somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গন্তব্য যখন লাদাখ! (পর্ব ১)

১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার মত অলস লোককে (যদিও ঘুরার সময় অলস নই) দিয়ে কোন কাজ জোরপূর্বক করানো ছাড়া হয় না। এই জোরপূর্বক কাজটি যে আমার শিক্ষকমহাদয় করবেন তা ঘুণাক্ষরেও মালুম করে উঠতে পারি নি। তাই অগত্যা মধুসূদন আমাকেই লিখতে হবে। স্যার এর চেয়ে বরং আমাকে দশটা কর্কশবাক্য শুনিয়ে দিন, তাতেও এই বাংগালি বাবু খুশি ( ঈদ বললেও ভুল হবে না)। আমি লিখব লাদাখ ভ্রমণের কাহিনী। এত কাহিনী না করে আসল কাহিনীতে যাই।


ক্লাসে আমার প্রিয় মাসুদ স্যার আমার সহপাঠীদের মারফত জানতে পেরেছে যে আমি ঘুরাঘুরি ছাড়া আর কিছুতে আগ্রহী নই।
স্যার জিগ্যেস করল "শেষ কোথায় গিয়েছিস?"


"স্যার,ভারত গিয়েছি। ৩৫ দিন ছিলাম। "- উত্তরে আমার পায়াভারী হয়ে উঠলেও তা পায়ের তলার উপরে উঠতে না দিয়ে হালকা হাসিতে পুলক ছড়িয়ে দিলাম ক্লাসের সবার মাঝে। আনন্দের কাজই হলো বিতরণ আর বিনিময়, সবার সাথে উপভোগ করা সে তা গল্প আড্ডার ছলেই হোক না কেন!

"ভারতের কোন জায়গাটা তোর সবচেয়ে ভালো লেগেছে, ডেল্টা?"

"স্যার, ভয়ংকর সৌন্দর্যের সূতিকাগার লাদাখ।"

"তুই নেক্সট ক্লাসে লাদাখ ভ্রমণ সম্পর্কে লিখে আনবি"
স্যারের আদেশে আমি 'আচ্ছা' বলে ৪-৫ টা নেক্সট কাস ফাঁকি দেওয়ার পর আজ ৬-৭ টা নেক্সট ক্লাসে বিলম্বিত হওয়ার আগ মুহূর্তে লিখতে বসলাম।

কি লিখব? কিভাবে বর্ণনা করব সেই সৌন্দর্যকে? -এসব চিন্তা আমার মাথায় ভর করে বসে আছে। বাহিরই হতে পারছি না এসব চিন্তা থেকে।

শেষমেশ এই ঠিক করলাম যে, যেভাবে এসেছি সেভাবেই বর্ণনা করব।

২৪ জুন, ২০১৬

ভোর ৬:২০ এ আমি আর ব্যাংগালুরের ছেলে সিদ্বার্থ দুজনে মিলে ২০০ রূপিতে একটা শেয়ার ট্যাক্সি ঠিক করলাম। আগের রাতেই মানালির জাগাতসুখে অবস্থিত হোস্টেল, দ্য লস্ট ট্রাইবে সব দেনা-পাওনা পরিশোধ করে রেখেছিলাম। তাই হোস্টেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভোর ছ'টা বাজেই পাসপোর্ট নিয়ে সিদ্বার্থের সাথে বেরিয়ে পড়েছিলাম। সিদ্বার্থ যাবে চণ্ডীগড় আর আমি যাব লাদাখে। সিদ্বার্থের বাস ৮:৩০ টায় আর আমারটা ৭ টায়।

আমরা যখন গিয়ে পৌছালাম মানালি বাস স্ট্যান্ডে তখন আমার সামনে দিয়ে পাখি ফুরুত করে উড়াল দিল! হায়রে আমার বাস মিস!
আমি কিন্তু একটু কষ্টই পেলাম বটে! এত ভোরে উঠেও বাসটা পেলাম না! মানালিতে কচু গাছ দেখি নাই। দেখলে বোধহয় কচুগাছে গলায় দড়ি দেওয়ার একটা ব্যর্থ চেষ্টা করা যেত!


