতের আখড়ায় কুস্তি শেখার জন্য। দূর থেকেও মেয়েরা আসছে মহাবীরের আখড়ায়। ফলে এদের কথা ভেবে মহাবীরকে এক হস্টেল বানাতে হয়েছে।

গীতা ববিতার শৈশবের মাটির আখড়ায় এখন কুস্তি ম্যাট আর ব্যায়ামের আধুনিক যন্ত্রপাতি বসেছে। ঝড় শুধু কুস্তিতে আটকে নেই, সংস্কার ভেঙে এখানকার মেয়েরা এখন লেখাপড়াতেও এগিয়ে আসছে, কলেজ যাচ্ছে। পর্দানসীন গ্রাম কুস্তির জাদুকাঠিতে জেগে উঠেছে। বদলাচ্ছে পুরুষের মানসিকতাও। মেয়েরা পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে এগোতে শিখছে। ভেঙে যাচ্ছে জাতি-ধর্মের বেড়া। তাই তালিম নেওয়ার সময়ে মহাবীরের মেয়ে রীতু নিঃসংকোচে লড়েন ঝাড়ুদারের ছেলে অংকেশের সঙ্গে।

নারী স্বাধীনতার এর চেয়ে বড় বিজ্ঞাপন আর কিছু হতে পারে কি?

নারী- বিধাতার এক অপূর্ব সৃষ্টি। এক নারীর অনেক রূপ- মা, কন্যা, বোন, স্ত্রী, বান্ধবী- প্রত্যেকটি রূপ তার নিজ নিজ জায়গায় উজ্জ্বল! কিন্তু এই নারীকে আমরা কতটা সম্মান দেই বা দিয়েছি? মুখেই খালি সমানাধিকার এর কথা বলি কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি কতদূর? সৃষ্টির শুরু থেকে মেয়েরা দাসী, পণ্য, ভোগবিলাসের সামগ্রী হয়ে ব্যবহার হয়ে আসছে। মেয়েদের আগে এতটাই নিচু স্তরে গণ্য করা হত যে জন্মের সাথে সাথেই তাঁকে মেরে ফেলে হত এবং তার চেয়েও আশ্চর্যের ব্যপার এই হত্যাকাণ্ড বেশিরভাগ সময় করতেন সেই কন্যার বাবা নিজে! একটু চিন্তা করে দেখুন তো কি হত যদি মেয়ে সন্তান মেরে ফেলতে ফেলতে এমন পর্যায়ে চলে যেত যে গ্রামের পর গ্রাম হয়ে যেত নারীশুণ্য? চিন্তা করতে কষ্ট হলে আপনার চিন্তার খোরাক জোগানোর জন্যই আছে Matrubhoomi: A Nation Without Women ছবিটি!



ভারতের বিহার অঞ্চলের এক গ্রাম। অন্যান্য গ্রাম যেমন হয়, এ গ্রামটিও তেমনি, ছায়াঘেরা , শান্ত ও সুনিবিড়। কিন্তু পার্থক্য একটাই এবং তা এক ভয়ঙ্কর পার্থক্য - এই গ্রামে কোন মেয়ে সন্তানের জন্ম হলেই তাঁকে দুধে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়! শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি! মেয়ে সন্তান জন্ম নিলেই তার কপালে এটাই জুটবে, তার অপরাধ একটাই- কেন সে মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়েছে? "জন্মই তার আজন্ম পাপ!"



