somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওরে বলদ, গোড়াতেই তো গলদ B-)

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জলিল মাস্টার টুংটাং বেল বাজিয়ে তার সাইকেল চালিয়ে স্কুল মাঠটা পেড়িয়ে সদরের রাস্তায় উঠে বাড়ির পথ ধরল। পেছনে নান্দাইল হাই স্কুলের নবম শ্রেনীর ৫৩ জন ছাত্রছাত্রী তখনো ধাতস্ত হবার চেস্টা করছে।

জলিল মাস্টারের নামের সাথে মাস্টার কিভাবে জুড়ে গেল তা আসলে কেউই জানে না। ভবঘুরে জলিল ইস্ট বেংগল রেজিমেন্টাল সেন্টারে রিক্রুট হিসেবে মাস তিনেক ট্রেনিং এর পর চোখের সমস্যার কারনে চাকুরি হারায়, কিন্তু কস্মিকালেও সে মাস্টারি করেনি। সে একটা থলেতে গোটা পঞ্চাশেক প্লাস্টিক বল নিয়ে তার ঝরঝরে ফনিক্স সাইকেলে চেপে স্কুলে স্কুলে ঘুরে বেড়ায়।

নান্দাইল হাই স্কুলের হেডামাস্টার অমায়িক মানুষ। তিনি শুধু যে জলিলকে তার সামনের চেয়ারে বসতেই বলেছে তাই না, দুইপিস সল্টেস বিস্কুট সহ এক কাপ চাও খেতে দিয়েছেন। তারপর দপ্তরিকে বললেন জলিলকে ক্লাশ নাইনে নিয়ে যেতে। ক্লাশ টেনেই নিয়ে যেতে বলতেন। কিন্তু ওদের আবার টেস্ট পরীক্ষা চলছে।

ক্লাসে গিয়ে বরাবরের মত জলিল প্রথমেই ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা গুনে দেখল, মোট তিপ্পান্ন জন। ক্লাশ টিচার বিরক্ত মুখে নিচু স্বরে বললেন, "যা করবার হক্কলে করবাইন, আযাইরা কামে সমো যত কম নস্ট করবাইন, ততই বালা। সমো বড়ই মুইলবান জিনিস, বুইজ্জুইন?"

জলিল মাথা ঝাকিয়ে নিজের কাজে নেমে পড়ল। ছাত্রছাত্রীরা একে একে সবাই একটা করে বল হাতে নেবার পর সে সবাইকে যার যার বলের উপর নিজের নাম লিখতে বলল। সবাই নাম লেখার পর জলিল সবার কাছ থেকে সব বল ফিরিয়ে নিয়ে ক্লাশের এক কোনায় জমা করল।

এবার সে সবাইকে এই স্তুপ থেকে যার যার বল খুঁজে হাতে নিতে বলতেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হুরোহুরি পরে গেল। জলিল সহাস্যে ক্লাশ টিচারের দিকে তাকাল, ক্লাশ টিচার চোখমুখ শক্ত করে সরু চোখে জলিলের দিকে তাকিয়ে আছে।

ক্লাশ টিচারকে উপেক্ষা করে জলিল এবার সবাইকে সব বলগুলো আবার ক্লাশের কোনায় স্তুপ করে রেখে সরে যেতে বলল। তারপর ক্লাশ ক্যাপ্টেন ছেলে আর মেয়েটাকে বলের কাছে গিয়ে দাড়াতে বলল।

এবার ক্লাশ ক্যাপ্টেন ছেলে আর মেয়েটা একটা করে বল হাতে তুলে নাম ডাকতে শুরু করল আর বাকিরা একে একে যারযার বল বুঝে নিয়ে নিজের সিটে ফিরে যেতে লাগল। কিছুক্ষনের ভেতরই সবাই নিজের নাম লেখা বল হাতে পেয়ে যেতেই জলিল তার থলের মুখ খুলে ধরে ক্লাশের বেঞ্চের মাঝের আইল ধরে এগুতে লাগল, আর ছাত্রছাত্রীরা তাদের হাতের বল সেই থলেতে ফেরত দিতে লাগল।

সব বল বুঝে নিয়ে জলিল থলের মুখ বেধে ক্লাশ থেকে বেড়িয়ে যেতে নিতেই দেখল দরজা আগলে হেডস্যার দাড়িয়ে। হঠাত তিনি জলিলকে জড়িয়ে ধরলেন এবং অনেক্ষন তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলেন। তারপর একসময় তাকে ছেড়ে গলা খাঁকড়ি দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বললেন,
"ডিসিপ্লিন জিনিসটা সবখানেই জরুরী। আমারার দ্যাশে মানু বেশি। আমরার লাইগ্যা আরো বেশি জরুরী।"

পুনশ্চঃ
দেশপ্রেম যেমন স্রেফ কম্বেট ইউনিফর্মেই মোড়ানো হয়না, তেমনি ডিসিপ্লিন বলতে শুধু আর্মিকেই বোঝায় না।

আসেন সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে আরেকটু ডিসিপ্লিনড হই, তাতে জীবনটা আরো সহজই হবে, ইনশাল্লাহ।

পুনঃ পুনশ্চঃ
ছোট্ট গল্প ট্রাই করলাম, চুক হইলে গোস্তাকি মাফ
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:১৬
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×