somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাকার্তা ভ্রমন ব্লগ - পর্ব ১

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েকমাস আগে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় গিয়েছিলাম দুই দিনের জন্য । প্রায় দশ বছর আগেও একবার গিয়েছিলাম। দশ বছরের ব্যবধানে দেখলাম দেশটার অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। জাকার্তায় স্বল্প সময়ের ভ্রমন নিয়ে ব্লগ লিখতে গিয়ে মনে হল শুরু করি ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাস দিয়ে।

সুকর্ণ ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার জাতির পিতা। তিনি ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি। নিজ দেশে তার শাসনামলে তিনি পরিচিত ছিলেন অন্য এক পরিচয়ে, স্বৈরাচারী একনায়ক। এই একনায়ক দীর্ঘকাল ধরে ক্ষমতার কেন্দ্রস্থলে ছিলেন। মর্জিমতো দেশ শাসন করেছেন, সেনাবাহিনীর উপর ভর করে জনমতের তোয়াক্কা না করে নিজেকে ঘৃণিত করেছেন। ১৯৬৫ সালে এক মিলিটারী ক্যূ এর মাধ্যমে সুকর্নের পতন হয়। এরপর ১৯৬৭ সালে দেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত হন ও পরের বছর স্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সুহার্তো । ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এক নজিরবিহীন দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক মডেল গড়ে তুলেছিলেন সুহার্তো। এই মডেলে নিজের পরিবার, আত্মীয়স্বজন, তাঁর গোলকার পার্টি এবং খোদ ইন্দোনেশীয় সেনাবাহিনীর প্রতিটি স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির ফায়দাভোগীতে পরিণত করার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল। সুহার্তোর পতনের পর এই ব্যবস্থাটিকেই উন্নয়ন তত্ত্বে ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’ বলে অভিহিত করা হয়েছে, যেটাকে ইন্দোনেশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার জাতির পিতা সুকর্ণর কন্যা মেঘবতী সুকর্ণপুত্রী একবার গণতান্ত্রিকভাবে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও সুশাসন দিতে ব্যর্থ হওয়ায় দ্বিতীয়বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন।মেঘবতী ক্ষমতায় ছিলেন ২০০১ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত ।

ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট হচ্ছে জোকো উইদোদো। ইন্দোনেশিয়ায় দারুন জনপ্রিয় এই প্রেসিডেন্ট খুব সাধারন ঘরে জন্ম নিয়েছেন । মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি তার বাবার আসবাবপত্রের দোকানে কাজ শুরু করেন। শৈশবে তিনবার উচ্ছেদের অভিজ্ঞতা তার চিন্তা চেতনায় দারুন প্রভাব ফেলে যা তাকে অনুপ্রানিত করে পরিনত বয়সে সুরাকার্তা‌র মেয়র নির্বাচনে দাড়াতে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হবার আগে তিনি সুরাকার্তা‌র মেয়র ছিলেন। আয়তনে বিশাল এই দেশ এখনও খুব উন্নত নয়। বিশাল জনসংখ্যা, দারিদ্রতা ও আরো নানবিধ সমস্যার সাথে প্রতিনিয়ত লড়ছে এই দেশ। তবে সার্বিকভাবে যে দেশটির আগের চাইতে বহুগুনে উন্নয়ন হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। টেকসই উন্নয়নের সকল প্রকার নজির দেখলাম শহরজুরে।

সন্ধায় ফ্লাইট ছিল। রাত আটটায় গিয়ে পৌছালাম জাকার্তা এয়ারপোর্টে। বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এয়ারপোর্ট ও নিয়মশৃংখলা মেনে চলার প্রবনতা লক্ষ্য করলাম সর্বত্র। তবে অনেক সিস্টেম এখনও ম্যানুয়াল থাকায় প্রসেসিং কিছুটা ধীরগতির বলে মনে হয়েছে। এয়ারপোর্টের বাইরে এসে দেখি মিটারে চলা ট্যক্সি , গ্র্যব/ উবার সব রকমের ব্যবস্থাই আছে। বেশ দ্রুতই পৌছে গেলাম হোটেল। সব আনুষ্ঠিকতা সারতে সারতে রাত প্রায় ১১টার উপর বেজে গেল। এদিকে ক্ষুধা লেগেছে তীব্র । রিসেপশনে জিজ্ঞাশা করায় বলল হোটেলের রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। এত রাতে বাইরে কোথাও রেস্টূরেন্ট খোলা পাওয়া কঠিন।আর পেলেও অনেক দূরে যেতে হবে। তবে হোটেলের পাশের গলিতে রাস্তার ধারের কিছু দোকান খোলা থাকে অনেক রাত অবধি , সেখানে যেতে পারি।



