এই ভিডিওর 44:29 মিনিটে বক্তা কোরআনের সুরা নিসার ৫৯ নং আয়াতকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন। কোরআনকে নিজের মত করে অনুবাদ করে নিরীহ-অজ্ঞ মানুষগুলোর সাথে কতবড় জালিয়াতি করেন এসব তথাকথিত পীরবাবারা - এটি তার একটি উদাহরণ মাত্র।
“আতিওয়াল্লাহা আতিওয়া রাসূলা ওয়া উলিল আমরে মিনকুম” এই আয়াতের বাংলায় অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা ক্ষমতার অধিকারী তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।
ইংরেজিতে অনুবাদ: O you who have believed, obey Allah and obey the Messenger and those in authority among you. And if you disagree over anything, refer it to Allah and the Messenger, if you should believe in Allah and the Last Day. That is the best [way] and best in result.
এখানে বক্তা বলেছেন: মোমেন বান্দারা, তোমরা আমি আল্লাহর তাবেদারি কর, তোমরা আমার রাসূলের তাবেদারি কর, এবং আমার আউলি-আল্লাহর তাবেদারি কর। অতএব, আওলাদে রাসূল বা আল্লাহর অলিদের তাবেদারি করা মানে আল্লাহর রাসূল(সঃ) এর তাবেদারি করা । আল্লাহর রাসূলের তাবেদারি করা মানে আল্লাহর তাবেদারি করা। এটা কোরআন বলছে। আওলি আল্লাহ, আওলাদের রাসূলের নিকট বাইয়াতে রাসূল গ্রহন করা বা বাইয়াত হওয়া মানে রাসূলের নিকট বাইয়াত হওয়া। আর রাসূলের নিকট বাইয়াত হওয়া আল্লাহ বলছেন স্বয়ং আল্লাহর নিকট বাইয়াত হওয়া। এজন্য মানুষ মাইজভান্ডারিতে যায় আল্লাহ-ওয়ালা হওয়ার জন্য। এই আয়াতের উপর ভিত্তিকরেই আরো বাড়িয়ে বললেন 49:45 মিনিটে, বাইয়াত হওয়া এটি আল্লাহর হুকুম।
অথচ এই "উলিল আমর" এর অর্থ কোনভাবেই "ওলি-আল্লাহর নিকট বাইয়াত" নয়। অবশ্য উনি বাইয়াত হওয়া বলতে কি বুঝিয়েছেন সেটিও বিবেচ্য বিষয়। "উলিল আমর" বলতে যাদের হাতে কর্তৃত্ব/অধিকার/ক্ষমতা আছে তাদের বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এখানে বড় বড় আলেমগন এবং বিচারকদের (কিছু তাফসিরে এসেছে ক্ষমতাশীল নেতাদেরকেও) বুঝানো হয়েছে। কুরআন এবং হাদিস শরীফে যেসব ফয়সালা সরাসরি নেই, সেসব ক্ষেত্রে ইজমা কিয়াসের সাহায্য লাগে, এবং এসব ইজমা কিয়াসের ক্ষেত্রে আলিমদের সমাধানকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, আল্লাহর কোরআন, রসুল (সাঃ) এর হাদিস, এবং বড়বড় আলেমদের ইজমা-কিয়াস এগুলো অনুসরন করতে বলা হয়েছে। অথচ "উলিল আমর" মানে বক্তা এখানে ওলিদের নিকট বাইয়াত হওয়া বুঝিয়ে দিলেন। এখন বাইয়াত মানে যদি বুঝিয়ে থাকেন যে কেউ একবার পীরের হাতে হাত রেখে মুরিদ হলে তাকে পীর বেহেস্তে নিয়ে যাবেন, তাহলে আমি বলব উনি অভাগাদের অন্তর্ভুক্ত। কারণ সাধারণ ভাবে "বাইয়াত" অর্থ হলো নিজেকে সম্পূর্ণরূপে কোরবান/বিক্রি/উৎসর্গ করে দেয়া।
যে বিধান বা আয়াত আল্লাহ অবতীর্ণ করেননি, তা আল্লাহর নামে চালিয়ে দেওয়ার অধিকার নবী-রাসুলদেরও নেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রাসুল যদি কোরআনকে নিজে বানিয়ে আমার নামে চালিয়ে দিত, তাহলে আমি তার ডান হাত চেপে ধরতাম, তারপর তার কণ্ঠনালি কেটে ফেলতাম। তোমাদের মধ্য থেকে কেউই তাকে রক্ষা করতে পারত না।’ (সুরা : হাক্কা, আয়াত : ৪৪-৪৭)
আল্লাহ যেটি বলেননি সেটিকে যারা আল্লাহর নামে চালিয়ে দেয় তাদের জন্য আল্লাহ বলেছেন, "তাদের চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে, যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে? এসব লোককে তাদের পালনকর্তার সামনে উপস্থিত করা হবে আর সাক্ষীরা বলবে, ‘এরাই এদের প্রতিপালকের বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করেছিল।’ জেনে রেখো, জালিমদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ।" (সুরা : হুদ, আয়াত : ১৮)
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে মুশরিকদের আচরণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তারা তাকে হারাম গণ্য করে না এবং সত্য দ্বীনকে তাদের দীন হিসাবে গ্রহণ করে না”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ২৯] তবুও অনধিকার চর্চা বশে মানুষ কর্তৃক আল্লাহকৃত হালালকে হারাম ও হারামকে হালালকরণের বহু দৃষ্টান্ত দেখা যায়। নিঃসন্দেহে এটি একটি হারাম কাজ। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে এ মারাত্মক শিরক প্রসঙ্গে বলেন,“আল্লাহর পরিবর্তে তারা তাদের আলেম ও সাধু-দরবেশদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে”। [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৩১]
এরা নিজেরদের পীর-মুরিদিকে সঠিক প্রমান করার জন্য কোরআনের বেশ কয়েকটি আয়াতকে ব্যবহার করে নিজেদের সুবিধামত। অথচ সেসব আয়াতগুলো তাদের ব্যাখ্যার সাথে কোনভাবেই সম্পৃক্ত নয়। সুন্দর সুন্দর পোষাক পরে মানুষকে ধোকা দেয়া সহজ, কিন্তু আল্লাহকে ধোকা দিলে পরকালে পার পাবেন কিভাবে? কারো কোন কমেন্ট থাকলে মোস্ট ওয়েলকাম। আমার ভুল হলে আল্লাহ মাফ করুন। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১২