আমি আর সিদ্বার্থ দুজনে মিলে প্রাতরাশ সেরে ফেললাম। সেই আলুপরঠা আর মাখন। ৩০ রূপিতে প্রাতরাশ সারলাম বটে কিন্তু এই পরঠার কোন স্বাদ আমি উপভোগ করতে পারলাম না। কোথায় আকশিকার মায়ের হাতের আলুপরঠা আর কোথায় মানালি বাসস্ট্যান্ডের আলুপরঠা! কোথায় আমেরিকা আর কোথায়বা মরীচিকা! আকশিকা আর পরিবারের কথা দিল্লি ভ্রমণের কাহিনীর সময় জানা যাবে। এখন আমায় লাদাখে যেতে হবে।

আমাকে এখন যেতে হবে ৯:৩০ টার বাসে। সাতটার বাস মিস করেছি তাই শাস্তি আড়াই ঘন্টা অপেক্ষা করা ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিল না। সিদ্বার্থের সাথে ততক্ষণ গল্প করলাম যতক্ষণ পর্যন্ত ওর বাস মানালি বাস স্ট্যান্ডে ছিল। সিদ্বার্থ চলে গেল। মনটা খারাপ হয়ে গেল। মাত্র দেড় দিনের পরিচয়ে ও আমার ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছিল। এখনও আমরা প্রায়ই ফেসবুকে আমাদের ভবিষ্যৎ গন্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করি।
সাড়ে ন'টার বাস আসল দশটা বাজে। বাসটা দেখলাম কুল্লু থেকে এসেছে। তাই বেশ ভীড় বাসে। আমি সৌভাগ্যক্রমে একটা সীট পেলাম। সমস্যা হলো আমার ব্যাকপ্যাকটাকে নিয়ে। ভীড়ের মধ্যে আমার ব্যাকপ্যাকটাকে খুব মেয়েলি সমস্যার মধ্যে পড়তে হলো। ভীড়-বাসের মধ্যে কোন যুবতী দাঁড়িয়ে থাকলে যুব-বৃদ্ধের হাত যেমন তরূণীর অংগ-প্রতংগের আশে পাশে বুভুক্ষু হয়ে যায় তেমনি আমার ব্যাকপ্যাকের হাল হয়েছে। ব্যাচারার উপর দিয়ে কি ধকলই না যাচ্ছে। এসময় আমার ড. হুমায়ুন আজাদের 'শুভেচ্ছা'('ভালো থেকো ' নামেই বেশি পরিচিত) কবিতাটা বার বার মনে পড়ছিল। আমিও আমার ব্যাগের উদ্দেশ্যে মনে মনে বললাম,
" ভালো থেকো ব্যাগ,
সামলিও বেগ।
ভালো থেকো,
তুমি ভালো থেকো"

আমার গন্তব্য এখন কেইলংয়ে ( keylong)। কেইলং হিমাচল প্রদেশের লাহু -স্পিতি জেলায় অবস্থিত, যা বছরের বেশিরভাগ সময় বরফে আচ্ছন্ন থাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৫০০ মিটার (১১৫০০ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত কিলংয়ের জনসংখ্যা ১১৫০ জন মাত্র। কিলং যাওয়ার জন্য মানালি-লেহ হাইওয়ে ব্যবহার করা হয়। কিলং মানালি থেকে ১২৫ কি.মি উত্তরে অবস্থিত। তীব্র তুষারপাতের কারণে মানালি-লেহ হাইওয়ের রোথাং পাস (Rohtang Pass) বন্ধ থাকে।যার দরুণ বছরের বেশিরভাগ সময় বহির্বিশ্ব থেকে আলাদা থাকে কেইলং। রোথাং পাস সাধারণত মে এর শেষ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত খোলা থাকে। তাই মানালি থেকে লাদাখ যাওয়ার উপযুক্ত সময় জুন -অক্টোবর।


HRTC এর বাসে করে কেইলং যাওয়ার সময় বাসের মধ্যে বিভিন্ন প্রদেশের লোকের মিলন মেলা। ৬৫-৭০ শতাংশ লোকেরই প্রধান লক্ষ্য লাদাখ, যারা কিনা বেশিরিভাগই পর্যটক। আমার সীটের পাশে যে ভদ্র লোক বসেছে তার নাম মি. শর্মা। দিল্লীর ভদ্রলোক LIC তে চাকরি করেন। চাকরির কাজেই সে লাদাখ যাচ্ছে। সংগে তার ছোট ভাই ভীষ্ণু শর্মা, যার সাথে পরবর্তীতে আমার ভাল বন্ধুত্ব হয়েছিল। এই দুই ভাইয়ের সাথে তাদের ভাগ্নে ফ্রি। ওদের ভাগ্নেটা ইচরে পাঁকা। ওর নাম ভিশাল,একাদশ শ্রেণীতে পড়ে কিন্তু ভাবখানা এই যে ও একাদশ শ্রেণীর বাঁদরগুলোকে পড়ায়।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৪:১৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×