নির্বাচন যেমন করেই হোক হয়ে গেল। এখন এই সংসদের পরিণতি ষষ্ঠ সংসদের মতো করতে গেলে বিএনপিকে জামাত ছাড়তে হবে। গত দিন পনের'র কথাবার্তা শুনে মনে হলো বিএনপির এতে কোন সায় নেই। জামাতকে ছাড়লেই তারা নির্বাচনে হেরে যাবে এই ভাবনা তাদেরকে পেয়ে বসেছে। আর জামাতও সঙ্গত কারণে বিএনপিকে ছাড়তে রাজি না। বিএনপিকে ছেড়ে দিলে ভবিষ্যতে আবার নিজের জায়গা ফিরে পাওয়া তাদের জন্য কঠিণ হবে। যতদূর বোঝা যাচ্ছে প্রথমে ট্রাইব্যুনাল থেকে জামাত নিষিদ্ধ হবে তারপরে সেই রায় সুপ্রিম কোর্টেও টিকে যাবে। তারপরে জামাতের নেতাকর্মীরা যাই করুক না কেন সমর্থকরা একটা লম্বা সময়ের জন্য ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়বে। কেউ ধানের শীষে ভোট দেবে, কেউ নৌকায় ভোট দেবে আর কেউ কেউ হয়তোবা ইসলামী বিপ্লব করতে গোপন রাজনীতিতে চলে যাবে। সেই ক্ষেত্রে বিএনপি কীভাবে দাঁড়িপাল্লার সব ভোট নিজের দিকে চলে আসবার বিবেচনা করতে পারে? তাহলে কথাটা দাঁড়াচ্ছে জামাতকে নিষিদ্ধ করলে আওয়ামী লীগের যেমন তেমন কোন লাভ নেই, বিএনপিরও কোন লাভ নেই। সেক্ষেত্রে বিএনপিকে তার নিজের ভোট ব্যাঙ্কের উপর নির্ভর করতে হবে। তাহলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াচ্ছে? বিএনপির নিজের উপর ভরসা কম? তাহলে তো ধরেই নেওয়া যায় যে একাদশ সংসদ নির্বাচন কোন ভাবেই অন্তত বছর খানেকের মধ্যে হচ্ছে না। নভেম্বর-ডিসেম্বর এর মত করে আবারো হরতাল-অবরোধ শুরু করলে ফ্লপ হবার সম্ভাবনা খুব বেশি। জনগণ আওয়ামী লীগের এক তরফা নির্বাচন অপছন্দ করলেও বিএনপি-জামাতের ভাংচুর সমর্থন করেনি।
তাহলে এখন সামধান কী? জামাতকে ছেড়ে, হরতাল অবরোধ বাদ দিয়ে আলোচনায় বসলে সমঝোতার সম্ভাবনা আছে আওয়ামী লীগ বলেছে। এর বাইরে সমাধান দুটো। এক হচ্ছে বিরাট গণ অভ্যুত্থান করে সরকার ফেলে দেওয়া; দুই হচ্ছে পরবর্তী পাঁচ বছর ধরে ধৈর্য ধরে একটু একটু করে শক্তি বাড়ানো।
প্রথমটা গত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে অসম্ভব মনে হয়। দ্বিতীয়টা করতে গেলেও জামাতকে ছাড়তেই হবে। কারণ জামাত সঙ্গে থাকলে সে বিএনপিকে নিজের মতো করে দাাঁড়াতে দেবে না। জামাতের ইস্যুতে তাকে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হবে।
এই দিক থেকে আগামী মাস খানেককে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের খুব জরুরি সময় বলেই মনে হয়। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরের মতো। এই সময়টার প্রতিটা দিনকে আলাদা ভাবে নজর রাখা ইতিহাসের পর্যবেক্ষক হিসাবে খুব দরকার।