কোভিড মহামারীতে বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। এখন পর্যন্ত কাযর্করী কোন ভ্যক্সিন আবিস্কৃত না হওয়ায় উন্নত বিশ্বের দেশগুলো সোস্যাল ডিস্টেন্স ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই ভয়াবহ সংক্রামক ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায় বেশিরভাগ দেশেই এখনও গন জমায়েত হয় এমন সব ধরনের কর্মকান্ড অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। বিভিন্ন শপিং মলে সেফ ডিস্ট্যন্স মেইন্টেইন এম্বাসাডর নিয়োগ দেয়া হয়েছে , যারা শপিং মলে সোস্যাল ডিস্টেন্স মেনে চলাটা কঠোরভাবে দেখভাল করছে। এছাড়াও প্রতিটা শপারের কন্টাক্ট ট্রেসিং করা হচ্ছে । অর্থাৎ যে কোন দোকানে ঢোকার আগে ও পরে কিউ আর বার কোডের মাধ্যমে শপারকে চেক ইন ও চেক আউট করতে হচ্ছে। এতে করে কারো করোনা পজিটিভ হলেই তার সংস্পর্শে আসা অন্যদেরও স্টে হোম নোটিস দেয়া হচ্ছে। সিঙ্গাপুর, চায়না, হংকং ইত্যাদি দেশগুলো উপড়ের নিয়মগুলো কঠোরভাবে পালনের মাধ্যমে করোনা সংক্রমন নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়েছে।
আমাদের দেশের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। এই মহামারীতে আমরা অনেকেই আমাদের প্রিয়জন হারিয়েছি। অনেকেই এখনও করোনার সাথে জীবন বাজি রেখে লড়াই করছে। স্বাস্থ্যবিধি, সোস্যাল ডিস্ট্যন্স কোনটাই মেনে চলা হচ্ছে না। তার উপড় ভুয়া টেস্ট, সুচিকিৎসার অভাব করোনা পরিস্থিতিকে করে তুলেছে আরো ভয়াবহ। প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন আতংক বিরাজ করছে।
আর পাঁচদিন পরই কোরবানির ঈদ।ধর্মকে আমরা মনে প্রানে ও কাজে কর্মে ধারন না করে , ধারন করি কেবল বাহ্যিক লেবাসে। লোক দেখিয়ে ধর্ম পালনের কুৎসিত নিয়ম যে শুধু এই উপমহাদেশেই প্রচলিত তা উন্নত দেশে না এলে টের পেতাম না।কুরবানি প্রক্রিয়াকে পরিবেশবান্ধব করতে বিভিন্ন দেশে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠলেও আমাদের দেশে হাটে গিয়ে পশু ক্রয় এবং দলবদ্ধ হয়ে বাসা বাড়িতে জবাই করা এখন পর্যন্ত একমাত্র রীতি। কিন্ত এই রীতি যে এবার করোনা পরিস্থিতিকে আরো উদ্বেগজনক করে তুলবে তা বলাই বাহুল্য।
ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক, (সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ) এবং মুহাম্মদ মোস্তফা হোসাইন শাহীন,( পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব মালায়া, মালয়েশিয়া) '' করোনায় কুরবানি : বিকল্প চিন্তার ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি '' লেখাটার কিছু চুম্বক অংশ এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ইসলামে কোন ইবাদত রহিত করার উদাহরণ পাওয়া যায় না; বরং বিকল্প পদ্ধতিতে সে সব ইবাদত পালন করার নজির রয়েছে।‘ফিকহুল ওয়াকি’ তথা পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ইসলামী শরীয়তের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রসিদ্ধ নীতি। পরিস্থিতির আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মু’মিনগণ তোমরা সতর্কতা অবলম্বন কর’ (নিসা : ৭১)।
এখানে সতর্কতার কথা মূলতঃ শত্রু ও বিপদের মাত্রা নির্ণয়ের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে শত্রুর অবস্থার আলোকে তোমাদের উপর সম্ভাব্য যে নেতিবাচক পরিস্থিত তৈরি হতে পারে, সে অনুযায়ী তোমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ কর। আল্লাহ বলছেন, ‘তোমরা মানুষদেরকে প্রজ্ঞা এবং উত্তম নসীহতের সাথে ইসলামের দিকে আহবান করো; আর সুন্দর যুক্তিতে তাদের যুক্তিগুলো খন্ডন কর’ (নাহল: ১২৫)।
বিস্তারিত লেখাটি সবাইকে নীচের লিংকে গিয়ে পড়ার অনুরোধ রইল।
https://www.jagonews24.com/religion/news/599660
ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেক এলাকার এপ্রার্টমেন্ট সমিতি এবার এপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর নীচে গরু কোরবানি নিশিদ্ধ ঘোষনা করেছে।তাই অনেকেই এবার বিকল্প ব্যবস্থার দিকে ঝুকে পড়ছে।ফেসবুকে দেখছি অনেক খামার গরু বিক্রয় ও গরুর মাংশ ডেলিভারীর বিজ্ঞাপন দিচ্ছে ।এই ব্যবস্থাটাই সবচেয়ে ভাল বলে মনে হচ্ছে। এতে করে কোরবানির সাথে যুক্ত মানুষের জীবিকা অক্ষুন্ন থাকবে এবং খামারিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। গ্রাম থেকে যেসব দরিদ্র কৃষক শহড়ে আসেন গরু বিক্রি করতে , তাদের বরং গ্রামেই বিক্রি করার জন্য উৎসাহিত করা প্রয়োজন। গ্রামের এই দরিদ্র কৃষকেরা গরুর হাটে বিড়াট অংকের চাঁদা দেয়ার পর আসলে বিশেষ লাভবান হয় না। তাই গ্রামে যাদের পরিচিত মানুষ আছে তারা গ্রামেই টাকা পাঠিয়ে সেখানেই কোরবানির ব্যবস্থা করতে পারেন।
খুব কাছের এক প্রিয়জন এই মুহুর্তে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যূর সাথে লড়াই করছে। মহামারীর শুরুর পর থেকে তিনি চার মাস বাসা থেকে বেরই হননি। তারপরেও তিনি আক্রান্ত হয়েছেন। এর কারন হচ্ছে সবাই মিলে নিয়ম না মানলে জীবানু সংক্রমন রোধ করা যায় না।এই বোধটা সবার মাঝে জাগ্রত হওয়া প্রয়োজন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৫১