এভাবেই চলছিল, কিন্তু এই ভয়ঙ্কর কাজের ফলাফল যে কি ভয়ঙ্কর হতে পারে তা হয়ত এইসব অশিক্ষিত, কুসংস্কার দিয়ে ঘেরা মানুষগুলোর( পড়ুন "পুরুষ" গুলোর) জানা ছিল না! একসময় এমন অবস্থা হল , এই গ্রামে আর একটিও মেয়ে অবশিষ্ট রইল না, একটিও না! শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও এটি সত্যি এবং পরিচালকের মুনশিয়ানা এখানেই যে তিনি এটি অতি বিশ্বাসযোগ্য ভাবে উপস্থাপন করেছেন! মেয়ে না থাকায় গ্রামের সব কাজ ছেলেরাই করছে! মেয়েদের তো ডুবিয়ে মারা হয়েছে কিন্তু ছেলেদের যৌন চাহিদাকে তো আর ডুবিয়ে মারা যাবে না! তাই ছেলেরাই মেয়ে সেজে নাচ গানের মাধ্যমে আমোদ ফুর্তির ব্যবস্থা করে! গ্রামের পুরুষেরা এতটাই যৌন বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে যে দলবেধে ভিসিআর এ পর্ণ দেখা এমনকি পশুর সাথে যৌন সঙ্গম করতেও এরা পিছপা হয়না! সেই পশু তাঁদের দেবতাতুল্য "গরু" হলেও তাঁদের কোন বিকার নেই, যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য তাঁদের উন্মাদের মত অবস্থা!



কাহিনীতে টুইস্ট আসে তখন যখন গ্রামের পণ্ডিত একদিন এক পরিবারে কল্কি নামের এক মেয়েকে খুঁজে পায়! আশ্চর্যজনকভাবে একটি মেয়েকে তার বাবা হত্যা করেননি! গ্রামের এক বাবা হন্য হয়ে তার পাঁচ ছেলের জন্য মেয়ে খুঁজছিলেন, এই খবর পেয়েই তিনি তার ছোট ছেলেকে নিয়ে সেই মেয়ের বাবার কাছে হাজির হন। অবশেষে ৫ লাখ টাকা আর পাঁচটি গরুর বিনিময়ে সিদ্ধান্ত হয়যে এই পরিবারের পাঁচ ভাই এর সাথেই ঐ একটা মেয়ের বিয়ে হবে! ( মহাভারতের ধ্রুপদী এর কাহিনীর মত) ভাইয়েরা দিন ভাগ করে নেয় কে কোনদিন এই মেয়ের সাথে রাত কাটাবে, সপ্তাহে পাঁচ দিন পাঁচ ভাই, কিন্তু আরও দুই দিন যে বাকি থাকে তার সদ্ব্যবহার কে করবে? সবাই একমত হয়ে বড় ভাইকে সেই সুযোগ দেয়! কিন্তু "রামধমক" দিয়ে তাঁদের বাবা বলেন- ভাইয়েরা এত স্বার্থপর যে তাঁদের বাবার যৌন চাহিদার কথা একবারও চিন্তা করল না? শেষ পর্যন্ত তাঁদের বাবার মাধ্যমেই "রাত কাটানো" অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী শুরু হল! কিন্তু এতকিছুর মাঝে কল্কির খোঁজ নেয়ার সময় কারো থাকেনা, সে সবার কাছে শুধু একটা পণ্য যার কাজ যৌন চাহিদা মেটানো! কিন্তু সেও যে মানুষ, তারও যে ভালবাসতে ইচ্ছা করে! কি হবে কল্কির আর এই অদ্ভুত সম্পর্কের? এর পরিণতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে?



এর বেশি কিছু আর বলতে চাচ্ছি না, তবে একটা কথা বলছি, এই মুভিটা না দেখলে আপনার "হিন্দি মুভি" শুধু নয়, "মুভি দেখা" অনেকটাই অপূর্ণ রয়ে যাবে! কিছু সিনে স্তব্ধ হয়ে যাবেন, পিসি অফও করে দিতে পারেন সংবেদনশীলেরা! বলিউড "মশলা মুভি" ছাড়াও যে কত অন্যরকম এবং অসাধারণ বানাতে পারেন তার উদাহরণ এই মুভি। খুবই ডিস্টার্বিং একটা হিন্দি মুভি, বার বার আপনার মনে হবে- পর্দায় এসব কি হচ্ছে?এখানেই পরিচালকের সার্থকতা! পরিচালক মনিষ ঝা বেশ ভাল কাজ দেখিয়েছেন নিজের প্রথম ছবিতে, ছবিটি রচনাও করেছেন তিনি। এর আগে তিনি A very Very Silent Film নামের একটি শর্টফিল্ম দিয়ে নিজের ফিল্ম ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০০১ সালে। এই ছবিটি ২০০২ সালে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে জুরিদের কাছ থেকে "বেস্ট শর্টফিল্ম" এর পুরষ্কার লাভ করে। তবে পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি হিসেবে মাত্রুভুমি তার প্রথম কাজ। অভিনেতারাও অনেক ভাল কাজ করেছেন,অনেক বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় করেছেন- বিশেষ করে "কল্কি" চরিত্রে টিউলিপ জশি এবং সুশান্ত সিং ও সুধীর পাণ্ডে। ছবির স্ক্রিপ্ট পড়ে প্রথমে এই ছবিতে কাজ করতে রাজি হননি নায়িকা টিউলিপ জোসি, কিন্তু পরে তিনি রাজি হন। ছবির আরেকটি প্লাস পয়েন্ট হল সেলিম- সুলায়মান এর অসাধকারণ ব্যাকগ্রাউনড মিউজিক যা ছবির সাথে বেশ মানানসই।



