১৪১৯ ফসলী সনের পঁচিশে বৈশাখে আবার রবীন্দ্র পূজার আয়োজন করছে শেখ হাসিনার মহাজোট সরকার। এবার ভারতের অর্থমন্ত্রী, যে প্রবল বাংলাদেশ বিদ্বেষী এবং যে চাল নিয়ে এদেশের সাথে বেঈমানি করেছিল, সে প্রণব মুখার্জীকে এবার প্রধান অতিথি করা হবে। রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়ে গালভরা বুলি আওড়ানো হবে, চটকদার সেমিনার করে মানুষের নিকট রবীন্দ্রনাথকে দেবতা হিসেবে তুলে ধরার অপচেষ্টা চালানো হবে। কিন্তু এটা অনেকেই জানে না যে, রবীন্দ্রনাথের রচিত বাইশশ’ গানের অনেকগুলোই বিশুদ্ধ নয়, রবীন্দ্রনাথের মৌলিক গান নয়। অন্য কোনো গানের সুর থেকে সরাসরি নকল করা বা সেগুলোকে ভেঙেচুরে রবীন্দ্রনাথ নিজের মতো করে নিয়েছে। রবীন্দ্রনাথের এই সমস্ত চুরি করা গানকে ভাঙা গান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবী রবীন্দ্রনাথের ভাঙা গানের একটা তালিকা করেছিল। সেখানে সে ২৩৪টি গানকে ভাঙা গান হিসেবে বিবেচনা করেছিল। ইন্দিরা দেবীর বক্তব্যকে যদি সত্যি বলে ধরে নেই, তাহলেও দেখা যাচ্ছে যে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্ট গানের এক দশমাংশেরও বেশি অন্যের সৃষ্ট সুর থেকে চুরি করা।
বাউল গানের সুর চুরি করতে গিয়ে গগন হরকরার সাথে পরিচয় ঘটে রবীন্দ্রনাথের। গগন হরকরার জন্ম শিলাইদহের আড়পাড়া গ্রামে। কাজ করত ডাক বিভাগে ডাক হরকরা হিসাবে। সে একজন বাউল গীতিকার ছিল। রবীন্দ্রনাথ প্রায়শই গগন হরকরাকে কাচারিতে ডেকে নিয়ে আসত গান শোনার জন্য। গ্রামের এই সহজ সরল বাউল তখনও ভাবেনি রবীন্দ্রনাথের মনের মধ্যে কী রয়েছে। গগন হরকরার ‘আমি কোথায় পাবো তারে’ এই গানটার অনুকরণে রবীন্দ্রনাথ কবিতা লেখে ‘আমার সোনার বাংলা’ বলে। এই গগন হরকরাদের কথা, বাউলদের কথা কিন্তু ইন্দিরা দেবী বলেনি। বলেছিল পাশ্চাত্যের গীতিকার যারা পরিচিতমুখ, যাদের সুর রবীন্দ্রনাথ চুরি করেছিল তাদের কথা। রবীন্দ্রনাথ পথে কোনো পথচারীর মুখে কোনো গান শুনে ভালো লাগলেও তাকে থামিয়ে কাগজে সেই সুর টুকে নিত, পরে সুবিধামতো তার গানে তা বসিয়ে দিত। সেগুলো কিন্তু ভাঙার গান হিসেবে ধরা হয়নি, অর্থাৎ মাত্র ২৩৪টি নয়, তার চুরি করা আরো গান রয়েছে।
মূলত, রবীন্দ্রনাথের মতো চৌর্যবৃত্তির পরিচয় খুব কম লোকই দিতে পেরেছে। কারণ সে ছিল জমিদার, চুরি করলেও তার প্রতিবাদ করার মতো পরিস্থিতি তৎকালীন সময়ে ছিল না, উপরন্তু ব্রিটিশরা ছিল তার পৃষ্ঠপোষক। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এদেশের মুসলমান কেন একজন তস্করকে শ্রদ্ধা করবে? একটি চুরি করা গানকে এদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে বেছে নেয়াটা এদেশের জন্য অপমানজনক। এবং দেশের সম্মান রক্ষা করাটাই শাসকশ্রেণীর কর্তব্য। এই কর্তব্য পালন করতে না পারলে ক্ষমতার মসনদে থাকাটা অর্থহীন।
সূত্রঃ