somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাকাত সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়

২০ শে মে, ২০১৯ ভোর ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাকাত কারা পেতে পারে :
এ সম্পর্কিত নির্দেশ এসেছে সূরা তৌবার ৬০ নং আয়াতে, আল্লাহ পাক বলেন,

إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاء وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
"যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে,-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।"
এই ৮ দল লোককে জাকাত দেয়া যাবে ।
ফুকারা ও মিসকিন উভয়েই দরিদ্র শ্রেণীর লোক যাদের সারা বছরের সংস্থান নেই , আলেমদের মতে ফুকারারা মিসকিনদের চেয়ে বেশি দরিদ্র ।
তৃতীয় দল হচ্ছে যারা জাকাত সংগ্রহ করা , লিপিবদ্ধ করা, প্রদান করা, ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত, তারা তাদের কাজের পরিমান অনুযায়ী পারিশ্রমিক হিসাবে জাকাতের অংশ পেতে পারবে। তারা যদি দরিদ্র হন তো তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বেশিও পেতে পারেন ।
চতুর্থ দল হচ্ছে, কোনো অমুসলিম বা ধর্মহীন লোক যাকে মনে হচ্ছে ইসলামের দিকে আগ্রহ আছে, জাকাত তাকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে, আশা আছে সে ইসলাম গ্রহণ করতে পারে, তেমন কাউকে জাকাত দেয়া যেতে পারে ।
পঞ্চম দল , ক্রীতদাস মুক্ত করার কাজে জাকাত দেয়া যাবে, আলেমগণ এ দলের ভীতর কোনো অমুসলিমদের হাতে মুসলমান বন্দিকে মুক্ত করা বা অন্যায়ভাবে আটকিয়ে রাখা কোনো মুসলমানকে মুক্ত করার জন্য প্রদেয় মুক্তিপণ দেয়ার কাজেও জাকাত ব্যবহার করা যাবে বলে মনে করেন।
ষষ্ঠ দল, ঋণগ্রস্থদের ঋণ পরিশোধ করতে জাকাত দিয়ে সহায়তা করা যেতে পারে। তবে ধনি লোকজন বাড়ি কেনা বা ব্যাবসার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে যে ঋণ নিয়ে মাসে মাসে কিস্তিতে পরিশোধ করেন, তেমন ঋণের ক্ষেত্রে জাকাত ব্যবহার করা যাবেনা বলে আলেমগণ মনে করেন। যদি ঋণগ্রস্থ ব্যাক্তি ঋণ পরিশোধে আন্তরিক হন তবে তার হাতেই জাকাতের টাকা দিতে হবে, আর যদি সে লোক টাকা পেলে ঋণ শোধ না করে অন্য বাজে কাজে ব্যবহার করবে বলে আশঙ্কা থাকে তবে তার হাতে না দিয়ে পাওনাদারকে সরাসরি দেয়া যাবে বলেও আলেমগণ মনে করেন ।
সপ্তম খাত হলো, "আল্লাহর পথে"; অধিকাংশ আলেমগণ মনে করেন এর অর্থ হলো আল্লাহর পথে যুদ্ধ কালে মুজাহিদীনদের প্রয়োজনে, অস্ত্র কেনা, ইত্যাদিতে জাকাত খরচ করা যাবে । যদিও কিছু আলেম মনে করেন ইসলামিক দাওয়া বা ইসলামিক জ্ঞান অর্জনে এমনভাবে ব্যাস্ত যে নিজেদের প্রয়োজনীয় সংস্থান উপার্জনের সুযোগ নেই তাদেরকেও জাকাত দেয়া যাবে ।
অষ্টম হলো মুসাফির যে কোনো কারণে বিপদে পড়েছে, যেমন অন্য শহরে গিয়ে কেউ তার সব টাকা পয়সা হারিয়ে ফেললো বা চুরি হয়ে গেলো, তেমন ক্ষেত্রে সে ধনি বা দারিদ্র যাই হোকনা কেন তাকে তার নিজ জায়গায় ফিরে আসার মতো টাকা পয়সা জাকাত থেকে দেয়া যাবে ।
জাকাত শুধুমাত্র এই ৮ দলভুক্ত লোকদের দেয়া যাবে, যদিও সাধারণ সদাকা মুসলিম অমুসলিম সবাইকে দেয়া জায়েজ , জাকাত শুধুমাত্র মুসলমানদের দেয়, উপরে উল্লেখিত একটি ক্ষেত্র ছাড়া। মসজিদ বানানো, লাইব্রেরি বানানো বা রাস্তা মেরামতে জাকাতের টাকা দেয়া যাবে না । জাকাত গ্রহীতাকে জাকাত দিয়ে দিতে হবে , সাধারণত, তাকে এ টাকা দিয়ে বিশেষ কিছু কিনতে, ( যেমন রিক্সা, সোলায় মেশিন ইত্যাদি ) নির্দেশ দেয়া যাবে না, মনে রাখতে হবে এ টাকা তার, তার ইচ্ছামাফিক খরচ করা তার অধিকার ।
এ দলভুক্তদের মাঝে সবাইকে দিতে হবে ? না, যাদের প্রয়োজন বেশি তাদের দিতে হবে । দরিদ্র আত্মীয় স্বজনকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্যও উৎসাহিত করা হয়েছে ।
একটা বিষয় এখানে না বললেই নয়, জাকাতের মূলনীতি হিসাবে যে বস্তুর জাকাত দেয়া হচ্ছে সাধারণত সে বস্তু দিয়েই জাকাত আদায় করা আবশ্যক । যেমন টাকার জাকাত টাকায়, ফসলের জাকাত ফসল দিয়ে, গরু ছাগলের জাকাত গরু ছাগল দিয়ে দিতে হবে, তবে ব্যাবসার মালপত্রের জাকাত তার মূল্য দিয়ে দেয়া যাবে । কিছু আলেমগণ অবশ্য বস্তুর মূল্য ধরে তার জাকাত টাকায় দেয়া জায়েজ মনে করেন। তবে যেভাবে দিলে, বা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যে বস্তু দিলে জাকাত গ্রহীতা সামগ্রিকভাবে বেশি উপকৃত হবে তা দেয়া যেতে পারে বলে অধিকাংশ উলেমা একমত। যেমন কোনো এলাকায় খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যাচ্ছে না, দাম অত্যন্ত বেশি , সেখানে টাকা দেয়ার চেয়ে অন্য কোথাও সাশ্রয়ে খাদ্যদ্রব্য কিনে পাঠালে গ্রহীতারা বেশি উপকৃত হবে, এমন অবস্থায় টাকা না পাঠিয়ে খাদ্যদ্রব্য পাঠানো উত্তম।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৫
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×