অনেকে হয়ত বলতে পারেন, এমন কাহিনী কখনও সম্ভব নাকি? এ ধরনের ঘটনা কখনও সম্ভব না, অতিরঞ্জিত করে দেখান হচ্ছে! হ্যাঁ, এটা ছবির একমাত্র দুর্বলতা হতে পারে, কিন্তু আমরা যেহেতু এই অবস্থার মধ্য দিয়ে যাইনি, তার আমরা হলফ করে, নিশ্চিত হয়ে বলতেও পারব না- পৃথিবীতে এমন ঘটনা কখনও ঘটবেও না!



গুজরাটে একটি গ্রামে মেয়ে সন্তান হত্যা করতে করতে এখন আর কোন মেয়ে অবশিষ্ট নেই- ম্যাগাজিনে এমন একটি ঘটনা পড়ে পরিচালক মনিষের মাথায় এই ছবির আইডিয়া আসে। ২০০৩ সালে ভারতের মধ্যপ্রদেশের রেনাই নামক গ্রামে মাত্র দুই কোটি রুপি বাজেটের, ২৯ দিনে শুটিং শেষ হওয়া এই মুভিটি ২০০২ সালে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বিশেষ জুরি পুরষ্কার এবং ২০০৩ সালে ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এ পুরষ্কারসহ অন্যান্য অনেক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও বেশ কিছু পুরস্কার জিতে নেয় এবং দেশে বিদেশে ব্যপক প্রশংসিত হয়।

আমি এত গুলো কথা যে বললাম তার কারন আমার মনে হয় কন্যা ভ্রুন হত্যা ধর্ষনের অন্যতম প্রধান কারন ।
কয়েকশ বছর ধরে কন্যা ভ্রূন হত্যা করতে করতে যা হয়েছে তা হল মেয়েদের সংখ্যা ভীষন রকম কমে গেছে এবং
প্রতি পুরুষ পিছু নারীর পরিমান অস্বাভাবিক রকম কমে যাওয়ায় বিকৃতি দেখা দিচ্ছে । আমার মনে হয় এটা ধর্ষনের অন্যতম প্রধান কারন ।

সমাজের স্বার্থে আমাদের একবার এই বিষয়ে বিবেচনা করা উচিত । মানব সভ্যতার রথের দুটি চাকা নারী ও পুরুষ ।
একটি চাকাকে বাদ দিলে সভ্যতার রথ কে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব ।



প্রতি বছরের মতন এবছরও আন্তর্জাতিক শিশু দিবসে আমরা শিশুদের নানান সমস্যা গুলো নিয়ে আলোচনা করব এবং তা সমাধানের উপায় গুলিও জানব,
তার পর পরের দিন সকালে উঠে যথারিতি সব ভুলে যাব । এইভাবে একটা বছর কেটে যাবে । কিন্তু কোন সমস্যার সমাধান হবে না । রাজন,রুপাইকিংবা
লুসির মতন অকালে ঝড়ে যাওয়া ফুলগুলো বিচারের প্রতিক্ষায় চেয়ে থাকবে ।



সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×