যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্র্যাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’এর ২০১৩ সালের এক জরিপ অনুযায়ী দেশটিতে প্রতি ৫১ মিনিটে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো জনিত সড়ক দুর্ঘটনায় একজন প্রাণ হারায়।
জরিপমতে, ২০১৩ সালেই মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো ১০,০৭৬ জন। প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন। দেশটির মোট সড়ক দুর্ঘটনার শতকরা ৩১ ভাগ।
তাছাড়া, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো জনিত সড়ক দুর্ঘটনায় দেশটির প্রতি বছরে ক্ষতি হচ্ছে ৫৯ বিলিয়ন ডলার। যেটি পৃথক ভাবে বিশ্বের ১২১টি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ থেকেও বেশি।
মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো জনিত সড়ক দুর্ঘটনা কমানো জন্য বিশ্বের একেক দেশে একেক ধরনের শাস্তি প্রচলন রয়েছে। অবাক করার বিষয় হচ্ছে কোন কোন দেশে এই অপরাধের শাস্তি হচ্ছে সরাসরি মৃত্যুদন্ড।
মধ্য অ্যামেরিকার দেশ কোস্টারিকায় মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে ধরা পড়লে পুলিশ তৎক্ষণাৎভাবে সংশ্লিষ্ট গাড়ীর নাম্বার প্লেট খুলে ফেলে।
ধর্মনিরপেক্ষ দেশ তুরস্কে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালে ড্রাইভার সমেত গাড়িটি শহর থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ড্রাইভারকে আবার পুলিশ প্রহরার মধ্যে দিয়ে দশ কিলোমিটার পায়ে হেটে ফিরে আসতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪২টি অঙ্গরাজ্যে, ডিস্ট্রিক অফ কলাম্বিয়া, উত্তর মেরিনা দ্বীপ এবং ভার্জিনিয়া দ্বীপে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালে ড্রাইভিং লাইসেন্স নির্ধারিত একটি সময়ের জন্য বাজেয়াপ্ত করা হয়, যদি চালক কেমিক্যাল টেস্ট উৎরাতে না পারে।
সমাজতান্ত্রিক দেশ রাশিয়াতে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অপরাধে সারাজীবনের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স হারাতে হয়।
অস্ট্রেলিয়ায় মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে সেই ব্যাক্তির নাম ও ছবি ক্যাপশন সহকারে পত্রিকাতে প্রকাশ করা হয়। আর ক্যাপশনে উল্লেখ থাকে “এই ব্যক্তি মদ্যপ এবং সে এখন জেলে। (He's drunk and in jail.)
যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অপরাধের সাজা হলো ৯০ দিনের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল, ২ দিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত জেল এবং ১০০০ ডলার জরিমানা।
আর কোন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে যদি একই অপরাধ চতুর্থবারের মত প্রমাণিত হয় তাহলে তার সাজা হচ্ছে ২ বছরের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল,সর্বোনিম্ন ৭৫ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৩০ বছর পর্যন্ত জেল এবং ৫০০০ ডলার জরিমানা।
মালোশিয়াতে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালে, ব্যক্তির তো জেল হবেই। আর চালক যদি বিবাহিত হয়, এক্ষেত্রে তার স্ত্রীকেও জেল খাটতে হয়।
বাংলাদেশের ১৯৮৩ সালের মটর ভেহিক্যাল্স অধ্যাদেশ অনুযায়ী মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালে প্রথমবার শাস্তি সর্বোচ্চ ৩ মাস জেল ও ১ হাজার টাকা জরিমানা— এই দু’টির যেকোনো একটি বা দু’টিই হতে পারে। এবং পরিবর্তীকালে যদি একই অপরাধ করে তবে তার সর্বোচ্চ ২ বছরের জেল ও ১ হাজার টাকা জরিমানা এবং সাময়িকভাবে ড্রাইভিং-লাইসেন্স স্থগিত করা হয়।
শান্তির দেশ নরওয়েতে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অপরাধের সাজা হলো তিন সপ্তাহের সশ্রম কারাদন্ড ও এক বছরের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স হারানো। আর পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে কেঊ এই অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে সারাজীবনের জন্য তার লাইসেন্স খোয়াই।
ফিনল্যান্ড ও সুইডেনে কেঊ মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে ধরা পড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক বছরের জেল খাটার সাজা পেয়ে যায়।
ইংল্যান্ডে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অপরাধের শাস্তি হলো একবছরের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত, এক বছরের জেল এবং ২৫০ ডলার সমমূল্যের জরিমানা।
ফ্রান্সে তিন বছরের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স হারাতে হবে, এক বছরের জেল খাটতে হবে এবং ১,০০০ ডলার জরিমানা গুনতে হবে।
সব থেকে মজার ব্যাপারটি হচ্ছে পোল্যান্ডে; জেল, জরিমানাতো আছেই। সাথে উটকো ঝামেলার মত রয়েছে জোরপূর্বক রাজনৈতিক বক্তব্যে অংশগ্রহণ।
মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অপরাধের ক্ষেত্রে এশিয়া উন্নত দেশ জাপান তার নাগরিকদের শস্তির ব্যাপারে যথেষ্ঠ কঠোর। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে কোন দুর্ঘটনা ঘটে, আর চালক যদি দুর্ঘটনা স্থল থেকে পালিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স ১০ বছরের জন্য কেড়ে নেওয়া হয়।
দেশটি শুধু চালককে শাস্তি দেয়না, পাশাপাশি ঐ গাড়ীর আরোহীদেরকেও সাজা ভোগ করতে হয়। আরোহীদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের ৩,০০০ ডলার সমমূল্যের জরিমানা গুনতে হয়। আর চালককে এক বছরের জেল খাটতে হয় অথবা নিদেনপক্ষে ৮,৭০০ ডলার সমমূল্যের জরিমানা গুনতে হয়।
আর মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় যদি এক বা একাধিক পথচারীর প্রানহানি ঘটে সেক্ষেত্রে চালক সারাজীবনের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স হারাতে পারেন।
জাপানে এমনকি মদের বারগুলোতে বেয়ারাদের মদ পরিবেশন নিষেধ, যদি তারা বুঝতে পারে যে খদ্দের চলন্ত অবস্থার মধ্যে মদ্যপানে এসেছেন। এক্ষেত্রে ব্যতয় ঘটলে বারের লাইসেন্স পর্যন্ত বাতিল হতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকাতে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অপরাধে সাজা হলো দশ বছরের জেল এবং ১০,০০০ ডলার জরিমানা।
বুলগেরিয়াতে দ্বিতীয়বারের মতো মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
আর মধ্য অ্যামেরিকার দেশ এল সালভাদরে, আপনার প্রথম অপরাধই শেষ অপরাধ। কারণ মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে ধরা পড়লে সরাসরি ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে রেখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
তবে দেশভেদে নিউমেরিক্যাল বিএসি অর্থাৎ ব্লাড অ্যালকোহল কন্টেন্ট (বিএসি) কিছুটা পৃথক হয়ে থাকে। আর, একজন ব্যক্তির শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্তের অণুতে ঠিক কতটুকু অ্যালকোহল রয়েছে তার নির্ধারণই হচ্ছে ব্লাড অ্যালকোহল কনসেন্ট্রেশন (বিএসি)।
সুত্রঃ ইন্টারনেট।
লেখাটি সম্পাদিত আকারে অনলাইন নিঊজসাইট দ্যা রিপোর্টে প্রথম প্রকাশিত।