হোটেলের পাশ ঘেসেই গেছে একটা সরু গলি। নির্জন রাস্তায় হাটতে গিয়ে প্রথমে একটু গা ছমছম করছিল। সামনে আরো আগাবো না ফিরে আসবো তা নিয়ে একটু দ্বিধায় ভুগছিলাম। কিন্ত পেটের ক্ষুধার কারনে সামনে এগিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রায় পনের মিনিট হাটার পর এসে পেলাম একটা ছোট স্ন্যক শপ। বেশ খোলামেলা পাড়া মহ্লল্লার স্ন্যাক কর্নার বলা যায়। দেখলাম অল্প বয়সী স্বামী ও স্ত্রী মিলে চালাচ্ছে দোকানটা। রাত অনেক হলেও জায়গাটা বেশ জমজমাট। এত রাতেও অল্প বয়সী ছেলে মেয়েদের আনাগোনা দেখলাম। কিন্ত বখাটে বা মাস্তান ধরনের কাউকে চোখে পড়েনি। কি খাবার পাওয়া যায় জিজ্ঞাশা করতে গিয়ে দেখি দোকানি ও তার স্ত্রী ইংরেজি বোঝে না। তাই ইশারা ইঙ্গিতে নুডলস ও চা এর কথা জানালাম।



কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর সদ্য রান্না করা ধোয়া ঊঠা নুডলস স্যূপ এসে হাজির হল। নুডলসের উপড়ে একখানা আস্ত ডিমের পোচ ছড়ানো ও নাম না জানা একটা শাকের পাতাও ছিল। ক্ষুধার কারনেই কিনা জানিনা অসাধারন লেগেছিল সেই নুডলস। নুডলস ও চা খেয়ে দাম দিতে গিয়ে দেখি অসম্ভব সস্তা। ইন্দনেশিয়ায় খাবার দাবার ও ট্যাক্সি ভাড়া বেশ সস্তা। স্বল্প খরচে ভ্রমন করতে চাইলে এটা একটা ভাল ডেস্টিনেশন।



দশ বছর আগে যখন ইন্দোনেশিয়ায় গিয়েছিলাম তখন সবচেয়ে পীড়াদায়ক লেগেছিল রাস্তার ট্রাফিক জ্যাম। সব রাস্তায় উপচে পড়া যানবাহনের ভীড়। পুরাই ঢাকার অবস্থা ছিল। এবার গিয়ে দেখি ট্রাফিক জ্যাম উধাও। উপড়ের ছবিটা হোটেল রুম থেকে তোলা। ভাল করে তাকালে দেখবেন শহরের বড় রাস্তাগুলোকে এরা চারটি লেনে ভাগ করেছে । এক এক লেনে একেক ধরনের যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করেছে । এছাড়া ফ্লাইওভারতো আছেই। আছে মেট্রো রেল, উন্নত টাউন বাস সার্ভিস। ঝুলন্ত মানুষ নিয়ে লক্কর ঝক্কর মার্কা কোন বাস চোখে পড়েনি। সিএনজিও দেখলাম অনেক রাস্তায় আছে তবে রিক্সা নাই। সিগনাল ছাড়া কোন রাস্তাতেই এক মিনিটের জন্যও গাড়িতে বসে থাকতে হয় না। খুব উন্নত দেশগুলোর সাথে হয়ত তুলনা চলে না কিন্ত সার্বিক ভাবে এশিয়ার একটি দেশ হিসেবে ট্রাফিক সিস্টেমে যে তারা যুগান্তকারী উন্নতি করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না-------

তথ্যসুত্র ঃ উইকিপিডিয়া , প্রথমআলো
ছবি ঃ আমার মোবাইলে তোলা

-
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৬
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×